ডিএজি রুপা দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি

নানা নাটকীয়তার পর হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফোরদৌসী রুপাকে হাজির হতে হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে)। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ দুর্নীতির মামলায় জেলে থাকা জিকে বিল্ডার্সের মালিক গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে জামিন করিয়ে দেয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে গতকাল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন টিম দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদকের সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর ২টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হন হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বিতর্কিত কিছু ব্যক্তিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছেন। এভাবে তিনি অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব অভিযোগে গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দুদকের অনেক প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

তবে বিকেলে দুদক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রুপা সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। কাউকে জামিন দেয়া আমার এখতিয়ার না একমাত্র আদালতের এখতিয়ার। সরকারি আইনজীবীদের কথায় আদালত কখনও জামিন দেন না। গত বছরের ২১ আগস্ট জিকে শামীমের জামিনের সঙ্গে রুপার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রতিবেদ প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে হাইকোর্টে ভুয়া নাম ব্যবহার ও জালিয়াতি করে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত জিকে শামীমকে টাকা নিয়ে জামিন করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রুপার বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ দুদকে জমা পড়লে দুদক সেটি তদন্ত শুরু করে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সই করা নোটিশে তাকে তলব করা হয়। গত বছরের ৪ নভেম্বর সকাল ১০টায় তাকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় ৪ নভেম্বর দুদকে হাজির হতে পারছেন না জানিয়ে সময়ের আবেদন করেছিলেন রুপা। একইসঙ্গে দুদকের ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১ নভেম্বর রিট দায়ের করেন তিনি। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন। ওই বেঞ্চ তাকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে দুদকের দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছিলো, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা ১২ বছর ধরে আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সরকারি পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঘুষের বিনিময়ে ক্যাসিনো সম্পৃক্ত ঠিকাদার জিকে শামীমের হাইকোর্ট বিভাগে জামিন লাভে সহায়তা করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের যে বেঞ্চে জিকে শামীমের জামিন হয়েছিল, সেই কোর্টে জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কোর্টের দৈনন্দিন কার্য তালিকায় জিকে শামীমের জামিন আবেদনে আসামির নাম এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমের বদলে তিনি এসএম গোলাম ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১ , ৭ মাঘ ১৪২৭, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ডিএজি রুপা দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

নানা নাটকীয়তার পর হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফোরদৌসী রুপাকে হাজির হতে হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে)। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ দুর্নীতির মামলায় জেলে থাকা জিকে বিল্ডার্সের মালিক গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে জামিন করিয়ে দেয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে গতকাল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন টিম দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদকের সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর ২টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হন হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বিতর্কিত কিছু ব্যক্তিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছেন। এভাবে তিনি অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব অভিযোগে গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দুদকের অনেক প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

তবে বিকেলে দুদক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রুপা সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। কাউকে জামিন দেয়া আমার এখতিয়ার না একমাত্র আদালতের এখতিয়ার। সরকারি আইনজীবীদের কথায় আদালত কখনও জামিন দেন না। গত বছরের ২১ আগস্ট জিকে শামীমের জামিনের সঙ্গে রুপার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রতিবেদ প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে হাইকোর্টে ভুয়া নাম ব্যবহার ও জালিয়াতি করে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত জিকে শামীমকে টাকা নিয়ে জামিন করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রুপার বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ দুদকে জমা পড়লে দুদক সেটি তদন্ত শুরু করে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সই করা নোটিশে তাকে তলব করা হয়। গত বছরের ৪ নভেম্বর সকাল ১০টায় তাকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় ৪ নভেম্বর দুদকে হাজির হতে পারছেন না জানিয়ে সময়ের আবেদন করেছিলেন রুপা। একইসঙ্গে দুদকের ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১ নভেম্বর রিট দায়ের করেন তিনি। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন। ওই বেঞ্চ তাকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে দুদকের দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছিলো, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা ১২ বছর ধরে আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সরকারি পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঘুষের বিনিময়ে ক্যাসিনো সম্পৃক্ত ঠিকাদার জিকে শামীমের হাইকোর্ট বিভাগে জামিন লাভে সহায়তা করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের যে বেঞ্চে জিকে শামীমের জামিন হয়েছিল, সেই কোর্টে জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কোর্টের দৈনন্দিন কার্য তালিকায় জিকে শামীমের জামিন আবেদনে আসামির নাম এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমের বদলে তিনি এসএম গোলাম ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেন তিনি।