প্যান্ডোরার বাক্স : বিশ্বের প্রভাবশালী ধনবানদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস

আবারও ফাঁস হলো বিশ্বের প্রভাবশালী ধনবানদের গোপন সম্পদের তথ্য। এবারের ফাঁস হওয়া নথিতে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী ও তারকাদের নাম রয়েছে।

এবার ফাঁস হওয়া নথিগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘প্যানডোরা পেপার্স’। ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংগঠন দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) নথিগুলো ফাঁস করেছে। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো জনপ্রিয় কয়েকটি গণমাধ্যম ফাঁস হওয়া নথিগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বিবিসি প্যানোরামার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি পাউণ্ডের বাড়ি-জমির মালিক হয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মোনাকোয় গোপন সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত। আজারবাইজানি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ডের জমি-বাড়ি কেনাবেচার চুক্তিতে জড়িত ছিলেন বলে এসব দলিলে দেখা গেছে। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রীর বিষয়ে জানা গেছে যে, তারা লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩ লাখ ১২ হাজার পাউ- ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন। ওই ভবনের একটি বিদেশি কোম্পানিও তারা কিনে নিয়েছেন।

প্রতিবেদনগুলোতে আরও বলা হয়েছে, প্যানডোরা পেপার্স নামে এসব নথিতে প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী এবং তিন শতাধিক সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে যারা বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আগের ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে বাংলাদেশিদের নাম থাকার কথা দাবি করা হলেও প্যানডোরা পেপার্সের কোন বাংলাদেশির নাম নেই।

তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের কয়েকজন নেতা, ব্যবসায়ী ও সেলিব্রেটির নাম রয়েছে। ভারতের ব্যবসায়ী অনিল আম্বানিসহ আর দুইজন ব্যবসায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা ও ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের নাম রয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও পানিসম্পদমন্ত্রী, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, চারজন সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চারজন আইনপ্রণেতা ও একজন ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে।

বিবিসি প্যানোরামার প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, জর্ডানের বাদশাহর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার জমি-বাড়িগুলো ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়েই কেনা এবং সাধারণত এরকম উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সম্পত্তি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমেই কেনা হয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে।

গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে, এই প্যানডোরা পেপার্স হচ্ছে তার সবশেষ ঘটনা। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান এবং আরও কিছু গণমাধ্যম মিলে বিশ্বের ১৪টি কোম্পানির এই ১ কোটি ২০ লাখ দলিলপত্র হাতে পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।

কারা এসব নথি উদঘাটন করলো?

দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) হলো ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি সংগঠন। সংগঠনটি এসব নথি উদঘাটনের দাবি করেছে। আইসিআইজে মূলত সারা বিশ্বের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি বৈশ্বিক সংগঠন। ২৮০ জন সাংবাদিক নিয়ে এই সংগঠন গঠিত। বর্তমানে তারা ১০০টি দেশে অনুসন্ধান নিয়ে কাজ করছে। তবে যে কোন দেশের সাংবাদিক সেই সংগঠনের সদস্য হতে পারে।

আইসিআইজে আরও দাবি করছে, সারা বিশ্বের সংবাদপ্রেমীদের অনুদানের ওপর নির্ভর করে তারা কর্মকা- পরিচালনা করে। কোন দেশ বা কোম্পানির অর্থও তারা গ্রহণ করে, তবে সেটি তাদের কর্মকা-কে প্রভাবিত করে না।

আইসিআইজে গত সাত বছর ধরে ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স এবং লাক্সলিকসের প্রতিবেদনে অনেকের গোপন সম্পদের অনেকটাই ফাঁস করে। তবে ২০১৬ সালে যখন পানামা পেপার্স ঝড় তুলেছিল তখন এটাও বলা হয়েছিল, ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার কোটি নথি ফাঁস ‘গল্পের অর্ধেকটা’ মাত্র। সেই অর্ধেক গল্পের ধারাবাহিকতায় গত রোববার যেন এল প্যানডোরা পেপার্স। আইসিআইজের দাবি, ৯৫ হাজার অফশোর ফার্মের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি রয়েছে এই প্যানডোরার বাক্সে।

সর্বশেষ প্যানডোরা পেপার্স এই সংগঠনটি ফাঁস করেছে, তবে এর উৎস সংগঠনটি উল্লেখ করেনি। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, এসব নথির উৎস তারা কখনই প্রকাশ করবে না।

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

প্যান্ডোরার বাক্স : বিশ্বের প্রভাবশালী ধনবানদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

আবারও ফাঁস হলো বিশ্বের প্রভাবশালী ধনবানদের গোপন সম্পদের তথ্য। এবারের ফাঁস হওয়া নথিতে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী ও তারকাদের নাম রয়েছে।

এবার ফাঁস হওয়া নথিগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘প্যানডোরা পেপার্স’। ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংগঠন দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) নথিগুলো ফাঁস করেছে। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো জনপ্রিয় কয়েকটি গণমাধ্যম ফাঁস হওয়া নথিগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বিবিসি প্যানোরামার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি পাউণ্ডের বাড়ি-জমির মালিক হয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মোনাকোয় গোপন সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত। আজারবাইজানি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ডের জমি-বাড়ি কেনাবেচার চুক্তিতে জড়িত ছিলেন বলে এসব দলিলে দেখা গেছে। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রীর বিষয়ে জানা গেছে যে, তারা লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩ লাখ ১২ হাজার পাউ- ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন। ওই ভবনের একটি বিদেশি কোম্পানিও তারা কিনে নিয়েছেন।

প্রতিবেদনগুলোতে আরও বলা হয়েছে, প্যানডোরা পেপার্স নামে এসব নথিতে প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী এবং তিন শতাধিক সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে যারা বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আগের ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে বাংলাদেশিদের নাম থাকার কথা দাবি করা হলেও প্যানডোরা পেপার্সের কোন বাংলাদেশির নাম নেই।

তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের কয়েকজন নেতা, ব্যবসায়ী ও সেলিব্রেটির নাম রয়েছে। ভারতের ব্যবসায়ী অনিল আম্বানিসহ আর দুইজন ব্যবসায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা ও ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের নাম রয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও পানিসম্পদমন্ত্রী, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, চারজন সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চারজন আইনপ্রণেতা ও একজন ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে।

বিবিসি প্যানোরামার প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, জর্ডানের বাদশাহর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার জমি-বাড়িগুলো ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়েই কেনা এবং সাধারণত এরকম উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সম্পত্তি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমেই কেনা হয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে।

গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে, এই প্যানডোরা পেপার্স হচ্ছে তার সবশেষ ঘটনা। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান এবং আরও কিছু গণমাধ্যম মিলে বিশ্বের ১৪টি কোম্পানির এই ১ কোটি ২০ লাখ দলিলপত্র হাতে পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।

কারা এসব নথি উদঘাটন করলো?

দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) হলো ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি সংগঠন। সংগঠনটি এসব নথি উদঘাটনের দাবি করেছে। আইসিআইজে মূলত সারা বিশ্বের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি বৈশ্বিক সংগঠন। ২৮০ জন সাংবাদিক নিয়ে এই সংগঠন গঠিত। বর্তমানে তারা ১০০টি দেশে অনুসন্ধান নিয়ে কাজ করছে। তবে যে কোন দেশের সাংবাদিক সেই সংগঠনের সদস্য হতে পারে।

আইসিআইজে আরও দাবি করছে, সারা বিশ্বের সংবাদপ্রেমীদের অনুদানের ওপর নির্ভর করে তারা কর্মকা- পরিচালনা করে। কোন দেশ বা কোম্পানির অর্থও তারা গ্রহণ করে, তবে সেটি তাদের কর্মকা-কে প্রভাবিত করে না।

আইসিআইজে গত সাত বছর ধরে ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স এবং লাক্সলিকসের প্রতিবেদনে অনেকের গোপন সম্পদের অনেকটাই ফাঁস করে। তবে ২০১৬ সালে যখন পানামা পেপার্স ঝড় তুলেছিল তখন এটাও বলা হয়েছিল, ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার কোটি নথি ফাঁস ‘গল্পের অর্ধেকটা’ মাত্র। সেই অর্ধেক গল্পের ধারাবাহিকতায় গত রোববার যেন এল প্যানডোরা পেপার্স। আইসিআইজের দাবি, ৯৫ হাজার অফশোর ফার্মের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি রয়েছে এই প্যানডোরার বাক্সে।

সর্বশেষ প্যানডোরা পেপার্স এই সংগঠনটি ফাঁস করেছে, তবে এর উৎস সংগঠনটি উল্লেখ করেনি। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, এসব নথির উৎস তারা কখনই প্রকাশ করবে না।