আইসিইউ যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ফেলে রাখার অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য ক্রয় করা অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর দীর্ঘ দিন ফেলে রাখার ঘটনায় অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

গতকাল বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আদালতে তদন্ত কমিটির পক্ষে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। রুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। গত ২ জানুয়ারি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউ’র জন্য ক্রয় করা অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর দীর্ঘ দিন ধরে ফেলে রাখার ঘটনা কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া সদ্য অবসরে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ড. মোয়াররফ হোসেনের অবসরকালীন পেনশন সুবিধা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি হাসপাতালের আইসিইউ জন্য ক্রয় করা অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর দীর্ঘ দিন ধরে ফেলে রাখার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) মো. সিরাজুল ইসলামকে ওই কমিটির আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির বাকি দুই সদস্য ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. মোজাফফর হোসেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে জড়িতদের অনিয়ম তুলে ধরে বলা হয় : তদন্তকালে গঠিত কারিগরী সাব-কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ৮টি আইসিইউ ভেন্টিলেটরের সব যন্ত্রাংশসহ আইসিইউ কক্ষে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু কোনোটাই বর্তমানে ব্যবহার যোগ্য নয়। অনেক দিনের পুরাতন বিধায় মেরামতযোগ্যও নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া অ্যাফারেসিস মেশিনটি মেরামতযোগ্য।

ক) মেডিকেল যন্ত্রপাতি বিশেষত : আইসিইউ ভেন্টিলেটর সমূহ স্থাপন/ব্যবহারের মতো কোন ভবন/কক্ষ নির্মাণের পূর্বে ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রথম প্রকল্প পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম গৃহীত কার্যক্রম যৌক্তিক হয়নি মর্মে প্রতীয়মান।

খ) প্রফেসর ডা. এএমএম শরীফুল আলম প্রকল্প পরিচালক এবং পরিচালক হিসাবে আইসিইউ ভেন্টিলেটর সমূহ শর্তসাপেক্ষে গ্রহণের অনুমোদন, সংরক্ষণের আদেশ এবং ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ না করার জন্য দায়ী মর্মে প্রতীয়মান হয়।

গ) প্রফেসর ডা. ওবায়দ্লুাহ বাকি তার কার্যকালে সিইউ ব্যবহারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করার জন্য দায়ী।

ঘ) প্রফেসর ডা. মো. হাফিজুর বহমান আনসারী, প্রফেসর ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা ও প্রফেসর ডা. শামিউল ইসলাম স্বল্পকাল কর্মরত থাকায় এবং পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় তাদেরকে দায়ী করার অবকাশ নেই।

ঙ) প্রফেসর ডা. শামীম আহসান আইসিইউ ভেন্টিলেটর হস্তান্তরের পরে শুধুমাত্র প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করায় তাকে দায়ী করার কোন অবকাশ নেই।

চ) প্রফেসর ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের যুগপত দায়িত্ব পালন করেছেন ৫ বছর। আইসিইউ ভেন্টিলেটর সমূহ মেরামতের জন্য পত্র যোগাযোগ করলেও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করা সঠিক হয়নি। এছাড়া প্রফেসর ডা. মানস কুমার বসু আগস্ট ২০১২ সাল থেকে এনেসথেসিয়া বিভাগে কর্মরত। তিনি ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আইসিইউসহ এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী ডা. মানস বসু কর্তৃপক্ষকে আইসিইউ ভেন্টিলেটর বিষয়ে অবহিত করেননি বিধায় তিনিও এর জন্য দায়ী।

এরপর আদালত তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে জড়িতদের বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন।

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৪ ফল্গুন ১৪২৬, ২২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ক্যানসার ইনস্টিটিউট

আইসিইউ যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ফেলে রাখার অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য ক্রয় করা অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর দীর্ঘ দিন ফেলে রাখার ঘটনায় অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

গতকাল বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আদালতে তদন্ত কমিটির পক্ষে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। রুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। গত ২ জানুয়ারি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউ’র জন্য ক্রয় করা অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর দীর্ঘ দিন ধরে ফেলে রাখার ঘটনা কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া সদ্য অবসরে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ড. মোয়াররফ হোসেনের অবসরকালীন পেনশন সুবিধা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি হাসপাতালের আইসিইউ জন্য ক্রয় করা অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর দীর্ঘ দিন ধরে ফেলে রাখার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) মো. সিরাজুল ইসলামকে ওই কমিটির আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির বাকি দুই সদস্য ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. মোজাফফর হোসেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে জড়িতদের অনিয়ম তুলে ধরে বলা হয় : তদন্তকালে গঠিত কারিগরী সাব-কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ৮টি আইসিইউ ভেন্টিলেটরের সব যন্ত্রাংশসহ আইসিইউ কক্ষে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু কোনোটাই বর্তমানে ব্যবহার যোগ্য নয়। অনেক দিনের পুরাতন বিধায় মেরামতযোগ্যও নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া অ্যাফারেসিস মেশিনটি মেরামতযোগ্য।

ক) মেডিকেল যন্ত্রপাতি বিশেষত : আইসিইউ ভেন্টিলেটর সমূহ স্থাপন/ব্যবহারের মতো কোন ভবন/কক্ষ নির্মাণের পূর্বে ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রথম প্রকল্প পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম গৃহীত কার্যক্রম যৌক্তিক হয়নি মর্মে প্রতীয়মান।

খ) প্রফেসর ডা. এএমএম শরীফুল আলম প্রকল্প পরিচালক এবং পরিচালক হিসাবে আইসিইউ ভেন্টিলেটর সমূহ শর্তসাপেক্ষে গ্রহণের অনুমোদন, সংরক্ষণের আদেশ এবং ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ না করার জন্য দায়ী মর্মে প্রতীয়মান হয়।

গ) প্রফেসর ডা. ওবায়দ্লুাহ বাকি তার কার্যকালে সিইউ ব্যবহারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করার জন্য দায়ী।

ঘ) প্রফেসর ডা. মো. হাফিজুর বহমান আনসারী, প্রফেসর ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা ও প্রফেসর ডা. শামিউল ইসলাম স্বল্পকাল কর্মরত থাকায় এবং পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় তাদেরকে দায়ী করার অবকাশ নেই।

ঙ) প্রফেসর ডা. শামীম আহসান আইসিইউ ভেন্টিলেটর হস্তান্তরের পরে শুধুমাত্র প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করায় তাকে দায়ী করার কোন অবকাশ নেই।

চ) প্রফেসর ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের যুগপত দায়িত্ব পালন করেছেন ৫ বছর। আইসিইউ ভেন্টিলেটর সমূহ মেরামতের জন্য পত্র যোগাযোগ করলেও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করা সঠিক হয়নি। এছাড়া প্রফেসর ডা. মানস কুমার বসু আগস্ট ২০১২ সাল থেকে এনেসথেসিয়া বিভাগে কর্মরত। তিনি ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আইসিইউসহ এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী ডা. মানস বসু কর্তৃপক্ষকে আইসিইউ ভেন্টিলেটর বিষয়ে অবহিত করেননি বিধায় তিনিও এর জন্য দায়ী।

এরপর আদালত তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে জড়িতদের বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন।