এসএসসি পরীক্ষা শুরু

ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহসহ নানা জটিলতা

পাঁচ শিক্ষকের কারাদণ্ড

ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়েই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তরপত্র সরবরাহ করায় পাঁচ শিক্ষককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভুল প্রশ্ন, বিশেষ করে ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলায়। প্রথম দিন কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল পাঁচ হাজার ৪৪৭ পরীক্ষার্থী।

প্রথম দিন সকাল ১০টায় এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র ও সহজ বাংলা প্রথম পত্র, মাদ্রাসার দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং কারিগরি বোর্ডে ভোকেশনালে বাংলা-২ (১৯২১) (সৃজনশীল) (নতুন সিলেবাস/পুরাতন সিলেবাস) এবং বাংলা-২ (১৭২১) (সৃজনশীল) (নতুন সিলেবাস/পুরাতন সিলেবাস) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সকালে রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আগামীতে আরও আগে প্রবেশপত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।’ পাবলিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে এমন কোন কর্মসূচি দেয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বিরত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র পায়নি জানানোর পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোন কোন প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আছে। তারা ‘রেজিস্ট্রেশেন ফি’ জমা দিয়েছে কিন্তু তারপরে দেখা যায় ‘রেজিস্ট্রেশন’ ঠিকমত হয়নি, এ রকম অনেক ঘটনা ঘটে। এ বছর কতগুলো জিনিস নজরে এসেছে। আমরা এর প্রত্যেকটির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, আগামীতেও করব যেন এ ধরনের ঘটনা কোনভাবেই না ঘটে।’

প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যা করণীয় আমরা তার সর্বোচ্চটুকু করছি, আমরা সবারই সহযোগিতা চাই। যেন কেউ গুজব ছড়িয়েও কাউকে প্রতারিত করতে না পারে। সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন সংস্থা তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন এবং যথযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। আমরা আশা করছি কোন সমস্যা ছাড়াই সুচারুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।’

এদিকে রাজধানীর রামপুরা, গাজীপুর ও খুলনা থেকে পৃথক অভিযানে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রতারণা ও গুজব সৃষ্টির অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে র‌্যাব। গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-১-এর একটি দল তাদের আটক করে। আটকরা হলেন-গাজীপুর থেকে আবু বক্কর সিদ্দিক (২৬), খুলনা থেকে শাকিল মাহমুদ (২০) ও সাইমন ইসলাম (২০) এবং রাজধানীর রামপুরা থেকে আল মাহমুদ (১৮)।

ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষাসহ নানা অভিযোগ বিভিন্ন জেলায় :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে দাখিল পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র সরবরাহ করার দায়ে পাঁচ শিক্ষকের প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিমুল হায়দার এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, উপজেলার চরচারতলা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাজহারুল ইসলাম (৪২) একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম (৩৫), খোলাপাড়া ওমেদ আলী শাহ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো. মহিউদ্দিন (৩৮), তালশহর করিমিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক কবির হোসেন (৪০) ও সরাইল উপজেলার পানিশ্বর মাদেনিয়া গাউছিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার আব্বাস আলী (৫০)।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিমুল হায়দার জানান, পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইনের ১৯৮০ এর ধারা ৯ (ক) মোতাবেক প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ঘটনায় হল সুপার ও কেন্দ্র সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

খুলনা মহানগরীর পৃথক দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৬ এর সদস্যরা এসএসসির ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবর্তনের গুজব সৃষ্টিকারী প্রতারক চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। গতকাল দুপুরে র‌্যাবের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বরিশাল নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহু নির্বাচনী পরীক্ষা ভুল প্রশ্নে গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, এ ঘটনায় শতাধিক নিয়মিত পরীক্ষার্থীকে ২০১৮ সালের সিলেবাসে অর্থাৎ অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নে উত্তর লিখতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, বহু নির্বাচনী পরীক্ষা ৩০ মিনিটের ও ৩০ মার্কের। এই পরীক্ষা প্রথমেই দিতে হয়। তাদের সুযোগ ছিল না হলে বসে সিলেবাস যে ২০১৮ সালের ছিল তা দেখার। এই ভুল যারা প্রশ্ন বণ্টন করেছে তাদের। এজন্য তারা পরীক্ষায় সঠিক উত্তর দিতে পারেনি বলে চিন্তিত।

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বাগেরহাটের মোংলার চৌরিডাঙ্গা আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থীরা হলেন, ওলিউল্লাহ, নিয়াজ মাখদুম, হাফিজুল ইসলাম, বুলবুল হাওলাদার, সুমাইয়া খাতুন।

নগরীর জগদীশ সরস্বতী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম জানান, এসব শিক্ষার্থীর ২০১৯-২০ সালের সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পরে তাদের পাঠক্রমের সঙ্গে প্রশ্নের কোন মিল পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়। পরে জানা যায় ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নে তাদের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া যশোর, শেরপুর, ফরিদপুর ও গাইবান্ধায় ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র বিতরণেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ২০১৮ সালের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলাফল নিয়ে সংশয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে অভিভাবক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এজন্য কর্তব্যরত কেন্দ্র সচিবকেই দায়ী করছেন অভিভাবকরা।

ভুল প্রশ্নপত্রের কবলে পড়েছে নীলফামারীর রাবেয়া বালিকা বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের ৯৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরে অতিরিক্ত আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় দিয়ে তাদের পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর ২০২০ সালের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয় তাদের। তিনি জানান বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কার ভুলে এমন ঘটনাটি ঘটেছে।

অন্যদিকে পরীক্ষা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনে কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল ৫,৪৪৭ জন পরীক্ষার্থী। ৫ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঢাকা বোর্ডে এক হাজার ৮২৫ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৪০০ জন, রাজশাহী বোর্ডে ৬৫৩ জন বরিশাল বোর্ডে ৩৫৪ জন, সিলেট বোর্ডে ৩৫৮ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৪৭০ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৪৯৯ জন, যশোরে ৫৩৬ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৩৫২ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামে দু’জন জন, বরিশালে একজন, দিনাজপুর বোর্ডে এক জন ও যশোর বোর্ডে একজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২টি ও মোট কেন্দ্র ১৫টি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ ও অনিয়মিত তিন লাখ ৬১ হাজার ৩২৫, বিশেষ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (এক থেকে চার বিষয়ে ফেল) দুই লাখ ৮২ হাজার ৫৯৪ এবং বিদেশি ৮টি কেন্দ্রে মোট ৩৪২ জন এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।

image

গতকাল রাজধানীর এসএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র -সংবাদ

আরও খবর
কোন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি
করোনাভাইরাস রোধ করতে হবেই প্রধানমন্ত্রী
সরকারিভাবে আর কাউকে আনা হবে না স্বাস্থ্যমন্ত্রী
উহান থেকে ৩১২ বাংলাদেশিকে আনতে ব্যয় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা
করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সফলতার দাবি থাই চিকিৎসকদের
অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
গ্যাটকো দুর্নীতি খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ৩ মার্চ
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনকে দুদকে তলব
জামানত হারাবেন ৯ মেয়র প্রার্থী
বহিষ্কৃতদের নাম প্রকাশের আল্টিমেটাম
এখন থেকে বিদেশ যেতে সঙ্গে নেয়া যাবে ১০ হাজার ডলার
বিআরটিসির বাস বন্ধ করে দিয়েছে মোটর মালিক সমিতি
আ-মরি বাংলা ভাষা
ক্ষণগণনা : আর ৪১ দিন

মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২১ মাঘ ১৪২৬, ৯ জমাদিউল সানি ১৪৪১

এসএসসি পরীক্ষা শুরু

ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহসহ নানা জটিলতা

পাঁচ শিক্ষকের কারাদণ্ড

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

গতকাল রাজধানীর এসএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র -সংবাদ

ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়েই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তরপত্র সরবরাহ করায় পাঁচ শিক্ষককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভুল প্রশ্ন, বিশেষ করে ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলায়। প্রথম দিন কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল পাঁচ হাজার ৪৪৭ পরীক্ষার্থী।

প্রথম দিন সকাল ১০টায় এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র ও সহজ বাংলা প্রথম পত্র, মাদ্রাসার দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং কারিগরি বোর্ডে ভোকেশনালে বাংলা-২ (১৯২১) (সৃজনশীল) (নতুন সিলেবাস/পুরাতন সিলেবাস) এবং বাংলা-২ (১৭২১) (সৃজনশীল) (নতুন সিলেবাস/পুরাতন সিলেবাস) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সকালে রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আগামীতে আরও আগে প্রবেশপত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।’ পাবলিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে এমন কোন কর্মসূচি দেয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বিরত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র পায়নি জানানোর পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোন কোন প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আছে। তারা ‘রেজিস্ট্রেশেন ফি’ জমা দিয়েছে কিন্তু তারপরে দেখা যায় ‘রেজিস্ট্রেশন’ ঠিকমত হয়নি, এ রকম অনেক ঘটনা ঘটে। এ বছর কতগুলো জিনিস নজরে এসেছে। আমরা এর প্রত্যেকটির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, আগামীতেও করব যেন এ ধরনের ঘটনা কোনভাবেই না ঘটে।’

প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যা করণীয় আমরা তার সর্বোচ্চটুকু করছি, আমরা সবারই সহযোগিতা চাই। যেন কেউ গুজব ছড়িয়েও কাউকে প্রতারিত করতে না পারে। সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন সংস্থা তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন এবং যথযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। আমরা আশা করছি কোন সমস্যা ছাড়াই সুচারুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।’

এদিকে রাজধানীর রামপুরা, গাজীপুর ও খুলনা থেকে পৃথক অভিযানে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রতারণা ও গুজব সৃষ্টির অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে র‌্যাব। গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-১-এর একটি দল তাদের আটক করে। আটকরা হলেন-গাজীপুর থেকে আবু বক্কর সিদ্দিক (২৬), খুলনা থেকে শাকিল মাহমুদ (২০) ও সাইমন ইসলাম (২০) এবং রাজধানীর রামপুরা থেকে আল মাহমুদ (১৮)।

ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষাসহ নানা অভিযোগ বিভিন্ন জেলায় :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে দাখিল পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র সরবরাহ করার দায়ে পাঁচ শিক্ষকের প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিমুল হায়দার এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, উপজেলার চরচারতলা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাজহারুল ইসলাম (৪২) একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম (৩৫), খোলাপাড়া ওমেদ আলী শাহ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো. মহিউদ্দিন (৩৮), তালশহর করিমিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক কবির হোসেন (৪০) ও সরাইল উপজেলার পানিশ্বর মাদেনিয়া গাউছিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার আব্বাস আলী (৫০)।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিমুল হায়দার জানান, পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইনের ১৯৮০ এর ধারা ৯ (ক) মোতাবেক প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ঘটনায় হল সুপার ও কেন্দ্র সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

খুলনা মহানগরীর পৃথক দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৬ এর সদস্যরা এসএসসির ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবর্তনের গুজব সৃষ্টিকারী প্রতারক চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। গতকাল দুপুরে র‌্যাবের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বরিশাল নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহু নির্বাচনী পরীক্ষা ভুল প্রশ্নে গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, এ ঘটনায় শতাধিক নিয়মিত পরীক্ষার্থীকে ২০১৮ সালের সিলেবাসে অর্থাৎ অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নে উত্তর লিখতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, বহু নির্বাচনী পরীক্ষা ৩০ মিনিটের ও ৩০ মার্কের। এই পরীক্ষা প্রথমেই দিতে হয়। তাদের সুযোগ ছিল না হলে বসে সিলেবাস যে ২০১৮ সালের ছিল তা দেখার। এই ভুল যারা প্রশ্ন বণ্টন করেছে তাদের। এজন্য তারা পরীক্ষায় সঠিক উত্তর দিতে পারেনি বলে চিন্তিত।

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বাগেরহাটের মোংলার চৌরিডাঙ্গা আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থীরা হলেন, ওলিউল্লাহ, নিয়াজ মাখদুম, হাফিজুল ইসলাম, বুলবুল হাওলাদার, সুমাইয়া খাতুন।

নগরীর জগদীশ সরস্বতী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম জানান, এসব শিক্ষার্থীর ২০১৯-২০ সালের সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পরে তাদের পাঠক্রমের সঙ্গে প্রশ্নের কোন মিল পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়। পরে জানা যায় ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নে তাদের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া যশোর, শেরপুর, ফরিদপুর ও গাইবান্ধায় ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র বিতরণেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ২০১৮ সালের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলাফল নিয়ে সংশয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে অভিভাবক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এজন্য কর্তব্যরত কেন্দ্র সচিবকেই দায়ী করছেন অভিভাবকরা।

ভুল প্রশ্নপত্রের কবলে পড়েছে নীলফামারীর রাবেয়া বালিকা বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের ৯৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরে অতিরিক্ত আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় দিয়ে তাদের পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর ২০২০ সালের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয় তাদের। তিনি জানান বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কার ভুলে এমন ঘটনাটি ঘটেছে।

অন্যদিকে পরীক্ষা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনে কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল ৫,৪৪৭ জন পরীক্ষার্থী। ৫ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঢাকা বোর্ডে এক হাজার ৮২৫ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৪০০ জন, রাজশাহী বোর্ডে ৬৫৩ জন বরিশাল বোর্ডে ৩৫৪ জন, সিলেট বোর্ডে ৩৫৮ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৪৭০ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৪৯৯ জন, যশোরে ৫৩৬ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৩৫২ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামে দু’জন জন, বরিশালে একজন, দিনাজপুর বোর্ডে এক জন ও যশোর বোর্ডে একজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২টি ও মোট কেন্দ্র ১৫টি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ ও অনিয়মিত তিন লাখ ৬১ হাজার ৩২৫, বিশেষ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (এক থেকে চার বিষয়ে ফেল) দুই লাখ ৮২ হাজার ৫৯৪ এবং বিদেশি ৮টি কেন্দ্রে মোট ৩৪২ জন এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।