প্রমত্তা তিন নদী গতি হারিয়ে গোচারণ ভূমি

ইটভাটা, মাছের ঘের ও অবৈধ স্থাপনায় শৈলমারী-ডাকাতিয়া-শিবসা নদী অস্তিত্ব সংকটে

খুলনার বটিয়াঘাটা বাজারের পাশদিয়ে পশ্চিমে চলে গেছে শৈলমারী নদী। এলাকাবাসী জানান, একসময় এ নদীতে প্রবল স্রোত ছিল। এখন উজানের পানি না পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে পলি জমে অনেক অংশ ভরাট হয়ে গেছে। মানুষ হেঁটেই পার হচ্ছে নদী। গত ১০ বছরে এ নদীর মৃত্যু ঘটেছে।

সম্প্রতি দেখা গেছে, নদীর দুইপার জুড়ে বিশাল চর। জোয়ার এলে ডুবে যায়, ভাটায় ফের ভেসে ওঠে। শৈলমারী যেখানে বাঁক নিয়ে উত্তরমুখী হয়েছে, সেখানে একটি ইটভাটা। আরেকটু এগোলে সালতা নদী যেখানে দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে সেখানে আরেকটি ইটভাটা। পশ্চিমপাশেও রয়েছে আরেকটি ইটভাটা। তারপর রয়েছে একাধিক ইটভাটা। এসব ইটভাটায় কাঁচামাল নদীপারের পলিমাটি।

এলাকাবাসী জানান, শৈলমারীর উত্তরদিকে কৈয়া বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে বিল ডাকাতিয়ায়। সেখানে নদীটির বাঁক নেওয়ার মুখে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০ ভেন্টের স্লুইসগেট। এরপরই নদীপারে উঁচুবাঁধ দিয়ে দু নদীর সম্মিলনস্থলে আরেকটি ইটভাটা। এটি তৈরি করেছিলেন প্রয়াত এমপি শেখ নুরুল হক। এখন তাঁর উত্তরাধিকাররা এটির মালিক। সেখানে রয়েছে একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা- ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমিতে স্লুইসগেট তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ব্যক্তি মালিকানার জমির ওপর স্লুইসগেট তৈরি করার কথা না। কাগজপত্র না দেখে বিস্তারিত বলতে পারছি না। মূলত নদীটিতে যত স্রোত কমেছে, তত বেড়েছে ইটভাটা। আগে বিল ডাকাতিয়ার পানি শৈলমারী হয়ে চলে যেত কাজীবাছায়। একইপথে জোয়ারের পানি চলে যেত উত্তরদিকে। এখন এইপথে আর বিলের পানি নামে না। ফলে শৈলমারী আর উজান অঞ্চলের পানি পায় না। আবার শৈলমারীতে শালতা মিশে যেখানে দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে, তার পূর্বপাশে আরেকটি ইটভাটা। এই ইটভাটা ক্রমশ দখল করছে নদী। ফলে আরো সংকুচিত হচ্ছে শৈলমারী।

অপরদিকে পাইকগাছার একসময়ের প্রমত্তা শিবসা নদী ভরাট হয়ে এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। গত ১০ বছরে নদীর শিববাটি সেতু থেকে হাঁড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে চর। এলাকাবাসী জানান, কিছু প্রভাবশালী নদী দখল করে মাছেরঘর করায় পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর মাঝে সরু খাল থাকলেও জোয়ারের সময় সামান্য পানি থাকায় নৌকা চলাচল করলেও ভাটার সময় ওই নৌকা চলাচল করতে পারে না। সে সময় জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নৌপথ বন্ধ হওয়ায় নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। দ্রুত প্রকল্পটি একনেকে পাঠানো হবে।

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২ , ২৬ চৈত্র ১৪২৮ ০৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

প্রমত্তা তিন নদী গতি হারিয়ে গোচারণ ভূমি

ইটভাটা, মাছের ঘের ও অবৈধ স্থাপনায় শৈলমারী-ডাকাতিয়া-শিবসা নদী অস্তিত্ব সংকটে

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা

image

খুলনা : শুকিয়ে যাওয়া শীলমারী নদী -সংবাদ

খুলনার বটিয়াঘাটা বাজারের পাশদিয়ে পশ্চিমে চলে গেছে শৈলমারী নদী। এলাকাবাসী জানান, একসময় এ নদীতে প্রবল স্রোত ছিল। এখন উজানের পানি না পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে পলি জমে অনেক অংশ ভরাট হয়ে গেছে। মানুষ হেঁটেই পার হচ্ছে নদী। গত ১০ বছরে এ নদীর মৃত্যু ঘটেছে।

সম্প্রতি দেখা গেছে, নদীর দুইপার জুড়ে বিশাল চর। জোয়ার এলে ডুবে যায়, ভাটায় ফের ভেসে ওঠে। শৈলমারী যেখানে বাঁক নিয়ে উত্তরমুখী হয়েছে, সেখানে একটি ইটভাটা। আরেকটু এগোলে সালতা নদী যেখানে দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে সেখানে আরেকটি ইটভাটা। পশ্চিমপাশেও রয়েছে আরেকটি ইটভাটা। তারপর রয়েছে একাধিক ইটভাটা। এসব ইটভাটায় কাঁচামাল নদীপারের পলিমাটি।

এলাকাবাসী জানান, শৈলমারীর উত্তরদিকে কৈয়া বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে বিল ডাকাতিয়ায়। সেখানে নদীটির বাঁক নেওয়ার মুখে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০ ভেন্টের স্লুইসগেট। এরপরই নদীপারে উঁচুবাঁধ দিয়ে দু নদীর সম্মিলনস্থলে আরেকটি ইটভাটা। এটি তৈরি করেছিলেন প্রয়াত এমপি শেখ নুরুল হক। এখন তাঁর উত্তরাধিকাররা এটির মালিক। সেখানে রয়েছে একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা- ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমিতে স্লুইসগেট তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ব্যক্তি মালিকানার জমির ওপর স্লুইসগেট তৈরি করার কথা না। কাগজপত্র না দেখে বিস্তারিত বলতে পারছি না। মূলত নদীটিতে যত স্রোত কমেছে, তত বেড়েছে ইটভাটা। আগে বিল ডাকাতিয়ার পানি শৈলমারী হয়ে চলে যেত কাজীবাছায়। একইপথে জোয়ারের পানি চলে যেত উত্তরদিকে। এখন এইপথে আর বিলের পানি নামে না। ফলে শৈলমারী আর উজান অঞ্চলের পানি পায় না। আবার শৈলমারীতে শালতা মিশে যেখানে দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে, তার পূর্বপাশে আরেকটি ইটভাটা। এই ইটভাটা ক্রমশ দখল করছে নদী। ফলে আরো সংকুচিত হচ্ছে শৈলমারী।

অপরদিকে পাইকগাছার একসময়ের প্রমত্তা শিবসা নদী ভরাট হয়ে এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। গত ১০ বছরে নদীর শিববাটি সেতু থেকে হাঁড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে চর। এলাকাবাসী জানান, কিছু প্রভাবশালী নদী দখল করে মাছেরঘর করায় পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর মাঝে সরু খাল থাকলেও জোয়ারের সময় সামান্য পানি থাকায় নৌকা চলাচল করলেও ভাটার সময় ওই নৌকা চলাচল করতে পারে না। সে সময় জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নৌপথ বন্ধ হওয়ায় নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। দ্রুত প্রকল্পটি একনেকে পাঠানো হবে।