অবসরের ১৩ মাসেও পেনশন বঞ্চিত সাবেক অধ্যক্ষ

বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ টি.এম সোহেলের বিরুদ্ধে সাবেক অধ্যক্ষ এস.এম মনোয়ার হোসেনের কাছে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ না দেয়ায় অবসর গ্রহণের প্রায় ১৩ মাস পার হলেও অবসরকালীন ভাতা (পেনশন) পাচ্ছেন না তিনি।

গত রোববার সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক কলম সৈনিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন প্রফেসর এস.এম মনোয়ার হোসেন। এ সময় তার সাথে ওই কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাও উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে প্রফেসর মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমি অবসর গ্রহণ করি। এরপর ১ জুলাই বর্তমান অধ্যক্ষ বরাবর পেনশন সংক্রান্ত ফাইল জমা দিতে গেলে তিনি নেননি। এর আগে না দাবি প্রত্যয়নের জন্য দফায় দফায় আবেদন করলেও নতুন অধ্যক্ষ টি এম সোহেল কোন প্রত্যয়নপত্র দেননি। বাধ্য হয়ে আমি ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর তারিখে ডাকযোগে পেনশন সংক্রান্ত ফাইল বর্তমান অধ্যক্ষ বরাবর পাঠাই। তারপরও অধ্যক্ষ টি এম সোহেল সেটাকে আমলে নেননি। এভাবে আড়াই মাস চলে যাবার পর ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে পেনশন ফাইল অগ্রায়নের জন্য ডাকযোগে চিঠি অধ্যক্ষ বরাবর পাঠাই। ওই চিঠি পাবার পর ১৯ ডিসেম্বর তারিখে অধ্যক্ষ টি এম সোহেল পেনশন আনুতোষিক নির্ধারণ ও মঞ্জুরির ফাইলটি অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে আমাকে পাল্টা চিঠি দেন। আমি ২৪ ডিসেম্বর ওই চিঠিটির যুক্তিপূর্ণ জবাব দেই। এরপর দীর্ঘ ৪ থেকে ৫ মাস অতিবাহিত হলেও আমার পেনশন ফাইলে কোন অগ্রগতি দেখা যায় না।

পরে বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তারিখে হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলামকে দিয়ে উকিল নোটিস পাঠাই। নোটিস পাওয়ার পর অবশেষে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে পেনশনের ফাইলটি মাউশিতে পাঠান অধ্যক্ষ সোহেল। তবে ফাইলটি যাতে কোনক্রমে পাস না হয় সে লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাঠান। সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অডিটের ব্রডশিট জবাব সংক্রান্ত তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি। এরপর মাউশির চাহিদার প্রেক্ষিতে অডিটের ১ বছর ৯ মাস পর ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রডশিট জবাব পাঠিয়ে দেন তিনি। সেখানে অনুচ্ছেদ ৩ পরিশিষ্ট ১ এর জবাবের প্রকৃত তথ্য উপাত্ত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩ টাকার পার্থক্য দেখিয়ে জবাব দিয়েছেন। প্রফেসর মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় অধ্যক্ষ এমনটা করছেন। নিজের আস্থাভাজন শিক্ষককে দিয়ে সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার কাছে ঘুষের প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ সোহেল। এ বিষয়ে সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা বলেন, অভ্যন্তরীণ অডিট চলাকালীন সময়ে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ আমার কাছে এসে প্রফেসর মনোয়ার স্যারের পেনশন ও অডিট নিষ্পত্তি করতে ৩০-৩২ লাখ টাকা অধ্যক্ষের টেবিলে রাখতে বলেছিলেন।

এদিকে ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ টি. এম সোহেল বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি যথাযথ নিয়মে প্রফেসর মনোয়ার হোসেনের পেনশন সংক্রান্ত ফাইল মাউশিতে পাঠিয়েছি।

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ

অবসরের ১৩ মাসেও পেনশন বঞ্চিত সাবেক অধ্যক্ষ

বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ টি.এম সোহেলের বিরুদ্ধে সাবেক অধ্যক্ষ এস.এম মনোয়ার হোসেনের কাছে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ না দেয়ায় অবসর গ্রহণের প্রায় ১৩ মাস পার হলেও অবসরকালীন ভাতা (পেনশন) পাচ্ছেন না তিনি।

গত রোববার সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক কলম সৈনিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন প্রফেসর এস.এম মনোয়ার হোসেন। এ সময় তার সাথে ওই কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাও উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে প্রফেসর মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমি অবসর গ্রহণ করি। এরপর ১ জুলাই বর্তমান অধ্যক্ষ বরাবর পেনশন সংক্রান্ত ফাইল জমা দিতে গেলে তিনি নেননি। এর আগে না দাবি প্রত্যয়নের জন্য দফায় দফায় আবেদন করলেও নতুন অধ্যক্ষ টি এম সোহেল কোন প্রত্যয়নপত্র দেননি। বাধ্য হয়ে আমি ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর তারিখে ডাকযোগে পেনশন সংক্রান্ত ফাইল বর্তমান অধ্যক্ষ বরাবর পাঠাই। তারপরও অধ্যক্ষ টি এম সোহেল সেটাকে আমলে নেননি। এভাবে আড়াই মাস চলে যাবার পর ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে পেনশন ফাইল অগ্রায়নের জন্য ডাকযোগে চিঠি অধ্যক্ষ বরাবর পাঠাই। ওই চিঠি পাবার পর ১৯ ডিসেম্বর তারিখে অধ্যক্ষ টি এম সোহেল পেনশন আনুতোষিক নির্ধারণ ও মঞ্জুরির ফাইলটি অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে আমাকে পাল্টা চিঠি দেন। আমি ২৪ ডিসেম্বর ওই চিঠিটির যুক্তিপূর্ণ জবাব দেই। এরপর দীর্ঘ ৪ থেকে ৫ মাস অতিবাহিত হলেও আমার পেনশন ফাইলে কোন অগ্রগতি দেখা যায় না।

পরে বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তারিখে হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলামকে দিয়ে উকিল নোটিস পাঠাই। নোটিস পাওয়ার পর অবশেষে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে পেনশনের ফাইলটি মাউশিতে পাঠান অধ্যক্ষ সোহেল। তবে ফাইলটি যাতে কোনক্রমে পাস না হয় সে লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাঠান। সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অডিটের ব্রডশিট জবাব সংক্রান্ত তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি। এরপর মাউশির চাহিদার প্রেক্ষিতে অডিটের ১ বছর ৯ মাস পর ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রডশিট জবাব পাঠিয়ে দেন তিনি। সেখানে অনুচ্ছেদ ৩ পরিশিষ্ট ১ এর জবাবের প্রকৃত তথ্য উপাত্ত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩ টাকার পার্থক্য দেখিয়ে জবাব দিয়েছেন। প্রফেসর মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় অধ্যক্ষ এমনটা করছেন। নিজের আস্থাভাজন শিক্ষককে দিয়ে সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার কাছে ঘুষের প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ সোহেল। এ বিষয়ে সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা বলেন, অভ্যন্তরীণ অডিট চলাকালীন সময়ে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ আমার কাছে এসে প্রফেসর মনোয়ার স্যারের পেনশন ও অডিট নিষ্পত্তি করতে ৩০-৩২ লাখ টাকা অধ্যক্ষের টেবিলে রাখতে বলেছিলেন।

এদিকে ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ টি. এম সোহেল বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি যথাযথ নিয়মে প্রফেসর মনোয়ার হোসেনের পেনশন সংক্রান্ত ফাইল মাউশিতে পাঠিয়েছি।