ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলার দায় স্বীকার রবিউলের

দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে রবিউল ইসলাম। দু’দফায় ৯ দিন রিমান্ড শেষে গতকাল মামলার আসামি রবিউল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক ইমাম জাফর জানান, ঘোড়াঘাট ইউএনও অফিসের সাময়িক বরখাস্ত মালি ও মামলার একমাত্র আসামি রবিউল রিমান্ডে থাকাকালীন পুলিশের কাছে ঘটনার সঙ্গে নিজে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। সে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে গতকাল সকাল ১০টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে খাস কামরায় নেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা রবিউল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। রবিউল জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে, সে একাই ইউএনও’র বাসভবনের প্রবেশ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জবানবন্দি শেষে বিজ্ঞ আদালত রবিউলকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

রবিউল ইসলামকে গত ৯ সেপ্টেম্বর তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর পুলিশ জানিয়েছিল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল তার নিজের দোষ ডিবি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ইউএনও’র ওপর হামলার বিষয়টি নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য। সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন, রবিউল ইউএনও’র ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও একমাত্র হামলাকারী সে নিজেই। পরে তাকে ওইদিন আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিচারক ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর ৬ দিন রিমান্ড শেষে রবিউলকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে আনা হয়। প্রায় ৭ ঘণ্টা আদালতে রেখেও তার জবানবন্দি আদায় করা যায়নি। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দু’দফায় ৯ দিনের রিমান্ড শেষে রবিউলকে পুনরায় গতকাল আদালতে হাজির করা হয় এবং ঘটনার দায় স্বেচ্ছায় স্বীকার করে সে ।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রবিউল ইসলাম মালি হিসেবে কাজ করতেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউএনও’র ব্যাগ হতে ৫০ হাজার টাকা চুরির দায়ে রবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকে জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় বদলি করা হয় এবং ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়ার দিন পর্যন্ত সে অফিস করেছে। কাগজপত্রে ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ হতে তাকে চাকরিচ্যুত দেখানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমাম জাফর জানান, রবিউল স্বীকার করেছে চলতি বছরের শুরুতে ইউএনও’র ব্যাগ থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরির দায়ে রবিউলের বিরুদ্ধে ওই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। চুরির ঘটনার পর ইউএনও’কে রবিউল ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। রবিউলকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। ইউএনও ওই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় তাকে টার্গেট করেন রবিউল।

২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার পর ওই বাসা থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করেছিলেন রবিউল। ওই টাকা ওয়্যারড্রপে রাখা ইউএনওর ব্যাগে ছিল। টাকা চুরি করা তার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। মূলত : প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার ক্ষোভ থেকে তার ওপর হামলা করতে হাতুড়িও কিনে রেখেছিলেন তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, রবিউল ইসলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করেছে মামলার ৫ সাক্ষী। সাক্ষীরা হলেনÑ দিনাজপুর শহরের ষষ্টিতলা এলাকার সাইকেল গ্যারেজের মালিক আইনুল, নাপিত মুরাদ ও শহরের বড়মাঠ এলাকার জুয়াড়ু খোকন আলী, ঘোড়াঘাটের ওসমানপুরের মুদি দোকানদার সিরাজ ও মশিউর কবিরাজের ছেলে ওলিউল্লাহ (১০)। তাদের সঙ্গে কখন কোথায় রবিউলের সাক্ষাৎ হয়েছে, তা তারা পুলিশের কাছে সাক্ষী দিয়েছে।

রবিউল ইসলামের বাড়ি বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ভিমপুর পাড়ায়। সকালে সাইকেল চালিয়ে সে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়। সেখানে কাজ শেষ করে বেলা ১১টার দিকে শহরের ষষ্টিতলা মোড়ে মুরাদের সেলুনে যায়। সেখানে দীর্ঘ সময় সে মোবাইলে গেম খেলে। দুপুর দেড়টার দিকে নাপিত মুরাদের কাছে ১শ’ টাকা হাওলাদ চায় রবিউল। মুরাদ টাকা দেয়নি। রবিউল এ সময় মুরাদকে বিশেষ কাজে বাইরে যাওয়ার কথা বলে তার দোকানে সাইকেলটা রাখতে চায়। মুরাদ তার দোকানে সাইকেল রাখার ব্যবস্থা নেই বলে জানালে আইনুলের গ্যারেজে সাইকেল রাখে। বিকেল ৩টার দিকে শহরের ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে যায় সে। সেখান হতে রবিউল তৃপ্তি পরিবহনে উঠে ঘোড়াঘাট রানীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ডে নামে। সেখান থেকে ওসমানপুর উপজেলা চত্বরের বাইরে রাত ১টা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে। পরে পুরাতন মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়াল টপকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করে।

প্রথম দফায় দ্বিতীয় তলায় উঠতে ব্যর্থ হয়ে রাত ৩টা ২৯ মিনিটে চেয়ার ও টুল একসঙ্গে করে মই বেয়ে সে দ্বিতীয় দফায় ইউএনও’র বাসভবনের দ্বিতীয় তলার বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ঢুকে তাকে ও তার বাবা ওমর আলী শেখকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে আহত করে। এ ব্যাপারে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন বাদী হয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আরজিতে আসামি অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলে দুই দিনের মাথায় এলিট ফোর্স র‌্যাব আসাদুল ইসলাম, নবিরুল ইসলাম ও সান্টু চন্দ্র রায় নামে তিনজনকে গ্রেফতারের পর তাদের জড়িত থাকার কথা জানায়। চুরির উদ্দেশ্যে ওই বাসায় আসাদুল, নবিরুল ও সান্টু ঢুকেছিল বলে জানিয়েছিল র‌্যাব। কিন্তু এর এক সপ্তাহ পর গত ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ইউএনও অফিসের বরখাস্ত হওয়া মালি রবিউল ইসলাম একাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়িও উদ্ধারের কথা জানান তিনি।

image
আরও খবর
১৩ কর্মকর্তা দিয়ে চলছে বিস্ফোরক পরিদফতর
ওয়াসার এমডি পদে বিতর্কিতদের পুনর্নিয়োগ না দেয়ার আহ্বান ক্যাবের
ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ
শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে তাই প্রস্তুতি নিন : প্রধানমন্ত্রী
করোনায় একদিনে আরও ২৬ মৃত্যু শনাক্ত ১৫৪৪
করোনা সন্দেহে কেউ এগিয়ে এলো না, রাস্তায় মৃত্যু হলো মুয়াজ্জিনের
সাবেক ওসি প্রদীপ ও স্ত্রীর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ
এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে ২০ হাজার মে. টন পিয়াজ
ভারত থেকে আসা অধিকাংশ পিয়াজই পচে গেছে
সাহেদের অস্ত্র মামলার রায় ২৮ সেপ্টেম্বর
অঢেল সম্পদের মালিক স্বাস্থ্যের ড্রাইভার গ্রেফতার

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০১ মহররম ১৪৪২, ০৩ আশ্বিন ১৪২৭

ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলার দায় স্বীকার রবিউলের

চিত্ত ঘোষ, দিনাজপুর

image

দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে রবিউল ইসলাম। দু’দফায় ৯ দিন রিমান্ড শেষে গতকাল মামলার আসামি রবিউল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক ইমাম জাফর জানান, ঘোড়াঘাট ইউএনও অফিসের সাময়িক বরখাস্ত মালি ও মামলার একমাত্র আসামি রবিউল রিমান্ডে থাকাকালীন পুলিশের কাছে ঘটনার সঙ্গে নিজে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। সে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে গতকাল সকাল ১০টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে খাস কামরায় নেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা রবিউল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। রবিউল জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে, সে একাই ইউএনও’র বাসভবনের প্রবেশ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জবানবন্দি শেষে বিজ্ঞ আদালত রবিউলকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

রবিউল ইসলামকে গত ৯ সেপ্টেম্বর তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর পুলিশ জানিয়েছিল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল তার নিজের দোষ ডিবি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ইউএনও’র ওপর হামলার বিষয়টি নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য। সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন, রবিউল ইউএনও’র ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও একমাত্র হামলাকারী সে নিজেই। পরে তাকে ওইদিন আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিচারক ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর ৬ দিন রিমান্ড শেষে রবিউলকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে আনা হয়। প্রায় ৭ ঘণ্টা আদালতে রেখেও তার জবানবন্দি আদায় করা যায়নি। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দু’দফায় ৯ দিনের রিমান্ড শেষে রবিউলকে পুনরায় গতকাল আদালতে হাজির করা হয় এবং ঘটনার দায় স্বেচ্ছায় স্বীকার করে সে ।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রবিউল ইসলাম মালি হিসেবে কাজ করতেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউএনও’র ব্যাগ হতে ৫০ হাজার টাকা চুরির দায়ে রবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকে জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় বদলি করা হয় এবং ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়ার দিন পর্যন্ত সে অফিস করেছে। কাগজপত্রে ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ হতে তাকে চাকরিচ্যুত দেখানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমাম জাফর জানান, রবিউল স্বীকার করেছে চলতি বছরের শুরুতে ইউএনও’র ব্যাগ থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরির দায়ে রবিউলের বিরুদ্ধে ওই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। চুরির ঘটনার পর ইউএনও’কে রবিউল ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। রবিউলকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। ইউএনও ওই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় তাকে টার্গেট করেন রবিউল।

২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার পর ওই বাসা থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করেছিলেন রবিউল। ওই টাকা ওয়্যারড্রপে রাখা ইউএনওর ব্যাগে ছিল। টাকা চুরি করা তার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। মূলত : প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার ক্ষোভ থেকে তার ওপর হামলা করতে হাতুড়িও কিনে রেখেছিলেন তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, রবিউল ইসলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করেছে মামলার ৫ সাক্ষী। সাক্ষীরা হলেনÑ দিনাজপুর শহরের ষষ্টিতলা এলাকার সাইকেল গ্যারেজের মালিক আইনুল, নাপিত মুরাদ ও শহরের বড়মাঠ এলাকার জুয়াড়ু খোকন আলী, ঘোড়াঘাটের ওসমানপুরের মুদি দোকানদার সিরাজ ও মশিউর কবিরাজের ছেলে ওলিউল্লাহ (১০)। তাদের সঙ্গে কখন কোথায় রবিউলের সাক্ষাৎ হয়েছে, তা তারা পুলিশের কাছে সাক্ষী দিয়েছে।

রবিউল ইসলামের বাড়ি বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ভিমপুর পাড়ায়। সকালে সাইকেল চালিয়ে সে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়। সেখানে কাজ শেষ করে বেলা ১১টার দিকে শহরের ষষ্টিতলা মোড়ে মুরাদের সেলুনে যায়। সেখানে দীর্ঘ সময় সে মোবাইলে গেম খেলে। দুপুর দেড়টার দিকে নাপিত মুরাদের কাছে ১শ’ টাকা হাওলাদ চায় রবিউল। মুরাদ টাকা দেয়নি। রবিউল এ সময় মুরাদকে বিশেষ কাজে বাইরে যাওয়ার কথা বলে তার দোকানে সাইকেলটা রাখতে চায়। মুরাদ তার দোকানে সাইকেল রাখার ব্যবস্থা নেই বলে জানালে আইনুলের গ্যারেজে সাইকেল রাখে। বিকেল ৩টার দিকে শহরের ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে যায় সে। সেখান হতে রবিউল তৃপ্তি পরিবহনে উঠে ঘোড়াঘাট রানীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ডে নামে। সেখান থেকে ওসমানপুর উপজেলা চত্বরের বাইরে রাত ১টা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে। পরে পুরাতন মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়াল টপকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করে।

প্রথম দফায় দ্বিতীয় তলায় উঠতে ব্যর্থ হয়ে রাত ৩টা ২৯ মিনিটে চেয়ার ও টুল একসঙ্গে করে মই বেয়ে সে দ্বিতীয় দফায় ইউএনও’র বাসভবনের দ্বিতীয় তলার বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ঢুকে তাকে ও তার বাবা ওমর আলী শেখকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে আহত করে। এ ব্যাপারে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন বাদী হয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আরজিতে আসামি অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলে দুই দিনের মাথায় এলিট ফোর্স র‌্যাব আসাদুল ইসলাম, নবিরুল ইসলাম ও সান্টু চন্দ্র রায় নামে তিনজনকে গ্রেফতারের পর তাদের জড়িত থাকার কথা জানায়। চুরির উদ্দেশ্যে ওই বাসায় আসাদুল, নবিরুল ও সান্টু ঢুকেছিল বলে জানিয়েছিল র‌্যাব। কিন্তু এর এক সপ্তাহ পর গত ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ইউএনও অফিসের বরখাস্ত হওয়া মালি রবিউল ইসলাম একাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়িও উদ্ধারের কথা জানান তিনি।