মন্ত্রীর এপিএস আরিফুরের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ

সাঈদ খোকনের এপিএস কুদ্দুসকে দুদকে তলব

দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকারও বেশি লুটপাটের অভিযোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস আরিফুর রহমান শেখকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির অনুসন্ধান টিমের প্রধান দুদকের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম স্বাক্ষরিত নোটিশে ২০ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, আরিফুর রহমান শেখের বিরুদ্ধে বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লোপাট এবং বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়াসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। ওই বিষয়ে বক্তব্য দিতে তাকে ২০ জানুয়ারি সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এপিএস হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু আরিফুর রহমান শেখের। এরপর জাহিদ মালেক একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এপিএস আরিফুর রহমানের ক্ষমতা আরও বাড়ে। পুরো স্বাস্থ্য সেক্টরে তার মতো ক্ষমতাধর আর কেউ ছিল না। জাহিদ মালেকের এপিএসের দায়িত্ব পালনকালে ৬ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন। আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো দেশ- বিদেশে নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। গত ৬ বছরে স্বাস্থ্য সেক্টরের যাবতীয় টেন্ডার, বিদেশে প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসহ যাবতীয় সরঞ্জাম কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ ছিল এপিএস ড. আরিফুর রহমানের হাতে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান শুরু করে গত বছরের মাঝামাঝি। উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। অনুসন্ধানে নেমেই তিনি অধিদফতরের পরিচালকসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর কিছুদিন পর অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত একটি দলকে। উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বাধীন ওই দল অনুসন্ধানে নেমে তলব করে মন্ত্রীর এপিএসকে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য ১৯টি বিষয়ের আওতায় ৩১টি প্যাকেজে ৪২৬ জনের নামে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানী ভাতা বাবদ ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৫ টাকা, বিমান ভাড়া ২ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর বাইরে প্রশিক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও কর্মসূচি উন্নয়ন ব্যয় হিসেবে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ১১ হাজার ৪৭২ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সব মিলে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ২১ কোটি ৭২ লাখ ২৯ হাজার ১৪৭ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের জন্য জন প্রতি ৪ হাজার ডলার অথবা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পৃথক দেশের প্রতিষ্ঠান হলেও সব কটির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় একই ধরা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতিটি দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক, কর্মচারীসহ সব প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সমপরিমাণ কর্মসূচি উন্নয়ন ব্যয় জনপ্রতি ৪ হাজার ডলার ধরা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। অথচ আগের বছরগুলোয় একই কর্মসূচিতে গড়ে জনপ্রতি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার ডলার ব্যয় হতো। প্রশিক্ষণের নামে জনপ্রতি গড়ে ২ হাজার ডলার অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই মানসম্মত নয়। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে অতিরিক্ত পাঠানো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এই অভিযোগের বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে দুদকে। সবকটি অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে মন্ত্রীর এপিএসকে তলব করা হয়েছে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১০ বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদফতরের পদস্থ কর্মকর্তারা এসব লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান জাহিদ মালেক। সে সময় জাহিদ মালেকের এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পান আরিফুর রহমান শেখ। মন্ত্রীর এপিএস হলেও স্বাস্থ্যখাতে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল মন্ত্রীর চেয়েও বেশি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হন জাহিদুর রহমান শেখ।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাফিয়া হিসেবে খ্যাত আবজাল দম্পতিসহ বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্যতা ছিল আরিফুর রহমান শেখের। স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন প্রশিক্ষনের নামে অর্থ আত্মসাত, বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রীসহ যাবতীয় কেনাকাটার টেন্ডার কিভাবে-কাকে দেয়া হবে সবই চলত এপিএস আরিফুর রহমানের নির্দেশে। স্বাস্থ্য সেক্টরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রীর এপিএস হিসেবে একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহার করতেন আরিফুর রহমান শেখ।

সাঈদ খোকনের এপিএসকে দুদকে তলব

ক্যাসিনোকা-ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) শেখ কুদ্দুসসহ তিনজনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা চিঠিতে তাদের তলব করা হয়। অন্য যাদের তলব করা হয়, তারা হলেন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ) এজাজ চৌধুরী এবং যুবলীগের সাবেক সহ সম্পাদক মুন্সীগঞ্জের জাকির হোসেন। তাদের মধ্যে শেখ কুদ্দুস ও এজাজ চৌধুরীকে ২১ জানুয়ারি এবং জাকির হোসেনকে ২০ জানুয়ারি দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। একই বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধেও এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক।

নোটিশে বলা হয়, ঠিকাদার জিকে শামীমসহ অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শ’ শ’ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শ’ শ’ কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

দুদক সূত্র জানায়, যাদের নোটিশ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো কর্মকা-, টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন প্রকল্পে কমিশন নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি অনিয়ম এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কমিশন নেয়ার মাধ্যমে শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগে এর আগে আরও অনেককে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, গণপূর্তের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী, সরকারি বিভিন্ন দফতরের পদস্ত কর্মকর্তাও রয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন যাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। ইতোমধ্যে সরকারি দলের সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রভাবশালী কর্মকর্তাসহ ২ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে ২০টি মামলা হয়েছে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেফতার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কার করা হয়) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতার হন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট, স¤্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব। গ্রেফতার হওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম ওঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোকা-ে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দু’জনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র?্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করে দুদক দল। এসব মামলা হয়েছে ঠিকাদার জিকে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও তাঁর ভাই রূপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, এনআরবি ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, যুবলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব ও একেএম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের দক্ষিণের সভাপতি (পরে বহিষ্কার হন) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী স¤্রাট, এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার সুমা এবং গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী শাখা প্রধান মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে।

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১ মাঘ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মন্ত্রীর এপিএস আরিফুরের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ

সাঈদ খোকনের এপিএস কুদ্দুসকে দুদকে তলব

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকারও বেশি লুটপাটের অভিযোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস আরিফুর রহমান শেখকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির অনুসন্ধান টিমের প্রধান দুদকের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম স্বাক্ষরিত নোটিশে ২০ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, আরিফুর রহমান শেখের বিরুদ্ধে বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লোপাট এবং বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়াসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। ওই বিষয়ে বক্তব্য দিতে তাকে ২০ জানুয়ারি সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এপিএস হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু আরিফুর রহমান শেখের। এরপর জাহিদ মালেক একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এপিএস আরিফুর রহমানের ক্ষমতা আরও বাড়ে। পুরো স্বাস্থ্য সেক্টরে তার মতো ক্ষমতাধর আর কেউ ছিল না। জাহিদ মালেকের এপিএসের দায়িত্ব পালনকালে ৬ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন। আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো দেশ- বিদেশে নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। গত ৬ বছরে স্বাস্থ্য সেক্টরের যাবতীয় টেন্ডার, বিদেশে প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসহ যাবতীয় সরঞ্জাম কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ ছিল এপিএস ড. আরিফুর রহমানের হাতে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান শুরু করে গত বছরের মাঝামাঝি। উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। অনুসন্ধানে নেমেই তিনি অধিদফতরের পরিচালকসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর কিছুদিন পর অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত একটি দলকে। উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বাধীন ওই দল অনুসন্ধানে নেমে তলব করে মন্ত্রীর এপিএসকে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য ১৯টি বিষয়ের আওতায় ৩১টি প্যাকেজে ৪২৬ জনের নামে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানী ভাতা বাবদ ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৫ টাকা, বিমান ভাড়া ২ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর বাইরে প্রশিক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও কর্মসূচি উন্নয়ন ব্যয় হিসেবে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ১১ হাজার ৪৭২ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সব মিলে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ২১ কোটি ৭২ লাখ ২৯ হাজার ১৪৭ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের জন্য জন প্রতি ৪ হাজার ডলার অথবা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পৃথক দেশের প্রতিষ্ঠান হলেও সব কটির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় একই ধরা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতিটি দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক, কর্মচারীসহ সব প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সমপরিমাণ কর্মসূচি উন্নয়ন ব্যয় জনপ্রতি ৪ হাজার ডলার ধরা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। অথচ আগের বছরগুলোয় একই কর্মসূচিতে গড়ে জনপ্রতি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার ডলার ব্যয় হতো। প্রশিক্ষণের নামে জনপ্রতি গড়ে ২ হাজার ডলার অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই মানসম্মত নয়। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে অতিরিক্ত পাঠানো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এই অভিযোগের বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে দুদকে। সবকটি অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে মন্ত্রীর এপিএসকে তলব করা হয়েছে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১০ বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদফতরের পদস্থ কর্মকর্তারা এসব লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান জাহিদ মালেক। সে সময় জাহিদ মালেকের এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পান আরিফুর রহমান শেখ। মন্ত্রীর এপিএস হলেও স্বাস্থ্যখাতে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল মন্ত্রীর চেয়েও বেশি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হন জাহিদুর রহমান শেখ।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাফিয়া হিসেবে খ্যাত আবজাল দম্পতিসহ বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্যতা ছিল আরিফুর রহমান শেখের। স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন প্রশিক্ষনের নামে অর্থ আত্মসাত, বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রীসহ যাবতীয় কেনাকাটার টেন্ডার কিভাবে-কাকে দেয়া হবে সবই চলত এপিএস আরিফুর রহমানের নির্দেশে। স্বাস্থ্য সেক্টরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রীর এপিএস হিসেবে একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহার করতেন আরিফুর রহমান শেখ।

সাঈদ খোকনের এপিএসকে দুদকে তলব

ক্যাসিনোকা-ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) শেখ কুদ্দুসসহ তিনজনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা চিঠিতে তাদের তলব করা হয়। অন্য যাদের তলব করা হয়, তারা হলেন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ) এজাজ চৌধুরী এবং যুবলীগের সাবেক সহ সম্পাদক মুন্সীগঞ্জের জাকির হোসেন। তাদের মধ্যে শেখ কুদ্দুস ও এজাজ চৌধুরীকে ২১ জানুয়ারি এবং জাকির হোসেনকে ২০ জানুয়ারি দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। একই বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধেও এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক।

নোটিশে বলা হয়, ঠিকাদার জিকে শামীমসহ অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শ’ শ’ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শ’ শ’ কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

দুদক সূত্র জানায়, যাদের নোটিশ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো কর্মকা-, টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন প্রকল্পে কমিশন নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি অনিয়ম এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কমিশন নেয়ার মাধ্যমে শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগে এর আগে আরও অনেককে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, গণপূর্তের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী, সরকারি বিভিন্ন দফতরের পদস্ত কর্মকর্তাও রয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন যাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। ইতোমধ্যে সরকারি দলের সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রভাবশালী কর্মকর্তাসহ ২ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে ২০টি মামলা হয়েছে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেফতার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কার করা হয়) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতার হন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট, স¤্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব। গ্রেফতার হওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম ওঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোকা-ে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দু’জনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র?্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করে দুদক দল। এসব মামলা হয়েছে ঠিকাদার জিকে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও তাঁর ভাই রূপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, এনআরবি ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, যুবলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব ও একেএম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের দক্ষিণের সভাপতি (পরে বহিষ্কার হন) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী স¤্রাট, এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার সুমা এবং গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী শাখা প্রধান মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে।