হালাল উপার্জনের প্রলোভনে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় প্রতারক স্কুলশিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত মোছা. সীমা আক্তারকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। সে পাবনা পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষিকা। গ্রেপ্তারের পর তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সদর থানার ওসি অমিনুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে শহরের আটুয়া হাউজপাড়ায় পাবনা পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষিকা মোছা. সীমা আক্তারের বাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারী শিক্ষিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি হালাল উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রতারণার স্বীকার হওয়া ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। পরে রাতেই ভুক্তভোগীদের পক্ষে মোছা. মাবেলা পারভীন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় বাদী মাবেলা পারভীন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। বুধবার দুপুরে ঐ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোছা. সীমা আক্তারকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। সে আটুয়া হাউজপাড়া মহল্লার মৃত হানিফুল ইসলামের স্ত্রী। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে জিয়াউল করিম সুমন জানান, শিক্ষিকা মোছা. সীমা আক্তার সাধারণ মানুষদের ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গোরুর খামারসহ নানা ধরনের হালাল উপর্জনের কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি শুধু সাধারণ মানুষেরই নয় নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যদেরও বোকা বানিয়েছেন। প্রতারক নারী শিক্ষিকা অনেকের কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমেও অর্থ নিয়েছেন। মানুষ তার কথায় বিশ্বাস করে লাভের আশায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করে। লাভের অঙ্ক বেশি হওয়ায় লোভে অনেকেই সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তাদের লাভের অর্থ প্রদান করতেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি পেলে তিনি সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে গেল এক মাস গাঢাকা দেন।
মঙ্গলবার মাসিক লাভের অর্থ নিতে এসে ওই নারীকে না পেয়ে তখন সবাই বুঝতে পারে তারা চরম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ সময় তার সীমা আক্তারের বাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে ওই নারী শিক্ষিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এদিকে ওই প্রতারকের কাছে অর্থদিয়ে অনেকেই এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। ওই প্রতারক নারী ব্যবসায়ীর বৈধ কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তিনি একজনের কাছে থেকে অর্থ নিয়ে আরেক জনকে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ তাদের অর্থ ফিরে পাবার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
এ ব্যাপারে নারী প্রতারক মোছা. সীমা আক্তার বলেন, আমার কোন বৈধ ব্যবসা নাই। এক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরেকজনকে দিয়েছি। যারা টাকা দিয়েছে তাদের সুদে অনেক টাকা লাভ দিয়েছি। আমি কারও টাকা আত্মসাৎ করিনি। মানুষ না জেনে না বুঝে আমাকে কেন টাকা দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন করুন। সম্প্রতি যারা আমাকে টাকা দিয়েছে তাদের টাকার একটি হিসাব করেছি। সেখানে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো হবে। সেই সব টাকা আমি দিয়ে দিব। আর যারা সুদে লাভের টাকা নিয়েছে তাদেরটা দিব না। আর আমাকে কেন স্কুল থেকে বহিষ্কার করেছে সেটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানে। আমি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে ছিলাম। জেলা পুলিশ আমাকে আসতে বলেছে, আমি এসেছি’।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। এই ধরনের অভিযোগের কারণে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রতারণার বিষয়ে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা
হালাল উপার্জনের প্রলোভনে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় প্রতারক স্কুলশিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত মোছা. সীমা আক্তারকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। সে পাবনা পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষিকা। গ্রেপ্তারের পর তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সদর থানার ওসি অমিনুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে শহরের আটুয়া হাউজপাড়ায় পাবনা পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষিকা মোছা. সীমা আক্তারের বাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারী শিক্ষিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি হালাল উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রতারণার স্বীকার হওয়া ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। পরে রাতেই ভুক্তভোগীদের পক্ষে মোছা. মাবেলা পারভীন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় বাদী মাবেলা পারভীন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। বুধবার দুপুরে ঐ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোছা. সীমা আক্তারকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। সে আটুয়া হাউজপাড়া মহল্লার মৃত হানিফুল ইসলামের স্ত্রী। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে জিয়াউল করিম সুমন জানান, শিক্ষিকা মোছা. সীমা আক্তার সাধারণ মানুষদের ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গোরুর খামারসহ নানা ধরনের হালাল উপর্জনের কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি শুধু সাধারণ মানুষেরই নয় নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যদেরও বোকা বানিয়েছেন। প্রতারক নারী শিক্ষিকা অনেকের কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমেও অর্থ নিয়েছেন। মানুষ তার কথায় বিশ্বাস করে লাভের আশায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করে। লাভের অঙ্ক বেশি হওয়ায় লোভে অনেকেই সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তাদের লাভের অর্থ প্রদান করতেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি পেলে তিনি সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে গেল এক মাস গাঢাকা দেন।
মঙ্গলবার মাসিক লাভের অর্থ নিতে এসে ওই নারীকে না পেয়ে তখন সবাই বুঝতে পারে তারা চরম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ সময় তার সীমা আক্তারের বাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে ওই নারী শিক্ষিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এদিকে ওই প্রতারকের কাছে অর্থদিয়ে অনেকেই এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। ওই প্রতারক নারী ব্যবসায়ীর বৈধ কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তিনি একজনের কাছে থেকে অর্থ নিয়ে আরেক জনকে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ তাদের অর্থ ফিরে পাবার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
এ ব্যাপারে নারী প্রতারক মোছা. সীমা আক্তার বলেন, আমার কোন বৈধ ব্যবসা নাই। এক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরেকজনকে দিয়েছি। যারা টাকা দিয়েছে তাদের সুদে অনেক টাকা লাভ দিয়েছি। আমি কারও টাকা আত্মসাৎ করিনি। মানুষ না জেনে না বুঝে আমাকে কেন টাকা দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন করুন। সম্প্রতি যারা আমাকে টাকা দিয়েছে তাদের টাকার একটি হিসাব করেছি। সেখানে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো হবে। সেই সব টাকা আমি দিয়ে দিব। আর যারা সুদে লাভের টাকা নিয়েছে তাদেরটা দিব না। আর আমাকে কেন স্কুল থেকে বহিষ্কার করেছে সেটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানে। আমি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে ছিলাম। জেলা পুলিশ আমাকে আসতে বলেছে, আমি এসেছি’।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। এই ধরনের অভিযোগের কারণে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রতারণার বিষয়ে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।