জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছে ‘আল্লাহর দল’ নামে

চলছে সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ সারাদেশে ২শ’র বেশি গ্রেফতার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গাঢাকা দিয়ে থাকলেও আবার জঙ্গি তৎপরতার ছক কষছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। আল্লাহর দল নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে গোপনে জঙ্গিরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হামলর পরিকল্পনা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, জঙ্গিরা ঢাকার বাইরে সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। আল্লাহর দল পরিচয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্পশিক্ষিত লোকজনকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দলে টানছে। দলের সদস্য করে তাদের জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ করতে নানা কৌশল প্রয়োগ করছে। তারা বিভিন্ন পেশার লোকজন থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা নিচ্ছে। অনেকেই সরল বিশ্বাসে এ সংগঠনের জন্য টাকা দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ ২০০ বেশি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের কর্মকাণ্ডের স্বীকারোক্তিতে জঙ্গি তৎপরতার নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতা এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের একটি চৌকস দল গত ২৯ জানুয়ারি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর একাধিক সদস্য সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার শাহপরাণ (রহ.) থানাধীন আরামবাগস্থ আলেয়া নীড়, রোড নং- ০১, বাসা নং-১৭ এর নিচ তলার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে সমবেত হয়ে জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্য পাওয়ার পর সেখানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযানে সেখান থেকে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- মো. মানিক আকন্দ ওরফে মেহেদী হাসান (৩২), মো. জহির উদ্দিন বাবর (২০), ে মো. রাসেল আহম্মেদ (২৪) মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম (২০), মো. কামাল আহম্মেদ (২৫), মো. তমি উদ্দিন সুমন (৩০), মো. আশরাফুল ইসলাম (২৯), মো. জুয়েল আহম্মেদ (২৪) ও মো. স্বপন আহম্মেদ (২১)।

গ্রেফতারকৃতরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর সক্রিয় সদস্য বলে জানায়। তাদের কাছ থেকে মোবইল ফোন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও অন্য উগ্রপন্থি কাগজপত্র, বই উদ্ধার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসছে এ জঙ্গি সংগঠনের গোপনে সংগঠিত হওয়ার বিস্তারিত পরিকল্পনা। তারা স্বীকার করে যে, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশে পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য একত্রিত হয়ে গোপন মিটিং করছিল।

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

এন্টিটেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি শাখার পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান সংবাদকে জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও রংপুর এলাকায় দরিদ্র গ্রামগুলোতে আল্লাহর দলের উৎপত্তি। এখন তারা সিলেট বিভাগ ও মেট্রোপলিটন এলাকা কেন্দ্রিক সংগঠিত হচ্ছে। তারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অর্থসংগ্রহ করছে। সিলেটে প্রবাসীর সংখ্যা বেশি বলে তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়। প্রবাসীদের পরিবার থেকে আল্লাহর দলের নামে আমানত (অর্থ) সংগ্রহ করছে। তারা জানায়, তাদের বহু মৌন সমর্থকও সে এলাকায় রয়েছে। টাকা সংগ্রহ করে তারা সংগঠনের প্রশিক্ষণের ব্যয় নির্বাহ করছে।

সিলেট থেকে গ্রেফতারকৃত এক জঙ্গি স্বীকার করে বলেছে, কয়েকজন প্রবাসী তাদের নিয়মিত টাকা দেয়। এর মধ্যে বিদেশ ফেরত একজন প্রবাসীকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে অর্থ দেয়ার কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে আল্লাহর দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে গিয়ে ছোটখাট ব্যবসা করে। এরমধ্যে কেউ ফুটপাটের হকার, কেউ রাস্তার পাশে ছোটখাট দোকান চালাতো। তারা প্রতিদিন ১০০ টাকা বিক্রি করলে ৫টা আল্লাহর দলের সদস্যকে চাঁদা দিত। এ চাঁদা কয়েকটি হাত পরিবর্তন করে মূল জঙ্গিদের কাছে যায়। এমনকি তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাকাতের টাকাও আদায় করতে। এতে পরকালে নেকি পাওয়া যাবে এমন তথ্য নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের কাছে বলে প্রতিদিন একটি গ্রুপ চাঁদা আদায় করতো। এভাবে এ জঙ্গি সংগঠনটি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আল্লাহর দলের সদস্য রয়েছে। তাদের মূল টার্গেট ছিল সাধারণ ধর্মপ্রাণ তরুণদের জঙ্গিবাদে প্রভাবিত করা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, জেএমবি পুনর্গঠনের নতুন কৌশল হচ্ছে ‘ আল্লার দল’ নাম ধারণ করা। এক হাজারেরও বেশি জঙ্গি ভাগ হয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং সদস্য সংগ্রহের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে গোপনে এবং ছদ্মনামে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অন্তরালে এসব নেতারা দলের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি মাওলানা মতিনের হাত ধরে বাংলাদেশে আল্লার দলের সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে এ সংগঠনের কার্যক্রমে জঙ্গিবাদী সম্পৃক্ততার তথ্য প্রমাণ মেলে। গোপনে তারা নিজেদের খেলাফতি কায়দায় গড়ে তোলে। প্রত্যেক জেলায় ও উপজেলায় দলনেতা নির্বাচনের পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েও দলনেতা নিযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ সংগঠনের টার্গেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের বেকার যুবক। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে হাত খরচ বাবদ দৈনিক ৫০ থেকে ২০০ টাকা দেয়া হয়। এভাবে অর্থের লোভ দেখিয়ে বলা হয় কাজ করলে আরও টাকা পাওয়া যাবে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে নতুন সদস্যদের মধ্যে জেহাদি মনোভাব সৃষ্টি করা হয়।

এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তাদের মধ্যে খেলাফতি ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। গণতন্ত্র, সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক একটি ধারণা দেয়া হয়। বলা হয় গণতান্ত্রিক পন্থা, বর্তমান সামাজিক শাসন ব্যবস্থা ইসলাম বিরোধী।

জানা গেছে, ২০০০ সালে আল্লাহর দল কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৫ সালে ঝিনাইদহে বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং যশোরে উদীচির সমাবেশে বোমা হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন মতিন মেহেদী। গাইবান্ধার সুন্দর এলাকার মতিন মেহেদী দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর পালিয়ে আশ্রয় নেন পাশ্ববর্তী জেলা কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাতে থাকেন আল্লার দলের। কুড়িগ্রাম থেকে আশপাশের জেলায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে সে।

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৯ মাঘ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছে ‘আল্লাহর দল’ নামে

চলছে সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ সারাদেশে ২শ’র বেশি গ্রেফতার

বাকী বিল্লাহ ও সাইফ বাবলু

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গাঢাকা দিয়ে থাকলেও আবার জঙ্গি তৎপরতার ছক কষছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। আল্লাহর দল নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে গোপনে জঙ্গিরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হামলর পরিকল্পনা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, জঙ্গিরা ঢাকার বাইরে সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। আল্লাহর দল পরিচয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্পশিক্ষিত লোকজনকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দলে টানছে। দলের সদস্য করে তাদের জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ করতে নানা কৌশল প্রয়োগ করছে। তারা বিভিন্ন পেশার লোকজন থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা নিচ্ছে। অনেকেই সরল বিশ্বাসে এ সংগঠনের জন্য টাকা দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ ২০০ বেশি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের কর্মকাণ্ডের স্বীকারোক্তিতে জঙ্গি তৎপরতার নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতা এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের একটি চৌকস দল গত ২৯ জানুয়ারি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর একাধিক সদস্য সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার শাহপরাণ (রহ.) থানাধীন আরামবাগস্থ আলেয়া নীড়, রোড নং- ০১, বাসা নং-১৭ এর নিচ তলার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে সমবেত হয়ে জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্য পাওয়ার পর সেখানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযানে সেখান থেকে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- মো. মানিক আকন্দ ওরফে মেহেদী হাসান (৩২), মো. জহির উদ্দিন বাবর (২০), ে মো. রাসেল আহম্মেদ (২৪) মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম (২০), মো. কামাল আহম্মেদ (২৫), মো. তমি উদ্দিন সুমন (৩০), মো. আশরাফুল ইসলাম (২৯), মো. জুয়েল আহম্মেদ (২৪) ও মো. স্বপন আহম্মেদ (২১)।

গ্রেফতারকৃতরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর সক্রিয় সদস্য বলে জানায়। তাদের কাছ থেকে মোবইল ফোন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও অন্য উগ্রপন্থি কাগজপত্র, বই উদ্ধার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসছে এ জঙ্গি সংগঠনের গোপনে সংগঠিত হওয়ার বিস্তারিত পরিকল্পনা। তারা স্বীকার করে যে, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশে পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য একত্রিত হয়ে গোপন মিটিং করছিল।

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

এন্টিটেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি শাখার পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান সংবাদকে জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও রংপুর এলাকায় দরিদ্র গ্রামগুলোতে আল্লাহর দলের উৎপত্তি। এখন তারা সিলেট বিভাগ ও মেট্রোপলিটন এলাকা কেন্দ্রিক সংগঠিত হচ্ছে। তারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অর্থসংগ্রহ করছে। সিলেটে প্রবাসীর সংখ্যা বেশি বলে তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়। প্রবাসীদের পরিবার থেকে আল্লাহর দলের নামে আমানত (অর্থ) সংগ্রহ করছে। তারা জানায়, তাদের বহু মৌন সমর্থকও সে এলাকায় রয়েছে। টাকা সংগ্রহ করে তারা সংগঠনের প্রশিক্ষণের ব্যয় নির্বাহ করছে।

সিলেট থেকে গ্রেফতারকৃত এক জঙ্গি স্বীকার করে বলেছে, কয়েকজন প্রবাসী তাদের নিয়মিত টাকা দেয়। এর মধ্যে বিদেশ ফেরত একজন প্রবাসীকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে অর্থ দেয়ার কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে আল্লাহর দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে গিয়ে ছোটখাট ব্যবসা করে। এরমধ্যে কেউ ফুটপাটের হকার, কেউ রাস্তার পাশে ছোটখাট দোকান চালাতো। তারা প্রতিদিন ১০০ টাকা বিক্রি করলে ৫টা আল্লাহর দলের সদস্যকে চাঁদা দিত। এ চাঁদা কয়েকটি হাত পরিবর্তন করে মূল জঙ্গিদের কাছে যায়। এমনকি তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাকাতের টাকাও আদায় করতে। এতে পরকালে নেকি পাওয়া যাবে এমন তথ্য নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের কাছে বলে প্রতিদিন একটি গ্রুপ চাঁদা আদায় করতো। এভাবে এ জঙ্গি সংগঠনটি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আল্লাহর দলের সদস্য রয়েছে। তাদের মূল টার্গেট ছিল সাধারণ ধর্মপ্রাণ তরুণদের জঙ্গিবাদে প্রভাবিত করা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, জেএমবি পুনর্গঠনের নতুন কৌশল হচ্ছে ‘ আল্লার দল’ নাম ধারণ করা। এক হাজারেরও বেশি জঙ্গি ভাগ হয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং সদস্য সংগ্রহের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে গোপনে এবং ছদ্মনামে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অন্তরালে এসব নেতারা দলের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি মাওলানা মতিনের হাত ধরে বাংলাদেশে আল্লার দলের সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে এ সংগঠনের কার্যক্রমে জঙ্গিবাদী সম্পৃক্ততার তথ্য প্রমাণ মেলে। গোপনে তারা নিজেদের খেলাফতি কায়দায় গড়ে তোলে। প্রত্যেক জেলায় ও উপজেলায় দলনেতা নির্বাচনের পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েও দলনেতা নিযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ সংগঠনের টার্গেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের বেকার যুবক। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে হাত খরচ বাবদ দৈনিক ৫০ থেকে ২০০ টাকা দেয়া হয়। এভাবে অর্থের লোভ দেখিয়ে বলা হয় কাজ করলে আরও টাকা পাওয়া যাবে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে নতুন সদস্যদের মধ্যে জেহাদি মনোভাব সৃষ্টি করা হয়।

এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তাদের মধ্যে খেলাফতি ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। গণতন্ত্র, সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক একটি ধারণা দেয়া হয়। বলা হয় গণতান্ত্রিক পন্থা, বর্তমান সামাজিক শাসন ব্যবস্থা ইসলাম বিরোধী।

জানা গেছে, ২০০০ সালে আল্লাহর দল কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৫ সালে ঝিনাইদহে বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং যশোরে উদীচির সমাবেশে বোমা হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন মতিন মেহেদী। গাইবান্ধার সুন্দর এলাকার মতিন মেহেদী দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর পালিয়ে আশ্রয় নেন পাশ্ববর্তী জেলা কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাতে থাকেন আল্লার দলের। কুড়িগ্রাম থেকে আশপাশের জেলায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে সে।