পরমাণু চুক্তি ব্যর্থ হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে মধ্যপ্রাচ্য

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের পরমাণু চুক্তি ‘জেসিপিওএ’ ব্যর্থ হলে মধ্যপ্রাচ্য অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। গত সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অন্যতম মিত্র ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি বহাল রাখতে জরুরি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ মাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। এদিকে সোমবারের ব্রাসেলস বৈঠকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তিকে বাঁচানোর পথ খুব বেশি নেই। এ চুক্তি সঠিক পথে না হাঁটলে পুরো অঞ্চলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। তেহরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য একটি ‘বিষাক্ত ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির’ মুখে পড়বে। তখন এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও এটি অর্জন করবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নে যে ধরনের অগ্রগতির প্রয়োজন হয় তা থেকে তেহরান এখনও এক বছর দূরে আছে। এখন চুক্তি রক্ষায় আলোচনার জানালা খোলা রাখতে হবে। এসময় যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রচেষ্টায় চুক্তিটিকে টিকিয়ে রাখার ওপরও জোর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট। তিনি বলেন, আমাদের তিন দেশের উচিত সমঝোতা বাঁচাতে ইরানকে উৎসাহিত করা। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তার দেশ মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার দেখতে চায় না। তবে এ অঞ্চলকে কিভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা যায় তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মতভিন্নতা রয়েছে। ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়েও দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। জেরেমি হান্ট বলেন, যুক্তরাজ্য চুক্তি বাঁচাতে চায় এবং তার দেশ সংকট উত্তরণের একটি উপায় খুঁজছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে ফ্রান্স মধ্যস্থতা করবে বলে জানা গেছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে কথা বলবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সার্বিয়া সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট সোমবার রাতে বেলগ্রেডে স্বাগতিক দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন। বেলগ্রেড সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ট্রাম্প, পুতিন ও রুহানির সঙ্গে তার আসন্ন সংলাপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা যে কোনও সময় যুদ্ধে রূপ নেয়ার আশঙ্কার কথা জানান ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভ লু দ্রিয়ঁ।

এ সময় তিনি তেহরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং একে কেন্দ্র করে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর সমালোচনা করেন। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দুই বাজে সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের উত্তেজনা যুদ্ধে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ কারও কাছেই প্রত্যাশিত নয়। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তেজনার মাত্রা কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

পরমাণু চুক্তি ব্যর্থ হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে মধ্যপ্রাচ্য

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সংবাদ ডেস্ক

image

ওয়াশিংটন-তেহরান উত্তেজনা নিরসনে ফ্রান্সের উদ্যোগ

ইরানের পরমাণু চুক্তি ‘জেসিপিওএ’ ব্যর্থ হলে মধ্যপ্রাচ্য অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। গত সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অন্যতম মিত্র ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি বহাল রাখতে জরুরি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ মাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। এদিকে সোমবারের ব্রাসেলস বৈঠকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তিকে বাঁচানোর পথ খুব বেশি নেই। এ চুক্তি সঠিক পথে না হাঁটলে পুরো অঞ্চলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। তেহরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য একটি ‘বিষাক্ত ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির’ মুখে পড়বে। তখন এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও এটি অর্জন করবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নে যে ধরনের অগ্রগতির প্রয়োজন হয় তা থেকে তেহরান এখনও এক বছর দূরে আছে। এখন চুক্তি রক্ষায় আলোচনার জানালা খোলা রাখতে হবে। এসময় যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রচেষ্টায় চুক্তিটিকে টিকিয়ে রাখার ওপরও জোর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট। তিনি বলেন, আমাদের তিন দেশের উচিত সমঝোতা বাঁচাতে ইরানকে উৎসাহিত করা। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তার দেশ মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার দেখতে চায় না। তবে এ অঞ্চলকে কিভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা যায় তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মতভিন্নতা রয়েছে। ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়েও দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। জেরেমি হান্ট বলেন, যুক্তরাজ্য চুক্তি বাঁচাতে চায় এবং তার দেশ সংকট উত্তরণের একটি উপায় খুঁজছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে ফ্রান্স মধ্যস্থতা করবে বলে জানা গেছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে কথা বলবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সার্বিয়া সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট সোমবার রাতে বেলগ্রেডে স্বাগতিক দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন। বেলগ্রেড সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ট্রাম্প, পুতিন ও রুহানির সঙ্গে তার আসন্ন সংলাপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা যে কোনও সময় যুদ্ধে রূপ নেয়ার আশঙ্কার কথা জানান ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভ লু দ্রিয়ঁ।

এ সময় তিনি তেহরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং একে কেন্দ্র করে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর সমালোচনা করেন। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দুই বাজে সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের উত্তেজনা যুদ্ধে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ কারও কাছেই প্রত্যাশিত নয়। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তেজনার মাত্রা কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।