পাঁচ প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতি

মাউশি মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব

শিক্ষার মানোন্নয়নের পাঁচ প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট চলছেই। এ নিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা ও মাউশির মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ হওয়া ‘সেকায়েপ, এফএলটিসি ও টিকিউআই’ প্রকল্পের গাড়ি, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস মালামালের হদিস নেই। দরপত্র আহ্বান ছাড়াই খুচরা কেনাকাটর নামে বহুল আলোচিত ‘আইসিটি প্রকল্পে’র প্রায় ৯০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‘সেকায়েপ’ প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া মাউশি অধিদফতরের ‘পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন উইং’র (এমইডাব্লিউ) পাঁচ কর্মকর্তাকে সম্প্রতি বদলি করা হলে তারা ওই ইউনিটের জন্য কেনা ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও আইফোনসহ অন্য মালামাল নিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ উঠে।

এ ব্যাপারে এমইডাব্লিউ’র সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. সেলিম মিঞা সংবাদকে বলেন, ‘আমি বদলি হওয়ার পর ওই ইউনিটের সব মাল ইউনিটেই রেখে এসেছি। আমি কোন মাল নিয়ে আসিনি।’

এছাড়া প্রায় এক বছর আগে দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলেও ওইসব প্রকল্পের গাড়ি, এসি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী, আসবাবপত্রসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ মালামাল মাউশি অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। অনেক কর্মকর্তা মালামাল বাসায় নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দুটি প্রকল্প হলো- বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রকল্প (এফএলটিসি) এবং টিচিং কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট (টিকিউআই-২) প্রকল্প।

টিকিউআই প্রকল্পটি শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১০০টি গাড়ি, অর্ধশত এসি (এয়ার কন্ডিশনার), কয়েক ডজন কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও অন্য মালামাল ছিল।

এফএলটিসি প্রকল্পের পিডি প্রফেসর মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, বর্তমানে ওএসডি আছেন। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর মালামাল কোথায় রাখা হয়েছে জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘মালামাল তো মাউশিতেই রয়েছে। এগুলো আইসিটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা দখলে নিয়ে ব্যবহার করছেন। তবে একটি প্রিন্টার বা স্ক্যানার মেশিন এক কর্মকর্তা বাসায় নিয়ে গেছেন।’

টিকিউআই প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পের সব মাল অফিসেই রয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে অফিস করছি। এজন্য মাল বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের কাজেও টিকিউআই’র কিছু মাল ব্যবহার করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘মাউশি’র অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া কোন প্রকল্প শেষ হলে বিধিমোতাবেক এর যাবতীয় মালামাল মাউশিকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু কয়েকটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পর কর্মকর্তারা মালামাল বুঝিয়ে দেননি মাউশিকে। যারা এখনও মালামাল বুঝিয়ে দেননি, আশা করি তারা সেসব মাল দ্রুতই আমাদের বুঝিয়ে দেবেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাপ্তকৃত প্রকল্পগুলোর মালামাল নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল চলছে। সরকারি মালামাল নেয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ প্রশাসনিকভাবে অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় এবং তাদের কাছ থেকে মাউশির এক শীর্ষ কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নেয়ায় মালামাল ফেরত পাচ্ছে না সংস্থার সংশ্লিষ্ট শাখা।

এদিকে বারবার প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বদল ও দুর্নীতির কারণে ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের (১৫শ’ কলেজ) উন্নয়ন প্রকল্প’ স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রায় দু’মাস পিডি ছিল না; (গত ২৪ মার্চ পিডি বদলি হয়) সম্প্রতি পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে; এ প্রকল্পের কার্যক্রমেও স্থবিরতা নেমেছে। বারবার পিডি বদলের কারণে কর্মকর্তারা কাজের গতি হারিয়ে ফেলছেন।

২০১২ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতি ও বারবার পিডি বদলের কারণে এই প্রকল্প সময়মতো শেষ হয়নি। সর্বশেষ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয় মাত্র ৬১ শতাংশ। এরপর কাজের গতি খুব একটা বাড়েনি।

এই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. এনামুল হক সংবাদকে বলেন, ‘এতোদিন পিডি ছিল না। আমার আর্থিক ক্ষমতাও ছিল না। এজন্য নতুন করে কোন দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। আমরা কেবল রুটিন ওয়ার্ক করেছি।’

মাউশির সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ (সেকায়েপ) শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হতো মাউশির ‘পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন উইং’। সেকায়েপ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পর ওই উইংয়ের কর্মকর্তারা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উইংয়েই ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন।

গত ২৪ মার্চ শিক্ষা প্রশাসনে একটি রদ-বদলের মধ্যে ‘পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন উইং’য়ের পাঁচ কর্মকর্তাকেও বদলি ও ওএসডি করা হলে তারা প্রকল্পের অর্থে ক্রয় করা মালামাল নিয়ে চলে যান। এই পাঁচ কর্মকর্তার চারজন একটি করে ল্যাপটপ ও একটি করে আইফোন নিয়ে যান। অপর কর্মকর্তা একটি কম্পিউটার, একটি ল্যাপটপ ও একটি আইফোন নিয়ে গেছেন। তাদের একজন ইতোমধ্যে অবসরোত্তর ছুটিতে গেছেন; একজন পরিচালক ও একজন উপ-পরিচালক বর্তমানে ওএসডি রয়েছেন; আরেক কর্মকর্তাকে সরকারি তিতুমীর কলেজে বদলি, অপরজন বর্তমানে কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত আছেন। এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মালামালের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মাউশির একজন সহকারী পরিচালক সংবাদকে বলেন, ‘এমইডাব্লিউ’র দাফতরিক কাজে ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও আইফোন কেনা হয়েছিল। কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। কিন্তু কর্মকর্তারা এখান থেকে বদলি হয়ে সরকারি মালামাল নিয়ে চলে গেছেন। এগুলো অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। প্রতিটি ল্যাপটপ কেনায় খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার ও প্রতিটি আইফোন কেনায় খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এই প্রবণতা চলতে থাকলে সব প্রকল্পেই স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়বে।’

আইসিটি প্রকল্পে লুটপাট : দরপত্র ছাড়াই ‘আইসিটি’র মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রচলন প্রকল্পের (২য় পর্যায়)’ অধীনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধানদের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষে ‘প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল’ তৈরি এবং অন্য উপকরণ ও বিশেষ করে- প্রশিক্ষণ গাইডলাইন, ব্যাগ, প্যাড, কলম ও এ সংক্রান্ত মালামাল কেনার কথা। কিন্তু এসব উপকরণ ছাড়াই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

১৩ জেলার ১৩টি সরকারি টিটিসি (শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ), ৫টি বিএমটিটিআই (উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) এবং ১টি বিএমটিটিআই’এ (মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) আইসিটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গত ৯ মার্চ থেকে জেলা পর্যায়ে আইসিটি বিষয়ক এই প্রশিক্ষণ চলছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা দাবি করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নথিপত্র অনুমোদন না করেই শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে দু’দফায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। পরে ওই খরচের ভাউচার অনুমোদনের জন্য নথিতে স্বাক্ষর করতে এক কর্মকর্তাকে চাপ দেয়া হলে তিনি পুরনো তারিখে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে কিছুদিন পর ওই কর্মকর্তার ডেস্ক বদল করে এই ডেস্কে অপর এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই কর্মকর্তাও পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুরনো তারিখে নথিতে স্বাক্ষর করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও মাউশির এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা। কারণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, পরিশোধও হয়েছে; কিন্তু কেনাকাটার নথি অনুমোদন করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি না করেই নামকাওয়াস্তে কার্যক্রম দেখানো হচ্ছে। প্রশিক্ষণ গাইডলাইন, ব্যাগ, প্যাড, কলম ও এ সংক্রান্ত মালামাল ক্রয়ের জন্য দরপত্র ছাড়াই ইতোমধ্যে কেনাকাটার নামে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকার নয়-ছয় করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বায়ন না করেই কৌশলে খুচরা অর্থাৎ পাঁচ লাখ, সাত লাখ টাকার মালামালের ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। দু’একটি ক্ষেত্রে চড়া মূল্যে নিম্নমানের মাল কেনা হয়েছে।

জানতে চাইলে কিছুদিন আগে ফেনী সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রফেসর মনজুরুল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আমার কলেজে আইসিটি প্রকল্পের শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রথম ফেইজ শেষ হয়েছে; কিন্তু সময় স্বল্পতার অভাবে প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, ব্যাগ, প্যাড ও কলম ইত্যাদি কেনা হয়নি বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন।’

কিছুদিন আগে সিলেট টিটিসির অধ্যক্ষ প্রফেসর মিছবাহুদ্দীন আহমদ সংবাদকে বলেছেন, ‘আমাদের কলেজে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ হচ্ছে। তবে আইসিটি প্রকল্পের একটি ব্যাচের ট্রেনিং ম্যানুয়াল ও উপকরণ ঢাকা থেকে পাঠানো হয়নি।’

তবে রংপুর টিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রফেসর নারায়ন কুমার কুন্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসতে জ্যাম ও যানবাহন সমস্যার কারণে আইসিটি প্রকল্পের ম্যানুয়াল ও অন্য উপকরণ পৌঁছাতে ৫/৭ দিন দেরি হয়েছিল। এজন্য প্রশিক্ষণ শেষে আমরা ওইসব উপকরণ শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

আইসিটি প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘মাউশি’র শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার যোগসাজশে আইসিটি (ফেইজ-২) প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করেছেন প্রকল্পের প্রভাবশালী কয়েকজন কর্মকর্তা।’

মাউশির মহাপরিচালক বেশকিছু দিন ধরে বিদেশ সফরে রয়েছেন। এজন্য প্রকল্পের ব্যাপারে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

দরপত্র ছাড়া প্রায় ৯০ লাখ টাকার কেনাকাটা করা হয়েছে কী না জানতে চাইলে আইসিটি প্রকল্পের পরিচালক প্রফেসর ড. আবদুর সবুর খান দাবি করেন তার প্রকল্পে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘নথিপত্র যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন করেই কেনাকাটা করা হচ্ছে। তবে এখন থেকে বাকি সব কেনাকাটা ই-জিপি (অনলাইন পদ্ধতি) দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে করা হবে।’

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনার জন্য আইসিটি প্রকল্পের অধীনে মোট পাঁচ লাখ ৭২ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এসব শিক্ষক মোট ১২ ধরনের প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। মোট শিক্ষকদের ৪ লাখ ১০ হাজার জনকে ‘ইন হাউজ’ (নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে) প্রশিক্ষণ এবং বাকিদের বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল সব টিটিসি’তে দেয়া হচ্ছে দাবি করে পিডি আবদুস সবুর খান বলেন, ‘আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এক লাখ ৬১ হাজার শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার ‘হেড অব ইনস্টিটিউটস’ (প্রতিষ্ঠান প্রধান) এবং ১০ হাজার সহকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’

আরও খবর
ব্যর্থতার দায় স্বীকার জাতিসংঘের
ড্রেসিং রুমে কেউই মনে করেননি কাজটা কঠিন হবে : সাকিব
সাকিব-লিটনের অবিস্মরণীয় জুটিতে বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে পারে
আবার ইংল্যান্ডের রানের পাহাড়
মানহানির দুই মামলায় খালেদার জামিন
সর্বজনীন পেনশন চালু করতে চায় সরকার
ফলের রাসায়নিক পরীক্ষার যন্ত্র নেই
ডিআইজি মিজানের শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসে এক মাস সময় দিলেন হাইকোর্ট
এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সমাপ্ত ২০২২ সালে
আসামি রুহুলের মুক্তি চেয়ে আ’লীগের নামে পোস্টার
বিলুপ্তির পথে শিল্পী পাখি বাবুইয়ের গড়া নীড়
মোবাইলের মাধ্যমে চলছে মাদক ব্যবসা

বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০

শিক্ষার মানোন্নয়ন

পাঁচ প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতি

মাউশি মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব

রাকিব উদ্দিন

শিক্ষার মানোন্নয়নের পাঁচ প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট চলছেই। এ নিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা ও মাউশির মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ হওয়া ‘সেকায়েপ, এফএলটিসি ও টিকিউআই’ প্রকল্পের গাড়ি, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস মালামালের হদিস নেই। দরপত্র আহ্বান ছাড়াই খুচরা কেনাকাটর নামে বহুল আলোচিত ‘আইসিটি প্রকল্পে’র প্রায় ৯০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‘সেকায়েপ’ প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া মাউশি অধিদফতরের ‘পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন উইং’র (এমইডাব্লিউ) পাঁচ কর্মকর্তাকে সম্প্রতি বদলি করা হলে তারা ওই ইউনিটের জন্য কেনা ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও আইফোনসহ অন্য মালামাল নিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ উঠে।

এ ব্যাপারে এমইডাব্লিউ’র সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. সেলিম মিঞা সংবাদকে বলেন, ‘আমি বদলি হওয়ার পর ওই ইউনিটের সব মাল ইউনিটেই রেখে এসেছি। আমি কোন মাল নিয়ে আসিনি।’

এছাড়া প্রায় এক বছর আগে দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলেও ওইসব প্রকল্পের গাড়ি, এসি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী, আসবাবপত্রসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ মালামাল মাউশি অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। অনেক কর্মকর্তা মালামাল বাসায় নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দুটি প্রকল্প হলো- বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রকল্প (এফএলটিসি) এবং টিচিং কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট (টিকিউআই-২) প্রকল্প।

টিকিউআই প্রকল্পটি শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১০০টি গাড়ি, অর্ধশত এসি (এয়ার কন্ডিশনার), কয়েক ডজন কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও অন্য মালামাল ছিল।

এফএলটিসি প্রকল্পের পিডি প্রফেসর মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, বর্তমানে ওএসডি আছেন। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর মালামাল কোথায় রাখা হয়েছে জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘মালামাল তো মাউশিতেই রয়েছে। এগুলো আইসিটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা দখলে নিয়ে ব্যবহার করছেন। তবে একটি প্রিন্টার বা স্ক্যানার মেশিন এক কর্মকর্তা বাসায় নিয়ে গেছেন।’

টিকিউআই প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পের সব মাল অফিসেই রয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে অফিস করছি। এজন্য মাল বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের কাজেও টিকিউআই’র কিছু মাল ব্যবহার করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘মাউশি’র অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া কোন প্রকল্প শেষ হলে বিধিমোতাবেক এর যাবতীয় মালামাল মাউশিকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু কয়েকটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পর কর্মকর্তারা মালামাল বুঝিয়ে দেননি মাউশিকে। যারা এখনও মালামাল বুঝিয়ে দেননি, আশা করি তারা সেসব মাল দ্রুতই আমাদের বুঝিয়ে দেবেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাপ্তকৃত প্রকল্পগুলোর মালামাল নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল চলছে। সরকারি মালামাল নেয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ প্রশাসনিকভাবে অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় এবং তাদের কাছ থেকে মাউশির এক শীর্ষ কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নেয়ায় মালামাল ফেরত পাচ্ছে না সংস্থার সংশ্লিষ্ট শাখা।

এদিকে বারবার প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বদল ও দুর্নীতির কারণে ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের (১৫শ’ কলেজ) উন্নয়ন প্রকল্প’ স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রায় দু’মাস পিডি ছিল না; (গত ২৪ মার্চ পিডি বদলি হয়) সম্প্রতি পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে; এ প্রকল্পের কার্যক্রমেও স্থবিরতা নেমেছে। বারবার পিডি বদলের কারণে কর্মকর্তারা কাজের গতি হারিয়ে ফেলছেন।

২০১২ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতি ও বারবার পিডি বদলের কারণে এই প্রকল্প সময়মতো শেষ হয়নি। সর্বশেষ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয় মাত্র ৬১ শতাংশ। এরপর কাজের গতি খুব একটা বাড়েনি।

এই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. এনামুল হক সংবাদকে বলেন, ‘এতোদিন পিডি ছিল না। আমার আর্থিক ক্ষমতাও ছিল না। এজন্য নতুন করে কোন দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। আমরা কেবল রুটিন ওয়ার্ক করেছি।’

মাউশির সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ (সেকায়েপ) শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হতো মাউশির ‘পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন উইং’। সেকায়েপ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পর ওই উইংয়ের কর্মকর্তারা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উইংয়েই ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন।

গত ২৪ মার্চ শিক্ষা প্রশাসনে একটি রদ-বদলের মধ্যে ‘পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন উইং’য়ের পাঁচ কর্মকর্তাকেও বদলি ও ওএসডি করা হলে তারা প্রকল্পের অর্থে ক্রয় করা মালামাল নিয়ে চলে যান। এই পাঁচ কর্মকর্তার চারজন একটি করে ল্যাপটপ ও একটি করে আইফোন নিয়ে যান। অপর কর্মকর্তা একটি কম্পিউটার, একটি ল্যাপটপ ও একটি আইফোন নিয়ে গেছেন। তাদের একজন ইতোমধ্যে অবসরোত্তর ছুটিতে গেছেন; একজন পরিচালক ও একজন উপ-পরিচালক বর্তমানে ওএসডি রয়েছেন; আরেক কর্মকর্তাকে সরকারি তিতুমীর কলেজে বদলি, অপরজন বর্তমানে কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত আছেন। এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মালামালের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মাউশির একজন সহকারী পরিচালক সংবাদকে বলেন, ‘এমইডাব্লিউ’র দাফতরিক কাজে ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও আইফোন কেনা হয়েছিল। কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। কিন্তু কর্মকর্তারা এখান থেকে বদলি হয়ে সরকারি মালামাল নিয়ে চলে গেছেন। এগুলো অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। প্রতিটি ল্যাপটপ কেনায় খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার ও প্রতিটি আইফোন কেনায় খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এই প্রবণতা চলতে থাকলে সব প্রকল্পেই স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়বে।’

আইসিটি প্রকল্পে লুটপাট : দরপত্র ছাড়াই ‘আইসিটি’র মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রচলন প্রকল্পের (২য় পর্যায়)’ অধীনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধানদের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষে ‘প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল’ তৈরি এবং অন্য উপকরণ ও বিশেষ করে- প্রশিক্ষণ গাইডলাইন, ব্যাগ, প্যাড, কলম ও এ সংক্রান্ত মালামাল কেনার কথা। কিন্তু এসব উপকরণ ছাড়াই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

১৩ জেলার ১৩টি সরকারি টিটিসি (শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ), ৫টি বিএমটিটিআই (উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) এবং ১টি বিএমটিটিআই’এ (মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) আইসিটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গত ৯ মার্চ থেকে জেলা পর্যায়ে আইসিটি বিষয়ক এই প্রশিক্ষণ চলছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা দাবি করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নথিপত্র অনুমোদন না করেই শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে দু’দফায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। পরে ওই খরচের ভাউচার অনুমোদনের জন্য নথিতে স্বাক্ষর করতে এক কর্মকর্তাকে চাপ দেয়া হলে তিনি পুরনো তারিখে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে কিছুদিন পর ওই কর্মকর্তার ডেস্ক বদল করে এই ডেস্কে অপর এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই কর্মকর্তাও পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুরনো তারিখে নথিতে স্বাক্ষর করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও মাউশির এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা। কারণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, পরিশোধও হয়েছে; কিন্তু কেনাকাটার নথি অনুমোদন করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি না করেই নামকাওয়াস্তে কার্যক্রম দেখানো হচ্ছে। প্রশিক্ষণ গাইডলাইন, ব্যাগ, প্যাড, কলম ও এ সংক্রান্ত মালামাল ক্রয়ের জন্য দরপত্র ছাড়াই ইতোমধ্যে কেনাকাটার নামে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকার নয়-ছয় করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বায়ন না করেই কৌশলে খুচরা অর্থাৎ পাঁচ লাখ, সাত লাখ টাকার মালামালের ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। দু’একটি ক্ষেত্রে চড়া মূল্যে নিম্নমানের মাল কেনা হয়েছে।

জানতে চাইলে কিছুদিন আগে ফেনী সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রফেসর মনজুরুল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আমার কলেজে আইসিটি প্রকল্পের শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রথম ফেইজ শেষ হয়েছে; কিন্তু সময় স্বল্পতার অভাবে প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, ব্যাগ, প্যাড ও কলম ইত্যাদি কেনা হয়নি বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন।’

কিছুদিন আগে সিলেট টিটিসির অধ্যক্ষ প্রফেসর মিছবাহুদ্দীন আহমদ সংবাদকে বলেছেন, ‘আমাদের কলেজে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ হচ্ছে। তবে আইসিটি প্রকল্পের একটি ব্যাচের ট্রেনিং ম্যানুয়াল ও উপকরণ ঢাকা থেকে পাঠানো হয়নি।’

তবে রংপুর টিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রফেসর নারায়ন কুমার কুন্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসতে জ্যাম ও যানবাহন সমস্যার কারণে আইসিটি প্রকল্পের ম্যানুয়াল ও অন্য উপকরণ পৌঁছাতে ৫/৭ দিন দেরি হয়েছিল। এজন্য প্রশিক্ষণ শেষে আমরা ওইসব উপকরণ শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

আইসিটি প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘মাউশি’র শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার যোগসাজশে আইসিটি (ফেইজ-২) প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করেছেন প্রকল্পের প্রভাবশালী কয়েকজন কর্মকর্তা।’

মাউশির মহাপরিচালক বেশকিছু দিন ধরে বিদেশ সফরে রয়েছেন। এজন্য প্রকল্পের ব্যাপারে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

দরপত্র ছাড়া প্রায় ৯০ লাখ টাকার কেনাকাটা করা হয়েছে কী না জানতে চাইলে আইসিটি প্রকল্পের পরিচালক প্রফেসর ড. আবদুর সবুর খান দাবি করেন তার প্রকল্পে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘নথিপত্র যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন করেই কেনাকাটা করা হচ্ছে। তবে এখন থেকে বাকি সব কেনাকাটা ই-জিপি (অনলাইন পদ্ধতি) দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে করা হবে।’

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনার জন্য আইসিটি প্রকল্পের অধীনে মোট পাঁচ লাখ ৭২ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এসব শিক্ষক মোট ১২ ধরনের প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। মোট শিক্ষকদের ৪ লাখ ১০ হাজার জনকে ‘ইন হাউজ’ (নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে) প্রশিক্ষণ এবং বাকিদের বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল সব টিটিসি’তে দেয়া হচ্ছে দাবি করে পিডি আবদুস সবুর খান বলেন, ‘আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এক লাখ ৬১ হাজার শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার ‘হেড অব ইনস্টিটিউটস’ (প্রতিষ্ঠান প্রধান) এবং ১০ হাজার সহকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’