ঢাকা সিটি নির্বাচন

ইভিএম নিয়ে শঙ্কায় বিএনপি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের বিষয়টি এখনও নেতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশপাশি মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ইভিএমে ভোট কারচুপির আশঙ্কা করছেন। তাদের অভিযোগ, এই মেশিনের প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ভোটের ফল পরিবর্তন অসম্ভব কিছু নয়। তাছাড়া বিএনপির দাবি, জনগণ এখনও ইভিএম ব্যবহারে প্রস্তুত নয়। এদিকে বিএনপি নেতাদের পাশপাশি তাদের সমমনা ও শরিক দলের নেতারা এবং বেশ কয়েকজন নির্বাচনী বিশ্লেষকও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

এদিকে সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ইলেকশন কমিশন (ইসি) ভোটে ইভিএম ব্যবহার করছে। আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে বিএনপি বরাবরই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ডিজিটাল যুগেও তারা এনালগ থাকতে চায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দাবি, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বেশকিছু কর্মসূচি নেয়া হয়েছে; যার মাধ্যমে ইভিএম ব্যবহারে ভোটাররা স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন, তাদের আস্থাও বাড়বে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ইসির। ইসি চাইলে ম্যানুয়ালি ভোট করতে পারে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোন আপত্তি নেই। সরকার ইসি’র ওপর হস্তক্ষেপ করবে না। তবে আওয়ামী লীগ নীতিগতভাবে ইভিএমের পক্ষে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিশ্ব এখন ডিজিটাল। আর বিএনপি এনালগে পড়ে থাকতে চায়। এর আগে সাবমেরিন ক্যাবলের বিষয়েও তারা একই মনোভাব দেখিয়েছিল। ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ইভিএমে ভোট হচ্ছে। তাদেরতো কোন সমস্যা হচ্ছে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও ইভিএমের পক্ষে আছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, সারা বিশ্বের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ইভিএম বিতর্কিত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রে সেই ইভিএম ব্যবহারের একতরফা ব্যবস্থা নিয়ে ডিজিটাল কারচুপির এক নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ভোটাররা ইভিএম প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত নন এবং সেভাবে যথাযথ প্রশিক্ষণও পাননি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএম ভোটারবান্ধব পদ্ধতি নয়। ভোটাররা কাগুজে ব্যালট ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা প্রযুক্তির বিপক্ষে নই, আমরা এই ‘প্রসেস’ এর বিরোধিতা করছি। নির্বাচন কমিশন যদি একতরফাভাবে ইভিএম ব্যবহার করতেই চায়, তাহলে অনেক আগেই উচিত ছিল, জনগণকে প্রশিক্ষণ দেয়ার, তাদের সচেতন করার। কিন্তু তাদের সে ব্যবস্থা নেয়ার ইচ্ছা নেই। তাছাড়া, ইভিএম ব্যবহারে জনগণ এখনও প্রস্তুত নয়।

দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ইভিএম সম্পর্কে আমার সম্পূর্ণ ধারণা রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে নিভৃতে ভোট কারচুপি করা সম্ভব। চাইলে এই মেশিনের প্রোগ্রামিং পরিবর্তন করে ভোটের ফলাফলও পরিবর্তন করা সম্ভব। তাই ইভিএম নিয়ে আমাদের আস্থা রাখার কোন প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, ফলাফল পাল্টে যাবে নিশ্চুপে, কারও কোন কিছু বোঝার ক্ষমতা থাকবে না।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইভিএম হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি, যেখানেই ভোট দেয়া হোক, ভোট পড়ে নৌকায়। তার দাবি, এমন ঘটনা ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রদর্শনীতে সাংবাদিকরাও দেখেছেন। তিনি বলেন, আঙুলের ছাপ যদি কোন কারণে না মিলে, তাহলে নির্বাচন পরিচালনায় যিনি আছেন, তিনি ২৫ শতাংশ ভোট দিয়ে দিতে পারবেন। যন্ত্রতো মানুষ পরিচালনা করে। আর আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করতে পারি না।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইভিএমের সরাসরি ভুক্তভোগী আমি। গত নির্বাচনে আমার ঢাকা-৬ আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। সেখানে এক জায়গায় দেখেছি, প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেন ঠিকই, কিন্তু বুথের ভেতরে ভোটারের যাওয়ার সুযোগ থাকে না। আওয়ামী লীগের লোকজনই ভোট দিয়ে দেয়। আমাদের আশঙ্কা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল তারা ঠিক করে রেখেছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, বিশ্বের ৩১টি দেশ ইভিএমে ভোট নেয়ার উদ্যোগ নিলেও এই পদ্ধতি টিকে আছে মাত্র চারটি দেশে। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অতি আগ্রহ দেখেই বোঝা যায়, তারা কেন এটা চাচ্ছে। আমেরিকা, নরওয়ে, জার্মানি, আয়ারল্যান্ডের মতো দেশ এটা থেকে সরে এসেছে। কারণ ভোটার বুঝতে পারেন না, তিনি ঠিক জায়গায় ভোট দিতে পেরেছেন কিনা। তিনি বলেন, কাগজের ব্যবস্থা না থাকায় ইভিএমের ভোট যাচাইয়ের সুযোগ নেই, পুনর্গণনারও সুযোগ নেই।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক এবং সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইভিএম ব্যবহারের বিষযে সংবাদকে বলেন, ইভিএম ত্রুটিযুক্ত পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ বাতিল করে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার মস্ত বড় ভুল হবে। তারপরও নির্বাচন কমিশন কেন এ পদ্ধতিতে ঝুঁকছে, তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি নির্বাচন) নির্বাচন নির্দলীয় হলে, অংশগ্রহণ আরও উৎসবমুখর হত। এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন আরও কয়েকজন নির্বাচনী বিশ্লেষক।

সব কেন্দ্রে ইভিএম এবারই প্রথম : আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোট হবে। দুই সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার এবারই প্রথম। ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন অর্ধকোটিরও বেশি ভোটার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটিতে ভোটগ্রহণে ২৮ হাজার ৮৬৮টি ইভিএমের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ৬৯২টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৬টি মেশিন থাকবে। আর ভোট গ্রহণ, প্রশিক্ষণ ও ডেমনস্ট্রেশন মিলিয়ে ইভিএমের প্রয়োজন হবে ৩৪ হাজার ৮৬৯টি।

ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ইসির কর্মসূচি : ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গণমাধ্যম, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা হল ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শন করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জনবহুল স্থান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লিফলেট বিতরণ করা হবে। শুধু তাই নয়, ইভিএমের ওপর ৪৫ হাজার ৭৭০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং) প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইসি। ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে দু’জন করে সার্জেন্ট বা করপোরাল বা ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৫২ জন জেসিও ও ২৭ জন অফিসারও মাঠে থাকবেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পরিসংখ্যান : দুই সিটিতে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের মোট ১৮৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন ৭৫৮ জন। উত্তরে মেয়র পদে ৬ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ১৮টি পদে ৭৭ জন ও সাধারণ ৫৪টি ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন অর্থাৎ ৩৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দক্ষিণে মেয়র পদে সাতজন, ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮২ জন ও ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৩৫ জন মোট ৪২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। দক্ষিণে ইতোমধ্যে ৪ জন (২ জন সাধারণ, ২ জন সংরক্ষিত) প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০ , ৩ মাঘ ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ঢাকা সিটি নির্বাচন

ইভিএম নিয়ে শঙ্কায় বিএনপি

ফয়েজ আহমেদ তুষার ও ইমদাদুল হাসান রাতুল

image

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের বিষয়টি এখনও নেতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশপাশি মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ইভিএমে ভোট কারচুপির আশঙ্কা করছেন। তাদের অভিযোগ, এই মেশিনের প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ভোটের ফল পরিবর্তন অসম্ভব কিছু নয়। তাছাড়া বিএনপির দাবি, জনগণ এখনও ইভিএম ব্যবহারে প্রস্তুত নয়। এদিকে বিএনপি নেতাদের পাশপাশি তাদের সমমনা ও শরিক দলের নেতারা এবং বেশ কয়েকজন নির্বাচনী বিশ্লেষকও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

এদিকে সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ইলেকশন কমিশন (ইসি) ভোটে ইভিএম ব্যবহার করছে। আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে বিএনপি বরাবরই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ডিজিটাল যুগেও তারা এনালগ থাকতে চায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দাবি, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বেশকিছু কর্মসূচি নেয়া হয়েছে; যার মাধ্যমে ইভিএম ব্যবহারে ভোটাররা স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন, তাদের আস্থাও বাড়বে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ইসির। ইসি চাইলে ম্যানুয়ালি ভোট করতে পারে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোন আপত্তি নেই। সরকার ইসি’র ওপর হস্তক্ষেপ করবে না। তবে আওয়ামী লীগ নীতিগতভাবে ইভিএমের পক্ষে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিশ্ব এখন ডিজিটাল। আর বিএনপি এনালগে পড়ে থাকতে চায়। এর আগে সাবমেরিন ক্যাবলের বিষয়েও তারা একই মনোভাব দেখিয়েছিল। ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ইভিএমে ভোট হচ্ছে। তাদেরতো কোন সমস্যা হচ্ছে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও ইভিএমের পক্ষে আছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, সারা বিশ্বের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ইভিএম বিতর্কিত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রে সেই ইভিএম ব্যবহারের একতরফা ব্যবস্থা নিয়ে ডিজিটাল কারচুপির এক নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ভোটাররা ইভিএম প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত নন এবং সেভাবে যথাযথ প্রশিক্ষণও পাননি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএম ভোটারবান্ধব পদ্ধতি নয়। ভোটাররা কাগুজে ব্যালট ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা প্রযুক্তির বিপক্ষে নই, আমরা এই ‘প্রসেস’ এর বিরোধিতা করছি। নির্বাচন কমিশন যদি একতরফাভাবে ইভিএম ব্যবহার করতেই চায়, তাহলে অনেক আগেই উচিত ছিল, জনগণকে প্রশিক্ষণ দেয়ার, তাদের সচেতন করার। কিন্তু তাদের সে ব্যবস্থা নেয়ার ইচ্ছা নেই। তাছাড়া, ইভিএম ব্যবহারে জনগণ এখনও প্রস্তুত নয়।

দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ইভিএম সম্পর্কে আমার সম্পূর্ণ ধারণা রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে নিভৃতে ভোট কারচুপি করা সম্ভব। চাইলে এই মেশিনের প্রোগ্রামিং পরিবর্তন করে ভোটের ফলাফলও পরিবর্তন করা সম্ভব। তাই ইভিএম নিয়ে আমাদের আস্থা রাখার কোন প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, ফলাফল পাল্টে যাবে নিশ্চুপে, কারও কোন কিছু বোঝার ক্ষমতা থাকবে না।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইভিএম হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি, যেখানেই ভোট দেয়া হোক, ভোট পড়ে নৌকায়। তার দাবি, এমন ঘটনা ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রদর্শনীতে সাংবাদিকরাও দেখেছেন। তিনি বলেন, আঙুলের ছাপ যদি কোন কারণে না মিলে, তাহলে নির্বাচন পরিচালনায় যিনি আছেন, তিনি ২৫ শতাংশ ভোট দিয়ে দিতে পারবেন। যন্ত্রতো মানুষ পরিচালনা করে। আর আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করতে পারি না।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইভিএমের সরাসরি ভুক্তভোগী আমি। গত নির্বাচনে আমার ঢাকা-৬ আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। সেখানে এক জায়গায় দেখেছি, প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেন ঠিকই, কিন্তু বুথের ভেতরে ভোটারের যাওয়ার সুযোগ থাকে না। আওয়ামী লীগের লোকজনই ভোট দিয়ে দেয়। আমাদের আশঙ্কা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল তারা ঠিক করে রেখেছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, বিশ্বের ৩১টি দেশ ইভিএমে ভোট নেয়ার উদ্যোগ নিলেও এই পদ্ধতি টিকে আছে মাত্র চারটি দেশে। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অতি আগ্রহ দেখেই বোঝা যায়, তারা কেন এটা চাচ্ছে। আমেরিকা, নরওয়ে, জার্মানি, আয়ারল্যান্ডের মতো দেশ এটা থেকে সরে এসেছে। কারণ ভোটার বুঝতে পারেন না, তিনি ঠিক জায়গায় ভোট দিতে পেরেছেন কিনা। তিনি বলেন, কাগজের ব্যবস্থা না থাকায় ইভিএমের ভোট যাচাইয়ের সুযোগ নেই, পুনর্গণনারও সুযোগ নেই।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক এবং সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইভিএম ব্যবহারের বিষযে সংবাদকে বলেন, ইভিএম ত্রুটিযুক্ত পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ বাতিল করে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার মস্ত বড় ভুল হবে। তারপরও নির্বাচন কমিশন কেন এ পদ্ধতিতে ঝুঁকছে, তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি নির্বাচন) নির্বাচন নির্দলীয় হলে, অংশগ্রহণ আরও উৎসবমুখর হত। এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন আরও কয়েকজন নির্বাচনী বিশ্লেষক।

সব কেন্দ্রে ইভিএম এবারই প্রথম : আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোট হবে। দুই সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার এবারই প্রথম। ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন অর্ধকোটিরও বেশি ভোটার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটিতে ভোটগ্রহণে ২৮ হাজার ৮৬৮টি ইভিএমের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ৬৯২টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৬টি মেশিন থাকবে। আর ভোট গ্রহণ, প্রশিক্ষণ ও ডেমনস্ট্রেশন মিলিয়ে ইভিএমের প্রয়োজন হবে ৩৪ হাজার ৮৬৯টি।

ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ইসির কর্মসূচি : ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গণমাধ্যম, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা হল ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শন করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জনবহুল স্থান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লিফলেট বিতরণ করা হবে। শুধু তাই নয়, ইভিএমের ওপর ৪৫ হাজার ৭৭০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং) প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইসি। ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে দু’জন করে সার্জেন্ট বা করপোরাল বা ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৫২ জন জেসিও ও ২৭ জন অফিসারও মাঠে থাকবেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পরিসংখ্যান : দুই সিটিতে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের মোট ১৮৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন ৭৫৮ জন। উত্তরে মেয়র পদে ৬ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ১৮টি পদে ৭৭ জন ও সাধারণ ৫৪টি ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন অর্থাৎ ৩৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দক্ষিণে মেয়র পদে সাতজন, ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮২ জন ও ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৩৫ জন মোট ৪২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। দক্ষিণে ইতোমধ্যে ৪ জন (২ জন সাধারণ, ২ জন সংরক্ষিত) প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।