পাবনায় সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় ইউপি চেয়ারম্যানকে সাবেক এমপির হত্যার হুমকি

সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় এক মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই মুক্তিযোদ্ধা শুক্রবার সন্ধ্যায় সাবেক এমপি আরজু ও তার তিন সহযোগীর নাম উল্লেখ করে আমিনপুর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। শুক্রবার বিকেলে জেলার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে দোয়া মাহফিলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা এএম রফিকুল্লাহ বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

তিনি জানান, শুক্রবার দুপুরে ওই ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের আবদুল মতীনের বাড়িতে একটি কুলখানীর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বেলা আড়াইটার পরপরই এই আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওই অনুষ্ঠানে ১০/১২ অনুসারীকে নিয়ে আসেন।

অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতি জানতে পেরেই বিষোদগার করে সেøাগান দিতে শুরু করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমি ওই বাড়ির একটি কক্ষে আশ্রয় নেই। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই ঘরে ঢুকে আমাকে অবৈধ এমপি বাজার বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও অশ্রাব্য ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন এবং আমাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। এ সময় উপস্থিত লোকজন সাবেক এমপির এমন আচরণে হতবিহবল হয়ে পড়েন। তারা এ সময় আমাকে সান্ত¡না দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন বলেও দাবি করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ আরও জানান, সাবেক এমপি আরজুর অনুসারী অবৈধ অস্ত্রধারী চরমপন্থি ও নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। আমি নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি, প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরপত্তা চেয়ে থানায় ডায়েরি করেছি। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ দলীয় নেতাদের অবহিত করেছি।

ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একজন সাবেক আইন প্রণেতার কাছে থেকে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত। তার মারমুখী আচরণে মনে হয়েছে তিনি পরিকল্পিতভাবেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান এএম রফিকুল্লাহকে অপদস্থ করার পরেও তিনি অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টাও করছেন তিনি।

পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এমন অশোভন আচরণ করতে পারেন না, এটি দুঃখজনক ও লজ্জার। সাবেক এমপি হিসেবে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আমার মনে হয়েছে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হবে।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য খ ম হাসান কবির আরিফ বলেন, সাবেক এমপি আরজু এক সময়ে জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসী ছিলেন। পরে হাওয়া ভবনের বিএনপির দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন। কিভাবে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ও এমপি হয়েছেন, তা তদন্ত হওয়া দরকার। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুত্তিযোদ্ধাদের অপদস্ত করার তীব্র নিন্দাই শুধু নয়, বিচার দাবি করি।

পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহকে লাঞ্ছিত করার কোন ঘটনাই ঘটেনি। তাকে কথিত এমপি বাজার নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে মাত্র। মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও কটূক্তি বা তাকে হত্যার হুমকির বিষয়টি অসত্য।

এ ব্যাপারে আমিনপুর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এএম রফিকুল্লাহর অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে সাবেক এমপি আরজুর অবৈধ সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য দেয়ায় তার বিরুদ্ধে এমন আচরণ করেছেন।

আরও খবর
ইভ্যালিতে বিনিয়োগকারীর অর্থ কোথায় গেল, জানতে গোয়েন্দারা মাঠে
দুর্নীতিবাজরা যাতে শাস্তি পায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ রাষ্ট্রপতির
এসআই মামুন হত্যা, ফারিয়ার আত্মসমর্পণ
স্কুল-কলেজ খোলার পর সংক্রমণের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি : শিক্ষামন্ত্রী
কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিএনপির বৈঠক
জঙ্গি উদ্বুদ্ধকারী বই প্রকাশ ‘এটিবি সদস্য’ গ্রেপ্তার
সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজার চর্চা নিশ্চিতে নীতিমালা প্রণয়নে হাইকোর্টের রুল
মিটফোর্ডে নকল-ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি, অভিযানেও থামছে না
পাবনায় হালাল উপার্জনের প্রলোভনে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, স্কুল শিক্ষিকা গ্রেপ্তার
সৈকতের আলোকচিত্রী, পর্যটকদের অপেক্ষায়

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩

পাবনায় সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় ইউপি চেয়ারম্যানকে সাবেক এমপির হত্যার হুমকি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় এক মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই মুক্তিযোদ্ধা শুক্রবার সন্ধ্যায় সাবেক এমপি আরজু ও তার তিন সহযোগীর নাম উল্লেখ করে আমিনপুর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। শুক্রবার বিকেলে জেলার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে দোয়া মাহফিলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা এএম রফিকুল্লাহ বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

তিনি জানান, শুক্রবার দুপুরে ওই ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের আবদুল মতীনের বাড়িতে একটি কুলখানীর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বেলা আড়াইটার পরপরই এই আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওই অনুষ্ঠানে ১০/১২ অনুসারীকে নিয়ে আসেন।

অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতি জানতে পেরেই বিষোদগার করে সেøাগান দিতে শুরু করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমি ওই বাড়ির একটি কক্ষে আশ্রয় নেই। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই ঘরে ঢুকে আমাকে অবৈধ এমপি বাজার বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও অশ্রাব্য ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন এবং আমাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। এ সময় উপস্থিত লোকজন সাবেক এমপির এমন আচরণে হতবিহবল হয়ে পড়েন। তারা এ সময় আমাকে সান্ত¡না দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন বলেও দাবি করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ আরও জানান, সাবেক এমপি আরজুর অনুসারী অবৈধ অস্ত্রধারী চরমপন্থি ও নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। আমি নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি, প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরপত্তা চেয়ে থানায় ডায়েরি করেছি। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ দলীয় নেতাদের অবহিত করেছি।

ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একজন সাবেক আইন প্রণেতার কাছে থেকে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত। তার মারমুখী আচরণে মনে হয়েছে তিনি পরিকল্পিতভাবেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান এএম রফিকুল্লাহকে অপদস্থ করার পরেও তিনি অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টাও করছেন তিনি।

পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এমন অশোভন আচরণ করতে পারেন না, এটি দুঃখজনক ও লজ্জার। সাবেক এমপি হিসেবে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আমার মনে হয়েছে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হবে।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য খ ম হাসান কবির আরিফ বলেন, সাবেক এমপি আরজু এক সময়ে জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসী ছিলেন। পরে হাওয়া ভবনের বিএনপির দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন। কিভাবে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ও এমপি হয়েছেন, তা তদন্ত হওয়া দরকার। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুত্তিযোদ্ধাদের অপদস্ত করার তীব্র নিন্দাই শুধু নয়, বিচার দাবি করি।

পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহকে লাঞ্ছিত করার কোন ঘটনাই ঘটেনি। তাকে কথিত এমপি বাজার নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে মাত্র। মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও কটূক্তি বা তাকে হত্যার হুমকির বিষয়টি অসত্য।

এ ব্যাপারে আমিনপুর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এএম রফিকুল্লাহর অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে সাবেক এমপি আরজুর অবৈধ সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য দেয়ায় তার বিরুদ্ধে এমন আচরণ করেছেন।