সাত দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

নিরাপত্তাহীনতায় ছাত্রীর পরিবার

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী প্রিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাত দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা জামিল মিয়া।

ওই মেয়েকে উত্যক্তকারী প্রতিবেশী প্রান্ত নামের এক বখাটে যুবকের সঙ্গে যৌতুকসহ বিয়েতে রাজি না হওয়ায় প্রান্ত ও তার লোকজনরা প্রিয়াকে অপহরণ করে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে বলে প্রিয়ার বাবা অভিযোগ করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় মামলা না নেয়ায় উত্যক্তকারী প্রান্ত ও তার লোকজনদের হুমকির মুখে জামিল মিয়া তার পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া ছুরিপাড়া গ্রামের ইসরাফিল হোসেন বাবলুর বখাটে ছেলে মহাইমিনুল ইসলাম প্রান্ত (২২) প্রতিবেশী জামিল মিয়ার মেয়ে প্রিয়া আক্তারকে (১১) স্কুলে যাওয়া আসার পথে দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত ও যৌন হয়রানি করে আসছিল। প্রিয়া আক্তার জাঙ্গালিয়া ডিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। মেয়েটি তার বাবা-মাকে ঘটনা খুলে বললে তার বাবা জামিল মিয়া স্থানীয়ভাবে এ ঘটনার বিচার চাইতে গেলে বখাটে যুবক প্রান্ত ও তার পরিবারের লোকজনরা উল্টো তাকে ও তার মেয়েকে হত্যার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে প্রান্ত আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে মেয়েটির ওপর। মেয়েটিকে হত্যার হুমকি ও নানান লোভ দেখিয়ে জোরপূর্বক তার সঙ্গে অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে তুলে। প্রান্ত ও তার পরিবারের সদস্যরা গত ২৪ মে রাতে প্রিয়াদের বাড়িতে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকার যৌতুকসহ প্রিয়াকে জোর করে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জামিল মিয়া তার মেয়েকে ওই বখাটে যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি না হলে প্রিয়াকে অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর ৩০ মে রাতে প্রিয়া আক্তার প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। পরের দিন ৩১ মে রাত ২টার দিকে বাড়ির কাছেই স্থানীয় মজনু মিয়ার ধান ক্ষেতের আইলে মুখে বিষের গন্ধসহ অর্ধমৃত অবস্থায় প্রিয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ জুন ভোর পাঁচটার দিকে প্রিয়া মারা যায়। খবর পেয়ে জামালপুর সদর থানা পুলিশ জামালপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে মৃত প্রিয়ার মরদেহের সুরতহাল লিখে নেয় এবং ময়নাতদন্ত করার পর মরদেহ হস্তান্তর করলে বাড়িতে নিয়ে প্রিয়াকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় প্রিয়ার বাবা জামিল মিয়া বাদী হয়ে ১ জুন মামলা দায়েরের উদ্দেশে প্রিয়াকে উত্যক্তকারী প্রান্ত মিয়া ও তার বাবা ইসরাফিল হোসেন বাবলুসহ পাঁচজনকে আসামি করে মাদারগঞ্জ মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। মেয়েকে বিয়ে না দেয়ায় উত্যক্তকারী প্রান্ত ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রিয়াকে অপহরণ করে তাকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর ধান ক্ষেতে আইলে ফেলে রেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি। প্রিয়ার বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার সেই অভিযোগটি আমলে নেয়নি মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ। তিনি এ ঘটনায় দাখিল করা তার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করে আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে মাদারগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, জামিল মিয়ার মেয়ে প্রান্ত হত্যার অভিযোগে মাদারগঞ্জ থানায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে জামালপুর সদর থানা পুলিশের করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও আমাদের হাতে আসেনি। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পাশাপাশি মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দিলে বিষয়টিকে মামলা হিসেবে রুজু করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর
মশক নিধন কার্যক্রম শুরু আজ থেকে
পরিবেশ সংরক্ষণে যত্নবান হলে ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়া সহজ হতো : তথ্যমন্ত্রী
বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যু
আম পরিবহনে ‘ম্যাংগো’ স্পেশাল ট্রেন
মানবিক সহায়তায় ৯ হাজার টন চাল ও ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ
স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় অনিয়ম খতিয়ে দেখা হচ্ছে দুদক চেয়ারম্যান
মন্দায় টিকে থাকতে কৃষিখাতের ওপর জোর দিতে হবে মির্জা ফখরুল
চেয়ারম্যান রাঢ়ী গ্রেফতার
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা তালিকায় বিত্তশালীদের নাম
জেলেরা নেই জেলে তালিকায়
গোয়েন্দা পুলিশের ওপর হামলা, ৮ আসামি ছিনতাই
হোটেল-মোটেল খোলার প্রস্তুতি
স্নানযাত্রা উৎসব পালিত
করোনা পরিস্থিতিতে বিয়ের অনুষ্ঠান, তিন জনকে জরিমানা
কক্সবাজার ‘রেড জোনে’ আবারও লকডাউন

শনিবার, ০৬ জুন ২০২০ , ২৩ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১৩ শাওয়াল ১৪৪১

জামালপুরে ছাত্রী হত্যা

সাত দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

নিরাপত্তাহীনতায় ছাত্রীর পরিবার

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী প্রিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাত দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা জামিল মিয়া।

ওই মেয়েকে উত্যক্তকারী প্রতিবেশী প্রান্ত নামের এক বখাটে যুবকের সঙ্গে যৌতুকসহ বিয়েতে রাজি না হওয়ায় প্রান্ত ও তার লোকজনরা প্রিয়াকে অপহরণ করে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে বলে প্রিয়ার বাবা অভিযোগ করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় মামলা না নেয়ায় উত্যক্তকারী প্রান্ত ও তার লোকজনদের হুমকির মুখে জামিল মিয়া তার পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া ছুরিপাড়া গ্রামের ইসরাফিল হোসেন বাবলুর বখাটে ছেলে মহাইমিনুল ইসলাম প্রান্ত (২২) প্রতিবেশী জামিল মিয়ার মেয়ে প্রিয়া আক্তারকে (১১) স্কুলে যাওয়া আসার পথে দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত ও যৌন হয়রানি করে আসছিল। প্রিয়া আক্তার জাঙ্গালিয়া ডিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। মেয়েটি তার বাবা-মাকে ঘটনা খুলে বললে তার বাবা জামিল মিয়া স্থানীয়ভাবে এ ঘটনার বিচার চাইতে গেলে বখাটে যুবক প্রান্ত ও তার পরিবারের লোকজনরা উল্টো তাকে ও তার মেয়েকে হত্যার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে প্রান্ত আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে মেয়েটির ওপর। মেয়েটিকে হত্যার হুমকি ও নানান লোভ দেখিয়ে জোরপূর্বক তার সঙ্গে অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে তুলে। প্রান্ত ও তার পরিবারের সদস্যরা গত ২৪ মে রাতে প্রিয়াদের বাড়িতে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকার যৌতুকসহ প্রিয়াকে জোর করে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জামিল মিয়া তার মেয়েকে ওই বখাটে যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি না হলে প্রিয়াকে অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর ৩০ মে রাতে প্রিয়া আক্তার প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। পরের দিন ৩১ মে রাত ২টার দিকে বাড়ির কাছেই স্থানীয় মজনু মিয়ার ধান ক্ষেতের আইলে মুখে বিষের গন্ধসহ অর্ধমৃত অবস্থায় প্রিয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ জুন ভোর পাঁচটার দিকে প্রিয়া মারা যায়। খবর পেয়ে জামালপুর সদর থানা পুলিশ জামালপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে মৃত প্রিয়ার মরদেহের সুরতহাল লিখে নেয় এবং ময়নাতদন্ত করার পর মরদেহ হস্তান্তর করলে বাড়িতে নিয়ে প্রিয়াকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় প্রিয়ার বাবা জামিল মিয়া বাদী হয়ে ১ জুন মামলা দায়েরের উদ্দেশে প্রিয়াকে উত্যক্তকারী প্রান্ত মিয়া ও তার বাবা ইসরাফিল হোসেন বাবলুসহ পাঁচজনকে আসামি করে মাদারগঞ্জ মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। মেয়েকে বিয়ে না দেয়ায় উত্যক্তকারী প্রান্ত ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রিয়াকে অপহরণ করে তাকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর ধান ক্ষেতে আইলে ফেলে রেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি। প্রিয়ার বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার সেই অভিযোগটি আমলে নেয়নি মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ। তিনি এ ঘটনায় দাখিল করা তার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করে আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে মাদারগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, জামিল মিয়ার মেয়ে প্রান্ত হত্যার অভিযোগে মাদারগঞ্জ থানায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে জামালপুর সদর থানা পুলিশের করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও আমাদের হাতে আসেনি। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পাশাপাশি মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দিলে বিষয়টিকে মামলা হিসেবে রুজু করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।