৭ বছরেও তৃতীয় বর্ষ শেষ করতে পারেননি ডাকসুর এজিএস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সাত বছরেও তৃতীয় বর্ষের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষের প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন।

জানা গেছে, ২৭ মে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ১২৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ১২১ জন পাস করেন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রকাশিত ফলে ঢাবির স্যার এএফ রহমান হলের আইন বিভাগের ৪ শিক্ষার্থী পাস করলেও অকৃতকার্য হওয়ার কারণে একই হলের সাদ্দাম হোসেনের নাম নেই।

সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় বর্ষের মোট ৬টি কোর্সের পরীক্ষাতেই সাদ্দাম হোসেন অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২০১১-১২ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের প্রথম বর্ষের সমাপনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় প্রথম বর্ষ পার করতেই তার ৩ বছর সময় লেগে যায়। চতুর্থবারের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথম বর্ষ পার করেন। ২০১৬ সালের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষাতেও পাস করতে পারেননি। এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৮ সালে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেন। কিন্তু চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। ফলে গত ৭ বছরেও তৃতীয় বর্ষ পার হতে পারেননি এই ছাত্রনেতা।

ঢাবির নিয়ম অনুযায়ী ৪ বছরের অনার্স পাস করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৬ বছর সময় পান। আর এক বছরের নিয়মিত মাস্টার্স পাস করার জন্য সময় পাওয়া যায় এক বছর। ছয় বছরের মধ্যে কেউ অনার্স পাস করতে না পারলে তাকে বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন বরাবর আবেদন করতে হয়। এরপর বিষয়টি ডিনস কমিটির সভায় ওঠে। সেখানে বিষয়টি পাস হলে ডিনস কমিটি চাইলে তাকে অনার্স পাস করার জন্য সর্বোচ্চ আরও তিন বছর ও মাস্টার্সের জন্য আরও এক বছর সময় দিতে পারেন। আবেদন মঞ্জুর হলে সর্বোচ্চ ৯ বছর পাওয়া যায় অনার্স শেষ করার জন্য। কিন্তু তৃতীয় বর্ষ পার করার আগে ইতোমধ্যেই ৭ বছর পার হয়ে গেছে সাদ্দামের। ওই অনুযায়ী অনার্স শেষ করার জন্য তিনি আর মাত্র দুই বছর সময় পাবেন।

এ বিষয়ে ঢাবির একটি অনুষদের ডিন বলেন, কেউ যদি ৬ বছরের মধ্যে অনার্স পাস করতে না পারে, তাহলে তাকে বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের কাছে আবেদন করতে হয়। এরপর ডিনস কমিটি অনুমোদন দিলে সে আরও তিন বছর সময় পায় অনার্স শেষ করার জন্য। আর আবেদনের ভিত্তিতে মাস্টার্স শেষ করার জন্য আরও এক বছর সময় বেশি পায়। তবে তা নির্ভর করে ডিনস কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির আইন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাইমা হক বলেন, যদি কোন শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাস করতে না পারে, তাহলে তাকে একটি আবেদন করতে হয়। এরপর এটি বিভাগের একাডেমিক কমিটির (এসি) সভায় ওঠে। ওই আবেদনপত্র আমরা ডিনস কমিটিতে পাঠিয়ে দিই। পরে ডিনস কমিটি চাইলে তাকে আরও সময় দিতে পারে। তবে তাকে কতটুকু সময় দেয়া হবে বা আদৌ সময় বাড়াবে কিনা, তা ডিনস কমিটির এখতিয়ার।

ছয় বছরের মধ্যে কোন শিক্ষার্থীকে অনার্স শেষ করতে বলা হয়েছে। তা না হলে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে হয়। তবে ৬ বছর যখন শেষ হয়, তখন (গত বছর) আলোচিত সাদ্দাম হোসেন তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনার্স শেষ করতে না পারায় তিনি আবেদন করেছেন কিনা জানতে চাইলে ড. নাইমা হক বলেন, এটি আমার এখন মনে নেই। রেকর্ড দেখে বলতে হবে। যেহেতু সে ক্লাস করছে, সেহেতু হয়তো আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য সাদ্দাম হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি। তবে অন্য একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এটি ব্যক্তিগত ও একাডেমিক। অবশ্য আমার ইমপ্রুভ দেয়ার সুযোগ আছে।

শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯ , ১৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৫ রমজান ১৪৪০

৭ বছরেও তৃতীয় বর্ষ শেষ করতে পারেননি ডাকসুর এজিএস

প্রতিনিধি, ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সাত বছরেও তৃতীয় বর্ষের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষের প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন।

জানা গেছে, ২৭ মে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ১২৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ১২১ জন পাস করেন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রকাশিত ফলে ঢাবির স্যার এএফ রহমান হলের আইন বিভাগের ৪ শিক্ষার্থী পাস করলেও অকৃতকার্য হওয়ার কারণে একই হলের সাদ্দাম হোসেনের নাম নেই।

সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় বর্ষের মোট ৬টি কোর্সের পরীক্ষাতেই সাদ্দাম হোসেন অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২০১১-১২ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের প্রথম বর্ষের সমাপনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় প্রথম বর্ষ পার করতেই তার ৩ বছর সময় লেগে যায়। চতুর্থবারের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথম বর্ষ পার করেন। ২০১৬ সালের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষাতেও পাস করতে পারেননি। এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৮ সালে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেন। কিন্তু চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। ফলে গত ৭ বছরেও তৃতীয় বর্ষ পার হতে পারেননি এই ছাত্রনেতা।

ঢাবির নিয়ম অনুযায়ী ৪ বছরের অনার্স পাস করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৬ বছর সময় পান। আর এক বছরের নিয়মিত মাস্টার্স পাস করার জন্য সময় পাওয়া যায় এক বছর। ছয় বছরের মধ্যে কেউ অনার্স পাস করতে না পারলে তাকে বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন বরাবর আবেদন করতে হয়। এরপর বিষয়টি ডিনস কমিটির সভায় ওঠে। সেখানে বিষয়টি পাস হলে ডিনস কমিটি চাইলে তাকে অনার্স পাস করার জন্য সর্বোচ্চ আরও তিন বছর ও মাস্টার্সের জন্য আরও এক বছর সময় দিতে পারেন। আবেদন মঞ্জুর হলে সর্বোচ্চ ৯ বছর পাওয়া যায় অনার্স শেষ করার জন্য। কিন্তু তৃতীয় বর্ষ পার করার আগে ইতোমধ্যেই ৭ বছর পার হয়ে গেছে সাদ্দামের। ওই অনুযায়ী অনার্স শেষ করার জন্য তিনি আর মাত্র দুই বছর সময় পাবেন।

এ বিষয়ে ঢাবির একটি অনুষদের ডিন বলেন, কেউ যদি ৬ বছরের মধ্যে অনার্স পাস করতে না পারে, তাহলে তাকে বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের কাছে আবেদন করতে হয়। এরপর ডিনস কমিটি অনুমোদন দিলে সে আরও তিন বছর সময় পায় অনার্স শেষ করার জন্য। আর আবেদনের ভিত্তিতে মাস্টার্স শেষ করার জন্য আরও এক বছর সময় বেশি পায়। তবে তা নির্ভর করে ডিনস কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির আইন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাইমা হক বলেন, যদি কোন শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাস করতে না পারে, তাহলে তাকে একটি আবেদন করতে হয়। এরপর এটি বিভাগের একাডেমিক কমিটির (এসি) সভায় ওঠে। ওই আবেদনপত্র আমরা ডিনস কমিটিতে পাঠিয়ে দিই। পরে ডিনস কমিটি চাইলে তাকে আরও সময় দিতে পারে। তবে তাকে কতটুকু সময় দেয়া হবে বা আদৌ সময় বাড়াবে কিনা, তা ডিনস কমিটির এখতিয়ার।

ছয় বছরের মধ্যে কোন শিক্ষার্থীকে অনার্স শেষ করতে বলা হয়েছে। তা না হলে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে হয়। তবে ৬ বছর যখন শেষ হয়, তখন (গত বছর) আলোচিত সাদ্দাম হোসেন তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনার্স শেষ করতে না পারায় তিনি আবেদন করেছেন কিনা জানতে চাইলে ড. নাইমা হক বলেন, এটি আমার এখন মনে নেই। রেকর্ড দেখে বলতে হবে। যেহেতু সে ক্লাস করছে, সেহেতু হয়তো আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য সাদ্দাম হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি। তবে অন্য একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এটি ব্যক্তিগত ও একাডেমিক। অবশ্য আমার ইমপ্রুভ দেয়ার সুযোগ আছে।