খাল দখলে সংকটাপন্ন নৌপথ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক খালবিলীন হয়ে গেছে। অত্র উপজেলার কতিপয় খাল এখনও টিকে থাকলেও সেগুলো দখলের পায়তারা চলছে। অপরদিকে বিলীন হয়ে যাওয়া খালগুলো উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় ভূমিদস্যুরা গোপনে নামে- বেনামে দখল করে নিচ্ছে।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বহমান খালগুলো এক সময়ে ভরা যৌবন থাকলেও এখন আর সেই অবস্থায় নেই। উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে উৎপন্ন খালগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে খালের ভেতর জোয়ার-ভাটায় পানি আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে খালে স্রোত কমে যাবার কারণে এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এই সুযোগে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা খাল দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মচারী ও ভূমিগ্রাসীরা খালগুলোকে নাল জমিতে পরিনত করে নামে-বেনামে দখল করে নিচ্ছে। ভূমিদস্যুদের হাত থেকে বেহাত হয়ে যাওয়া খালগুলো পুনর্উদ্ধার করার জন্য উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। খালগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন স্থানে দেয়া বাঁধগুলো খুলে দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক খাল এখন যৌবন হারিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। নদী ও খালের সংযোগস্থল এবং উৎস মুখ ভরাট হয়ে যাবার কারণে নৌপথে চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দেখা দিয়েছে। খালে পানি না থাকার কারণে কোন নৌযানই চলাচল করতে পারে না। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য পণ্য বহনকারী নৌযানগুলোকে জোয়ারের পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফলে এলাকার ব্যবসায়ীরা পণ্য সামগ্রী নির্ধারিত সময়ে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করতে না পেরে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান খালগুলোর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ইকোসিস্টেমে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পরিবেশের এই বিরুপ প্রভাবে মাছের উৎপাদন কমে গেছে, সেচ কার্য ব্যাহত হওয়াসহ জীব বৈচিত্র বিলীন হচ্ছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো এক সময়ে নৌযোগাযোগের ও সেচ কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও এখন আর কোন মূল্য নেই। ফসলি জমিতে পলি মাটি বয়ে আনার জন্য খালের অবদান থাকলেও বর্তমানে সেই অবদান চিরদিনের জন্য স্থবির হয়ে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খালে প্রয়োজন ছাড়াই যত্রতত্র বাঁধ তৈরি এবং খাল দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অধিকাংশ খাল তাদের যৌবন হারিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে অনেক খাল ভরাট হয়ে যাবার কারনে নৌযানের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এক সময়ে নদী পথে দশমিনা উপজেলার সাথে জেলা সদর পটুয়াখালী, বাউফল ও গলাচিপা উপজেলার সাথে নৌপথই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। অত্র নৌপথে নৌকা, ট্রলারসহ ছোট-বড় নৌযান চলাচল করায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ছিল। নদী পথে পণ্য সামগ্রী পরিবহনে খরচ কম থাকায় এই পথেই ব্যবসায়ীরা পন্য আনা-নেয়া করত। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে খালগুলো ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় এখন আর কেউ নৌপথে মালামাল পরিবহন করতে চায় না।

এক সময়ে অত্র উপজেলার মধ্যে প্রবাহমান খাল দিয়ে ৭টি ইউনিয়ন ছাড়াও প্রধান প্রধান হাট-বাজার এবং পার্শ্ববর্তী বাউফল ও গলাচিপা উপজেলায় পণ্য সামগ্রী আনা-নেয়া করা হতো। এই পথে মালামাল আনা-নেয়ায় খরচ এবং সময় কম লাগত।

বর্তমানে খালগুলোতে নাব্যতা কমে যাওয়ায় নৌযান চলাচল করতে পারে না। ফলে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মালামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানুষের লোভের কারণে দুর্বল স্রোতের খালগুলো দখল, গতিপথের পরিবর্তনের পাশাপাশি নাব্যতা হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার মানচিত্র থেকে অনেক খালের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। খাল ভরাটের এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবং খাল খননের ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে খালগুলো হারিয়ে যাবে।

image

দশমিনা (পটুয়াখালী) : উপজেলা সদর খালটি এভাবেই দখল হওয়ায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়া নৌপথ -সংবাদ

আরও খবর
শেরপুরে প্রতিপক্ষের গুলিতে দুই ছাত্রলীগ কর্মী আহত
মির্জাপুরে গণপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির পরিচয় মেলেনি আড়াই মাসেও
এদেশের মানবসম্পদে অর্থনীতির ভিত দৃঢ় করা সম্ভব
চাকরির কথা বলে ওমানে যৌনদাস হিসেবে বিক্রি : আদালতে মামলা
বাগেরহাটে পুলিশি বাঁধায় যুবদলের সমাবেশ পন্ড
‘সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের তাগিদ’
ঝিনাইগাতী সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
মাছের পেটায় সচ্ছল হাজারো নারী শ্রমিক
শিবচরে ২ বাড়িতে ডাকাতি : বন্দুক লুট, আহত ১
শিবালয়ে শ্বশুর বাড়িতে জামাতার রহস্য মৃত্যু
কেশবপুর পৌরসভায় ৩ বছরে উন্নয়ন ব্যয় সাড়ে ৩৫ কোটি
সৈয়দপুরে বাল্যবিয়ে বর দন্ডিত
কটিয়াদীতে মেছো বাঘ উদ্ধার
চট্টগ্রামে দুজনের মৃত্যু
ধামরাইয়ে ৪শ’বর্ষী রথযাত্রা উৎসব ২৬ দিনব্যাপী
সোনারগাঁয়ে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ
বাঁশখালীতে ছিনতাইকারী মাদক বিক্রেতা ধৃত

সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪০

খাল দখলে সংকটাপন্ন নৌপথ

আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল, দশমিনা (পটুয়াখালী)

image

দশমিনা (পটুয়াখালী) : উপজেলা সদর খালটি এভাবেই দখল হওয়ায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়া নৌপথ -সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক খালবিলীন হয়ে গেছে। অত্র উপজেলার কতিপয় খাল এখনও টিকে থাকলেও সেগুলো দখলের পায়তারা চলছে। অপরদিকে বিলীন হয়ে যাওয়া খালগুলো উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় ভূমিদস্যুরা গোপনে নামে- বেনামে দখল করে নিচ্ছে।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বহমান খালগুলো এক সময়ে ভরা যৌবন থাকলেও এখন আর সেই অবস্থায় নেই। উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে উৎপন্ন খালগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে খালের ভেতর জোয়ার-ভাটায় পানি আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে খালে স্রোত কমে যাবার কারণে এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এই সুযোগে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা খাল দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মচারী ও ভূমিগ্রাসীরা খালগুলোকে নাল জমিতে পরিনত করে নামে-বেনামে দখল করে নিচ্ছে। ভূমিদস্যুদের হাত থেকে বেহাত হয়ে যাওয়া খালগুলো পুনর্উদ্ধার করার জন্য উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। খালগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন স্থানে দেয়া বাঁধগুলো খুলে দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক খাল এখন যৌবন হারিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। নদী ও খালের সংযোগস্থল এবং উৎস মুখ ভরাট হয়ে যাবার কারণে নৌপথে চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দেখা দিয়েছে। খালে পানি না থাকার কারণে কোন নৌযানই চলাচল করতে পারে না। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য পণ্য বহনকারী নৌযানগুলোকে জোয়ারের পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফলে এলাকার ব্যবসায়ীরা পণ্য সামগ্রী নির্ধারিত সময়ে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করতে না পেরে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান খালগুলোর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ইকোসিস্টেমে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পরিবেশের এই বিরুপ প্রভাবে মাছের উৎপাদন কমে গেছে, সেচ কার্য ব্যাহত হওয়াসহ জীব বৈচিত্র বিলীন হচ্ছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো এক সময়ে নৌযোগাযোগের ও সেচ কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও এখন আর কোন মূল্য নেই। ফসলি জমিতে পলি মাটি বয়ে আনার জন্য খালের অবদান থাকলেও বর্তমানে সেই অবদান চিরদিনের জন্য স্থবির হয়ে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খালে প্রয়োজন ছাড়াই যত্রতত্র বাঁধ তৈরি এবং খাল দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অধিকাংশ খাল তাদের যৌবন হারিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে অনেক খাল ভরাট হয়ে যাবার কারনে নৌযানের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এক সময়ে নদী পথে দশমিনা উপজেলার সাথে জেলা সদর পটুয়াখালী, বাউফল ও গলাচিপা উপজেলার সাথে নৌপথই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। অত্র নৌপথে নৌকা, ট্রলারসহ ছোট-বড় নৌযান চলাচল করায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ছিল। নদী পথে পণ্য সামগ্রী পরিবহনে খরচ কম থাকায় এই পথেই ব্যবসায়ীরা পন্য আনা-নেয়া করত। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে খালগুলো ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় এখন আর কেউ নৌপথে মালামাল পরিবহন করতে চায় না।

এক সময়ে অত্র উপজেলার মধ্যে প্রবাহমান খাল দিয়ে ৭টি ইউনিয়ন ছাড়াও প্রধান প্রধান হাট-বাজার এবং পার্শ্ববর্তী বাউফল ও গলাচিপা উপজেলায় পণ্য সামগ্রী আনা-নেয়া করা হতো। এই পথে মালামাল আনা-নেয়ায় খরচ এবং সময় কম লাগত।

বর্তমানে খালগুলোতে নাব্যতা কমে যাওয়ায় নৌযান চলাচল করতে পারে না। ফলে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মালামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানুষের লোভের কারণে দুর্বল স্রোতের খালগুলো দখল, গতিপথের পরিবর্তনের পাশাপাশি নাব্যতা হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার মানচিত্র থেকে অনেক খালের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। খাল ভরাটের এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবং খাল খননের ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে খালগুলো হারিয়ে যাবে।