ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে নিউ মার্কেট থেকে রিকশায় করে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন শামীম। আনন্দবাজার এলাকায় পৌঁছালে এক লোক তাকে সালাম দেয়। তখনই আরও দুটি রিকশায় করে আরও তিনজন এসে সেখানে নামে। শামীমকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে তারা তার পকেট থেকে টাকাগুলো নিয়ে চলে যায়। শামীম বলেন, আশপাশে অনেক পথচারী ছিল। কিন্তু আমার যে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে পথচারীরা তা বুঝতে পারেনি। তাদের কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা ছুরি ছিল না। এত দ্রুত পকেটে হাত দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেল যে চিৎকার করারও সুযোগ পাইনি। গত ১৩ জানুয়ারির এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন তিনি।
শাহবাগ থানা এলাকায় এর আগেও যেমন এরকম ঘটনা ঘটেছে, রাজধানীতেও এমন ঘটনা নতুন নয়। অপেক্ষাকৃত নতুন স্টাইলের এই ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে অর্থ-সম্পদ খোয়াচ্ছে নগরবাসী। পুলিশ বলছে, সালাম পার্টি নামে পরিচিত চক্রটি ছিনতাইয়ে চাকু বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করেও হাতিয়ে নিচ্ছে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পালিয়ে যাওয়ার জন্য কোন দ্রুতগামী যানও ব্যবহার করছে না। এরা টাকাসহ কাউকে অনুসরণ করে রিকশায় করে এসে সালাম দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে তার পকেটে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ঘটনার আকস্মিতায় শিকার ব্যক্তি যেমন হতভম্ব হয়ে যান, পথচারীদেরও ঘটনাটি বুঝতে সময় লাগে। এর মধ্যেই অপরাধীরা পগারপাড় হয়ে যান। শাহবাগ ছাড়াও বংশাল, চকবাজার, পল্টন ও ওয়ারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনার কবল থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। সব স্তরের মানুষ এ চক্রের কবলে পড়েছেন। বছর দুয়েক আগের এই চক্রটির শুরুর দিকের তৎপরতার মধ্যে ঘটনা রোধে ওইসব এলাকায় পুলিশের টহল শুরু করা হয়। কিন্তু তাতে থেমে নেই এই অপরাধ। ১৪ জানুয়ারি বকশিবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউটের সামনে এই চক্রের কবলে পড়েন বলে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন বিসিএস তথ্য ক্যাডারের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, একজন আমার রিকশার সামনে এসে সালাম দিল। কিন্তু তখনই দু’পাশ থেকে দু’জন আমার পকেটে হাত দিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে রিকশায় করে চলে যায়। বরিশালে কর্তব্যরত এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের হাতেও কোন আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না, আশপাশে পথচারী ছিল, কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনা ঘটিয়ে চক্রটি চলে গেল। পুলিশ পুরো চক্রটিকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজলেও এবং টহলসংখ্যা বাড়ালেও এখনও সফল হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, সম্প্রতি দোয়েল চত্বর থেকে এই চক্রের এক সদস্যকে ধরা হয়েছে। কিন্তু তারপরও চক্রটির অপতৎপরতা বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, চক্রটি নিউ মার্কেট, পলাশী, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল চানখাঁরপুল হয়ে আনন্দবাজার সড়কটি ব্যবহার করছে। চক্রটিকে ধরতে প্রতিদিন পুলিশ সদস্যরা মোটরসাইকেল ও সাদা পোশাকে ডিউটি দিচ্ছে। চক্রটি অভিনব ছিনতাইয়ের জায়গা হিসেবে নিরব ও যানজটবিহীন সড়ক বেছে নেয় বলে চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদারের পর্যবেক্ষণ।
ওয়ারী বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নুরুল আমিন বলেন, দেড় বছর আগে টিকাটুলি অভয় দাস লেনে এই চক্রটির অপতৎপরতা ছিল। অনেকদিন বন্ধ ছিল, কিন্তু ইদানিং সালাম দিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন নেয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। পল্টন থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, তার এলাকায় সালাম দিয়ে টাকা নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। চক্রটিকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে ধাক্কা দিয়ে মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার এক প্রতারক চক্রের তিন জনকে সম্প্রতি ধরা হয়েছে।
২০১৮ সালের ২৮ মার্চ পল্টন থানা পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর সালাম পার্টি নামে অভিনব এই চক্রটি আলোচনায় আসে। জিতু (৪৯), মিজান (৩৫), আকতার হোসেন (৪৫), রিপন (২৮) ও পিন্টু মিয়া (৩১) নামে ওই ব্যক্তিদের কাছে ১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানায়, চক্রটির সদস্যরা উন্নতমানের শার্ট, প্যান্ট, জুতা এমনকি শীতকালে কোট ও টাই পড়ে ঘুরে বেড়ায় টার্গেটের সন্ধানে। বিশেষ কায়দায় তারা চাকু ও চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র নিজেদের প্যান্ট বা কোটের পকেটে লুকিয়ে রাখে। যা বাইরে থেকে দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই।
রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৬ মাঘ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল সানি ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে নিউ মার্কেট থেকে রিকশায় করে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন শামীম। আনন্দবাজার এলাকায় পৌঁছালে এক লোক তাকে সালাম দেয়। তখনই আরও দুটি রিকশায় করে আরও তিনজন এসে সেখানে নামে। শামীমকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে তারা তার পকেট থেকে টাকাগুলো নিয়ে চলে যায়। শামীম বলেন, আশপাশে অনেক পথচারী ছিল। কিন্তু আমার যে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে পথচারীরা তা বুঝতে পারেনি। তাদের কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা ছুরি ছিল না। এত দ্রুত পকেটে হাত দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেল যে চিৎকার করারও সুযোগ পাইনি। গত ১৩ জানুয়ারির এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন তিনি।
শাহবাগ থানা এলাকায় এর আগেও যেমন এরকম ঘটনা ঘটেছে, রাজধানীতেও এমন ঘটনা নতুন নয়। অপেক্ষাকৃত নতুন স্টাইলের এই ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে অর্থ-সম্পদ খোয়াচ্ছে নগরবাসী। পুলিশ বলছে, সালাম পার্টি নামে পরিচিত চক্রটি ছিনতাইয়ে চাকু বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করেও হাতিয়ে নিচ্ছে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পালিয়ে যাওয়ার জন্য কোন দ্রুতগামী যানও ব্যবহার করছে না। এরা টাকাসহ কাউকে অনুসরণ করে রিকশায় করে এসে সালাম দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে তার পকেটে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ঘটনার আকস্মিতায় শিকার ব্যক্তি যেমন হতভম্ব হয়ে যান, পথচারীদেরও ঘটনাটি বুঝতে সময় লাগে। এর মধ্যেই অপরাধীরা পগারপাড় হয়ে যান। শাহবাগ ছাড়াও বংশাল, চকবাজার, পল্টন ও ওয়ারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনার কবল থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। সব স্তরের মানুষ এ চক্রের কবলে পড়েছেন। বছর দুয়েক আগের এই চক্রটির শুরুর দিকের তৎপরতার মধ্যে ঘটনা রোধে ওইসব এলাকায় পুলিশের টহল শুরু করা হয়। কিন্তু তাতে থেমে নেই এই অপরাধ। ১৪ জানুয়ারি বকশিবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউটের সামনে এই চক্রের কবলে পড়েন বলে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন বিসিএস তথ্য ক্যাডারের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, একজন আমার রিকশার সামনে এসে সালাম দিল। কিন্তু তখনই দু’পাশ থেকে দু’জন আমার পকেটে হাত দিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে রিকশায় করে চলে যায়। বরিশালে কর্তব্যরত এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের হাতেও কোন আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না, আশপাশে পথচারী ছিল, কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনা ঘটিয়ে চক্রটি চলে গেল। পুলিশ পুরো চক্রটিকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজলেও এবং টহলসংখ্যা বাড়ালেও এখনও সফল হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, সম্প্রতি দোয়েল চত্বর থেকে এই চক্রের এক সদস্যকে ধরা হয়েছে। কিন্তু তারপরও চক্রটির অপতৎপরতা বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, চক্রটি নিউ মার্কেট, পলাশী, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল চানখাঁরপুল হয়ে আনন্দবাজার সড়কটি ব্যবহার করছে। চক্রটিকে ধরতে প্রতিদিন পুলিশ সদস্যরা মোটরসাইকেল ও সাদা পোশাকে ডিউটি দিচ্ছে। চক্রটি অভিনব ছিনতাইয়ের জায়গা হিসেবে নিরব ও যানজটবিহীন সড়ক বেছে নেয় বলে চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদারের পর্যবেক্ষণ।
ওয়ারী বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নুরুল আমিন বলেন, দেড় বছর আগে টিকাটুলি অভয় দাস লেনে এই চক্রটির অপতৎপরতা ছিল। অনেকদিন বন্ধ ছিল, কিন্তু ইদানিং সালাম দিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন নেয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। পল্টন থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, তার এলাকায় সালাম দিয়ে টাকা নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। চক্রটিকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে ধাক্কা দিয়ে মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার এক প্রতারক চক্রের তিন জনকে সম্প্রতি ধরা হয়েছে।
২০১৮ সালের ২৮ মার্চ পল্টন থানা পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর সালাম পার্টি নামে অভিনব এই চক্রটি আলোচনায় আসে। জিতু (৪৯), মিজান (৩৫), আকতার হোসেন (৪৫), রিপন (২৮) ও পিন্টু মিয়া (৩১) নামে ওই ব্যক্তিদের কাছে ১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানায়, চক্রটির সদস্যরা উন্নতমানের শার্ট, প্যান্ট, জুতা এমনকি শীতকালে কোট ও টাই পড়ে ঘুরে বেড়ায় টার্গেটের সন্ধানে। বিশেষ কায়দায় তারা চাকু ও চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র নিজেদের প্যান্ট বা কোটের পকেটে লুকিয়ে রাখে। যা বাইরে থেকে দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই।