প্রসঙ্গ ফিলিস্তিন : তারা আমাদেরই স্বজন

মিথুশিলাক মুরমু

বর্তমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা আমাদের ভাইবোন, তাদের পাশে রয়েছি’। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী জিজি ও বেলার পিতৃভূমি ফিলিস্তিন; ইসরায়েলি হামলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, ‘আমার শরীরে ফিলিস্তিনি রক্ত। ফিলিস্তিনের লোকেরা আমাদেরই আত্মীয়, ভাইবোন। আমি তাদের সঙ্গে আছি। আমার ভালোবাসা তাদের সঙ্গে আছে’। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উত্তাল জনসাধারণকে হুঁশিয়ারি করে বলেছিলেন, ‘এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বাঙালি অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।’

মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসী-অন্ত্যজ জাতিগোষ্ঠী জীবনকে উৎসর্গ করেই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তার এই দিকনির্দেশনা ভাষণ জাতিকে সক্রিয় ও সচেতন করে তুলেছিল; তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন, এই সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীরা সংখ্যাগরিষ্ঠদের পদদলে যেন দলিত না হয়, অসম্মানের সম্মুখাসম্মুখী না হোন। বঙ্গবন্ধু যে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন তা হলো ‘আমাদের ভাই’। রক্তের বন্ধন, ধর্মের বন্ধন কিংবা সীমানার বন্ধন থাকলেই ভাই নয়, আত্মার বন্ধন হলেও ভাই হওয়া যায়। চলমান পরিস্থিতিতে রোমান ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস আহ্বান জানিয়েছেন, ‘চলমান সংঘাত মৃত্যু ও ধ্বংসের কু-লীতে পতিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে। এতে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হুমকির মুখে, যা দ্রুত সংলাপে বসা ছাড়া সমাধানের পথ কঠিন হবে।’

প্রতিবেশী দু’টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল। দু’টি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকেই ইসরায়েলের ভূমিষ্টের মধ্যে দিয়ে। ঐতিহাসিক বিচার বিশ্লেষণ করতে চাই না, একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে নিরীহ জনসাধারণের ওপর নির্বিচারে হত্যাকা- চালানো কোনো ধর্মই স্বীকার করে না। মানুষ হিসেবে আমরা সত্যিই নির্বাক, কীভাবে একের পর এক মরণাস্ত্রে ভর করে ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে স্তব্ধ করে তুলেছে। ফিলিস্তিনির দুর্বল প্রতিরোধ বূহ্যকে সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে ইসরায়েল, আর আমেরিকার মতো তথাকথিত সভ্য দেশ শতভাগ সাপোর্ট করে যাচ্ছে। ধর্মের উগ্রবাদিতার চরম বহিঃপ্রকাশ গোটা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমাদের মনে চিন্তার উদ্রেক হয়, সামান্য মানবতাবোধ কী তাদের নেই!

দ্য ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছেÑ‘নরহত্যা করিও না’, ‘তোমার প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না’, ‘তোমার প্রতিবাসীর গৃহে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর স্ত্রীতে, কিংবা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিংবা তাহার গোরতে কি গর্দ্দভে, প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না’। ইসরায়েল কী ফিলিস্তিনিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে মানে না! মানুক আর না মানুক লক্ষ-কোটি মানুষ, গোটা বিশে^র দেশগুলো একই সুরে বলবে, ফিলিস্তিন ইসরায়েলের নিকট প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর প্রতি একি আচরণ দেখাচ্ছে ইসরায়েলিরা। ধর্মের আদিষ্ট ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা, একে-অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, সর্বোপরি আদিপিতা অব্রাহামের বংশজাত হয়ে কীভাবে উগ্রতা আমাদের মত্ত করছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টভক্ত, পবিত্র বাইবেল হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, নিশ্চয় যিশু খ্রিস্টের মহান আদেশকে মান্য করেন। যিশুখ্রিস্ট বলেছেন, ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মতো প্রেম করিবে’। আমরা ইসরায়েলের এহেন বর্বরতম আক্রমণ ও হত্যাকা-কে ধিক্কার জানাই।

১৭ মে বাংলাদেশের খ্রিস্ট বিশ^াসীদের অন্যতম সংগঠন ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ চার্চেস বাংলাদেশ’ (ইউএফসিবি)- কর্তৃক ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। কার্ডিনাল আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসির সভাপতিত্বে দেশের ধর্মযাজক, সিস্টার, নেতৃবৃন্দ ও সুসমাচার প্রচারকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাস ও চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য বিশেষ প্রার্থনা উৎসর্গ করা হয়। আকুলভাবে উচ্চারণ করা হয়, স্বর্গের ঈশ^র যেন বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার সৃষ্টি মানবকেই ব্যবহার করেন, পথ বাতলে দেন। আমরা একে-অপরে ভ্রাতৃত্ববোধে সম্প্রীতি ও শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ৪ মে ‘ইন্টারফেইথ প্রেয়ার ফর হিউম্যানিটি’ আয়োজন করে জাতীয় চার্চ পরিষদ। দেশের প্রধান ৪টি ধর্মের অনুসারীরা মতামত, অভিজ্ঞতা ও করণীয় দিকগুলো আলোচনা করেন। যৌথভাবে নিজ নিজ বিশ^াস অনুযায়ী মহামারী কভিড-১৯ এবং যুদ্ধাপরিস্থিতির জন্য প্রার্থনা করা হয়। বাংলাদেশ ইভানজেলিক্যাল ফোরাম ‘ন্যাশনাল খ্রিস্টান ফেলোসিপ অফ বাংলাদেশ’(এনসিএফবি) প্রতিদিন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধকে ¯্রষ্টার দরবারে উপস্থিত করেন। ফোরামের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি সদস্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিতভাবে ঈশ^র প্রভুর কাছে প্রার্থনার অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা বিশ^াস করি, ঈশ^রের কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, একমাত্র তিনি তারই হস্তক্ষেপ ও নির্দেশে দ্রুত পরিস্থিতিকে পাল্টে দিতে পারেন; শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু বিশ^াস করতেন যে, এই অঞ্চলে মুসলমানরা এবং পাকিস্তানে হিন্দুরা নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার ভোগ করবে। তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন ‘পাকিস্তানে মুসলমানরা যেমন হিন্দুদের ভাই হিসেবে গ্রহণ করবে। ভারতবর্ষে হিন্দুরাও মুসলমানকে ভাই হিসেবে গ্রহণ করবে’ (পৃষ্ঠা-১৬)। জাতিরজনক তার দূরদৃষ্টি দিয়ে বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলায়’ পরিণত করতে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম্প্রীতির সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেনÑ ‘বাংলার মানুষ’ অর্থাৎ মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসী-অন্ত্যজ জাতিগোষ্ঠী ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে থাকবে নিরন্তরভাবে। ১৯৭২ খ্রি. এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি কি চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কি চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখি হোক। আমি কি চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসে খেলে বেড়াক। আমি কি চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক’।

রবিবার, ২৩ মে ২০২১ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১০ শাওয়াল ১৪৪২

প্রসঙ্গ ফিলিস্তিন : তারা আমাদেরই স্বজন

মিথুশিলাক মুরমু

image

বর্তমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা আমাদের ভাইবোন, তাদের পাশে রয়েছি’। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী জিজি ও বেলার পিতৃভূমি ফিলিস্তিন; ইসরায়েলি হামলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, ‘আমার শরীরে ফিলিস্তিনি রক্ত। ফিলিস্তিনের লোকেরা আমাদেরই আত্মীয়, ভাইবোন। আমি তাদের সঙ্গে আছি। আমার ভালোবাসা তাদের সঙ্গে আছে’। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উত্তাল জনসাধারণকে হুঁশিয়ারি করে বলেছিলেন, ‘এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বাঙালি অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।’

মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসী-অন্ত্যজ জাতিগোষ্ঠী জীবনকে উৎসর্গ করেই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তার এই দিকনির্দেশনা ভাষণ জাতিকে সক্রিয় ও সচেতন করে তুলেছিল; তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন, এই সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীরা সংখ্যাগরিষ্ঠদের পদদলে যেন দলিত না হয়, অসম্মানের সম্মুখাসম্মুখী না হোন। বঙ্গবন্ধু যে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন তা হলো ‘আমাদের ভাই’। রক্তের বন্ধন, ধর্মের বন্ধন কিংবা সীমানার বন্ধন থাকলেই ভাই নয়, আত্মার বন্ধন হলেও ভাই হওয়া যায়। চলমান পরিস্থিতিতে রোমান ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস আহ্বান জানিয়েছেন, ‘চলমান সংঘাত মৃত্যু ও ধ্বংসের কু-লীতে পতিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে। এতে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হুমকির মুখে, যা দ্রুত সংলাপে বসা ছাড়া সমাধানের পথ কঠিন হবে।’

প্রতিবেশী দু’টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল। দু’টি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকেই ইসরায়েলের ভূমিষ্টের মধ্যে দিয়ে। ঐতিহাসিক বিচার বিশ্লেষণ করতে চাই না, একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে নিরীহ জনসাধারণের ওপর নির্বিচারে হত্যাকা- চালানো কোনো ধর্মই স্বীকার করে না। মানুষ হিসেবে আমরা সত্যিই নির্বাক, কীভাবে একের পর এক মরণাস্ত্রে ভর করে ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে স্তব্ধ করে তুলেছে। ফিলিস্তিনির দুর্বল প্রতিরোধ বূহ্যকে সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে ইসরায়েল, আর আমেরিকার মতো তথাকথিত সভ্য দেশ শতভাগ সাপোর্ট করে যাচ্ছে। ধর্মের উগ্রবাদিতার চরম বহিঃপ্রকাশ গোটা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমাদের মনে চিন্তার উদ্রেক হয়, সামান্য মানবতাবোধ কী তাদের নেই!

দ্য ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছেÑ‘নরহত্যা করিও না’, ‘তোমার প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না’, ‘তোমার প্রতিবাসীর গৃহে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর স্ত্রীতে, কিংবা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিংবা তাহার গোরতে কি গর্দ্দভে, প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না’। ইসরায়েল কী ফিলিস্তিনিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে মানে না! মানুক আর না মানুক লক্ষ-কোটি মানুষ, গোটা বিশে^র দেশগুলো একই সুরে বলবে, ফিলিস্তিন ইসরায়েলের নিকট প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর প্রতি একি আচরণ দেখাচ্ছে ইসরায়েলিরা। ধর্মের আদিষ্ট ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা, একে-অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, সর্বোপরি আদিপিতা অব্রাহামের বংশজাত হয়ে কীভাবে উগ্রতা আমাদের মত্ত করছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টভক্ত, পবিত্র বাইবেল হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, নিশ্চয় যিশু খ্রিস্টের মহান আদেশকে মান্য করেন। যিশুখ্রিস্ট বলেছেন, ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মতো প্রেম করিবে’। আমরা ইসরায়েলের এহেন বর্বরতম আক্রমণ ও হত্যাকা-কে ধিক্কার জানাই।

১৭ মে বাংলাদেশের খ্রিস্ট বিশ^াসীদের অন্যতম সংগঠন ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ চার্চেস বাংলাদেশ’ (ইউএফসিবি)- কর্তৃক ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। কার্ডিনাল আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসির সভাপতিত্বে দেশের ধর্মযাজক, সিস্টার, নেতৃবৃন্দ ও সুসমাচার প্রচারকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাস ও চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য বিশেষ প্রার্থনা উৎসর্গ করা হয়। আকুলভাবে উচ্চারণ করা হয়, স্বর্গের ঈশ^র যেন বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার সৃষ্টি মানবকেই ব্যবহার করেন, পথ বাতলে দেন। আমরা একে-অপরে ভ্রাতৃত্ববোধে সম্প্রীতি ও শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ৪ মে ‘ইন্টারফেইথ প্রেয়ার ফর হিউম্যানিটি’ আয়োজন করে জাতীয় চার্চ পরিষদ। দেশের প্রধান ৪টি ধর্মের অনুসারীরা মতামত, অভিজ্ঞতা ও করণীয় দিকগুলো আলোচনা করেন। যৌথভাবে নিজ নিজ বিশ^াস অনুযায়ী মহামারী কভিড-১৯ এবং যুদ্ধাপরিস্থিতির জন্য প্রার্থনা করা হয়। বাংলাদেশ ইভানজেলিক্যাল ফোরাম ‘ন্যাশনাল খ্রিস্টান ফেলোসিপ অফ বাংলাদেশ’(এনসিএফবি) প্রতিদিন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধকে ¯্রষ্টার দরবারে উপস্থিত করেন। ফোরামের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি সদস্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিতভাবে ঈশ^র প্রভুর কাছে প্রার্থনার অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা বিশ^াস করি, ঈশ^রের কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, একমাত্র তিনি তারই হস্তক্ষেপ ও নির্দেশে দ্রুত পরিস্থিতিকে পাল্টে দিতে পারেন; শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু বিশ^াস করতেন যে, এই অঞ্চলে মুসলমানরা এবং পাকিস্তানে হিন্দুরা নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার ভোগ করবে। তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন ‘পাকিস্তানে মুসলমানরা যেমন হিন্দুদের ভাই হিসেবে গ্রহণ করবে। ভারতবর্ষে হিন্দুরাও মুসলমানকে ভাই হিসেবে গ্রহণ করবে’ (পৃষ্ঠা-১৬)। জাতিরজনক তার দূরদৃষ্টি দিয়ে বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলায়’ পরিণত করতে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম্প্রীতির সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেনÑ ‘বাংলার মানুষ’ অর্থাৎ মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসী-অন্ত্যজ জাতিগোষ্ঠী ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে থাকবে নিরন্তরভাবে। ১৯৭২ খ্রি. এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি কি চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কি চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখি হোক। আমি কি চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসে খেলে বেড়াক। আমি কি চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক’।