প্রতি ডোজ ১০ ডলার করে চীন থেকে দেড় কোটি টিকা কেনা হবে

চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনবে বাংলাদেশ। প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১০ ডলার। গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চীন থেকে সরকারি পর্যায়ে সরাসরি ওই টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এদিকে, দেশে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ফাইজারের তৈরি টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ নিয়ে মোট চারটি টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। গতকাল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকাদান অব্যাহত রাখতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে গণচীনের তৈরি সার্স কোভ-২ ভ্যাকসিন কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, চীন থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ে ব্যয় হবে এক হাজার ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে, প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৮৫০ টাকা (১০ ডলার)। দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তিন মাসে (জুন, জুলাই, আগস্ট) সরবরাহ করবে সিনোফার্ম।

সিনোফার্ম প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে জুন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে বাংলাদেশকে এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব শাহিদা বলেন, ‘এই কেনাকাটায় আমাদের দেশীয় কোন প্রতিষ্ঠান নেই। সরাসরি চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এই ক্রয় চুক্তি হচ্ছে।’ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড কিনে এতদিন টিকাদান চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। সব খরচ মিলিয়ে ওই টিকার দাম পড়েছে ৫ ডলার।

এই হিসাবে চীন থেকে টিকা কিনতে বাংলাদেশকে এখন প্রতি ডোজে দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে। এতদিন বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছিল শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকা জুনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ হাতে পেয়েছে। ফলে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে নিতে এখন নতুন উৎস থেকে টিকা আনতে হচ্ছে সরকারকে। এর অংশ হিসেবে সিনোমফার্মের বিবিআইবিপি-করভি (BBIBP-CorV) এবং রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি টিকা বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয় এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে। গত ১২ মে সিনোফার্মের টিকার ৫ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়, যা চীন সরকার উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা চীন উপহার হিসেবে দেবে বলে জানিয়েছে। চীন থেকে আসা প্রথম চালানের টিকা ঢাকার চার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দেয়া শুরু হয়েছে গত ২৫ মে। দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এই টিকা দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। কোভিশিল্ডের মতে সিনোফার্মের টিকাও নিতে হবে দুই ডোজ করে। উৎপাদকদের ভাষ্য, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকরিতা দেখিয়েছে।

এদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আবেদন করে। পরদিন অধিদপ্তর ভ্যাকসিনটির ডোসিয়ার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পার্ট, সিএমসি পার্ট এবং রেগুলেটরি স্ট্যাটাস) মূল্যায়ন করে এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির মতামতের জন্য উপস্থাপন করে।

কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ফাইজার-বায়োএনটেকের এই টিকার জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানায়, ভ্যাকসিনটির লোকাল লিগ্যাল অর্গানাইজেশন হিসেবে থাকছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অধিদপ্তর জানায়, ১২ বছরের বেশি বয়সের মানুষের জন্য এই টিকা ব্যবহারযোগ্য। তবে বাংলাদেশ সরকারের ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদান করা হবে। ফাইজরের টিকার রয়েছে দুই ডোজ। প্রথম ডোজের তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। এর আগে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

প্রতি ডোজ ১০ ডলার করে চীন থেকে দেড় কোটি টিকা কেনা হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনবে বাংলাদেশ। প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১০ ডলার। গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চীন থেকে সরকারি পর্যায়ে সরাসরি ওই টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এদিকে, দেশে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ফাইজারের তৈরি টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ নিয়ে মোট চারটি টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। গতকাল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকাদান অব্যাহত রাখতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে গণচীনের তৈরি সার্স কোভ-২ ভ্যাকসিন কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, চীন থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ে ব্যয় হবে এক হাজার ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে, প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৮৫০ টাকা (১০ ডলার)। দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তিন মাসে (জুন, জুলাই, আগস্ট) সরবরাহ করবে সিনোফার্ম।

সিনোফার্ম প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে জুন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে বাংলাদেশকে এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব শাহিদা বলেন, ‘এই কেনাকাটায় আমাদের দেশীয় কোন প্রতিষ্ঠান নেই। সরাসরি চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এই ক্রয় চুক্তি হচ্ছে।’ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড কিনে এতদিন টিকাদান চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। সব খরচ মিলিয়ে ওই টিকার দাম পড়েছে ৫ ডলার।

এই হিসাবে চীন থেকে টিকা কিনতে বাংলাদেশকে এখন প্রতি ডোজে দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে। এতদিন বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছিল শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকা জুনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ হাতে পেয়েছে। ফলে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে নিতে এখন নতুন উৎস থেকে টিকা আনতে হচ্ছে সরকারকে। এর অংশ হিসেবে সিনোমফার্মের বিবিআইবিপি-করভি (BBIBP-CorV) এবং রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি টিকা বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয় এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে। গত ১২ মে সিনোফার্মের টিকার ৫ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়, যা চীন সরকার উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা চীন উপহার হিসেবে দেবে বলে জানিয়েছে। চীন থেকে আসা প্রথম চালানের টিকা ঢাকার চার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দেয়া শুরু হয়েছে গত ২৫ মে। দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এই টিকা দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। কোভিশিল্ডের মতে সিনোফার্মের টিকাও নিতে হবে দুই ডোজ করে। উৎপাদকদের ভাষ্য, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকরিতা দেখিয়েছে।

এদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আবেদন করে। পরদিন অধিদপ্তর ভ্যাকসিনটির ডোসিয়ার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পার্ট, সিএমসি পার্ট এবং রেগুলেটরি স্ট্যাটাস) মূল্যায়ন করে এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির মতামতের জন্য উপস্থাপন করে।

কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ফাইজার-বায়োএনটেকের এই টিকার জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানায়, ভ্যাকসিনটির লোকাল লিগ্যাল অর্গানাইজেশন হিসেবে থাকছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অধিদপ্তর জানায়, ১২ বছরের বেশি বয়সের মানুষের জন্য এই টিকা ব্যবহারযোগ্য। তবে বাংলাদেশ সরকারের ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদান করা হবে। ফাইজরের টিকার রয়েছে দুই ডোজ। প্রথম ডোজের তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। এর আগে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।