সিন্ডিকেটের দখলে চামড়ার বাজার

লোকসান গুনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বর্গফুট হিসাবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা কখনই সেভাবে চামড়া বিক্রির সুযোগ পান না। বাইরের ক্রেতারা সিন্ডিকেট করে বর্গফুটের পরিবর্তে পিস হিসেবে থোক দামে চামড়া কেনেন। তাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ঈদের আগে দেড়গুণ দামে চামড়া বিক্রি করেছেন। তখন একেকটি চামড়া ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ ঈদের মৌসুমে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করলেও এসময় বাইরের ক্রেতারা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম অনেক কমিয়ে দেন।

ঈদের বাজারে তারা প্রতিটি চামড়া ৮শ’ টাকার বেশি দিতে চান না। এর কমেও বিক্রি করতে বাধ্য করেন। তাদের হাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েন। পণ্যটি পচনশীল হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাধ্য হন লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করছেন।

এবার গত বছরের তুলনায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর নির্ধারণ করেছে ৭ টাকা বেশি, আর খাসির চামড়া ৩ টাকা বেশি। এবার ঢাকায় লবন দেওয়া প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৪৭ থেকে ৫২ টাকা, আর ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। এছাড়া ঢাকার বাইরে সারাদেশে লবনযুক্ত খাসির চামড়া বর্গফুটে ৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। তবে ছাগীর চামড়া প্রতি বর্গফুটের দাম গতবছরের দামেই রাখা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। তবে কিশোরগঞ্জের হাটে গরুর চামড়ার আমদানিই বেশি হয়ে থাকে।

কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় এবার আনুমানিক ৯০ হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। জেলায় বেশ কিছু চামড়ার আড়ত থাকলেও সবচেয়ে বড় আড়ত বা হাট বসে জেলা শহরের পৌর মার্কেট সংলগ্ন মোরগ মহালসহ আশপাশের বিভিন্ন রাস্তায়। প্রতি বৃহস্পতিবার বসে চামড়ার হাট। আর এই হাটে জেলার বাইরেও আশপাশের বিভিন্ন জেলা ময়মনসিংহ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, সুমনামগঞ্জ এবং গাজীপুরের নিকটবর্তী উপজেলাগুলো থেকেও প্রচুর চামড়া আসে। এখানে বেশিরভাগ চামড়া পাওয়া যায় দেশি গরুর। এগুলির চাহিদাও বেশি। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার ট্যানারি মালিক ও বড় আড়ত মালিকরা এই মার্কেটে ছুটে আসেন চামড়া কেনার জন্য। অনেকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে গানম্যানও নিয়ে আসেন।

অবশ্য কিশোরগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সবসময়ই বাইরেরর সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ার অভিযোগ তোলেন। ভাল মানের চামড়া হবার পরও বাইরের ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া উল্টেপাল্টে গ্রেডিংয়ের নামে সস্তায় কেনার কৌশল নেন। এছাড়া সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া না কেনার অভিযোগ তো প্রতি বছরের।

গত বৃহস্পতিবার ছিল ঈদের পর প্রথম চামড়ার হাট। হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর পেশাদার ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবন মাখানো চামড়ার স্তুপ সাজিয়ে বাইরের ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এবারও তাদের সেই পুরনো অভিযোগ, বাইরের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কম দামে চামড়া কেনার পায়তারা করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ধারদেনা আর ঋণ করে চামড়া কিনেছেন। এবার সরকার চামড়ার দাম কিছুটা বৃদ্ধি করায় তারা আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু বাজারের চিত্র ভিন্ন। সরকারের দামে বাইরের ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন না। এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি দাবি করেছেন।

কোরবানির চামড়াগুলো মূলত তিন ধাপে কেনাবেচা হয়। কোরবানির দিন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কিনে আনেন। সেগুলি তারা বিক্রি করেন স্থানীয় পেশাদার ব্যবসায়ী বা আড়তদারদের কাছে। পেশাদার ব্যবসায়ীরা এসব চামড়ায় লবন মেখে স্তুপ করে রেখে দেন। সেগুলো তারা গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহিক চামড়ার হাটের দিন তুলে দেন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের হাতে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকার বর্গফুট হিসেবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ঢাকার ক্রেতারা বর্গফুটের হিসাবে যেতেই চান না। তারা পিস হিসেবে থোক দামে কেনেন। এবার লবনের দাম অত্যধিক বেশি। ফলে শ্রমিক লাগিয়ে লবন মাখিয়ে গরুর যে চামড়াটিতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮শ’ টাকার বেশি, ঢাকার ক্রেতারা সেই চামড়াটির দাম বলছেন ৮শ’ টাকা! ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখ দেখবেন। কয়েক বছর ধরেই এই ধারা চলে আসছে।

ময়মনসিংহের নান্দাইল চৌরাস্তা এলাকার বিমল রবিদাস এই হাটে ১০০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন। প্রতিটির খরচ পড়েছে গড়ে ৮শ’ টাকা। ক্রেতারা সেই দামও বলছেন না। যে কারণে চামড়া নিয়ে তিনি বসে আছেন।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী দীন ইসলাম ৬শ’ টাকা দরে ৪শ’ পিস চামড়া কিনে প্রতিটিতে আরও ২শ’ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু ঢাকার ক্রেতাদের কাছে প্রতিটি ৮শ’ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

পাকুন্দিয়া উপজেলার কালিয়াচাপড়া এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন নিয়ে এসেছেন ২১৪ পিস চামড়া। তিনিও লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে লালবাগ পোস্তার হাজী সালাহউদ্দিন আড়তের প্রতিনিধিরা এই চামড়ার হাটে এসেছেন লবন মাখানো কাঁচা চামড়া কিনতে। তারা সেগুলি বিক্রি করবেন ট্যানারি মালিকদের কাছে।

তাদের টার্গেট ৬শ’ পিস চামড়া কেনা। তবে তারা পিস রেটেই চামড়া কিনবেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। চামড়ার হাটে এই বৃহস্পতিবার বাইরের ক্রেতা কমই এসেছেন। যে কারণে অনেকের চামড়া স্তুপ করে ফেলে রেখেছেন।

শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২ , ০১ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৭ জিলহজ ১৪৪৩

সিন্ডিকেটের দখলে চামড়ার বাজার

লোকসান গুনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ

image

কিশোরগঞ্জ শহরের চামড়ার হাটের দৃশ্য -সংবাদ

সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বর্গফুট হিসাবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা কখনই সেভাবে চামড়া বিক্রির সুযোগ পান না। বাইরের ক্রেতারা সিন্ডিকেট করে বর্গফুটের পরিবর্তে পিস হিসেবে থোক দামে চামড়া কেনেন। তাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ঈদের আগে দেড়গুণ দামে চামড়া বিক্রি করেছেন। তখন একেকটি চামড়া ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ ঈদের মৌসুমে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করলেও এসময় বাইরের ক্রেতারা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম অনেক কমিয়ে দেন।

ঈদের বাজারে তারা প্রতিটি চামড়া ৮শ’ টাকার বেশি দিতে চান না। এর কমেও বিক্রি করতে বাধ্য করেন। তাদের হাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েন। পণ্যটি পচনশীল হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাধ্য হন লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করছেন।

এবার গত বছরের তুলনায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর নির্ধারণ করেছে ৭ টাকা বেশি, আর খাসির চামড়া ৩ টাকা বেশি। এবার ঢাকায় লবন দেওয়া প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৪৭ থেকে ৫২ টাকা, আর ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। এছাড়া ঢাকার বাইরে সারাদেশে লবনযুক্ত খাসির চামড়া বর্গফুটে ৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। তবে ছাগীর চামড়া প্রতি বর্গফুটের দাম গতবছরের দামেই রাখা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। তবে কিশোরগঞ্জের হাটে গরুর চামড়ার আমদানিই বেশি হয়ে থাকে।

কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় এবার আনুমানিক ৯০ হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। জেলায় বেশ কিছু চামড়ার আড়ত থাকলেও সবচেয়ে বড় আড়ত বা হাট বসে জেলা শহরের পৌর মার্কেট সংলগ্ন মোরগ মহালসহ আশপাশের বিভিন্ন রাস্তায়। প্রতি বৃহস্পতিবার বসে চামড়ার হাট। আর এই হাটে জেলার বাইরেও আশপাশের বিভিন্ন জেলা ময়মনসিংহ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, সুমনামগঞ্জ এবং গাজীপুরের নিকটবর্তী উপজেলাগুলো থেকেও প্রচুর চামড়া আসে। এখানে বেশিরভাগ চামড়া পাওয়া যায় দেশি গরুর। এগুলির চাহিদাও বেশি। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার ট্যানারি মালিক ও বড় আড়ত মালিকরা এই মার্কেটে ছুটে আসেন চামড়া কেনার জন্য। অনেকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে গানম্যানও নিয়ে আসেন।

অবশ্য কিশোরগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সবসময়ই বাইরেরর সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ার অভিযোগ তোলেন। ভাল মানের চামড়া হবার পরও বাইরের ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া উল্টেপাল্টে গ্রেডিংয়ের নামে সস্তায় কেনার কৌশল নেন। এছাড়া সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া না কেনার অভিযোগ তো প্রতি বছরের।

গত বৃহস্পতিবার ছিল ঈদের পর প্রথম চামড়ার হাট। হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর পেশাদার ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবন মাখানো চামড়ার স্তুপ সাজিয়ে বাইরের ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এবারও তাদের সেই পুরনো অভিযোগ, বাইরের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কম দামে চামড়া কেনার পায়তারা করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ধারদেনা আর ঋণ করে চামড়া কিনেছেন। এবার সরকার চামড়ার দাম কিছুটা বৃদ্ধি করায় তারা আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু বাজারের চিত্র ভিন্ন। সরকারের দামে বাইরের ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন না। এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি দাবি করেছেন।

কোরবানির চামড়াগুলো মূলত তিন ধাপে কেনাবেচা হয়। কোরবানির দিন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কিনে আনেন। সেগুলি তারা বিক্রি করেন স্থানীয় পেশাদার ব্যবসায়ী বা আড়তদারদের কাছে। পেশাদার ব্যবসায়ীরা এসব চামড়ায় লবন মেখে স্তুপ করে রেখে দেন। সেগুলো তারা গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহিক চামড়ার হাটের দিন তুলে দেন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের হাতে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকার বর্গফুট হিসেবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ঢাকার ক্রেতারা বর্গফুটের হিসাবে যেতেই চান না। তারা পিস হিসেবে থোক দামে কেনেন। এবার লবনের দাম অত্যধিক বেশি। ফলে শ্রমিক লাগিয়ে লবন মাখিয়ে গরুর যে চামড়াটিতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮শ’ টাকার বেশি, ঢাকার ক্রেতারা সেই চামড়াটির দাম বলছেন ৮শ’ টাকা! ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখ দেখবেন। কয়েক বছর ধরেই এই ধারা চলে আসছে।

ময়মনসিংহের নান্দাইল চৌরাস্তা এলাকার বিমল রবিদাস এই হাটে ১০০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন। প্রতিটির খরচ পড়েছে গড়ে ৮শ’ টাকা। ক্রেতারা সেই দামও বলছেন না। যে কারণে চামড়া নিয়ে তিনি বসে আছেন।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী দীন ইসলাম ৬শ’ টাকা দরে ৪শ’ পিস চামড়া কিনে প্রতিটিতে আরও ২শ’ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু ঢাকার ক্রেতাদের কাছে প্রতিটি ৮শ’ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

পাকুন্দিয়া উপজেলার কালিয়াচাপড়া এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন নিয়ে এসেছেন ২১৪ পিস চামড়া। তিনিও লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে লালবাগ পোস্তার হাজী সালাহউদ্দিন আড়তের প্রতিনিধিরা এই চামড়ার হাটে এসেছেন লবন মাখানো কাঁচা চামড়া কিনতে। তারা সেগুলি বিক্রি করবেন ট্যানারি মালিকদের কাছে।

তাদের টার্গেট ৬শ’ পিস চামড়া কেনা। তবে তারা পিস রেটেই চামড়া কিনবেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। চামড়ার হাটে এই বৃহস্পতিবার বাইরের ক্রেতা কমই এসেছেন। যে কারণে অনেকের চামড়া স্তুপ করে ফেলে রেখেছেন।