সঠিক পরিকল্পনার অভাব

বিল সেচ : ৩০ ঘের ভেঙে ভেসে গেছে মাছ, প্লাবিত অর্ধশত বাড়ি

যশোরের কেশবপুরে বোরো আবাদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশনের কারণে পশ্চিম বিলখুকশিয়ার ৩০টি ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপচে পড়া পানি উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। হরিহর ও আপারভদ্রা নদীতে পাউবোর বেঁড়িবাধের পাশাপাশি শ্রীহরি নদীর নাব্যতা না থাকায় পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।

চলতি বছর পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় যশোর সদরের সুতিঘাটা, মনিরামপুর ও কেশবপুরের পশ্চিমাংশের ২৭ বিলসহ উপজেলার ৬ ইউনিয়নের প্রায় ৫০ বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

এসব বিলের অতিরিক্ত পানি বাগডাঙ্গা দিয়ে কাটাখালি ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট হয়ে ডায়েরখাল দিয়ে শ্রীনদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালের তলদেশ থেকে শ্রীহরি নদীর তলদেশ পলিতে উঁচু হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

এরপরও ওই অঞ্চলের কৃষকরা বোরো আবাদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও কেশবপুর পৌর এলাকার বিল গলালিয়া, টেপুর বিল, বিল বলধালি, সদর ইউনিয়ন, মঙ্গলকোটের একাংশ, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও গৌরিঘোনা ইউনিয়নের বুড়–লিয়া, সারুটিয়া, কায়েমখোলা, হাড়িয়াঘোপ, ভেরচি, দশকাহুনিয়াসহ প্রায় ৫০ বিল জলাবদ্ধ। এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদের লক্ষ্যে বুড়ুলিয়া ও পাথরা গেটে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব বিলের পানিও হরিহর ও আপারভদ্রা নদী দিয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু হরিহর ও আপারভদ্রা নদী খননের জন্য পাউবো বাঁধ দিয়ে আটকে রেখেছে। যে কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

সুফলাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুস সামাদ জানান, জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন করার কারণে পানি ডায়েরখাল উপচে পশ্চিম বিলখুকশিয়ায় ঢুকছে। ইতোমধ্যে ৩০টি ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। উপচে পড়া পানিতে সুজিত হালদার, রবিন ম-ল, বিশ্বনাথ ম-ল, দীপক ম-ল, সুকদেব ম-ল, অমল ম-লসহ কমপক্ষে ২৫-৩০ ঘের মালিকের ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানির চাপে এখনও বাঁধ ভাঙা অব্যাহত আছে। উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়ির উঠানে এখন পানি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে মানুষ চরম ক্ষতির সন্মুখীন হবে। পানির কারণে এসব বিলে এবার বোরো আবাদ হবে না।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমিতেও বোরো আবাদ হবে না। সেক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে। বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদ করতে না পারলে এ অঞ্চলের মানুষকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার হেক্টর জমি। জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে কেশবপুরে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় গত ডিসেম্বরের মধ্যে নদীর বাঁধ অপসারন করে পানি নিষ্কাশন করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি।

পানি সরাও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের নেতা অ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, বিলের পানি নিষ্কাশনে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারক লিপি দেয়া হয়। তারা পানি নিষ্কাশনে ব্যর্থ হয়েছেন। পানি নিষ্কাশন নিয়ে যে কোনো সময় কৃষক ফুঁসে উঠতে পারে।

সুফলাকিটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনজুর রহমান বলেন, গত একসপ্তাহ ধরে পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের ১০-১২টি বিলের পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে ২৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে। কিন্তু হরিহর নদীতে বাঁধ থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আপারভদ্রা দিয়ে পানি শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ২৭ বিলের পানি ডায়ের খাল হয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালে চেয়ে ওই নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যে কারণে ডায়ের খালের পানি উপচে পড়ছে। খনন কাজ সম্পূর্ণ না হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

image

কেশবপুর (যশোর) : বোরো আবাদের জন্য জলাবদ্ধ বিলের পানি এভাবেই শ্যালো মেশিনে চলছে নিষ্কাশন -সংবাদ

আরও খবর
দেবে ভেঙে গেছে সেতু যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা!
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিশোরগঞ্জ পৌরসভা পেল ১০ কোটি
দুপচাঁচিয়ায় বেতন-ভাতার দাবিতে পৌর কর্মীদের ধর্মঘট
মির্জাপুরে পরিত্যক্ত বাঁশতৈল স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫ বছরেও পুনর্নির্মাণ হয়নি
নানা কারণে বাড়ছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার
সরিষাবাড়ীতে রাস্তার পার্শ্বে নবজাতক
‘পুঁথিগত বিদ্যায় জীবনের মোড় ঘুরবে না’
নান্দাইলে শিশু হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
বগুড়ায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৪
আশুলিয়ায় স্ত্রী হত্যা স্বামী পালাতক
সরস্বতী পূজা ঘিরে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা
চট্টগ্রামে দুই কারখানাকে জরিমানা

মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২০ , ২৪ পৌষ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সঠিক পরিকল্পনার অভাব

বিল সেচ : ৩০ ঘের ভেঙে ভেসে গেছে মাছ, প্লাবিত অর্ধশত বাড়ি

শামসুর রহমান, কেশবপুর (যশোর)

image

কেশবপুর (যশোর) : বোরো আবাদের জন্য জলাবদ্ধ বিলের পানি এভাবেই শ্যালো মেশিনে চলছে নিষ্কাশন -সংবাদ

যশোরের কেশবপুরে বোরো আবাদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশনের কারণে পশ্চিম বিলখুকশিয়ার ৩০টি ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপচে পড়া পানি উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। হরিহর ও আপারভদ্রা নদীতে পাউবোর বেঁড়িবাধের পাশাপাশি শ্রীহরি নদীর নাব্যতা না থাকায় পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।

চলতি বছর পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় যশোর সদরের সুতিঘাটা, মনিরামপুর ও কেশবপুরের পশ্চিমাংশের ২৭ বিলসহ উপজেলার ৬ ইউনিয়নের প্রায় ৫০ বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

এসব বিলের অতিরিক্ত পানি বাগডাঙ্গা দিয়ে কাটাখালি ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট হয়ে ডায়েরখাল দিয়ে শ্রীনদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালের তলদেশ থেকে শ্রীহরি নদীর তলদেশ পলিতে উঁচু হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

এরপরও ওই অঞ্চলের কৃষকরা বোরো আবাদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও কেশবপুর পৌর এলাকার বিল গলালিয়া, টেপুর বিল, বিল বলধালি, সদর ইউনিয়ন, মঙ্গলকোটের একাংশ, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও গৌরিঘোনা ইউনিয়নের বুড়–লিয়া, সারুটিয়া, কায়েমখোলা, হাড়িয়াঘোপ, ভেরচি, দশকাহুনিয়াসহ প্রায় ৫০ বিল জলাবদ্ধ। এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদের লক্ষ্যে বুড়ুলিয়া ও পাথরা গেটে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব বিলের পানিও হরিহর ও আপারভদ্রা নদী দিয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু হরিহর ও আপারভদ্রা নদী খননের জন্য পাউবো বাঁধ দিয়ে আটকে রেখেছে। যে কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

সুফলাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুস সামাদ জানান, জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন করার কারণে পানি ডায়েরখাল উপচে পশ্চিম বিলখুকশিয়ায় ঢুকছে। ইতোমধ্যে ৩০টি ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। উপচে পড়া পানিতে সুজিত হালদার, রবিন ম-ল, বিশ্বনাথ ম-ল, দীপক ম-ল, সুকদেব ম-ল, অমল ম-লসহ কমপক্ষে ২৫-৩০ ঘের মালিকের ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানির চাপে এখনও বাঁধ ভাঙা অব্যাহত আছে। উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়ির উঠানে এখন পানি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে মানুষ চরম ক্ষতির সন্মুখীন হবে। পানির কারণে এসব বিলে এবার বোরো আবাদ হবে না।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমিতেও বোরো আবাদ হবে না। সেক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে। বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদ করতে না পারলে এ অঞ্চলের মানুষকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার হেক্টর জমি। জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে কেশবপুরে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় গত ডিসেম্বরের মধ্যে নদীর বাঁধ অপসারন করে পানি নিষ্কাশন করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি।

পানি সরাও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের নেতা অ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, বিলের পানি নিষ্কাশনে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারক লিপি দেয়া হয়। তারা পানি নিষ্কাশনে ব্যর্থ হয়েছেন। পানি নিষ্কাশন নিয়ে যে কোনো সময় কৃষক ফুঁসে উঠতে পারে।

সুফলাকিটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনজুর রহমান বলেন, গত একসপ্তাহ ধরে পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের ১০-১২টি বিলের পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে ২৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে। কিন্তু হরিহর নদীতে বাঁধ থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আপারভদ্রা দিয়ে পানি শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ২৭ বিলের পানি ডায়ের খাল হয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালে চেয়ে ওই নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যে কারণে ডায়ের খালের পানি উপচে পড়ছে। খনন কাজ সম্পূর্ণ না হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।