মায়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটি জানায়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তাদের ঐক্যবদ্ধ কোন কৌশল ছিল না। এছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের পর্যাপ্ত সমর্থনেরও অভাব ছিল। সর্বোপরি, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তারা ‘পদ্ধতিগতভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে।
চলতি বছর মায়ানমারে ২০১০-১৮ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের কর্মকা- খতিয়ে দেখতে গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ড রোজেনথালকে নিয়োগ দেন মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস। তিনি তার বিবৃতিতে বলেন, নিঃসন্দেহে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত কারণে অনেক ভুল হয়েছে এবং সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ৩৪ পৃষ্ঠার ওই অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে তিনি বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা না নিয়ে বিচ্ছিন্ন কৌশল অবলম্বন করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মায়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকা- নিয়ে রোজেনথাল বলেন, এটা সমষ্টিগত দায়িত্ব ছিল। একে সত্যিকার অর্থে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মায়ানমারে বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন নাকি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবেন তা নিয়েই একমত হতে পারছিলেন না। আর তৃণমূল থেকে জাতিসংঘের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্রতিবেদন।
রোজেনথাল বলেন, জাতিসংঘ তখন মায়ানমারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী করতে এবং একই সঙ্গে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছিল। তিনি বলেন, মায়ানমারকে মানবাধিকর লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করতে যোগ্য ভূমিকা রাখেনি জাতিসংঘ। তবে তাদের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রশংসার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিল তারা। জাতিসংঘের দূত বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিত্বে জাতিসংঘের সামষ্টিক সদস্যরাই এর জন্য দায়ী। যখন যেই সমর্থন প্রয়োজন ছিল তারা সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিগত নিধনের ভয়াবহ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসংঘের হিসাবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনও সেখানে থেকে গেছে। দ্য গার্ডিয়ানের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে থাকা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থাপন করা হয় আইডিপি ক্যাম্প। তখন থেকেই এই ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা ও কামান জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য এসব ক্যাম্পে বসবাস করে। তবে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে মায়ানমার সরকার। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী নতুন অভিযান জোরালো করার পাশাপাশি এসব ক্যাম্প বন্ধ শুরুর অঙ্গীকার করে মায়ানমার সরকার। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উল্টো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও অবনতির দিকে গেছে। জাতিসংঘ এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে আখ্যা দেয়।
বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
মায়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটি জানায়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তাদের ঐক্যবদ্ধ কোন কৌশল ছিল না। এছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের পর্যাপ্ত সমর্থনেরও অভাব ছিল। সর্বোপরি, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তারা ‘পদ্ধতিগতভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে।
চলতি বছর মায়ানমারে ২০১০-১৮ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের কর্মকা- খতিয়ে দেখতে গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ড রোজেনথালকে নিয়োগ দেন মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস। তিনি তার বিবৃতিতে বলেন, নিঃসন্দেহে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত কারণে অনেক ভুল হয়েছে এবং সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ৩৪ পৃষ্ঠার ওই অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে তিনি বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা না নিয়ে বিচ্ছিন্ন কৌশল অবলম্বন করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মায়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকা- নিয়ে রোজেনথাল বলেন, এটা সমষ্টিগত দায়িত্ব ছিল। একে সত্যিকার অর্থে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মায়ানমারে বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন নাকি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবেন তা নিয়েই একমত হতে পারছিলেন না। আর তৃণমূল থেকে জাতিসংঘের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্রতিবেদন।
রোজেনথাল বলেন, জাতিসংঘ তখন মায়ানমারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী করতে এবং একই সঙ্গে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছিল। তিনি বলেন, মায়ানমারকে মানবাধিকর লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করতে যোগ্য ভূমিকা রাখেনি জাতিসংঘ। তবে তাদের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রশংসার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিল তারা। জাতিসংঘের দূত বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিত্বে জাতিসংঘের সামষ্টিক সদস্যরাই এর জন্য দায়ী। যখন যেই সমর্থন প্রয়োজন ছিল তারা সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিগত নিধনের ভয়াবহ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসংঘের হিসাবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনও সেখানে থেকে গেছে। দ্য গার্ডিয়ানের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে থাকা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থাপন করা হয় আইডিপি ক্যাম্প। তখন থেকেই এই ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা ও কামান জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য এসব ক্যাম্পে বসবাস করে। তবে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে মায়ানমার সরকার। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী নতুন অভিযান জোরালো করার পাশাপাশি এসব ক্যাম্প বন্ধ শুরুর অঙ্গীকার করে মায়ানমার সরকার। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উল্টো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও অবনতির দিকে গেছে। জাতিসংঘ এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে আখ্যা দেয়।