যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকের মুনাফায় বড় ধস

করোনা সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারে বড় হাওয়া লেগেছে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বৃহৎ ব্যাংকগুলোর মুনাফায় দুই অঙ্কের পতন হয়েছে। এপি।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ পাঁচটি ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকের মুনাফায় লক্ষণীয় পতনের কথা জানিয়েছে। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা অস্থিতিশীল বিশ্ববাজার, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে চুক্তি কমে যাওয়া, রিয়েল স্টেট খাতে মন্দায় বন্ধকি ঋণ গ্রহণের পতনকে দায়ী করেছেন।

বছরের প্রথম তিন মাসে সিটিগ্রুপ, গোল্ডম্যান স্যাকস, মরগান স্ট্যানলি, ওয়েলস ফার্গো ও জেপি মরগানের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই অঙ্কের পতন হয়েছে। এ সময়ে সিটি গ্রুপ ৪০০ কোটি ডলার মুনাফা পেয়েছে। এ মুনাফার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৭ শতাংশ কম। গোল্ডম্যান স্যাকসের মুনাফা ৪৩ শতাংশ কমে ৩৬৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া মরগান স্ট্যানলির ১১ শতাংশ, ওয়েলস ফার্গোর ২১ শতাংশ এবং জেপি মরগানের মুনাফা কমেছে ৪২ শতাংশ।

তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রথম প্রান্তিকের সঙ্গে এক বছর আগের ফলাফল তুলনা করলে ওয়াল স্ট্রিট কতটা ভালো করেছে, তার সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাপকভাবে ঠিকাদার কর্মসূচি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি ছাড় করায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা সাময়িকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলোকে প্রায়ই সামগ্রিক অর্থনীতির একটি আংশিক চিত্র হিসেবে দেখা হয়। এরই অংশ হিসেবে গত প্রান্তিকটি এক বছর আগের তুলনায় যথেষ্ট কঠিন ছিল।

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি চার দশকের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। পাশাপাশি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে অস্থিতিশীল রয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এ অবস্থায় এরই মধ্যে সুদের হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে, চলতি বছর একাধিকবার সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে বন্ধকি ঋণেও সুদের হার বেড়েছে।

এদিকে ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার বিস্তৃত খাতজুড়ে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞারও প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর মুনাফায়। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে সিটিগ্রুপ, গোল্ডম্যান স্যাকস ও জেপি মরগান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিটি জানিয়েছে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় সম্ভাব্য ঋণ ক্ষতি মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯০ কোটি ডলার বরাদ্দ করতে হয়েছে। দেশটিতে ভোক্তা ব্যাংকিং ব্যবসার পাশাপাশি বিনিয়োগ ব্যাংকিং ব্যবসাও পরিচালনা করে সিটি গ্রুপ।

এছাড়া রাশিয়ায় থাকা সম্পদ আটকে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় জেপি মরগান ১৪৬ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে। দেশটিতে ব্যাংকটির বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসা রয়েছে।

মুনাফার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিনিয়োগ ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে গোল্ডম্যান স্যাকসের বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে। যেখানে মরগান স্ট্যানলির এ বিভাগের আয় কমেছে ৩৮ শতাংশ। পাশাপাশি সিটিগ্রুপের কমেছে ৪৩ শতাংশ। এছাড়া সম্পদের দিক থেকে দেশটির বৃহত্তম ব্যাংক জেপি মরগানের করপোরেট ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগের মুনাফা কমেছে ২৬ শতাংশ।

অন্যদিকে ওয়েলস ফার্গো মুনাফা কমাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে রিয়েল স্টেট খাতের মন্দা। ব্যাংকটির বন্ধকি ঋণ থেকে আসা রাজস্ব গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কমেছে।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকের মুনাফায় বড় ধস

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনা সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারে বড় হাওয়া লেগেছে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বৃহৎ ব্যাংকগুলোর মুনাফায় দুই অঙ্কের পতন হয়েছে। এপি।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ পাঁচটি ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকের মুনাফায় লক্ষণীয় পতনের কথা জানিয়েছে। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা অস্থিতিশীল বিশ্ববাজার, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে চুক্তি কমে যাওয়া, রিয়েল স্টেট খাতে মন্দায় বন্ধকি ঋণ গ্রহণের পতনকে দায়ী করেছেন।

বছরের প্রথম তিন মাসে সিটিগ্রুপ, গোল্ডম্যান স্যাকস, মরগান স্ট্যানলি, ওয়েলস ফার্গো ও জেপি মরগানের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই অঙ্কের পতন হয়েছে। এ সময়ে সিটি গ্রুপ ৪০০ কোটি ডলার মুনাফা পেয়েছে। এ মুনাফার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৭ শতাংশ কম। গোল্ডম্যান স্যাকসের মুনাফা ৪৩ শতাংশ কমে ৩৬৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া মরগান স্ট্যানলির ১১ শতাংশ, ওয়েলস ফার্গোর ২১ শতাংশ এবং জেপি মরগানের মুনাফা কমেছে ৪২ শতাংশ।

তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রথম প্রান্তিকের সঙ্গে এক বছর আগের ফলাফল তুলনা করলে ওয়াল স্ট্রিট কতটা ভালো করেছে, তার সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাপকভাবে ঠিকাদার কর্মসূচি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি ছাড় করায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা সাময়িকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলোকে প্রায়ই সামগ্রিক অর্থনীতির একটি আংশিক চিত্র হিসেবে দেখা হয়। এরই অংশ হিসেবে গত প্রান্তিকটি এক বছর আগের তুলনায় যথেষ্ট কঠিন ছিল।

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি চার দশকের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। পাশাপাশি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে অস্থিতিশীল রয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এ অবস্থায় এরই মধ্যে সুদের হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে, চলতি বছর একাধিকবার সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে বন্ধকি ঋণেও সুদের হার বেড়েছে।

এদিকে ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার বিস্তৃত খাতজুড়ে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞারও প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর মুনাফায়। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে সিটিগ্রুপ, গোল্ডম্যান স্যাকস ও জেপি মরগান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিটি জানিয়েছে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় সম্ভাব্য ঋণ ক্ষতি মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯০ কোটি ডলার বরাদ্দ করতে হয়েছে। দেশটিতে ভোক্তা ব্যাংকিং ব্যবসার পাশাপাশি বিনিয়োগ ব্যাংকিং ব্যবসাও পরিচালনা করে সিটি গ্রুপ।

এছাড়া রাশিয়ায় থাকা সম্পদ আটকে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় জেপি মরগান ১৪৬ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে। দেশটিতে ব্যাংকটির বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসা রয়েছে।

মুনাফার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিনিয়োগ ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে গোল্ডম্যান স্যাকসের বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে। যেখানে মরগান স্ট্যানলির এ বিভাগের আয় কমেছে ৩৮ শতাংশ। পাশাপাশি সিটিগ্রুপের কমেছে ৪৩ শতাংশ। এছাড়া সম্পদের দিক থেকে দেশটির বৃহত্তম ব্যাংক জেপি মরগানের করপোরেট ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগের মুনাফা কমেছে ২৬ শতাংশ।

অন্যদিকে ওয়েলস ফার্গো মুনাফা কমাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে রিয়েল স্টেট খাতের মন্দা। ব্যাংকটির বন্ধকি ঋণ থেকে আসা রাজস্ব গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কমেছে।