ঢাকা ব্যাংকের ভল্ট থেকে চার কোটি টাকা উধাও

ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা উধাও হওয়ায় ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভল্টের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তারা হলো ভল্ট ইনচার্জ রিফাতুল হক (৩২) ও এমরান আহমেদ (৪৫)। গতকাল সকালে বংশাল থানার ওসি তদন্ত মো. রেজাউল এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা উধাওয়ের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে দুইজনকে সোপর্দ করেছেন। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি মামলা হবে। মামলাটি দুদকে চলে যাবে এবং আসামিদেরও আমরা দুদকে হস্তান্তর করব। বিষয়টি দুদক তদন্ত করে দেখবে।

লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখা ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক তাদের এই দুই কর্মকর্তাকে থানায় সোপর্দ করেছেন। তার অভিযোগ, অডিটের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এই দুই কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা আটক দুই কর্মকর্তাকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠিয়েছি। আইনগত যে প্রক্রিয়া আছে, সেটা আমরা এখন করছি।

এদিকে গ্রেপ্তার দুই কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার সরকার তাদের ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামিরা ব্যাংকের ভল্টের টাকার দায়িত্বে ছিলেন। ভল্টের চাবি তাদের কাছেই ছিল। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের অডিট টিম অডিট করার সময় ভল্টে থাকা ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার হিসাবে গড়মিল পান। ব্যাংকের ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে অডিট টিম টাকা গড়মিলের স্টেটমেন্ট দাখিল করে। তখন আবু বক্কর সিদ্দিক অডিট টিমের স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আসামিরা তাৎক্ষণিকভাবে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের ম্যানেজার তখন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে অডিট টিমের সহায়তায় আসামিদের আটক করেন। আসামিদের থানায় হাজির করে আবু বক্কর সিদ্দিক বংশাল ওসি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। ওসি অভিযোগটি পর্যালোচনা করে দেখতে পান ঘটনাটি পেনাল কোডের ৪০৯ ধারার অপরাধ। যার তদন্ত ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিডিউলভুক্ত।

এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের শাখায় আমাদের ইন্টারনাল অডিট হয়। এরপরই টাকার অঙ্কে অসঙ্গতি দেখা যায়। ক্যাশ কম পাওয়ায় আবারও ইনভেস্টিগেশন করা হয়। পৌনে চার কোটি টাকার মতো কম ছিল। এরপর দায়িত্বে থাকা ক্যাশ-ইনচার্জের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রাথমিকভাবে ক্যাশ সরিয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ কাজটি তিনি একাই করেছেন বলে জানিয়েছেন ক্যাশ-ইনচার্জ রিফাজুল হক। কিজন্য এই টাকা সরিয়েছেন তা এখনও তিনি জানাননি।

তিনি জানান, পরবর্তীতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী লিগ্যাল প্রসেসে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু দু’জন দায়িত্বে ছিলেন তাই ক্যাশ-ইনচার্জ ও ম্যানেজার (অপারেশন) দু’জনকে পুলিশে সোপর্দ করেছি। এখন সংশ্লিষ্ট সংস্থা তদন্ত করে বলতে পারবে কীভাবে ও কিজন্য এ টাকা সরানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি ধরা পড়েছে। এখন দেখতে হবে কতদিনে টাকা সরিয়েছে। এজন্য কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা আইনের হাতে দিয়েছি, পাশাপাশি নিজস্ব একটি তদন্ত হবে। এরপর পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারব। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মতো সরানো হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানাতে পারব।

শনিবার, ১৯ জুন ২০২১ , ৫ আষাঢ় ১৪২৮ ৭ জিলকদ ১৪৪২

ঢাকা ব্যাংকের ভল্ট থেকে চার কোটি টাকা উধাও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা উধাও হওয়ায় ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভল্টের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তারা হলো ভল্ট ইনচার্জ রিফাতুল হক (৩২) ও এমরান আহমেদ (৪৫)। গতকাল সকালে বংশাল থানার ওসি তদন্ত মো. রেজাউল এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা উধাওয়ের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে দুইজনকে সোপর্দ করেছেন। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি মামলা হবে। মামলাটি দুদকে চলে যাবে এবং আসামিদেরও আমরা দুদকে হস্তান্তর করব। বিষয়টি দুদক তদন্ত করে দেখবে।

লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখা ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক তাদের এই দুই কর্মকর্তাকে থানায় সোপর্দ করেছেন। তার অভিযোগ, অডিটের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এই দুই কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা আটক দুই কর্মকর্তাকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠিয়েছি। আইনগত যে প্রক্রিয়া আছে, সেটা আমরা এখন করছি।

এদিকে গ্রেপ্তার দুই কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার সরকার তাদের ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামিরা ব্যাংকের ভল্টের টাকার দায়িত্বে ছিলেন। ভল্টের চাবি তাদের কাছেই ছিল। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের অডিট টিম অডিট করার সময় ভল্টে থাকা ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার হিসাবে গড়মিল পান। ব্যাংকের ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে অডিট টিম টাকা গড়মিলের স্টেটমেন্ট দাখিল করে। তখন আবু বক্কর সিদ্দিক অডিট টিমের স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আসামিরা তাৎক্ষণিকভাবে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের ম্যানেজার তখন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে অডিট টিমের সহায়তায় আসামিদের আটক করেন। আসামিদের থানায় হাজির করে আবু বক্কর সিদ্দিক বংশাল ওসি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। ওসি অভিযোগটি পর্যালোচনা করে দেখতে পান ঘটনাটি পেনাল কোডের ৪০৯ ধারার অপরাধ। যার তদন্ত ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিডিউলভুক্ত।

এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের শাখায় আমাদের ইন্টারনাল অডিট হয়। এরপরই টাকার অঙ্কে অসঙ্গতি দেখা যায়। ক্যাশ কম পাওয়ায় আবারও ইনভেস্টিগেশন করা হয়। পৌনে চার কোটি টাকার মতো কম ছিল। এরপর দায়িত্বে থাকা ক্যাশ-ইনচার্জের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রাথমিকভাবে ক্যাশ সরিয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ কাজটি তিনি একাই করেছেন বলে জানিয়েছেন ক্যাশ-ইনচার্জ রিফাজুল হক। কিজন্য এই টাকা সরিয়েছেন তা এখনও তিনি জানাননি।

তিনি জানান, পরবর্তীতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী লিগ্যাল প্রসেসে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু দু’জন দায়িত্বে ছিলেন তাই ক্যাশ-ইনচার্জ ও ম্যানেজার (অপারেশন) দু’জনকে পুলিশে সোপর্দ করেছি। এখন সংশ্লিষ্ট সংস্থা তদন্ত করে বলতে পারবে কীভাবে ও কিজন্য এ টাকা সরানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি ধরা পড়েছে। এখন দেখতে হবে কতদিনে টাকা সরিয়েছে। এজন্য কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা আইনের হাতে দিয়েছি, পাশাপাশি নিজস্ব একটি তদন্ত হবে। এরপর পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারব। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মতো সরানো হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানাতে পারব।