পদ্মা সেতুর ২৪তম স্প্যান বসানো হলো

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে সাড়ে ৩ কিলোমিটারের বেশি। গতকাল সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩০ ও ৩১ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়েছে ২৪তম স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো)। এর ফলে সেতুর ৩ হাজার ৬০০ মিটার বা সাড়ে তিন কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি সেতু জাজিরা প্রান্তে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারে বসানো হয় ২৩ নম্বর স্প্যান। সেতুর ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে সব স্প্যান বসানো হবে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩০ ও ৩১ নম্বর পিয়ারের ওপর ‘৫-এফ’ স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সেতুর ৩৬০০ মিটার অর্থাৎ সাড়ে তিন কিলোমিটারের চেয়ে ১০০ মিটার বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দোতালা এই সেতুটি কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবির বলেন, স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর বসিয়ে রাখা ছিল। এটি গণনা করা হয়নি। এখন ৩০ ও ৩১ নম্বর খুঁটিতে স্থাীয়ভাবে বসানো হলো ২৪তম এই স্প্যানটি। প্রতি মাসেই এখন স্প্যান বসবে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বাকি ১৭ স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিয়ারের মধ্যে বর্তমানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৫টির। সেতুতে দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৪১০টি রেল স্ল্যাব বসানো হয়েছে। দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১২৫টি স্ল্যাব বসানো শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়ায় এসেছে ৩৩টি স্প্যান। এর মধ্যে ২৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৮৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর সেতুর মূল কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণের লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সরকার এখন ২০২১ সালের জুন মাস নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে। পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে। স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর। স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল। স্প্যান ‘৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ মে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিয়ারের উপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ২৬ নভেম্বর সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিয়ারে বসে স্প্যান ‘৪-ডি’। ১১ ডিসেম্বর ‘৩-ই’ স্প্যান বসে সেতুর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিয়ারের উপর। ১৮ ডিসেম্বর ২১ ও ২২ নম্বর পিয়ারে উপর বসে স্প্যান ‘৪-সি’। ৩১ ডিসেম্বর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিয়ারে বসে স্প্যান ‘৩-এফ’। ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘৬-বি’ স্প্যান বসে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারের উপর। ২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তে ৫ ও ৬ নম্বর পিয়ারে বসে ‘ওয়ান-ই’ স্প্যান। ২ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারে বসে ‘৬-এ’ স্প্যান।

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৯ মাঘ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

পদ্মা সেতুর ২৪তম স্প্যান বসানো হলো

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধি শরীয়তপুর

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে সাড়ে ৩ কিলোমিটারের বেশি। গতকাল সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩০ ও ৩১ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়েছে ২৪তম স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো)। এর ফলে সেতুর ৩ হাজার ৬০০ মিটার বা সাড়ে তিন কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি সেতু জাজিরা প্রান্তে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারে বসানো হয় ২৩ নম্বর স্প্যান। সেতুর ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে সব স্প্যান বসানো হবে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩০ ও ৩১ নম্বর পিয়ারের ওপর ‘৫-এফ’ স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সেতুর ৩৬০০ মিটার অর্থাৎ সাড়ে তিন কিলোমিটারের চেয়ে ১০০ মিটার বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দোতালা এই সেতুটি কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবির বলেন, স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর বসিয়ে রাখা ছিল। এটি গণনা করা হয়নি। এখন ৩০ ও ৩১ নম্বর খুঁটিতে স্থাীয়ভাবে বসানো হলো ২৪তম এই স্প্যানটি। প্রতি মাসেই এখন স্প্যান বসবে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বাকি ১৭ স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিয়ারের মধ্যে বর্তমানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৫টির। সেতুতে দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৪১০টি রেল স্ল্যাব বসানো হয়েছে। দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১২৫টি স্ল্যাব বসানো শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়ায় এসেছে ৩৩টি স্প্যান। এর মধ্যে ২৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৮৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর সেতুর মূল কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণের লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সরকার এখন ২০২১ সালের জুন মাস নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে। পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে। স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর। স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল। স্প্যান ‘৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ মে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিয়ারের উপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ২৬ নভেম্বর সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিয়ারে বসে স্প্যান ‘৪-ডি’। ১১ ডিসেম্বর ‘৩-ই’ স্প্যান বসে সেতুর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিয়ারের উপর। ১৮ ডিসেম্বর ২১ ও ২২ নম্বর পিয়ারে উপর বসে স্প্যান ‘৪-সি’। ৩১ ডিসেম্বর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিয়ারে বসে স্প্যান ‘৩-এফ’। ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘৬-বি’ স্প্যান বসে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারের উপর। ২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তে ৫ ও ৬ নম্বর পিয়ারে বসে ‘ওয়ান-ই’ স্প্যান। ২ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারে বসে ‘৬-এ’ স্প্যান।