একজনের বদলে অন্যজন হাজতে : দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

একজনের অপরাধে আরেকজনকে জেল হাজতে দেয়ার ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

শিশির মনির বলেন, একটি দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনি। আদালত শুনানি নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রকাশিত খবরটি বিবেচনায় নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। ‘এক রুবেলের বদলে জেলে আরেক রুবেল’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। েওই প্রতিবেদনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন শিশির মনির। পরে আদালত বিষয়টি দেখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর সেতুর কাছ থেকে গাঁজা সেবনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা কদমতলা গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলকে (২৬)। ওইদিনই এসআই আবদুস সালাম রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৬ ধারায় মামলা করেন (মামলা নং-১৫)। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়। ৫ দিন পর রুবেল মুক্তি পান। তিন দফা আদালতে হাজিরাও দেন। পরে হঠাৎ তিনি উধাও হয়ে যান। ওই বছর ১০ জুলাই এসআই আবদুস সালাম আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর পরোয়ানাটি দীর্ঘ সময় পড়ে ছিল শিবগঞ্জ থানায়। অবশেষে গত ১০ মার্চ রাতে ওই পরোয়ানামূলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ পাশের জামাইপাড়া গ্রামের মো. মন্টুর ছেলে মো. রুবেলকে (২৩) সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। গ্রামের নাম আলাদা হলেও আসামি ও তার বাবার নামে মিল থাকায় একজন নিরপরাধ অসুস্থ ব্যক্তিকে আড়াই মাস ধরে জেল খাটতে হচ্ছে।

নিরপরাধ রুবেলের বাবা মো. মন্টু ও এলাকাবাসী বলেছেন, রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে ভবন থেকে পড়ে কয়েক বছর আগে বন্দী রুবেলের দুই পা ভেঙে যায়। দুই বছর বিছানায়ই ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা হাঁটতে পারলেও বাম পায়ে শক্তি নেই আজও। অভাবের তাড়নায় সে জামাইপাড়ায় পাঁকা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের গ্রামের ফাঁকা বাড়িতে থেকে বাড়ি দেখাশোনা করতেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে মামলার মূল আসামি রুবেল আলী বছরখানেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। তার বাবা মন্টু আলী বলেন, বছরখানেক আগে রুবেল গ্রাম ছাড়েন, ঠিক কোথায় গেছেন তা জানি না। তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই আমাদের। তবে অনেক চেষ্টার পর মূল আসামি রুবেল আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাকে কয়েক পুরিয়া গাঁজাসহ ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল ধরেছিল শিবগঞ্জ থানার এক কনস্টেবল। পরে এসআই আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যায়। পরে মামলা হালকা করার জন্য সোনা মিয়া নামের একজন দালালের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নেয় পুলিশ। পরে ওই সোনা মিয়াই উকিল ধরে আমার জামিন করান। আমাকে বলা হয়েছিল মামলাটি আর নেই। এর পর আর খোঁজ করিনি। জানতে চাইলে পাঁকা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার হওয়া মো. রুবেল কিছুটা অসুস্থ ও স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে গ্রেফতার করার দিন আমরা বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জানাজানি হয় যে, এই রুবেল আসল রুবেল নয়। শুধু নিজের আর বাবার নামের মিল থাকায় পুলিশ নির্দোষ রুবেলকে গ্রেফতার করেছে। সঠিকভাবে যাচাই করলে এই ভুল হত না। শিবগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আনাম মোলাহ বলেন, তাকে গ্রেফতারের সময় এলাকার তিনজন গ্রামপুলিশও ছিল। তারাও কিছু বলেনি। তাকে থানায় আনার পরও প্রকৃত তথ্যটি কেউ জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এক রুবেলের বদলে আরেক রুবেলকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, মনে হচ্ছে গ্রেফতারের সময় তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। এখন নিশ্চিত হয়েছি আপনারা জানানোর পর। কীভাবে নির্দোষ রুবেলকে বের করা যায় আমরা সেটা ভেবে দেখছি।

আরও খবর
কোর্ট পরিচালনায় স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়নের নির্দেশ চেয়ে রিট
রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তার মৃত্যু
সাদ এরশাদ ও সিটি মেয়র মুখোমুখি
যুক্তরাষ্ট্রে আটকে পড়াদের ফেরতে বিশেষ ফ্লাইট ৬ জুন
বিষধর সাপ ‘রাসেল ভাইপার’ কৃষকরা আতঙ্কের মাঝে ধান কাটছে
ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে কুমেকের যাত্রা শুরু
নতুন কারিকুলামে পাঠদান শুরু হচ্ছে আগামী শিক্ষাবর্ষে
প্রকৌশলী বদলি নিয়ে ইইডিতে তুলকালাম কাণ্ড
বৃদ্ধকে নির্যাতনের ঘটনায় ৩ জন গ্রেফতার
এক কোটি তিন লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল, সহকারী প্রকৌশলী সাসপেন্ড
ভৈরবে মানবপাচারকারী দলের ৩ দালাল গ্রেফতার
শাহজাদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
১৪ হতদরিদ্রের চাল চার বছর ধরে ভোগ করছে তিন ইউপি সদস্য
করোনায় আর্তমানবতার সেবায় ‘সময় ফাউন্ডেশন’

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুন ২০২০ , ২১ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১১ শাওয়াল ১৪৪১

নাম বিভ্রাটে

একজনের বদলে অন্যজন হাজতে : দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

একজনের অপরাধে আরেকজনকে জেল হাজতে দেয়ার ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

শিশির মনির বলেন, একটি দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনি। আদালত শুনানি নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রকাশিত খবরটি বিবেচনায় নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। ‘এক রুবেলের বদলে জেলে আরেক রুবেল’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। েওই প্রতিবেদনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন শিশির মনির। পরে আদালত বিষয়টি দেখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর সেতুর কাছ থেকে গাঁজা সেবনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা কদমতলা গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলকে (২৬)। ওইদিনই এসআই আবদুস সালাম রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৬ ধারায় মামলা করেন (মামলা নং-১৫)। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়। ৫ দিন পর রুবেল মুক্তি পান। তিন দফা আদালতে হাজিরাও দেন। পরে হঠাৎ তিনি উধাও হয়ে যান। ওই বছর ১০ জুলাই এসআই আবদুস সালাম আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর পরোয়ানাটি দীর্ঘ সময় পড়ে ছিল শিবগঞ্জ থানায়। অবশেষে গত ১০ মার্চ রাতে ওই পরোয়ানামূলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ পাশের জামাইপাড়া গ্রামের মো. মন্টুর ছেলে মো. রুবেলকে (২৩) সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। গ্রামের নাম আলাদা হলেও আসামি ও তার বাবার নামে মিল থাকায় একজন নিরপরাধ অসুস্থ ব্যক্তিকে আড়াই মাস ধরে জেল খাটতে হচ্ছে।

নিরপরাধ রুবেলের বাবা মো. মন্টু ও এলাকাবাসী বলেছেন, রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে ভবন থেকে পড়ে কয়েক বছর আগে বন্দী রুবেলের দুই পা ভেঙে যায়। দুই বছর বিছানায়ই ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা হাঁটতে পারলেও বাম পায়ে শক্তি নেই আজও। অভাবের তাড়নায় সে জামাইপাড়ায় পাঁকা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের গ্রামের ফাঁকা বাড়িতে থেকে বাড়ি দেখাশোনা করতেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে মামলার মূল আসামি রুবেল আলী বছরখানেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। তার বাবা মন্টু আলী বলেন, বছরখানেক আগে রুবেল গ্রাম ছাড়েন, ঠিক কোথায় গেছেন তা জানি না। তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই আমাদের। তবে অনেক চেষ্টার পর মূল আসামি রুবেল আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাকে কয়েক পুরিয়া গাঁজাসহ ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল ধরেছিল শিবগঞ্জ থানার এক কনস্টেবল। পরে এসআই আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যায়। পরে মামলা হালকা করার জন্য সোনা মিয়া নামের একজন দালালের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নেয় পুলিশ। পরে ওই সোনা মিয়াই উকিল ধরে আমার জামিন করান। আমাকে বলা হয়েছিল মামলাটি আর নেই। এর পর আর খোঁজ করিনি। জানতে চাইলে পাঁকা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার হওয়া মো. রুবেল কিছুটা অসুস্থ ও স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে গ্রেফতার করার দিন আমরা বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জানাজানি হয় যে, এই রুবেল আসল রুবেল নয়। শুধু নিজের আর বাবার নামের মিল থাকায় পুলিশ নির্দোষ রুবেলকে গ্রেফতার করেছে। সঠিকভাবে যাচাই করলে এই ভুল হত না। শিবগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আনাম মোলাহ বলেন, তাকে গ্রেফতারের সময় এলাকার তিনজন গ্রামপুলিশও ছিল। তারাও কিছু বলেনি। তাকে থানায় আনার পরও প্রকৃত তথ্যটি কেউ জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এক রুবেলের বদলে আরেক রুবেলকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, মনে হচ্ছে গ্রেফতারের সময় তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। এখন নিশ্চিত হয়েছি আপনারা জানানোর পর। কীভাবে নির্দোষ রুবেলকে বের করা যায় আমরা সেটা ভেবে দেখছি।