ই-বর্জ্য মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলুন

প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আশীর্বাদে আমাদের জীবন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান, বিনোদনের মাধ্যম তথা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্য হচ্ছে আমাদের নিত্য-ব্যবহারের সঙ্গী। চাইলেও আমরা এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারব না। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রো ওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিভিডি প্লেয়ার, সিএফএল বাল্বের মতো পণ্যগুলো জীবনকে যতটা সহজ করছে তেমনি এগুলো ব্যবহারের কয়েক বছর পর কর্মক্ষমতা শেষ হলে ফেলে দেয়া হচ্ছে যেখানে সেখানে, যা সবই ইলেকট্রনিকস ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্যরে অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও মানবসভ্যতার জন্য যেসব সংকট উল্লেখযোগ্য তন্মধ্যে ই-বর্জ্য অন্যতম। আমরা কী কখনও ভেবে দেখেছি- আমরা এই বর্জ্যগুলো কী করি, কোথায় ফেলি কিংবা পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে কিনা?

তথ্যমতে- গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। বাংলাদেশ ইলেকট্রনিকস মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে- আমাদের দেশে প্রতি বছর ৩২ কোটি টন ইলেকট্রনিকস ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর ৫০ হাজারের মতো কম্পিউটার আমদানি করা হয়। ফলে এটা সহজেই অনুমেয় যে এই কয়েক কোটি পণ্য থেকে কী পরিমাণ ই-বর্জ্য তৈরি হয়। বেসরকারি সংস্থা এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় চার লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন।

প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্তভাবে ই-বর্জ্য বাড়ার ফলে পরিবেশ ও মানবসভ্যতা এক ভয়াবহ হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। কেননা, যত্রতত্র ই-বর্জ্যে ফেলার কারণে ই-বর্জ্যে থাকা সিসা, মার্কারি, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও বেরোলিয়ামসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া এসব ক্ষতিকর উপাদান সবুজ উদ্ভিদের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে- ই-বর্জ্যে থাকা ক্ষতিকর উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, যকৃৎ, বৃক্ক, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, ত্বক ইত্যাদির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুতারাং- ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিকল্পনা না নিলে আগামীতে এগুলো জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ তথা জলবায়ু সংকটের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি তৈরি করবে।

ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। এ বিষয়ে ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পাশাপাশি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যত্রতত্র ই-বর্জ্য না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং অপরকে সচেতন করা।

সর্বোপরি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ এবং জনসাধারণের সচেতনতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় পারে ই-বর্জ্য মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে।

মোহম্মদ শাহিন

বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ , ৬ মাঘ ১৪২৭, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ই-বর্জ্য মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলুন

প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আশীর্বাদে আমাদের জীবন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান, বিনোদনের মাধ্যম তথা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্য হচ্ছে আমাদের নিত্য-ব্যবহারের সঙ্গী। চাইলেও আমরা এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারব না। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রো ওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিভিডি প্লেয়ার, সিএফএল বাল্বের মতো পণ্যগুলো জীবনকে যতটা সহজ করছে তেমনি এগুলো ব্যবহারের কয়েক বছর পর কর্মক্ষমতা শেষ হলে ফেলে দেয়া হচ্ছে যেখানে সেখানে, যা সবই ইলেকট্রনিকস ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্যরে অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও মানবসভ্যতার জন্য যেসব সংকট উল্লেখযোগ্য তন্মধ্যে ই-বর্জ্য অন্যতম। আমরা কী কখনও ভেবে দেখেছি- আমরা এই বর্জ্যগুলো কী করি, কোথায় ফেলি কিংবা পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে কিনা?

তথ্যমতে- গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। বাংলাদেশ ইলেকট্রনিকস মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে- আমাদের দেশে প্রতি বছর ৩২ কোটি টন ইলেকট্রনিকস ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর ৫০ হাজারের মতো কম্পিউটার আমদানি করা হয়। ফলে এটা সহজেই অনুমেয় যে এই কয়েক কোটি পণ্য থেকে কী পরিমাণ ই-বর্জ্য তৈরি হয়। বেসরকারি সংস্থা এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় চার লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন।

প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্তভাবে ই-বর্জ্য বাড়ার ফলে পরিবেশ ও মানবসভ্যতা এক ভয়াবহ হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। কেননা, যত্রতত্র ই-বর্জ্যে ফেলার কারণে ই-বর্জ্যে থাকা সিসা, মার্কারি, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও বেরোলিয়ামসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া এসব ক্ষতিকর উপাদান সবুজ উদ্ভিদের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে- ই-বর্জ্যে থাকা ক্ষতিকর উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, যকৃৎ, বৃক্ক, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, ত্বক ইত্যাদির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুতারাং- ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিকল্পনা না নিলে আগামীতে এগুলো জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ তথা জলবায়ু সংকটের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি তৈরি করবে।

ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। এ বিষয়ে ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পাশাপাশি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যত্রতত্র ই-বর্জ্য না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং অপরকে সচেতন করা।

সর্বোপরি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ এবং জনসাধারণের সচেতনতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় পারে ই-বর্জ্য মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে।

মোহম্মদ শাহিন