শয্যাশায়ী প্রতিবন্ধী : সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলে ভাতার ব্যবস্থা করবেন!

রাস্তার পাশে টিনের একটি খুপরি ঘর। পলিথিনের বিছানা। এতেই অসহায় ময়নার বসবাস। মশারি নেই। আলোহীন ঘরে তার সঙ্গী মশা, মাছি, ছারপোকা আর ঠাণ্ডা বাতাস। তার ডান হাত ও ডান পা একেবারে অচল। শীতার্ত ময়নার প্রাকৃতিক কর্ম বিছানাতেই। বছর তিনেক আগে প্রতিবেশীদের তৈরি করে দেয়া ঘরে এভাবেই মৃত্যুর প্রহর গুণছে মাহমুদা।

পথচারীদের শব্দ পেলেই দে,দে,দে,দে... বলে চিৎকার করে সচল বাম হাতটি বাড়িয়ে দেয় একমুঠো খাবারের জন্য। সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রকার সহায়তা বঞ্চিত ময়না। তার বয়স প্রায় ৭০। স্বামী-মিরি ফকির, বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার মসরপুর (দক্ষিণপাড়া)।

প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, নাম পরিচয়হীন, বোবা ও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরীকে চালচুলোহীন ভিক্ষুক মিরি ফকির ভিক্ষা করতে গিয়ে কুড়িয়ে পেয়ে নিয়ে আসে নিজের ভাঙা ঘড়ে। বিয়ের পরে মিরি ফকির মাহমুদার নাম রাখে ময়না।

প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের একখণ্ড জমিতে তালপাতার তৈরি ছোট্ট বসতিঘরে একসঙ্গে ভিক্ষা করে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে চলছিল ময়না এবং মিরি ফকিরের সংসার। ভিক্ষুক স্বামী মিরি মারা গিয়েছে প্রায় ৩০ বছর আগে। এরপর থেকে একাই কখনও নওগাঁর বালুডাঙ্গা আবার কখনও নওহাটা বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষা করে রাতের বেলা কখনও খোলা আকাশের নিচে আবার কখনও যাত্রী ছাউনিতে শুয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছিল ময়নার জীবন। অগত্যা প্রতিবেশীরা সকলে মিলে পুনরায় তাকে নিয়ে আসে তার স্বামীর ঠিকানায়। নিজের চিকিৎসা ও দু’বেলা দুমুঠো খাবার কিংবা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য সরকারি কোন সাহায্য জোটেনি কোন দিনই। জমির মালিক প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম বলেন, বয়স্ক এই মহিলার বিষয়টি ভাবতেও কষ্ট লাগে। এই ঠাণ্ডার মধ্যে আলো বাতি ছাড়া অচল হাত পা নিয়ে একটি মানুষ আর কতদিন বাঁচতে পারে। সরকারি কোন জায়গায় অথবা বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে গেলে সে হয়ত বাঁচত।

অসহায় মাহমুদাকে দেখাশোনার কাজে সেচ্ছায় নিয়োজিত প্রতিবেশী সাহারা বানু বলেন, ‘হামি মানষের বাড়িত কাম (কাজ) করে খাই। আশপাশের লোকেরা প্রতিদিন মাহমুদাক খাবার দেয় হামি সেডা লিয়া যাইয়া ওক খিলাইয়া বিচনা,কাপড় বদলাইয়া দিয়া আসি।’

প্রতিবেশী ডা. মোহাব্বত আলী বলেন, বছর তিনেক আগে মাহমুদা স্ট্রোক করেছে। আমি আমার ক্লিনিকে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, মহিলার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিস, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে গত ৩ বছর ধরে ঘুরেছি শুধু একটা কম্বল দেয়া ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। অগত্যা নিজে যখন যতটুকু সম্ভব করার তাই করছি।

হাপানিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আফসার আলী বলেন, কিছুদিন আগে তাকে একটা কম্বল দেয়া হয়েছে। তার কোন অভিভাবক নেই, থাকলে হয়ত তার নামে একটা কার্ড করে দিতাম। নওগাঁ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, তার এনআইডি কার্ড এবং ছবিসহ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার একটা ব্যবস্থা করে দেব।

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০ , ১৫ মাঘ ১৪২৬, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১

শয্যাশায়ী প্রতিবন্ধী : সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলে ভাতার ব্যবস্থা করবেন!

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

image

শীতের রাতে জীর্ণশীর্ণ ঘরে প্রতিবন্ধী ময়না (৭০)

রাস্তার পাশে টিনের একটি খুপরি ঘর। পলিথিনের বিছানা। এতেই অসহায় ময়নার বসবাস। মশারি নেই। আলোহীন ঘরে তার সঙ্গী মশা, মাছি, ছারপোকা আর ঠাণ্ডা বাতাস। তার ডান হাত ও ডান পা একেবারে অচল। শীতার্ত ময়নার প্রাকৃতিক কর্ম বিছানাতেই। বছর তিনেক আগে প্রতিবেশীদের তৈরি করে দেয়া ঘরে এভাবেই মৃত্যুর প্রহর গুণছে মাহমুদা।

পথচারীদের শব্দ পেলেই দে,দে,দে,দে... বলে চিৎকার করে সচল বাম হাতটি বাড়িয়ে দেয় একমুঠো খাবারের জন্য। সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রকার সহায়তা বঞ্চিত ময়না। তার বয়স প্রায় ৭০। স্বামী-মিরি ফকির, বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার মসরপুর (দক্ষিণপাড়া)।

প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, নাম পরিচয়হীন, বোবা ও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরীকে চালচুলোহীন ভিক্ষুক মিরি ফকির ভিক্ষা করতে গিয়ে কুড়িয়ে পেয়ে নিয়ে আসে নিজের ভাঙা ঘড়ে। বিয়ের পরে মিরি ফকির মাহমুদার নাম রাখে ময়না।

প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের একখণ্ড জমিতে তালপাতার তৈরি ছোট্ট বসতিঘরে একসঙ্গে ভিক্ষা করে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে চলছিল ময়না এবং মিরি ফকিরের সংসার। ভিক্ষুক স্বামী মিরি মারা গিয়েছে প্রায় ৩০ বছর আগে। এরপর থেকে একাই কখনও নওগাঁর বালুডাঙ্গা আবার কখনও নওহাটা বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষা করে রাতের বেলা কখনও খোলা আকাশের নিচে আবার কখনও যাত্রী ছাউনিতে শুয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছিল ময়নার জীবন। অগত্যা প্রতিবেশীরা সকলে মিলে পুনরায় তাকে নিয়ে আসে তার স্বামীর ঠিকানায়। নিজের চিকিৎসা ও দু’বেলা দুমুঠো খাবার কিংবা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য সরকারি কোন সাহায্য জোটেনি কোন দিনই। জমির মালিক প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম বলেন, বয়স্ক এই মহিলার বিষয়টি ভাবতেও কষ্ট লাগে। এই ঠাণ্ডার মধ্যে আলো বাতি ছাড়া অচল হাত পা নিয়ে একটি মানুষ আর কতদিন বাঁচতে পারে। সরকারি কোন জায়গায় অথবা বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে গেলে সে হয়ত বাঁচত।

অসহায় মাহমুদাকে দেখাশোনার কাজে সেচ্ছায় নিয়োজিত প্রতিবেশী সাহারা বানু বলেন, ‘হামি মানষের বাড়িত কাম (কাজ) করে খাই। আশপাশের লোকেরা প্রতিদিন মাহমুদাক খাবার দেয় হামি সেডা লিয়া যাইয়া ওক খিলাইয়া বিচনা,কাপড় বদলাইয়া দিয়া আসি।’

প্রতিবেশী ডা. মোহাব্বত আলী বলেন, বছর তিনেক আগে মাহমুদা স্ট্রোক করেছে। আমি আমার ক্লিনিকে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, মহিলার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিস, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে গত ৩ বছর ধরে ঘুরেছি শুধু একটা কম্বল দেয়া ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। অগত্যা নিজে যখন যতটুকু সম্ভব করার তাই করছি।

হাপানিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আফসার আলী বলেন, কিছুদিন আগে তাকে একটা কম্বল দেয়া হয়েছে। তার কোন অভিভাবক নেই, থাকলে হয়ত তার নামে একটা কার্ড করে দিতাম। নওগাঁ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, তার এনআইডি কার্ড এবং ছবিসহ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার একটা ব্যবস্থা করে দেব।