ভোজ্য তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ

দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে এবং ভোজ্যতেলের সরকার নির্ধারিত দাম ধরে রাখতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাই সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর কথা ভাবছে সরকার। জানা গেছে, ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় অপরিশোধিত তেল আমদানিতে প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট হ্রাস করে ৫ শতাংশ করতে পারে জাতীয় রাজস্ববোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের মূসকনীতির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রস্তাবনাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার নূরুল হকের সই করা চিঠি এনবিআর চেয়ারম্যান আবুহেনা রহমাতুল মুনিম বরাবর পাঠানো হয়েছিল। যা নিয়ে এনবিআরে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় আরোপিত ভ্যাট আরও যৌক্তিক ও নিম্নহারে নির্ধারণের জন্য এনবিআরকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ দাম ১১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাস্তবে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। বিপণন ও পরিবেশকবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাশেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দামের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের ঘোষণা দেন।

ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিলিটার সয়াবিন (খোলা) তেলের দাম মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিনের মিলগেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মিলগেট মূল্য ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬২৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামতেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় দেশের পরিশোধনকারী মিল ও ভোক্তাস্বার্থ বিবেচনায় ভোজ্যতেলের মূল্য সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ।

এর আগে গত রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘রমজানের সময় আমাদের বাজারে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এজন্য আমরা ২৫ হাজার মেট্রিকটন ভোজ্যতেল আমদানি করতে যাচ্ছি টিসিবির মাধ্যমে। যাতে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো যেতে পারে। সব রকম ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি। তবে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াটাই জরুরি অনেকখানি। তবে কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করা যায় না। যেমন ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ তেল আমদানি করতে হয়। এই বাজারটা আমাদের ওপর না। আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা আমদানির দামে ওপর একটা সার্বজনীন যে দামটা মানবে সে রকম একটা দাম নির্ধারণ করে দেই, সেটা হলো তেল। যেসব জিনিস আমাদের আমদানি করতে হবে সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে। টিসিবি তো সারাদেশের সব জায়গায় রাখতে পারবে না। টিসিবি সাহায্য করবে নিম্ন আয়ের মানুষকে। সেজন্য আমাদের সবকিছু রয়েছে। কয়েকটা আইটেম নিয়ে আমাদের সমস্যা। যেমন : তেল, পেঁয়াজ। পেঁয়াজ আমাদের দেশে ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। বাকি ২৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এটা যদি কোন রকম ৯০ শতাংশে যেতে পারতাম তাহলে কমে যেতো। তবে আমাদের পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করাটা ঠিক হবে না। কারণ ওদের দেশেও পেঁয়াজ নিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যার জন্য আমাদের বিকল্প বাজার থেকে ব্যবস্থা করতে হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও জানান, মায়ানমার থেকে রিজনেবল প্রাইসে আনা যেতে পারে। আরও কিছু জিনিস আমাদের রয়েছে যেগুলো রমজানের পণ্য। যেমন : ছোলা, খেজুর, ডাল এসব জিনিস আমদানি করতে হয়। এগুলো টিসিবির মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি করা হচ্ছে। সবকিছু বুক করা হয়ে গেছে। সবকিছু এসে যাবে। রমজানের সময় সমস্যা যেন না হয় তার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।

মঙ্গলবার, ০৯ মার্চ ২০২১ , ২৪ ফাল্গুন ১৪২৭ ২৪ রজব ১৪৪২

ভোজ্য তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে এবং ভোজ্যতেলের সরকার নির্ধারিত দাম ধরে রাখতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাই সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর কথা ভাবছে সরকার। জানা গেছে, ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় অপরিশোধিত তেল আমদানিতে প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট হ্রাস করে ৫ শতাংশ করতে পারে জাতীয় রাজস্ববোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের মূসকনীতির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রস্তাবনাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার নূরুল হকের সই করা চিঠি এনবিআর চেয়ারম্যান আবুহেনা রহমাতুল মুনিম বরাবর পাঠানো হয়েছিল। যা নিয়ে এনবিআরে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় আরোপিত ভ্যাট আরও যৌক্তিক ও নিম্নহারে নির্ধারণের জন্য এনবিআরকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ দাম ১১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাস্তবে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। বিপণন ও পরিবেশকবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাশেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দামের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের ঘোষণা দেন।

ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিলিটার সয়াবিন (খোলা) তেলের দাম মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিনের মিলগেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মিলগেট মূল্য ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬২৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামতেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় দেশের পরিশোধনকারী মিল ও ভোক্তাস্বার্থ বিবেচনায় ভোজ্যতেলের মূল্য সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ।

এর আগে গত রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘রমজানের সময় আমাদের বাজারে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এজন্য আমরা ২৫ হাজার মেট্রিকটন ভোজ্যতেল আমদানি করতে যাচ্ছি টিসিবির মাধ্যমে। যাতে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো যেতে পারে। সব রকম ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি। তবে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াটাই জরুরি অনেকখানি। তবে কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করা যায় না। যেমন ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ তেল আমদানি করতে হয়। এই বাজারটা আমাদের ওপর না। আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা আমদানির দামে ওপর একটা সার্বজনীন যে দামটা মানবে সে রকম একটা দাম নির্ধারণ করে দেই, সেটা হলো তেল। যেসব জিনিস আমাদের আমদানি করতে হবে সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে। টিসিবি তো সারাদেশের সব জায়গায় রাখতে পারবে না। টিসিবি সাহায্য করবে নিম্ন আয়ের মানুষকে। সেজন্য আমাদের সবকিছু রয়েছে। কয়েকটা আইটেম নিয়ে আমাদের সমস্যা। যেমন : তেল, পেঁয়াজ। পেঁয়াজ আমাদের দেশে ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। বাকি ২৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এটা যদি কোন রকম ৯০ শতাংশে যেতে পারতাম তাহলে কমে যেতো। তবে আমাদের পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করাটা ঠিক হবে না। কারণ ওদের দেশেও পেঁয়াজ নিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যার জন্য আমাদের বিকল্প বাজার থেকে ব্যবস্থা করতে হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও জানান, মায়ানমার থেকে রিজনেবল প্রাইসে আনা যেতে পারে। আরও কিছু জিনিস আমাদের রয়েছে যেগুলো রমজানের পণ্য। যেমন : ছোলা, খেজুর, ডাল এসব জিনিস আমদানি করতে হয়। এগুলো টিসিবির মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি করা হচ্ছে। সবকিছু বুক করা হয়ে গেছে। সবকিছু এসে যাবে। রমজানের সময় সমস্যা যেন না হয় তার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।