১৩ বছর পর ধর্ষণের শাস্তি, মিলল সন্তানের স্বীকৃতি

রংপুরের পীরগাছায় ধর্ষণের পর জন্ম নেয়া শিশুর পিতৃত্বের স্বীকৃতি পেলেও ধর্ষকের শাস্তি মিলল আদালতের রায়ে। এছাড়া জন্ম নেয়া শিশুর ২১ বছর বয়স পর্যন্ত ভরণপোষণের ব্যয়ভার আসামির সহায়সম্পদ বিক্রি করে প্রদান করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বিকেলে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২-এর বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় প্রদান করেন। আদালত ধর্ষণের অভিযোগে আসামি শফিকুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর পীরগাছা উপজেলার হানিফ উদ্দিনের কন্যাকে একই গ্রামের আসামি শফিকুল ইসলাম পিতা মজিবর রহমান বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। এতে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে আসামি শফিকুল তার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করার কথা বলে, কিন্তু মেয়েটি রাজি না হওয়ায় আসামি শফিকুল মেয়েটিকে বিয়ে করার বিষয়টি অস্বিকার করে। এমনকি তার গর্ভের সন্তানকেও অস্বীকার করে। এ ঘটনায় ওই মেয়ে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করে।

আদালত মেয়েটির গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুটির পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ টেস্ট করার আদেশ দেন। ডিএনএ টেস্টে শিশুটি আসামি শফিকুলের বলে প্রমাণিত হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মামলাটি বিচারকালে ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ শেষে আসামি শফিকুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। মামলায় অন্য দুই আসামি মজিরন বেগম ও মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাসের আদেশ দেন।

বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২-এর বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালত ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে সন্তানের স্বীকৃতি ও তার ভরণ-পোষণের জন্য সম্পদ বিক্রি করার আদেশ দেয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো বলে জানান তিনি। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী জগলুল ইসলাম জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রায় ঘোষণার সময় মামলার বাদী তরুণী তার সন্তানকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তার সন্তানের বয়স এখন ১১ বছর। অনেক কষ্ট করে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রায়ে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসামির লোকজন সাজার আদেশ হওয়ার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণেই তাকে নানা হুমকি প্রদান করেছে। তারা দেখে নেবে প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়বে ইত্যাদি বলেছে। সে কারণে তার ও তার সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

১৩ বছর পর ধর্ষণের শাস্তি, মিলল সন্তানের স্বীকৃতি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

image

রংপুরের পীরগাছায় ধর্ষণের পর জন্ম নেয়া শিশুর পিতৃত্বের স্বীকৃতি পেলেও ধর্ষকের শাস্তি মিলল আদালতের রায়ে। এছাড়া জন্ম নেয়া শিশুর ২১ বছর বয়স পর্যন্ত ভরণপোষণের ব্যয়ভার আসামির সহায়সম্পদ বিক্রি করে প্রদান করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বিকেলে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২-এর বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় প্রদান করেন। আদালত ধর্ষণের অভিযোগে আসামি শফিকুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর পীরগাছা উপজেলার হানিফ উদ্দিনের কন্যাকে একই গ্রামের আসামি শফিকুল ইসলাম পিতা মজিবর রহমান বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। এতে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে আসামি শফিকুল তার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করার কথা বলে, কিন্তু মেয়েটি রাজি না হওয়ায় আসামি শফিকুল মেয়েটিকে বিয়ে করার বিষয়টি অস্বিকার করে। এমনকি তার গর্ভের সন্তানকেও অস্বীকার করে। এ ঘটনায় ওই মেয়ে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করে।

আদালত মেয়েটির গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুটির পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ টেস্ট করার আদেশ দেন। ডিএনএ টেস্টে শিশুটি আসামি শফিকুলের বলে প্রমাণিত হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মামলাটি বিচারকালে ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ শেষে আসামি শফিকুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। মামলায় অন্য দুই আসামি মজিরন বেগম ও মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাসের আদেশ দেন।

বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২-এর বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালত ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে সন্তানের স্বীকৃতি ও তার ভরণ-পোষণের জন্য সম্পদ বিক্রি করার আদেশ দেয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো বলে জানান তিনি। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী জগলুল ইসলাম জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রায় ঘোষণার সময় মামলার বাদী তরুণী তার সন্তানকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তার সন্তানের বয়স এখন ১১ বছর। অনেক কষ্ট করে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রায়ে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসামির লোকজন সাজার আদেশ হওয়ার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণেই তাকে নানা হুমকি প্রদান করেছে। তারা দেখে নেবে প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়বে ইত্যাদি বলেছে। সে কারণে তার ও তার সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।