চাকরির আবেদনের বয়স বাড়ানো জরুরি

প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী দেশের চাকরির বাজারে যোগদান করেন। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার। এছাড়াও সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না এরকম মানুষ রয়েছেন প্রায় ৬৬ লাখ।

দেশে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভর্তি হয় ৬-৭ বছর বয়সে। সেই শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করতে করতে জীবনের ১৬ থেকে ১৭ বছর চলে যায়। তারপর ১৮-১৯ বছরে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। ১৯-২০ বছরের দিকে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়, যেখান থেকে বের হতেই লাগে কমপক্ষে পাঁচ বছর। আবার দেখা যায়, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে সেশন জট কোন কারণ ছাড়াই কেড়ে নেয় আরো কয়েক বছর। যার ফলে স্বভাবতই একজন শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করতেই তার জীবনের ২৭ বছর পার করতে হয়? দেশের চাকরির বাজারে আবেদনেরও একটা সময়সীমা আছে ৩০ বছর (যদিও কিছু ক্ষেত্রে ৩২ করা হয়েছে)। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা শেষে একজন শিক্ষার্থীর জীবনটা নির্ধারণ হয় সর্বোচ্চ ৩ বছরের চাকরির যুদ্ধে।

এতকিছুর মাঝেও যখন একজন সম্মান শেষ করা শিক্ষার্থী চাকরির আবেদন করে, তখনই আবেদনের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়া হয় অভিজ্ঞতা। বলা হয়, ওই পদের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। যেখানে উচ্চশিক্ষা শেষ করতেই একজন শিক্ষার্থীকে ২৭ বছর পার করে দিতে হয়, সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা খোঁজা কতটা যৌক্তিক?

চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই প্রয়োজন, তাই বলে এভাবে নতুনদের কোণঠাসা করে ফেলা ঠিক নয়। এমনও হতে পারে যে, নতুন আবেদনকারীরা অভিজ্ঞ প্রার্থীর চেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন। এ বিষয়ে নমনীয়তা আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে করোনার এই মহামারীর আকালে চাকরির আবেদনের বয়সসীমাও বাড়ানো জরুরি। এই বিশেষ সময়ের কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যেসব চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, সেখানে যেন তাদের আবেদনে বয়সের শর্ত শিথিল করা হয়।

মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন

বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ , ৬ মাঘ ১৪২৭, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

চাকরির আবেদনের বয়স বাড়ানো জরুরি

প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী দেশের চাকরির বাজারে যোগদান করেন। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার। এছাড়াও সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না এরকম মানুষ রয়েছেন প্রায় ৬৬ লাখ।

দেশে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভর্তি হয় ৬-৭ বছর বয়সে। সেই শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করতে করতে জীবনের ১৬ থেকে ১৭ বছর চলে যায়। তারপর ১৮-১৯ বছরে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। ১৯-২০ বছরের দিকে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়, যেখান থেকে বের হতেই লাগে কমপক্ষে পাঁচ বছর। আবার দেখা যায়, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে সেশন জট কোন কারণ ছাড়াই কেড়ে নেয় আরো কয়েক বছর। যার ফলে স্বভাবতই একজন শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করতেই তার জীবনের ২৭ বছর পার করতে হয়? দেশের চাকরির বাজারে আবেদনেরও একটা সময়সীমা আছে ৩০ বছর (যদিও কিছু ক্ষেত্রে ৩২ করা হয়েছে)। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা শেষে একজন শিক্ষার্থীর জীবনটা নির্ধারণ হয় সর্বোচ্চ ৩ বছরের চাকরির যুদ্ধে।

এতকিছুর মাঝেও যখন একজন সম্মান শেষ করা শিক্ষার্থী চাকরির আবেদন করে, তখনই আবেদনের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়া হয় অভিজ্ঞতা। বলা হয়, ওই পদের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। যেখানে উচ্চশিক্ষা শেষ করতেই একজন শিক্ষার্থীকে ২৭ বছর পার করে দিতে হয়, সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা খোঁজা কতটা যৌক্তিক?

চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই প্রয়োজন, তাই বলে এভাবে নতুনদের কোণঠাসা করে ফেলা ঠিক নয়। এমনও হতে পারে যে, নতুন আবেদনকারীরা অভিজ্ঞ প্রার্থীর চেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন। এ বিষয়ে নমনীয়তা আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে করোনার এই মহামারীর আকালে চাকরির আবেদনের বয়সসীমাও বাড়ানো জরুরি। এই বিশেষ সময়ের কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যেসব চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, সেখানে যেন তাদের আবেদনে বয়সের শর্ত শিথিল করা হয়।

মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন