পাপিয়ার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ব্যবসায়ী আমলা ও রাজনৈতিক নেতা

মহিলা যুবলীগ থেকে পাপিয়া বহিষ্কার

অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের দলীয় পদের পরিচয় ব্যবহার করতেন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত ছিলো তার। নিজেকে যুব মহিলা লীগের নেত্রী পরিচয়ে পাপিয়া রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে বিভিন্ন মাদক এবং বিশেষ পার্টিতে অংশ নিতেন। পাপিয়ার সাম্রাজ্যের বেড়াজালে ব্যবসায়ী, আমলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারাও ব্লাকমেইলিং এর শিকার হয়েছেন। অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যম রাতারাতি বিপুল অর্থবিত্ত ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন পাপিয়া ও তার স্বামী। এদিকে গতকাল পাপিয়ার বুকিং রাখা ঢাকার একটি হোটেল কক্ষ এবং ফার্মগেটের ফ্লাটে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মাদক এবং অর্ধ লক্ষাধিক টাকা এবং পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে র‌্যাব। পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাপিয়ার পাপের সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব।

গ্রেফতার হওয়ার পর র‌্যাব পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধার করেছে। অসামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাপিয়া অপরাধ জগতের সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠেন রাতারাতি। গতকাল র‌্যাব এক সংবাদ সম্মেলনে পাপিয়ার অপরাধ জগতের ফিরিস্তি তুলে ধরে। এতে নানা চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে নরসিংদীর মক্ষিরানী হিসেবে পরিচিত শামিমা নূর পাপিয়া ও তার সহযোগীদের বিষয়ে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা উদ্ধার সংক্রান্ত একাধিক মামলার হচ্ছে পাপিয়া ও তার স্বামীসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে। তাদের প্রতারণার শিকার কারা হয়েছেন, এর মধ্যে কোন রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন কিনা তা তদন্ত চলছে। পাপিয়ার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ১১টায় র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় নরসিংদীর যুব মহিলী লীগের নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে আটক করে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নারী সংক্রান্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবারহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দেশের অর্থসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া শামিমা নূর পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর দেয়া তথ্যমতে, গতকাল বিকেলে হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিংকৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট রুম এবং ফার্মগেট এলাকার ২৮নং ইন্দিরা রোডস্থ ‘রওশন’স ডমিনো রিলিভো’ নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করে ১টি বিদেশী পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসাএটিএম কার্ড ১০টি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ‘সম্প্রতি জাল টাকা এবং নারীঘটিত কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পাপিয়ার অজানা সব কাহিনী জানা যায়। তিনি যে বিদেশে টাকা পাচারসহ ভয়ঙ্কর অপরাধ কর্মকাণ্ড করছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় তার সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের প্রাথমিক সব তথ্য মিলেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। র‌্যাব জানায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় পাপিয়ার যৌথ মালিকানাধীন শোরুম ‘কার একচেঞ্জ’ এবং নরসিংদীতে ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডই ছিল তার প্রধান কাজ। সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করাতেন। অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতেন। নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনীও আছে। স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক বনে গেছেন। পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী তার স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসা করেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। সুমন স্ত্রীর মাধ্যম গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতার নাম করে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করতেন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাপিয় এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। মক্ষিরানীর মতো পাপিয়ার একাধিক ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে সেখানে মাদক, অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালাতেন নির্বিঘেœ। পাপিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের কাস্টমার ছিলেন বড় বড় শিল্পপতি থেকে শুরু করে বিত্তবান শ্রেণী। রাজনৈতিক মহলের কারও কারও সঙ্গেও পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পাপিয়া ও তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বর্তমান সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সমন্ধে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকা সত্ত্বেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে। ফার্মগেট এলাকাস্থ ২৮ ইন্দিরা রোডে তাদের ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ও নরসিংদীর বাগদী এলাকায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ২টি প্লট আছে রয়েছে। এছাড়াও তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বে তাদের ‘কার একচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শো রুমে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে এবং নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে। র‌্যাবের তদন্তে পাপিয়া ও তার স্বামী অধিকাংশ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেছে বলে জানা যায়। সবশেষ গত ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন হোটেল ওয়েস্টিনের কয়েকটি বিলাসবহুল রুমে অবস্থান করে বলে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। প্রায় ২ মাসে তারা হোটেলে ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ বিল পরিশোধ করে। প্রাথমিক তদন্তে র‌্যাব জানতে পারে শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ ইত্যাদির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে পুলিশের এসআই ও বংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার নামে মোট ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকাসহ ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হচ্ছে নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। তারা ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কিশোরী ও তরুণীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতো। যাদের অধিকাংশই নরসিংদী এলাকা হতে চাকরি দেয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব অনৈতিক কাজে কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো পাপিয়া বাহিনী। বিভিন্ন বসয়ী মেয়েদের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণে পাপিয়া নরসিংদী এলাকায় ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামক একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলো। যাদের মাধ্যমে তারা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এদের ব্যবহার করতো। র‌্যাব জানায়, ‘পাপিয়ার আয়কর ফাইল তলব করে দেখা যায়, সেখানে সে বছরে ২২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অথচ তার প্রতিদিন বারের বিলই আসে আড়াই লাখ টাকা। যারা হোটেলে আসত তাদের কাছে বিভিন্ন বসয়ী মেয়েদের পাঠাতো পাপিয়া। ওইসব মেয়েদের সঙ্গে আসামাজিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও করে রাখতো পাপিয়া। পরে সেইসব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেও মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতো।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। ছাত্রজীবন থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণের জন্য পাপিয়ার স্বামী সুমন বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন সুমন। এরই মধ্যে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। এরপর তার স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে কাজে লাগান। নরংসিদির মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর নরসিংদিতে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে কোণঠাসা হয়ে পড়েন পাপিয়া ও তার স্বামী। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিরোধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে করে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন সদর আসনের এক এমপির গ্রুপের হয়ে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তাদের ঢাকা সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পাপিয়া যুবলীগ থেকে বহিষ্কার

এদিকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া পাপিয়া নূরকে নরসিংদী যুব মহিলা লীগের পদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের (২২) এর (ক) উপধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১০ ফল্গুন ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

দলীয় পরিচয়ে অপরাধকর্ম

পাপিয়ার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ব্যবসায়ী আমলা ও রাজনৈতিক নেতা

মহিলা যুবলীগ থেকে পাপিয়া বহিষ্কার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের দলীয় পদের পরিচয় ব্যবহার করতেন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত ছিলো তার। নিজেকে যুব মহিলা লীগের নেত্রী পরিচয়ে পাপিয়া রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে বিভিন্ন মাদক এবং বিশেষ পার্টিতে অংশ নিতেন। পাপিয়ার সাম্রাজ্যের বেড়াজালে ব্যবসায়ী, আমলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারাও ব্লাকমেইলিং এর শিকার হয়েছেন। অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যম রাতারাতি বিপুল অর্থবিত্ত ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন পাপিয়া ও তার স্বামী। এদিকে গতকাল পাপিয়ার বুকিং রাখা ঢাকার একটি হোটেল কক্ষ এবং ফার্মগেটের ফ্লাটে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মাদক এবং অর্ধ লক্ষাধিক টাকা এবং পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে র‌্যাব। পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাপিয়ার পাপের সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব।

গ্রেফতার হওয়ার পর র‌্যাব পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধার করেছে। অসামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাপিয়া অপরাধ জগতের সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠেন রাতারাতি। গতকাল র‌্যাব এক সংবাদ সম্মেলনে পাপিয়ার অপরাধ জগতের ফিরিস্তি তুলে ধরে। এতে নানা চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে নরসিংদীর মক্ষিরানী হিসেবে পরিচিত শামিমা নূর পাপিয়া ও তার সহযোগীদের বিষয়ে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা উদ্ধার সংক্রান্ত একাধিক মামলার হচ্ছে পাপিয়া ও তার স্বামীসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে। তাদের প্রতারণার শিকার কারা হয়েছেন, এর মধ্যে কোন রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন কিনা তা তদন্ত চলছে। পাপিয়ার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ১১টায় র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় নরসিংদীর যুব মহিলী লীগের নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে আটক করে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নারী সংক্রান্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবারহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দেশের অর্থসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া শামিমা নূর পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর দেয়া তথ্যমতে, গতকাল বিকেলে হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিংকৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট রুম এবং ফার্মগেট এলাকার ২৮নং ইন্দিরা রোডস্থ ‘রওশন’স ডমিনো রিলিভো’ নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করে ১টি বিদেশী পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসাএটিএম কার্ড ১০টি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ‘সম্প্রতি জাল টাকা এবং নারীঘটিত কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পাপিয়ার অজানা সব কাহিনী জানা যায়। তিনি যে বিদেশে টাকা পাচারসহ ভয়ঙ্কর অপরাধ কর্মকাণ্ড করছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় তার সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের প্রাথমিক সব তথ্য মিলেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। র‌্যাব জানায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় পাপিয়ার যৌথ মালিকানাধীন শোরুম ‘কার একচেঞ্জ’ এবং নরসিংদীতে ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডই ছিল তার প্রধান কাজ। সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করাতেন। অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতেন। নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনীও আছে। স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক বনে গেছেন। পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী তার স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসা করেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। সুমন স্ত্রীর মাধ্যম গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতার নাম করে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করতেন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাপিয় এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। মক্ষিরানীর মতো পাপিয়ার একাধিক ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে সেখানে মাদক, অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালাতেন নির্বিঘেœ। পাপিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের কাস্টমার ছিলেন বড় বড় শিল্পপতি থেকে শুরু করে বিত্তবান শ্রেণী। রাজনৈতিক মহলের কারও কারও সঙ্গেও পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পাপিয়া ও তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বর্তমান সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সমন্ধে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকা সত্ত্বেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে। ফার্মগেট এলাকাস্থ ২৮ ইন্দিরা রোডে তাদের ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ও নরসিংদীর বাগদী এলাকায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ২টি প্লট আছে রয়েছে। এছাড়াও তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বে তাদের ‘কার একচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শো রুমে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে এবং নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে। র‌্যাবের তদন্তে পাপিয়া ও তার স্বামী অধিকাংশ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেছে বলে জানা যায়। সবশেষ গত ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন হোটেল ওয়েস্টিনের কয়েকটি বিলাসবহুল রুমে অবস্থান করে বলে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। প্রায় ২ মাসে তারা হোটেলে ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ বিল পরিশোধ করে। প্রাথমিক তদন্তে র‌্যাব জানতে পারে শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ ইত্যাদির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে পুলিশের এসআই ও বংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার নামে মোট ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকাসহ ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হচ্ছে নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। তারা ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কিশোরী ও তরুণীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতো। যাদের অধিকাংশই নরসিংদী এলাকা হতে চাকরি দেয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব অনৈতিক কাজে কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো পাপিয়া বাহিনী। বিভিন্ন বসয়ী মেয়েদের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণে পাপিয়া নরসিংদী এলাকায় ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামক একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলো। যাদের মাধ্যমে তারা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এদের ব্যবহার করতো। র‌্যাব জানায়, ‘পাপিয়ার আয়কর ফাইল তলব করে দেখা যায়, সেখানে সে বছরে ২২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অথচ তার প্রতিদিন বারের বিলই আসে আড়াই লাখ টাকা। যারা হোটেলে আসত তাদের কাছে বিভিন্ন বসয়ী মেয়েদের পাঠাতো পাপিয়া। ওইসব মেয়েদের সঙ্গে আসামাজিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও করে রাখতো পাপিয়া। পরে সেইসব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেও মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতো।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। ছাত্রজীবন থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণের জন্য পাপিয়ার স্বামী সুমন বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন সুমন। এরই মধ্যে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। এরপর তার স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে কাজে লাগান। নরংসিদির মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর নরসিংদিতে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে কোণঠাসা হয়ে পড়েন পাপিয়া ও তার স্বামী। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিরোধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে করে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন সদর আসনের এক এমপির গ্রুপের হয়ে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তাদের ঢাকা সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পাপিয়া যুবলীগ থেকে বহিষ্কার

এদিকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া পাপিয়া নূরকে নরসিংদী যুব মহিলা লীগের পদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের (২২) এর (ক) উপধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।