বরিশাল নগরীর ৭ খাল সংস্কারে ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প

বরিশাল নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ২২টি খাল। এই ২২টি খালই বরিশাল নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশাপাশি এক সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রেখেছিল। অথচ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশিরভাগ খালই এখন নর্দমায় পরিণত হয়েছে। গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খননের নামে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন বিপুল অর্থ ব্যয়ে লোক দেখানো নানা আয়োজন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিছুদিন পর খালের রূপ নর্দমায় ফিরে গেছে। অনেক খাল এখন নগরীর সৌন্দর্যহানির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই খালগুলোতে নতুন করে প্রবাহ ফেরাতে পদক্ষেপ নিয়েছে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরীর সাতটি খালের ১৯ কিলোমিটার খনন ও সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্য পাউবোর ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাউবোর ‘৬৪ জেলা নদী-খাল খনন প্রকল্পে’র আওতায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

বরিশাল পাউবোর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল মহানগরসহ সদর আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের আগ্রহ ও উদ্যোগে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। গত দুটি মৌসুমে অস্বাভাবিক জোয়ারে খাল দিয়ে কীর্তনখোলার পানি প্রবেশ করে নগরী প্লাবিত হলে প্রতিমন্ত্রী খালের গভীরতা বৃদ্ধির তাগিদ দেন। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে খাল খনন করে গভীরতা বৃদ্ধি করা হবে যাতে জোয়ারের পানি উপচে নগরীর মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে এবং পুনরায় নৌ চলাচল শুরু হয়।

সূত্র জানিয়েছে ১৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রশাসনিক সব ধাপ শেষে এখন পরিকল্পনা কমিশনের রয়েছে। অনুমোদনের জন্য একনেকের আগামী যে কোন সভায় উপস্থাপন করা হবে। একনেকে অনুমোদিত হলে এ বছরের মধ্যে খাল খনন ও সৌন্দর্যকরণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে পাউবো সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পাউবো সূত্র থেকে জানা যায়, প্রকল্পভুক্ত খালগুলো হলো যথাক্রমে সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল, ভাটার খাল, জেল খাল, আমানতগঞ্জ খাল, পলাশপুর খাল এবং রূপাতলী খাল। এই প্রত্যেকটি খালের উৎস হচ্ছে নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত কীর্তনখোলা নদী। সাতটি খালে মোট ১৯ কিলোমিটার খনন করা হবে। স্থানভেদে চার-পাঁচ কিলোমিটার খনন করার পর খালের দুই তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। সাগরদী খাল খনন করা হবে ৯ কিলোমিটার এবং জেলখাল দুই কিলোমিটার প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরিশাল সফরকালে সাংবাদিকদের বলেন, সাতটি খাল খনন প্রকল্প খুব শীঘ্রই একনেকে অনুমোদিত হবে। আশা করি, এ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। পাউবোর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস জানান, নগরীর সাতটি খাল সংস্কারে ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রতিমন্ত্রী ও সচিব জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাবে।

২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার বলেন, তার ওয়ার্ডের সাগরদী খাল নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বড় খাল। বিভিন্ন সময়ে লোক দেখানো খালসংস্কার হলেও মানুষের কোন কল্যাণে আসেনি। নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, এটি হবে স্থানীয় সাংসদ পানিস্পদ প্রতিমন্ত্রীর বড় অর্জন।

বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর খালগুলো খননের নামে আগে অনেক তামাশা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ হিসেবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। তার প্রত্যক্ষ তদারকিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পের অর্থের নয়-ছয় হবে না। শিবলু বলেন, খালের দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গেলে রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি, আমলাসহ নানা সেক্টর থেকে বাধা আসবে। এই বাধা কাটিয়ে উঠতে গণশুনানী করা প্রয়োজন হবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, নগরীর খালগুলোর পরিস্থিতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগী হন। পরে পানিসম্পদ মন্ত্রাণালয়ের সচিব সরজমিনে পরিদর্শন করেন। আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হবে বলে জেলা প্রশাসক আশাবাদ প্রকাশ করেন।

শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১ , ৩১ আশ্বিন ১৪২৮ ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বরিশাল নগরীর ৭ খাল সংস্কারে ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

বরিশাল নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ২২টি খাল। এই ২২টি খালই বরিশাল নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশাপাশি এক সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রেখেছিল। অথচ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশিরভাগ খালই এখন নর্দমায় পরিণত হয়েছে। গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খননের নামে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন বিপুল অর্থ ব্যয়ে লোক দেখানো নানা আয়োজন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিছুদিন পর খালের রূপ নর্দমায় ফিরে গেছে। অনেক খাল এখন নগরীর সৌন্দর্যহানির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই খালগুলোতে নতুন করে প্রবাহ ফেরাতে পদক্ষেপ নিয়েছে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরীর সাতটি খালের ১৯ কিলোমিটার খনন ও সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্য পাউবোর ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাউবোর ‘৬৪ জেলা নদী-খাল খনন প্রকল্পে’র আওতায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

বরিশাল পাউবোর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল মহানগরসহ সদর আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের আগ্রহ ও উদ্যোগে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। গত দুটি মৌসুমে অস্বাভাবিক জোয়ারে খাল দিয়ে কীর্তনখোলার পানি প্রবেশ করে নগরী প্লাবিত হলে প্রতিমন্ত্রী খালের গভীরতা বৃদ্ধির তাগিদ দেন। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে খাল খনন করে গভীরতা বৃদ্ধি করা হবে যাতে জোয়ারের পানি উপচে নগরীর মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে এবং পুনরায় নৌ চলাচল শুরু হয়।

সূত্র জানিয়েছে ১৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রশাসনিক সব ধাপ শেষে এখন পরিকল্পনা কমিশনের রয়েছে। অনুমোদনের জন্য একনেকের আগামী যে কোন সভায় উপস্থাপন করা হবে। একনেকে অনুমোদিত হলে এ বছরের মধ্যে খাল খনন ও সৌন্দর্যকরণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে পাউবো সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পাউবো সূত্র থেকে জানা যায়, প্রকল্পভুক্ত খালগুলো হলো যথাক্রমে সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল, ভাটার খাল, জেল খাল, আমানতগঞ্জ খাল, পলাশপুর খাল এবং রূপাতলী খাল। এই প্রত্যেকটি খালের উৎস হচ্ছে নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত কীর্তনখোলা নদী। সাতটি খালে মোট ১৯ কিলোমিটার খনন করা হবে। স্থানভেদে চার-পাঁচ কিলোমিটার খনন করার পর খালের দুই তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। সাগরদী খাল খনন করা হবে ৯ কিলোমিটার এবং জেলখাল দুই কিলোমিটার প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরিশাল সফরকালে সাংবাদিকদের বলেন, সাতটি খাল খনন প্রকল্প খুব শীঘ্রই একনেকে অনুমোদিত হবে। আশা করি, এ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। পাউবোর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস জানান, নগরীর সাতটি খাল সংস্কারে ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রতিমন্ত্রী ও সচিব জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাবে।

২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার বলেন, তার ওয়ার্ডের সাগরদী খাল নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বড় খাল। বিভিন্ন সময়ে লোক দেখানো খালসংস্কার হলেও মানুষের কোন কল্যাণে আসেনি। নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, এটি হবে স্থানীয় সাংসদ পানিস্পদ প্রতিমন্ত্রীর বড় অর্জন।

বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর খালগুলো খননের নামে আগে অনেক তামাশা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ হিসেবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। তার প্রত্যক্ষ তদারকিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পের অর্থের নয়-ছয় হবে না। শিবলু বলেন, খালের দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গেলে রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি, আমলাসহ নানা সেক্টর থেকে বাধা আসবে। এই বাধা কাটিয়ে উঠতে গণশুনানী করা প্রয়োজন হবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, নগরীর খালগুলোর পরিস্থিতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগী হন। পরে পানিসম্পদ মন্ত্রাণালয়ের সচিব সরজমিনে পরিদর্শন করেন। আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হবে বলে জেলা প্রশাসক আশাবাদ প্রকাশ করেন।