গাইড বইয়ের প্রশ্নপত্র থেকে এসএসসি বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্ন

এবারের এসএসসির বাংলা ১মপত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তিনটি নোট ও গাইড বইয়ের প্রশ্নপত্র হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটিও নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন করার প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। ওই প্রশ্নটি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের তৈরি; লটারির মাধ্যমে ওই প্রশ্নপত্রে ঢাকা বোর্ডের বাংলা ১মপত্র পরীক্ষা নেয়া হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ও কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, গাইড বই ও নোটবই বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি গাইড বই ও নোট বইয়ের বিক্রি বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সারাদেশে, প্রতিটি জায়গায় এই বিষয়গুলো বন্ধ করা কোন দিনই সম্ভব নয়, যদি আমরা সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা না পাই।’

‘স্কিলস রেডিনেস ফর এচিভিং এসডিজিস অ্যান্ড এডপটিং আইআর ৪ দশমিক ০’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণা নিয়ে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

নোট ও গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার : নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন হুবহু এসএসসির প্রশ্নে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোন প্রশ্ন একেবারে রিপিট হবে না সেটা করা কিন্তু শক্ত। গাইড বইগুলো তো বোর্ডের প্রশ্ন নিয়ে ছাপায়।’

তারপরও গাইড বইয়ের প্রশ্ন হুবহু না হওয়া উচিত মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কারা ওই প্রশ্নপত্র করেছেন তা শনাক্ত করা হয়েছে। গাইড বই, নোট বই ব্যবহার সরকার বন্ধ করতে চায়; কারণ এখন যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়, তাতে গাইড বইয়ের প্রয়োজন থাকার কথা নয়।’

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) কারিকুলামের বাইরে অতিরিক্ত বই বা নোট-গাইড কিনতে ও পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত/সহায়ক বই বা নোট-গাইড কিনতে ও পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের। সারাদেশ থেকে আসা নোট ও গাইড সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। এ সংক্রান্ত লিখিত নির্দেশনা ৯টি আঞ্চলিক পরিচালক ও সব জেলা-উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট কারিকুলামের বাইরে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত বই বা নোট বই পড়তে বা কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা বিধি পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

তাই সব অঞ্চল, জেলা, উপজেলা ও থানার শিক্ষা কর্মকর্তাদের এসব বিধিবহির্ভূত কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া সমন্বিত মনিটরিংয়ের আওতায় বার্ষিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে মনিটর করা হচ্ছে কি না তা তদারকির নির্দেশও দিয়েছে মাউশি মহাপরিচালক।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশব্যাপী সহায়ক বইয়ের নামে নোট ও গাইড বইয়ের বাণিজ্য চলছে। এমনকি প্রাক-প্রাথমিক স্তরের নার্সারি ও কিন্ডার গার্ডেনগুলোও শিশুদের ওপর নিষিদ্ধ বই ছাপিয়ে দিচ্ছে।

এরপর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে বিভিন্ন স্কুলে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। শ্রেণী শিক্ষকদের চাপে শিক্ষা ব্যবসায়ীদের নোট ও গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীকে ৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকার নোটবই কিনতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার বাংলাবাজারের হক লাইব্রেরি, বই পরিচয়, ফেমাস লাইব্রেরি, রাজধানী বুক হাউস, ঢাকা টাউন লাইব্রেরি, আজিজিয়া বুক হাউসসহ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পসরা সাজিয়ে দেদার বিক্রি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। এছাড়াও ঢাকার প্রায় সব বেসরকারি ও প্রাইভেট স্কুলের সামনেই নির্দিষ্ট লাইব্রেরিতে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকাশনীর নোট ও গাইড বই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘গাইড বই, নোট বই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান অনৈতিকভাবে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আর্থিকভাবে প্রভাবিত করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড বই, নোটবই কিনতে বাধ্য করে। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বইয়ের একচেটিয়া বাণিজ্য করছে অনুপম প্রকাশনী, পুঁথি নিলয়, জুপিটার, কবির ও মিজান পাবলিশার্স, বই ও তামান্না পাবলিকেশন্স, বর্ণমালা প্রকাশনী, মুন্নী প্রকাশনী, অ্যাকটিভ চমক, ফুলকুড়ি, দোলনা, সংসদ, পপিসহ অর্ধশত প্রকাশনী। তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য কয়েকটি বিষয়ের অনুশীলন বই প্রকাশ করেছে লেকচার ও পাঞ্জেরি প্রকাশনী।

প্রকাশক সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে নিষিদ্ধ পুস্তকের অবাধ বাণিজ্য চলছে। অবৈধ পুস্তক বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় অর্ধশত প্রকাশনা সংস্থা এবং প্রায় দুই হাজার লাইব্রেরির মালিক ও স্বত্বাধিকারী নিয়মিত চাঁদা তুলে অবৈধ বাণিজ্য পরিচালনা করছে। পুস্তক বাণিজ্যকে ঘিরে বাংলাবাজারে গড়ে উঠেছে একাধিক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে নোয়াখালী চৌমুহনী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, বগুড়া, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। গত ৬/৭ বছর ধরে বাংলাবাজারে নিষিদ্ধ বইয়ের দোকানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন অভিযান পরিচালনা করেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ভুল প্রশ্নে নেয়া পরীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না শিক্ষার্থীরা :

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ভুল প্রশ্নে নেয়া হয়েছে, তাদের উত্তরপত্র আলাদা করে রাখা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘এরা কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বোর্ডের নির্দেশনা মেনে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের বসানোর আলাদা ব্যবস্থা করলে এই সমস্যা হত না।’

এসএসসির প্রথম দিনের প্রশ্ন বিতরণে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা সে সব উত্তরপত্র আলাদা করে রেখেছি এবং পরীক্ষার্থীরা যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি।’

শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এসএসসিতে সর্বোচ্চ চারটি পত্রে ফেল করলে ওইসব বিষয়ে পরের বছর পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে তাদের জন্য নির্ধারিত সিলেবাসে আলাদা প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। পরীক্ষার হলে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদাভাবে বসানোর কথা। কিন্তু এবার এসএসসির বিভিন্ন স্থানে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হয়।

এবার ৫২ হাজার কক্ষে মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভুল প্রশ্ন বিতরণের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি কক্ষে। সেই অর্থে সংখ্যার হিসেবে হয়ত খুবই নগন্য। কিন্তু এই ১৫-টিইবা কেন হবে? যে শিক্ষক সেখানে আছেন যিনি প্রশ্নপত্র দেবেন। প্রথমে কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার, পুলিশের প্রতিনিধিসহ সেটি খোলার প্রক্রিয়া দেখবেন। তারপর শিক্ষকরা সেটকোড অনুযায়ী দেখে বের করবেন। যে শিক্ষক বিতরণ করতে যাচ্ছেন তার দেখার কথা। এমনকি পরীক্ষার্থীরা কিন্তু প্রশ্ন পাওয়ার পর তারও দেখার কথা।

কোনভাবেই যেন কোন কেন্দ্রে আর ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আগে যা হত তার থেকে কমে এসেছে। একেবারেই যেন না থাকে, এটাকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা যায়, সেজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং সেটা থাকবে।’

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৪ মাঘ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

গাইড বইয়ের প্রশ্নপত্র থেকে এসএসসি বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্ন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

এবারের এসএসসির বাংলা ১মপত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তিনটি নোট ও গাইড বইয়ের প্রশ্নপত্র হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটিও নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন করার প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। ওই প্রশ্নটি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের তৈরি; লটারির মাধ্যমে ওই প্রশ্নপত্রে ঢাকা বোর্ডের বাংলা ১মপত্র পরীক্ষা নেয়া হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ও কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, গাইড বই ও নোটবই বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি গাইড বই ও নোট বইয়ের বিক্রি বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সারাদেশে, প্রতিটি জায়গায় এই বিষয়গুলো বন্ধ করা কোন দিনই সম্ভব নয়, যদি আমরা সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা না পাই।’

‘স্কিলস রেডিনেস ফর এচিভিং এসডিজিস অ্যান্ড এডপটিং আইআর ৪ দশমিক ০’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণা নিয়ে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

নোট ও গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার : নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন হুবহু এসএসসির প্রশ্নে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোন প্রশ্ন একেবারে রিপিট হবে না সেটা করা কিন্তু শক্ত। গাইড বইগুলো তো বোর্ডের প্রশ্ন নিয়ে ছাপায়।’

তারপরও গাইড বইয়ের প্রশ্ন হুবহু না হওয়া উচিত মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কারা ওই প্রশ্নপত্র করেছেন তা শনাক্ত করা হয়েছে। গাইড বই, নোট বই ব্যবহার সরকার বন্ধ করতে চায়; কারণ এখন যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়, তাতে গাইড বইয়ের প্রয়োজন থাকার কথা নয়।’

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) কারিকুলামের বাইরে অতিরিক্ত বই বা নোট-গাইড কিনতে ও পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত/সহায়ক বই বা নোট-গাইড কিনতে ও পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের। সারাদেশ থেকে আসা নোট ও গাইড সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। এ সংক্রান্ত লিখিত নির্দেশনা ৯টি আঞ্চলিক পরিচালক ও সব জেলা-উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট কারিকুলামের বাইরে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত বই বা নোট বই পড়তে বা কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা বিধি পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

তাই সব অঞ্চল, জেলা, উপজেলা ও থানার শিক্ষা কর্মকর্তাদের এসব বিধিবহির্ভূত কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া সমন্বিত মনিটরিংয়ের আওতায় বার্ষিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে মনিটর করা হচ্ছে কি না তা তদারকির নির্দেশও দিয়েছে মাউশি মহাপরিচালক।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশব্যাপী সহায়ক বইয়ের নামে নোট ও গাইড বইয়ের বাণিজ্য চলছে। এমনকি প্রাক-প্রাথমিক স্তরের নার্সারি ও কিন্ডার গার্ডেনগুলোও শিশুদের ওপর নিষিদ্ধ বই ছাপিয়ে দিচ্ছে।

এরপর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে বিভিন্ন স্কুলে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। শ্রেণী শিক্ষকদের চাপে শিক্ষা ব্যবসায়ীদের নোট ও গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীকে ৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকার নোটবই কিনতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার বাংলাবাজারের হক লাইব্রেরি, বই পরিচয়, ফেমাস লাইব্রেরি, রাজধানী বুক হাউস, ঢাকা টাউন লাইব্রেরি, আজিজিয়া বুক হাউসসহ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পসরা সাজিয়ে দেদার বিক্রি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। এছাড়াও ঢাকার প্রায় সব বেসরকারি ও প্রাইভেট স্কুলের সামনেই নির্দিষ্ট লাইব্রেরিতে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকাশনীর নোট ও গাইড বই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘গাইড বই, নোট বই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান অনৈতিকভাবে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আর্থিকভাবে প্রভাবিত করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড বই, নোটবই কিনতে বাধ্য করে। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বইয়ের একচেটিয়া বাণিজ্য করছে অনুপম প্রকাশনী, পুঁথি নিলয়, জুপিটার, কবির ও মিজান পাবলিশার্স, বই ও তামান্না পাবলিকেশন্স, বর্ণমালা প্রকাশনী, মুন্নী প্রকাশনী, অ্যাকটিভ চমক, ফুলকুড়ি, দোলনা, সংসদ, পপিসহ অর্ধশত প্রকাশনী। তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য কয়েকটি বিষয়ের অনুশীলন বই প্রকাশ করেছে লেকচার ও পাঞ্জেরি প্রকাশনী।

প্রকাশক সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে নিষিদ্ধ পুস্তকের অবাধ বাণিজ্য চলছে। অবৈধ পুস্তক বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় অর্ধশত প্রকাশনা সংস্থা এবং প্রায় দুই হাজার লাইব্রেরির মালিক ও স্বত্বাধিকারী নিয়মিত চাঁদা তুলে অবৈধ বাণিজ্য পরিচালনা করছে। পুস্তক বাণিজ্যকে ঘিরে বাংলাবাজারে গড়ে উঠেছে একাধিক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে নোয়াখালী চৌমুহনী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, বগুড়া, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। গত ৬/৭ বছর ধরে বাংলাবাজারে নিষিদ্ধ বইয়ের দোকানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন অভিযান পরিচালনা করেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ভুল প্রশ্নে নেয়া পরীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না শিক্ষার্থীরা :

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ভুল প্রশ্নে নেয়া হয়েছে, তাদের উত্তরপত্র আলাদা করে রাখা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘এরা কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বোর্ডের নির্দেশনা মেনে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের বসানোর আলাদা ব্যবস্থা করলে এই সমস্যা হত না।’

এসএসসির প্রথম দিনের প্রশ্ন বিতরণে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা সে সব উত্তরপত্র আলাদা করে রেখেছি এবং পরীক্ষার্থীরা যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি।’

শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এসএসসিতে সর্বোচ্চ চারটি পত্রে ফেল করলে ওইসব বিষয়ে পরের বছর পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে তাদের জন্য নির্ধারিত সিলেবাসে আলাদা প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। পরীক্ষার হলে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদাভাবে বসানোর কথা। কিন্তু এবার এসএসসির বিভিন্ন স্থানে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হয়।

এবার ৫২ হাজার কক্ষে মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভুল প্রশ্ন বিতরণের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি কক্ষে। সেই অর্থে সংখ্যার হিসেবে হয়ত খুবই নগন্য। কিন্তু এই ১৫-টিইবা কেন হবে? যে শিক্ষক সেখানে আছেন যিনি প্রশ্নপত্র দেবেন। প্রথমে কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার, পুলিশের প্রতিনিধিসহ সেটি খোলার প্রক্রিয়া দেখবেন। তারপর শিক্ষকরা সেটকোড অনুযায়ী দেখে বের করবেন। যে শিক্ষক বিতরণ করতে যাচ্ছেন তার দেখার কথা। এমনকি পরীক্ষার্থীরা কিন্তু প্রশ্ন পাওয়ার পর তারও দেখার কথা।

কোনভাবেই যেন কোন কেন্দ্রে আর ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আগে যা হত তার থেকে কমে এসেছে। একেবারেই যেন না থাকে, এটাকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা যায়, সেজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং সেটা থাকবে।’