কংগ্রেস নারী আইন প্রণেতাদের প্রতি ট্রাম্প

যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কয়েকজন প্রগতিশীল নারী আইন প্রণেতা সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আবারও বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছে। ধারবাহিক কয়েকটি টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘ওই নারীরা নিজেরা এমন দেশ থেকে এসেছেন যেখানকার সরকার সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।’ এরপরই ট্রাম্প ওই আইন প্রণেতাদের উদ্দেশে লেখেন, ‘ যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফিরে যাও।’ নাম উল্লেখ না করলেও ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসের নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কার্তেজ, মিনেসোটার ইলহান ওমর, ম্যাসাচুসেটসের আইয়ানা প্রেসলি ও মিশিগানের রাশিদা তালিবকে উদ্দেশ্য করে এসব মন্তব্য করেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ মন্তব্যে ডেমোক্র্যাট সদস্যদের পাশাপাশি তার নিজ দল রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদেরও অনেককেই সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

মার্কিন কংগ্রেসের নিন্মকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস) ডেমোক্র্যাট এ চার আইন প্রণেতাকে ‘দ্য স্কোয়াড’ হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে। এরা ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বর্তমান ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতৃবৃন্দেরও সমালোচনা করে আসছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সম্প্রতি নিন্মকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সঙ্গে এ চার আইন প্রণেতার বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এর পরের সপ্তাহে এমন টুইট করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প তার টুইটার বার্তায় জানান, ‘খুবই অবাক লাগে দেখতে যখন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসের নারী সদস্যরা, যারা এমন দেশ থেকে এসেছেন যেখানে তাদের সরকার বিপর্যস্ত, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সবচেয়ে অদক্ষ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এসে এখানকার মানুষদের বলছে, কীভাবে আমাদের সরকার পরিচালনা করতে হবে।’ ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘তারা কেন তাদের নিজেদের অপরাধপ্রবণ দেশে ফিরে গিয়ে ওই পরিস্থিতির উন্নয়ন করে না! তারপর ফিরে এসে আমাদের জানালেই পারে যে কীভাবে সে কাজ করল তারা।’ ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প ভিন্ন বর্ণের চারজন ডেমোক্র্যাট নারী কংগ্রেস আইন প্রণেতাকে ইঙ্গিত করেছেন যাদের তিনজনই অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরে স্পিকার ন্যান্সির সঙ্গে ডেমোক্র্যাট সদস্য ওকাসিও-কার্তজের মতদ্বৈততা চলে। স্পিকার ন্যান্সির বিরুদ্ধে সীমান্ত নিরাপত্তা বিল নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সময় ভিন্ন বর্ণের নারী কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওকাসিও-কার্তেজ। তবে এ ঘটনা নিয়ে প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের নেতিবাচক সমালোচনাই হয়েছে বেশি । ন্যান্সি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইট সম্পর্কে বলেন, ‘যখন প্রকৃত ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার চার নারী আইন প্রণেতাকে তাদের দেশে ফিরে যেতে বলেন, তখন এমন মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি তার ‘আমেরিকাকে আবারও মহান করে তোলার’ পরিকল্পনাটির উপরই জোর দেন। যা বরাবরের মতোই প্রকৃতপক্ষে আমেরিকাকে পুরোপুরি শ্বেতাঙ্গ দেশ হিসেবে গড়ে তোলাকে নিশ্চিত করে।’ স্পিকার আরও বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি এবং একতাই আমাদের ক্ষমতা।’

এদিকে কংগ্রেস আইন প্রণেতা রাশিদা তলিব ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে ক্ষমতাসীন ও ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সাবেক শীর্ষ নেতা জন ম্যাককেইনের মেয়ে মেগ্যান ম্যাককেইন (যিনি রিপাবলিকান সমর্থক কলামিস্ট) ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন : ‘এ মন্তব্য বর্ণবাদী। এ দেশে আমরা যাদের একবার স্বাগত জানিয়েছি, তাদের আবার ফিরে যেতে বলতে পারি না।’

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ , ২ শ্রাবন ১৪২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪০

কংগ্রেস নারী আইন প্রণেতাদের প্রতি ট্রাম্প

যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও

সংবাদ ডেস্ক

image

ইলহান ওমর, আইয়ানা প্রেসলি, রাশিদা তালিব ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কার্তেজ (বাম থেকে ডানে)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কয়েকজন প্রগতিশীল নারী আইন প্রণেতা সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আবারও বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছে। ধারবাহিক কয়েকটি টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘ওই নারীরা নিজেরা এমন দেশ থেকে এসেছেন যেখানকার সরকার সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।’ এরপরই ট্রাম্প ওই আইন প্রণেতাদের উদ্দেশে লেখেন, ‘ যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফিরে যাও।’ নাম উল্লেখ না করলেও ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসের নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কার্তেজ, মিনেসোটার ইলহান ওমর, ম্যাসাচুসেটসের আইয়ানা প্রেসলি ও মিশিগানের রাশিদা তালিবকে উদ্দেশ্য করে এসব মন্তব্য করেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ মন্তব্যে ডেমোক্র্যাট সদস্যদের পাশাপাশি তার নিজ দল রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদেরও অনেককেই সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

মার্কিন কংগ্রেসের নিন্মকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস) ডেমোক্র্যাট এ চার আইন প্রণেতাকে ‘দ্য স্কোয়াড’ হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে। এরা ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বর্তমান ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতৃবৃন্দেরও সমালোচনা করে আসছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সম্প্রতি নিন্মকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সঙ্গে এ চার আইন প্রণেতার বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এর পরের সপ্তাহে এমন টুইট করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প তার টুইটার বার্তায় জানান, ‘খুবই অবাক লাগে দেখতে যখন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসের নারী সদস্যরা, যারা এমন দেশ থেকে এসেছেন যেখানে তাদের সরকার বিপর্যস্ত, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সবচেয়ে অদক্ষ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এসে এখানকার মানুষদের বলছে, কীভাবে আমাদের সরকার পরিচালনা করতে হবে।’ ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘তারা কেন তাদের নিজেদের অপরাধপ্রবণ দেশে ফিরে গিয়ে ওই পরিস্থিতির উন্নয়ন করে না! তারপর ফিরে এসে আমাদের জানালেই পারে যে কীভাবে সে কাজ করল তারা।’ ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প ভিন্ন বর্ণের চারজন ডেমোক্র্যাট নারী কংগ্রেস আইন প্রণেতাকে ইঙ্গিত করেছেন যাদের তিনজনই অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরে স্পিকার ন্যান্সির সঙ্গে ডেমোক্র্যাট সদস্য ওকাসিও-কার্তজের মতদ্বৈততা চলে। স্পিকার ন্যান্সির বিরুদ্ধে সীমান্ত নিরাপত্তা বিল নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সময় ভিন্ন বর্ণের নারী কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওকাসিও-কার্তেজ। তবে এ ঘটনা নিয়ে প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের নেতিবাচক সমালোচনাই হয়েছে বেশি । ন্যান্সি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইট সম্পর্কে বলেন, ‘যখন প্রকৃত ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার চার নারী আইন প্রণেতাকে তাদের দেশে ফিরে যেতে বলেন, তখন এমন মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি তার ‘আমেরিকাকে আবারও মহান করে তোলার’ পরিকল্পনাটির উপরই জোর দেন। যা বরাবরের মতোই প্রকৃতপক্ষে আমেরিকাকে পুরোপুরি শ্বেতাঙ্গ দেশ হিসেবে গড়ে তোলাকে নিশ্চিত করে।’ স্পিকার আরও বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি এবং একতাই আমাদের ক্ষমতা।’

এদিকে কংগ্রেস আইন প্রণেতা রাশিদা তলিব ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে ক্ষমতাসীন ও ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সাবেক শীর্ষ নেতা জন ম্যাককেইনের মেয়ে মেগ্যান ম্যাককেইন (যিনি রিপাবলিকান সমর্থক কলামিস্ট) ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন : ‘এ মন্তব্য বর্ণবাদী। এ দেশে আমরা যাদের একবার স্বাগত জানিয়েছি, তাদের আবার ফিরে যেতে বলতে পারি না।’