ভারী বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢল

দশ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে

  • বহু গ্রাম-জনপদ তলিয়ে গেছে
  • পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা

বাড়ছে নদ-নদীর পানি। বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারী বর্ষণে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। দুর্গত জেলাগুলোয় পাঠানো হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। দু’একদিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু এবং মেডিকেল টিমের পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, হালদাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তাই নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর জামালপুর জেলায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, হালদাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছেÑ রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ভারী বর্ষণের কারণে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। দুর্গত জেলাগুলোয় পাঠানো হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। দু’একদিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু ও মেডিকেল টিমের পৌঁছে যাবে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। গতকাল শুক্রবার সচিবালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ছাড়াও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার ও নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। ভারতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানি আরও বাড়বে। পাশাপাশি বিহারে গঙ্গার পানি বাড়ায় বালাদেশে পদ্মা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। দেশের নদনদীগুলোর ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব পয়েন্টে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ৫৫১টি সেন্টারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জামালপুরে ভাঙনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে এবং লালমনিহাটে তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এগুলো মোকাবিলায় কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, যেসব জেলা দুর্গত হতে পারে, সেগুলোর পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও সমান প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুর ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং দুই দফায় সাড়ে ১৭ হাজার মেট্টিক টন চাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। কোন জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতর বন্যা মোকাবিলায় যেসব প্রস্তুতি নিয়েছে, সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল টিম গঠন করেছে এবং প্রচুর পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুতি রেখেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুতি করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে- যাতে পানিবাহিত রোগ বিস্তার রোধ করা যায়। খাদ্যগুদামের কর্মরতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা আশা করি, এই বন্যায় আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করতে তো পারবই, গবাদিপশু ও খাদ্যশস্যেরও নিরাপত্তা দিতে পারব।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার থেকে ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে সব ডিসি ঢাকায় থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত ডিসি হিসেবে যারা দায়িত্বে থাকবেন, তাদের কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবারের মতো বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সফল হব।

আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় জায়গার অভাব হলে ব্যবহারের জন্য দুর্গত এলাকাগুলোয় ৫০০টি করে তাঁবু পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রতিটি তাঁবুতে ২০ জন করে থাকতে পারবেন।

বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি গতকাল দুপুরে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এর প্রভাব পরতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল এলাকায়। ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, হাতিয়া, চিলমারী ও নয়ারহাট এলাকায় চার হাজার পরিবারের বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। তিস্তা এলাকায় বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। তবে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা এলাকায় গত এক সপ্তাহে ১২০টি বাড়িঘর বিলিন হয়েছে। এখানে স্কুল, বাজার, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরের ভাঙন ঠেকাতে ৫ হাজার জিও ব্যাগ দেয়া হলেও তীব্র ভাঙন ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ছে তিস্তা ও দুধকুমারেও।

গতকাল সরজমিন রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে দেখা যায়, বন্যার ফলে চতুরা ও রামহরী মৌজায় প্রায় ৫০টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে তীব্র ভাঙনে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১২০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার চতুরার সতিশের পুত্র বিনন নদী থেকে ঘর সরিয়েও পানিবন্দির কারণে তিন দিন ধরে খোলা আকাশে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

ভীষণ ভোগান্তির মধ্যে থাকা চতুরা গ্রামের লোকজন জানান, পূর্বে নরেন চন্দ্রের বাড়ি থেকে পশ্চিমে তোফাজ্জলের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের ফলে নিঃস্ব হয়েছে ১২০টি পরিবার। এর মধ্যে চতুরা এলাকায় গত তিন দিনে নদীতে বিলীন হয়েছে ১৫-১৬টি বাড়ি। অপরদিকে রামহরি এলাকার তোফাজ্জল (৪৮) বলেন, গত তিন দিনে আমার অপর তিন ভাইয়ের বাড়িসহ আরও ১৫-২০টি বাড়ি ভেঙে গেছে।

ভাঙনকবলিত ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, গত কয়েক বছরে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের অর্ধেকটা নদীতে চলে গেছে। এখনও দু’হাজার পরিবার মেইনল্যান্ডে বসবাস করছে। সরকার যদি দ্রুততম সময়ে নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করে, তাহলে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোয় ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেড়শ’ টন চাল ও তিন লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ জানান, ভাঙনকবলিত বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরহাট বাজার এলাকায় ৫ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।

মানিকগঞ্জ : যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী বাচামারা ও চরকাটারী ইউনিয়নের জনপদের ৪টি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে প্রায় ৩৪৬টি বসতবাড়ি, কয়েকশ’ বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত সোমবার মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী বাচামারা ও চরকাটারী ইউনয়নে নদীপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের লোকজন নিয়ে নদীর পাড়ে অন্যের জায়গায় ঘর-দরজা, ধান-চাল, জিনিসপত্র, গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে কয়েক সপ্তাহ আগে বাচামারা এলাকায় মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪ হাজার বস্তা (জিও ব্যাগ) নদীর পাড় ঘেঁষে ফেলছে, তা কোন কাজে আসেনি । ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে ।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, ইতোমধ্যে চরকাটারী ও বাচামারায় ৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে সরকারের আরও বরাদ্দ নগদ অর্থ, চাল, ঢেউটিন যাই আসুক, সবটুকু জিনিস ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সমভাবে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, বাচামারা ও চরকাটারী ৬-৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভাব নয়। এখানে ভাঙন রোধে ও স্রোত ঠেকাতে বিকল্প প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সরেজমিন গত বুধবার কথা হয় উপজেলার চরবারাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ সমেজ প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি গত ২ যুগে ৮ দফা ভাঙনের শিকার হয়েছেন। তার ৪০ বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি ছিল। এখন কিছুই নেই। সবই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে।

চরকাটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল বারেক মন্ডল জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে কাঁঠালতলী এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কাঁঠালতলী গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের চাল না দিয়ে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে নগদ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এভাবে নদীর ভাঙন চলতে থাকলে চরকাটারী ইউনিয়নের অস্তিত্ব থাকবে না।

জামালপুর : গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে জামালপুর মাঝারি ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জামারপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী কয়েকদিন পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে জামালপুরে মাঝারি ধরনের বন্যার দেখা দেবে। তবে বড় ধরনের কোন বন্যার আশঙ্কা করছেন না তিনি।

এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনার তীরবর্তী চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন যমুনাপাড়ের মানুষ।

বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে বগুড়ায় সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও বিপদসীমার এক মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার চর এলাকার ৬টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত। তবে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ জানান, যমুনার পানি সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারিয়াকান্দির গোদখালী ও ধুনটের কয়াগাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছাকাছি যমুনার নদী প্রবাহিত হলেও বাঁধ ভাঙনের কোন আশঙ্কা নেই। পানি নদীপাড়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যমুনার ভাঙনও কমে গেছে।

জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ জানান, বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নিয়ে সভা করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীও স্বল্প আকারে হলেও প্রস্তুত রয়েছে।

image

কুড়িগ্রাম : টানা বর্ষণে রাজারহাট উপজেলার গ্রামগুলো প্লাবিত, ভাঙছে নদী -সংবাদ

আরও খবর
বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক অজয় বড়ুয়া আর নেই
দলের গতি বৃদ্ধি ও জনমতের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
মন্ত্রী ইমরান প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরার শপথ আজ
দক্ষিণ কোরীয় প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন আজ ঢাকায় আসছেন
বিশ্বব্যাংক ১০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে
শিশু দারিদ্র্য কমাতে বাংলাদেশ কার্যকরি ভূমিকা রাখছে
বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ধস
৬ নম্বর আসামি রাব্বী আকন গ্রেফতার : ৭ দিনের রিমান্ডে
টানা বর্ষণে বেহাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
রাঙ্গামাটিতে আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ ভিড় করছে
আদাবরে মামলার বাদীকে কুপিয়ে হত্যা
পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব : ৪ জন গ্রেফতার

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

ভারী বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢল

দশ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

কুড়িগ্রাম : টানা বর্ষণে রাজারহাট উপজেলার গ্রামগুলো প্লাবিত, ভাঙছে নদী -সংবাদ

  • বহু গ্রাম-জনপদ তলিয়ে গেছে
  • পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা

বাড়ছে নদ-নদীর পানি। বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারী বর্ষণে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। দুর্গত জেলাগুলোয় পাঠানো হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। দু’একদিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু এবং মেডিকেল টিমের পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, হালদাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তাই নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর জামালপুর জেলায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, হালদাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছেÑ রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ভারী বর্ষণের কারণে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। দুর্গত জেলাগুলোয় পাঠানো হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। দু’একদিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু ও মেডিকেল টিমের পৌঁছে যাবে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। গতকাল শুক্রবার সচিবালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ছাড়াও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার ও নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। ভারতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানি আরও বাড়বে। পাশাপাশি বিহারে গঙ্গার পানি বাড়ায় বালাদেশে পদ্মা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। দেশের নদনদীগুলোর ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব পয়েন্টে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ৫৫১টি সেন্টারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জামালপুরে ভাঙনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে এবং লালমনিহাটে তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এগুলো মোকাবিলায় কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, যেসব জেলা দুর্গত হতে পারে, সেগুলোর পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও সমান প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুর ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং দুই দফায় সাড়ে ১৭ হাজার মেট্টিক টন চাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। কোন জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতর বন্যা মোকাবিলায় যেসব প্রস্তুতি নিয়েছে, সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল টিম গঠন করেছে এবং প্রচুর পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুতি রেখেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুতি করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে- যাতে পানিবাহিত রোগ বিস্তার রোধ করা যায়। খাদ্যগুদামের কর্মরতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা আশা করি, এই বন্যায় আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করতে তো পারবই, গবাদিপশু ও খাদ্যশস্যেরও নিরাপত্তা দিতে পারব।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার থেকে ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে সব ডিসি ঢাকায় থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত ডিসি হিসেবে যারা দায়িত্বে থাকবেন, তাদের কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবারের মতো বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সফল হব।

আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় জায়গার অভাব হলে ব্যবহারের জন্য দুর্গত এলাকাগুলোয় ৫০০টি করে তাঁবু পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রতিটি তাঁবুতে ২০ জন করে থাকতে পারবেন।

বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি গতকাল দুপুরে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এর প্রভাব পরতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল এলাকায়। ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, হাতিয়া, চিলমারী ও নয়ারহাট এলাকায় চার হাজার পরিবারের বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। তিস্তা এলাকায় বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। তবে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা এলাকায় গত এক সপ্তাহে ১২০টি বাড়িঘর বিলিন হয়েছে। এখানে স্কুল, বাজার, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরের ভাঙন ঠেকাতে ৫ হাজার জিও ব্যাগ দেয়া হলেও তীব্র ভাঙন ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ছে তিস্তা ও দুধকুমারেও।

গতকাল সরজমিন রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে দেখা যায়, বন্যার ফলে চতুরা ও রামহরী মৌজায় প্রায় ৫০টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে তীব্র ভাঙনে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১২০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার চতুরার সতিশের পুত্র বিনন নদী থেকে ঘর সরিয়েও পানিবন্দির কারণে তিন দিন ধরে খোলা আকাশে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

ভীষণ ভোগান্তির মধ্যে থাকা চতুরা গ্রামের লোকজন জানান, পূর্বে নরেন চন্দ্রের বাড়ি থেকে পশ্চিমে তোফাজ্জলের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের ফলে নিঃস্ব হয়েছে ১২০টি পরিবার। এর মধ্যে চতুরা এলাকায় গত তিন দিনে নদীতে বিলীন হয়েছে ১৫-১৬টি বাড়ি। অপরদিকে রামহরি এলাকার তোফাজ্জল (৪৮) বলেন, গত তিন দিনে আমার অপর তিন ভাইয়ের বাড়িসহ আরও ১৫-২০টি বাড়ি ভেঙে গেছে।

ভাঙনকবলিত ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, গত কয়েক বছরে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের অর্ধেকটা নদীতে চলে গেছে। এখনও দু’হাজার পরিবার মেইনল্যান্ডে বসবাস করছে। সরকার যদি দ্রুততম সময়ে নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করে, তাহলে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোয় ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেড়শ’ টন চাল ও তিন লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ জানান, ভাঙনকবলিত বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরহাট বাজার এলাকায় ৫ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।

মানিকগঞ্জ : যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী বাচামারা ও চরকাটারী ইউনিয়নের জনপদের ৪টি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে প্রায় ৩৪৬টি বসতবাড়ি, কয়েকশ’ বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত সোমবার মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী বাচামারা ও চরকাটারী ইউনয়নে নদীপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের লোকজন নিয়ে নদীর পাড়ে অন্যের জায়গায় ঘর-দরজা, ধান-চাল, জিনিসপত্র, গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে কয়েক সপ্তাহ আগে বাচামারা এলাকায় মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪ হাজার বস্তা (জিও ব্যাগ) নদীর পাড় ঘেঁষে ফেলছে, তা কোন কাজে আসেনি । ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে ।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, ইতোমধ্যে চরকাটারী ও বাচামারায় ৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে সরকারের আরও বরাদ্দ নগদ অর্থ, চাল, ঢেউটিন যাই আসুক, সবটুকু জিনিস ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সমভাবে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, বাচামারা ও চরকাটারী ৬-৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভাব নয়। এখানে ভাঙন রোধে ও স্রোত ঠেকাতে বিকল্প প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সরেজমিন গত বুধবার কথা হয় উপজেলার চরবারাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ সমেজ প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি গত ২ যুগে ৮ দফা ভাঙনের শিকার হয়েছেন। তার ৪০ বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি ছিল। এখন কিছুই নেই। সবই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে।

চরকাটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল বারেক মন্ডল জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে কাঁঠালতলী এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কাঁঠালতলী গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের চাল না দিয়ে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে নগদ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এভাবে নদীর ভাঙন চলতে থাকলে চরকাটারী ইউনিয়নের অস্তিত্ব থাকবে না।

জামালপুর : গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে জামালপুর মাঝারি ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জামারপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী কয়েকদিন পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে জামালপুরে মাঝারি ধরনের বন্যার দেখা দেবে। তবে বড় ধরনের কোন বন্যার আশঙ্কা করছেন না তিনি।

এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনার তীরবর্তী চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন যমুনাপাড়ের মানুষ।

বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে বগুড়ায় সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও বিপদসীমার এক মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার চর এলাকার ৬টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত। তবে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ জানান, যমুনার পানি সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারিয়াকান্দির গোদখালী ও ধুনটের কয়াগাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছাকাছি যমুনার নদী প্রবাহিত হলেও বাঁধ ভাঙনের কোন আশঙ্কা নেই। পানি নদীপাড়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যমুনার ভাঙনও কমে গেছে।

জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ জানান, বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নিয়ে সভা করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীও স্বল্প আকারে হলেও প্রস্তুত রয়েছে।