ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে ইউবিআইডি বাধ্যতামূলক, সহজ হচ্ছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে আগামীতে কোম্পানিগুলোর ইউনিক বিজনেস আইডি (ইউবিআইডি) নেয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। শুধু অনলাইনে আবেদন করে সহজেই যাতে এটি নিবন্ধন করা যায় সে প্রক্রিয়া চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যেই এ সেবা চালু করা। এর মাধ্যমে ই-কমার্সভিত্তিক নতুন ও পুরাতন সব প্রতিষ্ঠানকে একই ডাটাবেজের আওতায় আনা।

ইউবিআইডি পেতে শুরুতে ই-কমার্সের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জামানত রাখার কথা বলা হলেও তা আপাতত থাকছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। স্বতন্ত্র এ নম্বর কীভাবে দেয়া হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন)। এ জন্য নিবন্ধনের একটি কাঠামো (ফরম্যাট) চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেটিকে এখন ডিজিটাল কাঠামোতে রূপ দেয়ার কাজ করবে তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্তঃবিভাগীয় বৈঠকে এ কাঠামো অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স নিয়ে গঠিত বহুপক্ষীয় কমিটির সমন্বয়ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যে এ সেবা চালু হবে। যারা ই-কমার্সে বিজনেস করবে, তাদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কাজটি হবে অনলাইনে। আমরা প্রক্রিয়াটিকে খুব সহজ করেছি। যাতে এটি চালু করতে গিয়ে কোন ব্যবসা মুখ থুবড়ে না পড়ে।’

এ বিষয়ে কাজের অগ্রগতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী গণমাধ্যমকে জানান, ই-কমার্স নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটি ইউবিআইডি সেবা চালুর বিষয়ে এটুআইকে দায়িত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। একটি কাঠামো ঠিক করা হয়েছে। দেশে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বতন্ত্র এ নম্বর- ইউবিআইডিকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার ‘পূর্বশর্ত’ হিসেবে ভবিষ্যতে কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

আপাতত ই-কমার্সের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। ভবিষ্যতে দেশের ভেতরে যে কোন ব্যবসার জন্য এটা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে বলে জানান তারা। একক কোম্পানির বেলায় তো বটেই, একটি বড় শিল্প গ্রুপের একাধিক কোম্পানি থাকলে প্রতিটির জন্য পৃথক ইউবিআইডি নিতে হবে।

এটি পুরোদমে কার্যকর করা গেলে দেশে একই নামে আলাদা কোম্পানি করার সুযোগ বন্ধ হবে। কেননা একটি কোম্পানি ইউবিআইডি নিয়ে নিলে তখন অন্য কারও তা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হবে। কর্মকর্তাদের যুক্তি, এতে দেশে পরিচালিত সব ধরনের কোম্পানির প্রাথমিক তথ্যসহ মালিক ও উদ্যোক্তাদের তথ্য জানা যাবে।

একটি কোম্পানির নামে কেউ একটি ইউবিআইডি নেয়ার পর সেই নামে আর কারও আবেদনের সুযোগ থাকবে না উল্লেখ করে এটুআইয়ের হেড অব ই-কমার্স রেজওয়ানুল হক জামি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এর ফলে কেউ নামে বেনামে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারবে না। এক নামে দেশে একাধিক কোম্পানি চালু করার সুযোগও থাকবে না।’ এটি কোন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বন্ধে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

অনলাইনে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট তথ্যগুলো পাওয়ার পর স্বতন্ত্র এ নম্বর বরাদ্দ করা হবে ওই প্রতিষ্ঠানকে। ইউবিআইডি পেতে একটি ওয়েবসাইট চালু করে সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনের অপশন রাখা হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আবেদন পাওয়ার পর তাদের তথ্যগুলো নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ার থেকে যাচাই করা হবে। যাচাইয়ে সব ঠিক থাকলে তাদের ইউবিআইডি দেয়া হবে।

একজন উদ্যোক্তার জাতীয় পরিচয়পত্র, তার নামে নিবন্ধন করা মোবাইল নম্বর, ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান। বর্তমানে প্রচলিত ও অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। এর বাইরে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আরও কিছু সনদ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কর দিতে ইটিআইএন ও ভ্যাট দিতে বিআইএন নিতে হয়।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে ইউবিআইডি বাধ্যতামূলক, সহজ হচ্ছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে আগামীতে কোম্পানিগুলোর ইউনিক বিজনেস আইডি (ইউবিআইডি) নেয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। শুধু অনলাইনে আবেদন করে সহজেই যাতে এটি নিবন্ধন করা যায় সে প্রক্রিয়া চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যেই এ সেবা চালু করা। এর মাধ্যমে ই-কমার্সভিত্তিক নতুন ও পুরাতন সব প্রতিষ্ঠানকে একই ডাটাবেজের আওতায় আনা।

ইউবিআইডি পেতে শুরুতে ই-কমার্সের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জামানত রাখার কথা বলা হলেও তা আপাতত থাকছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। স্বতন্ত্র এ নম্বর কীভাবে দেয়া হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন)। এ জন্য নিবন্ধনের একটি কাঠামো (ফরম্যাট) চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেটিকে এখন ডিজিটাল কাঠামোতে রূপ দেয়ার কাজ করবে তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্তঃবিভাগীয় বৈঠকে এ কাঠামো অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স নিয়ে গঠিত বহুপক্ষীয় কমিটির সমন্বয়ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যে এ সেবা চালু হবে। যারা ই-কমার্সে বিজনেস করবে, তাদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কাজটি হবে অনলাইনে। আমরা প্রক্রিয়াটিকে খুব সহজ করেছি। যাতে এটি চালু করতে গিয়ে কোন ব্যবসা মুখ থুবড়ে না পড়ে।’

এ বিষয়ে কাজের অগ্রগতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী গণমাধ্যমকে জানান, ই-কমার্স নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটি ইউবিআইডি সেবা চালুর বিষয়ে এটুআইকে দায়িত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। একটি কাঠামো ঠিক করা হয়েছে। দেশে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বতন্ত্র এ নম্বর- ইউবিআইডিকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার ‘পূর্বশর্ত’ হিসেবে ভবিষ্যতে কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

আপাতত ই-কমার্সের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। ভবিষ্যতে দেশের ভেতরে যে কোন ব্যবসার জন্য এটা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে বলে জানান তারা। একক কোম্পানির বেলায় তো বটেই, একটি বড় শিল্প গ্রুপের একাধিক কোম্পানি থাকলে প্রতিটির জন্য পৃথক ইউবিআইডি নিতে হবে।

এটি পুরোদমে কার্যকর করা গেলে দেশে একই নামে আলাদা কোম্পানি করার সুযোগ বন্ধ হবে। কেননা একটি কোম্পানি ইউবিআইডি নিয়ে নিলে তখন অন্য কারও তা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হবে। কর্মকর্তাদের যুক্তি, এতে দেশে পরিচালিত সব ধরনের কোম্পানির প্রাথমিক তথ্যসহ মালিক ও উদ্যোক্তাদের তথ্য জানা যাবে।

একটি কোম্পানির নামে কেউ একটি ইউবিআইডি নেয়ার পর সেই নামে আর কারও আবেদনের সুযোগ থাকবে না উল্লেখ করে এটুআইয়ের হেড অব ই-কমার্স রেজওয়ানুল হক জামি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এর ফলে কেউ নামে বেনামে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারবে না। এক নামে দেশে একাধিক কোম্পানি চালু করার সুযোগও থাকবে না।’ এটি কোন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বন্ধে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

অনলাইনে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট তথ্যগুলো পাওয়ার পর স্বতন্ত্র এ নম্বর বরাদ্দ করা হবে ওই প্রতিষ্ঠানকে। ইউবিআইডি পেতে একটি ওয়েবসাইট চালু করে সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনের অপশন রাখা হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আবেদন পাওয়ার পর তাদের তথ্যগুলো নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ার থেকে যাচাই করা হবে। যাচাইয়ে সব ঠিক থাকলে তাদের ইউবিআইডি দেয়া হবে।

একজন উদ্যোক্তার জাতীয় পরিচয়পত্র, তার নামে নিবন্ধন করা মোবাইল নম্বর, ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান। বর্তমানে প্রচলিত ও অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। এর বাইরে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আরও কিছু সনদ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কর দিতে ইটিআইএন ও ভ্যাট দিতে বিআইএন নিতে হয়।