শীঘ্রই চালু হবে ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মান্যবর আর্ল আর মিলার গতকাল ডিসিসিআইতে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শীঘ্রই ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ চালু করা হবে। এর মাধ্যম মার্কিন উদ্যোক্তাদের কাছে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে।

সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মান্যবর আর্ল আর মিলার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশের সব জনগনকে অভিনন্দন জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘জন্মগতভাবেই বাংলাদেশিরা অত্যন্ত উদ্যোমী ও সাহসী যা নিজেকে অত্যন্ত আলোড়িত করে। এদেশের উদ্যোক্তাদের সাহসী মনোভাব সামনের দিনগুলো বহির্বিশে^ বাণিজ্য ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শীঘ্রই ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ চালু করা হবে। এর মাধ্যম মার্কিন উদ্যোক্তাদের কাছে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের কৃষি, পর্যটন ও ইকো-টুরিজম, সমুদ্র অর্থনীতি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অটোমোবাইল প্রভৃতি খাত বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন সরকারের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ, বিশেষকরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং আগামীতে তা আরও বাড়বে।’ রাষ্ট্রদূত বৈদেশিক বিনিায়োগ আকর্ষণে ব্যবসা পরিচালনার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন খুবই জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে বিশেষকরে সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘গত ১০ বছরে দু’দেশের বাণিজ্য ৩৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ৭.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২.১৩ বিলিয়ন এবং ৫.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ প্রধানত তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে, তবে সাম্প্রাতিক সময়ে পাদুকা, চামড়া, মাছ, ফার্নিচার, ওষুধ, প্লাস্টিক, খেলনা, সিরামিক ও কৃষিজাত পণ্য প্রভৃতি রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র হতে বাংলাদেশ সুতা, রড, স্টিল, বয়লার এবং ওয়েল সিড প্রভৃতি পণ্য আমদানি করে থাকে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা পণ্য জাহাজীকরণের ক্ষেত্রে ১৫.৬২% শুল্ক প্রদান করে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, আর এ ধরনের উচ্চ শুল্ক হার আমাদের তৈরি পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নকে ব্যাহত করছে এবং আমরা বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। তিনি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি পাদুকা ও ডেইরি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদানেরও আহ্বান জানান। রিজওয়ান রাহমান আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মোট বিনিয়োগের প্রায় ৭৭.২৮% হলো গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে। মার্কিন বিনিয়োগকারীদের তৈরি পোশাক, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, অটোমোবাইল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন তিনি। ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, এফসিএস, এফসিএ, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, মার্কিন দূতাবাসের ইকোনোমিক অ্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ইউনিট চিফ জন ডি. ডানহাম এবং ইউএসএআইডি’র ইকোনোমিক গ্রোথ অফিস-এর পরিচালক জন স্মিথ শ্রীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার, ২২ মার্চ ২০২১ , ৮ চৈত্র ১৪২৭ ৭ শাবান ১৪৪২

শীঘ্রই চালু হবে ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মান্যবর আর্ল আর মিলার গতকাল ডিসিসিআইতে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শীঘ্রই ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ চালু করা হবে। এর মাধ্যম মার্কিন উদ্যোক্তাদের কাছে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে।

সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মান্যবর আর্ল আর মিলার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশের সব জনগনকে অভিনন্দন জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘জন্মগতভাবেই বাংলাদেশিরা অত্যন্ত উদ্যোমী ও সাহসী যা নিজেকে অত্যন্ত আলোড়িত করে। এদেশের উদ্যোক্তাদের সাহসী মনোভাব সামনের দিনগুলো বহির্বিশে^ বাণিজ্য ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শীঘ্রই ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ চালু করা হবে। এর মাধ্যম মার্কিন উদ্যোক্তাদের কাছে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের কৃষি, পর্যটন ও ইকো-টুরিজম, সমুদ্র অর্থনীতি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অটোমোবাইল প্রভৃতি খাত বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন সরকারের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ, বিশেষকরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং আগামীতে তা আরও বাড়বে।’ রাষ্ট্রদূত বৈদেশিক বিনিায়োগ আকর্ষণে ব্যবসা পরিচালনার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন খুবই জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে বিশেষকরে সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘গত ১০ বছরে দু’দেশের বাণিজ্য ৩৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ৭.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২.১৩ বিলিয়ন এবং ৫.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ প্রধানত তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে, তবে সাম্প্রাতিক সময়ে পাদুকা, চামড়া, মাছ, ফার্নিচার, ওষুধ, প্লাস্টিক, খেলনা, সিরামিক ও কৃষিজাত পণ্য প্রভৃতি রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র হতে বাংলাদেশ সুতা, রড, স্টিল, বয়লার এবং ওয়েল সিড প্রভৃতি পণ্য আমদানি করে থাকে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা পণ্য জাহাজীকরণের ক্ষেত্রে ১৫.৬২% শুল্ক প্রদান করে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, আর এ ধরনের উচ্চ শুল্ক হার আমাদের তৈরি পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নকে ব্যাহত করছে এবং আমরা বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। তিনি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি পাদুকা ও ডেইরি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদানেরও আহ্বান জানান। রিজওয়ান রাহমান আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মোট বিনিয়োগের প্রায় ৭৭.২৮% হলো গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে। মার্কিন বিনিয়োগকারীদের তৈরি পোশাক, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, অটোমোবাইল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন তিনি। ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, এফসিএস, এফসিএ, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, মার্কিন দূতাবাসের ইকোনোমিক অ্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ইউনিট চিফ জন ডি. ডানহাম এবং ইউএসএআইডি’র ইকোনোমিক গ্রোথ অফিস-এর পরিচালক জন স্মিথ শ্রীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।