নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে : প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে সমন্বিত পরিকল্পনা। সমন্বিত পরিকল্পনাই নিশ্চিত করবে টেকসই উন্নয়ন। বৃহস্পতিবার সিআরআই এএলবিডি ওয়েব টিম আয়োজিত ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার বাজেট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনার অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন। ওয়েরবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি ২০৪১ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা এবং যোগান নিয়ে আলোকপাত করেন। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসাইন ও ডেইলি অবজারভারের বিশেষ প্রতিনিধি শাহনাজ বেগম প্যানেলিস্ট হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তাদের আলোচনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, দক্ষতার সঙ্গে এনার্জি নিগোসিয়েশন ও দেশীয় সম্পদের অনুসন্ধান বাড়ানো বিষয় ওঠে আসে।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ২৬৪৪.২৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিদ্যুৎ খাতে ২৬১১৮.৭৬ কোটি টাকা (নিজস্ব অর্থায়নসহ) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিতরণ সংশ্লিষ্ট ৩১টি, সঞ্চালন সংশ্লিষ্ট ১৮টি, উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ১৭টি, কারিগরি ৬টি ও নিজস্ব অর্থায়নে ২টি প্রকল্পের অনুকূলে এই ২৬১১৮.৭৬ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১৭টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উক্ত প্রকল্পসমূহের অনুকূলে ২৮৫১.৪৭ কোটি টাকা (নিজস্ব অর্থায়নসহ) বরাদ্দ রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সাশ্রয়ী ব্যবহারে প্রি-পেইড মিটার কার্যকরী অবদান রাখবে। দেশীয় জ্বালানি ব্যবহারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেয়া দরকার। ১০ বছর যে জ্বালানি ব্যবহৃত হতো তা কীভাবে ১৫ বছর করা যেতে পারে তা নিয়ে এখনই চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাপেক্স ২০২০ সালে শাহবাজপুর-৩, শ্রীকাইল-৪, ফেঞ্চুগঞ্জ-৪ ও তিতাস-৭ কূপে সফলভাবে ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সম্পাদন করে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২০ সালেই বাপেক্স শ্রীকাইল ইস্ট-১ কূপে অনুসন্ধান করে সম্ভাব্য ৫০ বিসিএফ উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ, সিলেট-৯ কূপে সম্ভাব্য ৩৫ বিসিএফ গ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে হিসাব করা হয়েছে। জকিগঞ্জ-১ কূপটিতে ২৯৮২ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন শেষে ২৮৭২-২৮৮৪ মিটার গভীরতায় পারফোরেশন সম্পন্ন করে কূপ পরীক্ষণ (ডিএসটি) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত। আগামী দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। বায়ু বিদ্যুৎ, ওশান রিনিউবল এনার্জি, বর্জ থেকে বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ ইত্যাদি আগামীর জ্বালানি মিশ্রণে ব্যাপক অবদান রাখবে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি সাশ্রয়ে কারিগরি সহযোগিতা করছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল গবেষণায় অর্থায়ন করছে। তাছাড়া বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করে মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যকরী অবদান রাখছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনায় ই আর পি, স্ক্যাডা, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল ব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ উপকেন্দ্র, জিআই ট্রান্সফরমার সংযোজনের উদ্যোগ চলমান। বিগ ডাটার সঙ্গে ইন্টারনেট অব থিংকস সম্পৃক্ত করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে : প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে সমন্বিত পরিকল্পনা। সমন্বিত পরিকল্পনাই নিশ্চিত করবে টেকসই উন্নয়ন। বৃহস্পতিবার সিআরআই এএলবিডি ওয়েব টিম আয়োজিত ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার বাজেট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনার অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন। ওয়েরবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি ২০৪১ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা এবং যোগান নিয়ে আলোকপাত করেন। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসাইন ও ডেইলি অবজারভারের বিশেষ প্রতিনিধি শাহনাজ বেগম প্যানেলিস্ট হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তাদের আলোচনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, দক্ষতার সঙ্গে এনার্জি নিগোসিয়েশন ও দেশীয় সম্পদের অনুসন্ধান বাড়ানো বিষয় ওঠে আসে।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ২৬৪৪.২৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিদ্যুৎ খাতে ২৬১১৮.৭৬ কোটি টাকা (নিজস্ব অর্থায়নসহ) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিতরণ সংশ্লিষ্ট ৩১টি, সঞ্চালন সংশ্লিষ্ট ১৮টি, উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ১৭টি, কারিগরি ৬টি ও নিজস্ব অর্থায়নে ২টি প্রকল্পের অনুকূলে এই ২৬১১৮.৭৬ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১৭টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উক্ত প্রকল্পসমূহের অনুকূলে ২৮৫১.৪৭ কোটি টাকা (নিজস্ব অর্থায়নসহ) বরাদ্দ রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সাশ্রয়ী ব্যবহারে প্রি-পেইড মিটার কার্যকরী অবদান রাখবে। দেশীয় জ্বালানি ব্যবহারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেয়া দরকার। ১০ বছর যে জ্বালানি ব্যবহৃত হতো তা কীভাবে ১৫ বছর করা যেতে পারে তা নিয়ে এখনই চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাপেক্স ২০২০ সালে শাহবাজপুর-৩, শ্রীকাইল-৪, ফেঞ্চুগঞ্জ-৪ ও তিতাস-৭ কূপে সফলভাবে ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সম্পাদন করে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২০ সালেই বাপেক্স শ্রীকাইল ইস্ট-১ কূপে অনুসন্ধান করে সম্ভাব্য ৫০ বিসিএফ উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ, সিলেট-৯ কূপে সম্ভাব্য ৩৫ বিসিএফ গ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে হিসাব করা হয়েছে। জকিগঞ্জ-১ কূপটিতে ২৯৮২ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন শেষে ২৮৭২-২৮৮৪ মিটার গভীরতায় পারফোরেশন সম্পন্ন করে কূপ পরীক্ষণ (ডিএসটি) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত। আগামী দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। বায়ু বিদ্যুৎ, ওশান রিনিউবল এনার্জি, বর্জ থেকে বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ ইত্যাদি আগামীর জ্বালানি মিশ্রণে ব্যাপক অবদান রাখবে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি সাশ্রয়ে কারিগরি সহযোগিতা করছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল গবেষণায় অর্থায়ন করছে। তাছাড়া বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করে মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যকরী অবদান রাখছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনায় ই আর পি, স্ক্যাডা, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল ব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ উপকেন্দ্র, জিআই ট্রান্সফরমার সংযোজনের উদ্যোগ চলমান। বিগ ডাটার সঙ্গে ইন্টারনেট অব থিংকস সম্পৃক্ত করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রস্তুতি নিচ্ছে।