গুঁড়িয়ে দেয়া অবৈধ ৮ ভাটায় বীরদর্পে পোড়ানো হচ্ছে ইট!

শরীয়তপুরের প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ করে দেয়া ইটভাটাগুলোতে আবারও শুরু করেছে ইট পোড়ানোর কাজ। হাইকোর্টের আদেশে অবৈধ ৮টি ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় শরীয়তপুরের প্রশাসন। কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় ভাটার অবকাঠামো। ফায়ার সার্ভিসের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে নষ্ট করা হয় ভাটার সব ইট। কিছুদিন পার না হতেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে ওইসব ভাটায়।

শরীয়তপুর সদর উপজলার আটং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মের্সাস মদিনা ব্রিকসে গেল বছর ডিসেম্বর মাসে অভিযান চালায় প্রশাসন। পরিবেশের ছাড়পত্র আর জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয় অবকাঠামো। জরিমানা করা হয় ২ লাখ টাকা। বন্ধ ঘোষণা করা হয় ইট তৈরি ও পোড়ানো। নেয়া হয় মুচলেখাও। কিন্তু অভিযানের এক সপ্তাহ না পেরুতেই শুরু হয় ভাঙা অংশের মেরামত কাজ। এখন চলছে ইট তৈরি আর তা পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। প্রশাসনের কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই বীর দর্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মদিনা ব্রিকস। মদিনা ব্রিকস ম্যানেজার রুহুল আমীন শিকদার বলেন, তারা কাগজপত্র চাইছে আমরা মূলত দিতে পারি নাই। না দিতে পারায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে আর ভেক্যুর মাধ্যমে ভাঙচুর করেছে। ভাঙ্গা অংশ মেরামত করে এখন আবার চালু করেছি। এখন কিভাবে চালাচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আমি তো সব কিছু ডিল করি না মালিকপক্ষরাই বলতে পারবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর ৫৮টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১২টি ভাটার ছাড়পত্র নবায়ন নেই আর ১১টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম। সদর উপজেলার মদিনা ব্রিকস ছাড়াও ডামুড্যা উপজেলার মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস, গোসাইরহাট উপজেলার মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস, নড়িয়া উপজেলার মেসার্স ঢালী ব্রিকস সদর উপজেলার যমুনা ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং এবং জাজিরা উপজেলার মেসার্স যমুনা ব্রিকস, মেসার্স কির্তীনাশা বিক ফিল্ড লিমিটেড ও মেসার্স জে.আই. বি ব্রিকসে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসন। ইট পোড়ানো আইন অনুযায়ী ওই সব ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিল না। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলে সেখানে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সও দেয়া হয় না। তাই ইট ভাটাগুলোর এসব কাগজপত্র না থাকায় জরিমানা করা হয় এবং বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব ধরনের কার্যক্রম। তবে তালিকায় থাকা অনুমোদনহীন আরও ৩টি এবং ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়া ১২টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেনি প্রশাসন।

কিন্তু আবারও ওই ৮টি ইটভাটায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে শুরু করেছে কার্যক্রম। তৈরি হচ্ছে ইট। পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে চলছে সব ধরনের কাজ। এসব জানা আছে প্রশাসনের। কোন চাপের কারণে চলমান এই অভিযান বন্ধ রয়েছে আর দুঃসাহস দেখানো ওই ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই প্রশাসনের কাছে।

গোসাইরহাট উপজেলার মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস এর সত্বাধিকারি চৌধুরি মাহফুজুর রহমান উজ্জল বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত তারা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছেন। আমি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। তাই আর বন্ধ করিনি। ছাড়পপত্র বা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স পাওয়ার আশায় কার্যক্রম চালাচ্ছি।

পূর্বডামুড্যার মেসার্স হাওলাদার ব্রিক ফিল্ডের ম্যানেজার আব্দুর রশিদ মাদবর বলেন, প্রশাসন অভিযান করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ভেক্যু দিয়ে ভাটা ভেঙ্গে দিয়েছিল। ভাটা চালাতে নিষেধ করেছেন। এখন সবার সঙ্গে মিলেমিশে করেই আবার চালু করছি।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, জেলার সকল অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। ওইসব ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করেছে কিনা আমার জানা নেই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১০ ফল্গুন ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

গুঁড়িয়ে দেয়া অবৈধ ৮ ভাটায় বীরদর্পে পোড়ানো হচ্ছে ইট!

কাজী মনিরুজ্জামান, শরীয়তপুর ॥

image

শরীয়তপুর : বন্ধ করে দেয়া ভাটায় এভাবেই পোড়ানো হচ্ছে ইট -সংবাদ

শরীয়তপুরের প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ করে দেয়া ইটভাটাগুলোতে আবারও শুরু করেছে ইট পোড়ানোর কাজ। হাইকোর্টের আদেশে অবৈধ ৮টি ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় শরীয়তপুরের প্রশাসন। কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় ভাটার অবকাঠামো। ফায়ার সার্ভিসের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে নষ্ট করা হয় ভাটার সব ইট। কিছুদিন পার না হতেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে ওইসব ভাটায়।

শরীয়তপুর সদর উপজলার আটং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মের্সাস মদিনা ব্রিকসে গেল বছর ডিসেম্বর মাসে অভিযান চালায় প্রশাসন। পরিবেশের ছাড়পত্র আর জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয় অবকাঠামো। জরিমানা করা হয় ২ লাখ টাকা। বন্ধ ঘোষণা করা হয় ইট তৈরি ও পোড়ানো। নেয়া হয় মুচলেখাও। কিন্তু অভিযানের এক সপ্তাহ না পেরুতেই শুরু হয় ভাঙা অংশের মেরামত কাজ। এখন চলছে ইট তৈরি আর তা পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। প্রশাসনের কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই বীর দর্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মদিনা ব্রিকস। মদিনা ব্রিকস ম্যানেজার রুহুল আমীন শিকদার বলেন, তারা কাগজপত্র চাইছে আমরা মূলত দিতে পারি নাই। না দিতে পারায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে আর ভেক্যুর মাধ্যমে ভাঙচুর করেছে। ভাঙ্গা অংশ মেরামত করে এখন আবার চালু করেছি। এখন কিভাবে চালাচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আমি তো সব কিছু ডিল করি না মালিকপক্ষরাই বলতে পারবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর ৫৮টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১২টি ভাটার ছাড়পত্র নবায়ন নেই আর ১১টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম। সদর উপজেলার মদিনা ব্রিকস ছাড়াও ডামুড্যা উপজেলার মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস, গোসাইরহাট উপজেলার মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস, নড়িয়া উপজেলার মেসার্স ঢালী ব্রিকস সদর উপজেলার যমুনা ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং এবং জাজিরা উপজেলার মেসার্স যমুনা ব্রিকস, মেসার্স কির্তীনাশা বিক ফিল্ড লিমিটেড ও মেসার্স জে.আই. বি ব্রিকসে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসন। ইট পোড়ানো আইন অনুযায়ী ওই সব ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিল না। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলে সেখানে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সও দেয়া হয় না। তাই ইট ভাটাগুলোর এসব কাগজপত্র না থাকায় জরিমানা করা হয় এবং বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব ধরনের কার্যক্রম। তবে তালিকায় থাকা অনুমোদনহীন আরও ৩টি এবং ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়া ১২টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেনি প্রশাসন।

কিন্তু আবারও ওই ৮টি ইটভাটায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে শুরু করেছে কার্যক্রম। তৈরি হচ্ছে ইট। পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে চলছে সব ধরনের কাজ। এসব জানা আছে প্রশাসনের। কোন চাপের কারণে চলমান এই অভিযান বন্ধ রয়েছে আর দুঃসাহস দেখানো ওই ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই প্রশাসনের কাছে।

গোসাইরহাট উপজেলার মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস এর সত্বাধিকারি চৌধুরি মাহফুজুর রহমান উজ্জল বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত তারা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছেন। আমি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। তাই আর বন্ধ করিনি। ছাড়পপত্র বা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স পাওয়ার আশায় কার্যক্রম চালাচ্ছি।

পূর্বডামুড্যার মেসার্স হাওলাদার ব্রিক ফিল্ডের ম্যানেজার আব্দুর রশিদ মাদবর বলেন, প্রশাসন অভিযান করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ভেক্যু দিয়ে ভাটা ভেঙ্গে দিয়েছিল। ভাটা চালাতে নিষেধ করেছেন। এখন সবার সঙ্গে মিলেমিশে করেই আবার চালু করছি।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, জেলার সকল অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। ওইসব ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করেছে কিনা আমার জানা নেই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।