প্লাস্টিক শিল্প কারখানাগুলোকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কারখানাগুলোকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর উদ্যোগে গুণগত মানসম্পন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনে সহায়তা দেয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করা এবং জিডিপিতে অবদান বাড়াতে দেশে গড়ে উঠছে বিসিক প্লাস্টিক শিল্প নগরী। প্রথমে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ঠিক করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে সংশোধনী প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী’ সিরাজদিখানে ধলেশ্বরী সেতুর পশ্চিম পাশে বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে। প্রথমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবনায় আরও ১৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যার পুরোটাই সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়ার কথা বলা হয়। এই গড়ে ওঠা প্লাস্টিক শিল্পনগরীতে ৩৪৮টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা যাবে। এতে প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক শিল্প গড়ে তোলার অভিযাত্রাকে বেগবান করবে।
পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৫০ একর। ৯ লাখ ২৫ হাজার ১০৩ ঘনমিটার জমির উন্নয়ন করা হয়েছে। অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে ৬ তলা ভিত্তির দুটি ফ্লোরে। শিল্পনগরীর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে ১ হাজার ৮৬৬ মিটার। এছাড়াও মেইন গেট ও অন্য গেটগুলোর নিরাপত্তা দেওয়াল, পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ, পানির পাইপ লাইন, রাস্তা , ড্রেন, কালভার্ট/বক্স কালভার্ট, বিদ্যুৎ লাইন ও ট্রান্সফরমার, সোলার প্যানেল, ডাম্পিং ইয়ার্ডসহ যাবতীয় কাজ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে- প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রস্তাবিত শিল্পনগরীতে ৩৬০টি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন শিল্প পণ্য স্থাপিত হবে, যার মধ্যে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ৩৬০টি শিল্প প্লটে কমবেশি ২৫০টি প্লাস্টিক শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে এবং এই শিল্প ইউনিটগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিসিক সূত্র জানায়, দেশে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ ২০ ভাগ হারে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা মোকাবিলায় দেশেই এই আন্তর্জাতিক মানের প্লাস্টিক শিল্প নগরী গড়ে ওঠেছে। ইতোমধ্যে দেশে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১২ লাখ মানুষ। এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন এবং এই খাত থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসছে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নভাবে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, তবে সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি প্লাস্টিক পণ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী নূরল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জানিয়েছেন, প্লাস্টিক শিল্প একটি বিকাশমান খাত। কাঠের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশেও মানসম্মত প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণেই এই খাতের শিল্প বিকাশে সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে।’
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৪ ফল্গুন ১৪২৬, ২২ জমাদিউল সানি ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
প্লাস্টিক শিল্প কারখানাগুলোকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কারখানাগুলোকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর উদ্যোগে গুণগত মানসম্পন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনে সহায়তা দেয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করা এবং জিডিপিতে অবদান বাড়াতে দেশে গড়ে উঠছে বিসিক প্লাস্টিক শিল্প নগরী। প্রথমে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ঠিক করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে সংশোধনী প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী’ সিরাজদিখানে ধলেশ্বরী সেতুর পশ্চিম পাশে বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে। প্রথমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবনায় আরও ১৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যার পুরোটাই সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়ার কথা বলা হয়। এই গড়ে ওঠা প্লাস্টিক শিল্পনগরীতে ৩৪৮টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা যাবে। এতে প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক শিল্প গড়ে তোলার অভিযাত্রাকে বেগবান করবে।
পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৫০ একর। ৯ লাখ ২৫ হাজার ১০৩ ঘনমিটার জমির উন্নয়ন করা হয়েছে। অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে ৬ তলা ভিত্তির দুটি ফ্লোরে। শিল্পনগরীর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে ১ হাজার ৮৬৬ মিটার। এছাড়াও মেইন গেট ও অন্য গেটগুলোর নিরাপত্তা দেওয়াল, পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ, পানির পাইপ লাইন, রাস্তা , ড্রেন, কালভার্ট/বক্স কালভার্ট, বিদ্যুৎ লাইন ও ট্রান্সফরমার, সোলার প্যানেল, ডাম্পিং ইয়ার্ডসহ যাবতীয় কাজ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে- প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রস্তাবিত শিল্পনগরীতে ৩৬০টি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন শিল্প পণ্য স্থাপিত হবে, যার মধ্যে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ৩৬০টি শিল্প প্লটে কমবেশি ২৫০টি প্লাস্টিক শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে এবং এই শিল্প ইউনিটগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিসিক সূত্র জানায়, দেশে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ ২০ ভাগ হারে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা মোকাবিলায় দেশেই এই আন্তর্জাতিক মানের প্লাস্টিক শিল্প নগরী গড়ে ওঠেছে। ইতোমধ্যে দেশে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১২ লাখ মানুষ। এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন এবং এই খাত থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসছে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নভাবে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, তবে সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি প্লাস্টিক পণ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী নূরল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জানিয়েছেন, প্লাস্টিক শিল্প একটি বিকাশমান খাত। কাঠের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশেও মানসম্মত প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণেই এই খাতের শিল্প বিকাশে সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে।’