জেরার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন খোদ ওসি মোয়াজ্জেম

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে থানায় জেরা করার দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে সেই ভিডিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াননি বলে দাবি করেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। গতকাল পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে থানায় জেরা করে ওই দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনেই ভিডিও ধারণ করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে তার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতোমধ্যে পিবিআই আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম থানায় নুসরাতের ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছেন। তবে, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াননি বলেও দাবি করেছেন। আমরা তদন্তে ভিডিও ধারণ ও তাকে জেরা করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছি। এজাহারে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার আংশিক সত্যতাও পেয়েছি। সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম নিজেই তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার পর সজল নামে এক ব্যক্তির কাছে দিয়েছিলেন। তার মাধ্যমেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াতে পারে। মোয়াজ্জেম হোসেনের মাধ্যমে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

প্রসঙ্গত, নুসরাত হত্যার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় অভিযোগে বলা হয়, আইনবহির্ভূতভাবে ভুক্তভোগী নুসরাতের বক্তব্য রেকর্ড করেন পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম। তিনি খাসকামরায় নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা নেয়ার আবেদন করা হয়। মামলাটির তদন্তে দায়িত্ব পায় পিআইবি। প্রায় দেড়মাস পর তদন্ত করে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।

এদিকে, নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিট চলতি মাসে দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রতিবেদন পেয়েছি। ওই প্রতিবেদনে নুসরাতের পোশাকে কেরোসিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা মামলার তদন্তে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।’

উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম শ্রেণির (এইচএসসি সমমান) আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে যান নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে ৪-৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ছাদে ডেকে নিয়ে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। এরপর চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান।

সোমবার, ২৭ মে ২০১৯ , ১৩ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২১ রমজান ১৪৪০

নুসরাত হত্যা : প্রতিবেদন জমা

জেরার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন খোদ ওসি মোয়াজ্জেম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে থানায় জেরা করার দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে সেই ভিডিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াননি বলে দাবি করেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। গতকাল পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে থানায় জেরা করে ওই দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনেই ভিডিও ধারণ করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে তার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতোমধ্যে পিবিআই আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম থানায় নুসরাতের ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছেন। তবে, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াননি বলেও দাবি করেছেন। আমরা তদন্তে ভিডিও ধারণ ও তাকে জেরা করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছি। এজাহারে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার আংশিক সত্যতাও পেয়েছি। সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম নিজেই তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার পর সজল নামে এক ব্যক্তির কাছে দিয়েছিলেন। তার মাধ্যমেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াতে পারে। মোয়াজ্জেম হোসেনের মাধ্যমে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

প্রসঙ্গত, নুসরাত হত্যার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় অভিযোগে বলা হয়, আইনবহির্ভূতভাবে ভুক্তভোগী নুসরাতের বক্তব্য রেকর্ড করেন পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম। তিনি খাসকামরায় নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা নেয়ার আবেদন করা হয়। মামলাটির তদন্তে দায়িত্ব পায় পিআইবি। প্রায় দেড়মাস পর তদন্ত করে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।

এদিকে, নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিট চলতি মাসে দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রতিবেদন পেয়েছি। ওই প্রতিবেদনে নুসরাতের পোশাকে কেরোসিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা মামলার তদন্তে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।’

উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম শ্রেণির (এইচএসসি সমমান) আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে যান নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে ৪-৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ছাদে ডেকে নিয়ে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। এরপর চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান।