শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ডাক্তার-জনবলসহ নানা সংকটে বেহাল স্বাস্থ্যসেবা

প্রতিনিধি, শরণখোলা (বাগেরহাট)

দুই লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র পাঁচজন। এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ড তালাবদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। টয়লেটগুলো অধিকাংশ ব্যবহারের অনুপযোগী। দুর্গন্ধময় পরিবেশে। এমন সঙ্কট আর অব্যাবস্থাপনায় কোন রকম জোড়া তালি দিয়ে চলছে বাগেরহাটের শরণখোলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। নানা শুন্যতার মাঝেও কিছুটা সেবা মিললেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং স্থানীয় কতিপয় দালালদের দাপটে অনেকটা অসহায় হয়ে উঠেছেন রোগীরা ।

যার ফলে, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিনিয়ত চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নানা বয়সী শত শত মানুষ। বহু অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না তারা।

বছরের পর বছর হাসপাতালটি হাজারও সমস্যা-সঙ্কটে জর্জরিত থাকলেও তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাই সেবা বঞ্চিত হয়ে ক্লিনিক ও এলাকার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে কনসালটেন্ট গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ সহ ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মাত্র ৫ জন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য । এছাড়া ওয়ার্ড বয় তিনজনে আছে দুইজন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঁচ জনের স্থানে আছে মাত্র একজন। আয়া নেই ও প্যাথলজিস্ট নেই। এক্স-রে ১২ বছর এবং ইসিজি মেশিন ছয় বছর ধরে নষ্ট। এই দুই পদে টেকনিশিয়ানও নেই। অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) যন্ত্রপাতি থাকলেও সেখানে কোন অপারেশন হয় না। থিয়েটারটি ব্যবহার না হওয়ায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে। এছাড়া অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনাও রয়েছে অধিকাংশ বিভাগে। ২২ (ফেব্রুয়ারি শনিবার) সকাল ৯টার পর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে অবস্থান করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও কতিপয় দালালদের চরম ব্যাস্ত দেখা যায়। ঘড়ির কাটায় যখন বেলা ১০টা তখন বহিরাগতদের চিকিৎসার উদ্দেশে রুমে প্রবেশ করেন দু’জন মেডিকেল অফিসার। তখনই ডাক্তার ভিজিট প্রতিযোগিতা শুরু হয় ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের মধ্যে। সকাল থেকে দরজার নিকট দাঁড়িয়ে থাকা অনেক অসুস্থ ও বৃদ্বা রোগীদের এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকে পড়ে কোম্পানির লোক। তারপর থেকে ডাক্তারদের মুখের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় অসুস্থ নানা বয়সী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষদের।

২-১ জন রোগী ডাক্তারের নিকট পৌঁছাতে পারলেও বিক্রয় প্রতিনিধিদের চাপে রোগী এবং ডাক্তার উভয়ই বে-সামাল হয়ে পড়ে। বহিরাগত রোগীদের কয়েকজন বলেন, ডক্তার আসার পর কোম্পানির লোকগুলো যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তাতে আমরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছি। এত চাপের মধ্যে ডাক্তারের কাছে কি বলমু তা ভুলে গেছি। ডাক্তারি সেবা নেয়ার সময় বাহিরের লোক পাশে থাকলে লজ্জায় গোপন রোগের কথা বলা যায় না। সে ক্ষেত্রে কষ্ট করে সেবা নিতে এসে কোন লাভ হয় না। তবে, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে, কয়েকজন স্টাফ বলেন, ওষুধ কোম্পানির অনেক প্রতিনিধি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তারা প্রভাব খাটিয়ে হর হামেশা ডাক্তারদের রুমে প্রবেশ করেন কিন্তু চক্ষু লজ্জার কারণে এদের কিছু বলা হয় না। তবে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাসপাতালে ঢুকে অযথা রোগীদের হয়রানি করা তাদের পেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখাটা নিয়ম বহির্ভূত। তবে, কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে এমন চর্চা বন্ধ করা কোন ব্যাপার নয়। অন্যদিকে, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি খ্যাতনামা কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ডাক্তারদের অনুমতি নিয়েই তাদের ভিজিট করি কোন রোগীর ক্ষতি করি না। দুপুর ছাড়াও সকালে ১১টা পর্যন্ত ভিজিট করলে তাতে রোগীদের কোন ক্ষতি হয় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দুপুরের পরে আসতে বলা হয়েছে। তার পরেও যদি কেউ রোগী দেখার টাইমের মধ্যে সাক্ষাত করতে আসেন। সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, দালালের বিষয়টি আমার জানা নেই। পাশাপাশি রোগীদের সকল অভিযোগ সঠিক নয়। এছাড়া মাত্র ৩-৪ জন চিকিৎসক দিয়ে একটা উপজেলার হাজার হাজার মানুষের কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া সম্ভব নয়। তবে, ডাক্তারসহ জনবল সঙ্কট থাকায় চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১০ ফল্গুন ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ডাক্তার-জনবলসহ নানা সংকটে বেহাল স্বাস্থ্যসেবা

প্রতিনিধি, শরণখোলা (বাগেরহাট)

image

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স -সংবাদ

দুই লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র পাঁচজন। এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ড তালাবদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। টয়লেটগুলো অধিকাংশ ব্যবহারের অনুপযোগী। দুর্গন্ধময় পরিবেশে। এমন সঙ্কট আর অব্যাবস্থাপনায় কোন রকম জোড়া তালি দিয়ে চলছে বাগেরহাটের শরণখোলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। নানা শুন্যতার মাঝেও কিছুটা সেবা মিললেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং স্থানীয় কতিপয় দালালদের দাপটে অনেকটা অসহায় হয়ে উঠেছেন রোগীরা ।

যার ফলে, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিনিয়ত চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নানা বয়সী শত শত মানুষ। বহু অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না তারা।

বছরের পর বছর হাসপাতালটি হাজারও সমস্যা-সঙ্কটে জর্জরিত থাকলেও তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাই সেবা বঞ্চিত হয়ে ক্লিনিক ও এলাকার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে কনসালটেন্ট গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ সহ ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মাত্র ৫ জন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য । এছাড়া ওয়ার্ড বয় তিনজনে আছে দুইজন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঁচ জনের স্থানে আছে মাত্র একজন। আয়া নেই ও প্যাথলজিস্ট নেই। এক্স-রে ১২ বছর এবং ইসিজি মেশিন ছয় বছর ধরে নষ্ট। এই দুই পদে টেকনিশিয়ানও নেই। অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) যন্ত্রপাতি থাকলেও সেখানে কোন অপারেশন হয় না। থিয়েটারটি ব্যবহার না হওয়ায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে। এছাড়া অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনাও রয়েছে অধিকাংশ বিভাগে। ২২ (ফেব্রুয়ারি শনিবার) সকাল ৯টার পর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে অবস্থান করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও কতিপয় দালালদের চরম ব্যাস্ত দেখা যায়। ঘড়ির কাটায় যখন বেলা ১০টা তখন বহিরাগতদের চিকিৎসার উদ্দেশে রুমে প্রবেশ করেন দু’জন মেডিকেল অফিসার। তখনই ডাক্তার ভিজিট প্রতিযোগিতা শুরু হয় ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের মধ্যে। সকাল থেকে দরজার নিকট দাঁড়িয়ে থাকা অনেক অসুস্থ ও বৃদ্বা রোগীদের এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকে পড়ে কোম্পানির লোক। তারপর থেকে ডাক্তারদের মুখের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় অসুস্থ নানা বয়সী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষদের।

২-১ জন রোগী ডাক্তারের নিকট পৌঁছাতে পারলেও বিক্রয় প্রতিনিধিদের চাপে রোগী এবং ডাক্তার উভয়ই বে-সামাল হয়ে পড়ে। বহিরাগত রোগীদের কয়েকজন বলেন, ডক্তার আসার পর কোম্পানির লোকগুলো যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তাতে আমরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছি। এত চাপের মধ্যে ডাক্তারের কাছে কি বলমু তা ভুলে গেছি। ডাক্তারি সেবা নেয়ার সময় বাহিরের লোক পাশে থাকলে লজ্জায় গোপন রোগের কথা বলা যায় না। সে ক্ষেত্রে কষ্ট করে সেবা নিতে এসে কোন লাভ হয় না। তবে, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে, কয়েকজন স্টাফ বলেন, ওষুধ কোম্পানির অনেক প্রতিনিধি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তারা প্রভাব খাটিয়ে হর হামেশা ডাক্তারদের রুমে প্রবেশ করেন কিন্তু চক্ষু লজ্জার কারণে এদের কিছু বলা হয় না। তবে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাসপাতালে ঢুকে অযথা রোগীদের হয়রানি করা তাদের পেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখাটা নিয়ম বহির্ভূত। তবে, কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে এমন চর্চা বন্ধ করা কোন ব্যাপার নয়। অন্যদিকে, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি খ্যাতনামা কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ডাক্তারদের অনুমতি নিয়েই তাদের ভিজিট করি কোন রোগীর ক্ষতি করি না। দুপুর ছাড়াও সকালে ১১টা পর্যন্ত ভিজিট করলে তাতে রোগীদের কোন ক্ষতি হয় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দুপুরের পরে আসতে বলা হয়েছে। তার পরেও যদি কেউ রোগী দেখার টাইমের মধ্যে সাক্ষাত করতে আসেন। সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, দালালের বিষয়টি আমার জানা নেই। পাশাপাশি রোগীদের সকল অভিযোগ সঠিক নয়। এছাড়া মাত্র ৩-৪ জন চিকিৎসক দিয়ে একটা উপজেলার হাজার হাজার মানুষের কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া সম্ভব নয়। তবে, ডাক্তারসহ জনবল সঙ্কট থাকায় চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।