সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার যে দায়িত্ব দেবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পেশাদারিত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করবে। গতকাল চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপ্রতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান একথা বলেন।
সেনাপ্রধান বলেন, সারাবিশ্বে আজ কোভিড- ১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত। মানব সভ্যতা আজ সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমাদের দেশেও এ মহামারী আঘাত হেনেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংকটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করোনা যুদ্ধে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সাহসিকাতর সঙ্গে সারাদেশে বিভিন্ন জনমুখী ও বাস্তবধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অদৃশ্য এ শক্রুকে মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালণকালে আমাদের অনেক সদস্যও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন কঠিন বাস্তবতায় আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্দশা। বরাবরের মতো এবারও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী।
সেনাপ্রধান বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদের দিনেও নিজেদের পরিবারকে ফেলে দেশ মাতৃকার সেবায় সেনাবাহিনী আত্মনিবেদন করেছে। সেনা সদস্যরা তাদের নিজেদের পরিবারে করোনা আক্রান্ত এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আপনজনকে ফেলে সেনাবাহিনীর মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে নিজ শপথ রক্ষার নিমিত্তে আত্মনিবেদন করে চলেছে। আমাদের সর্বাবস্থায় দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে প্রস্তুত থাকতে হবে। জল, স্থল অন্তরীক্ষে যেখানেই যাবার আদেশ করা হবে সেখানেই যাব। সেনাবাহিনীকে যথাযথ কাজের মাধ্যমে সরকার ও দেশের আপামর জনগণের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।
সেনাপ্রধান বলেন, মানুষের সার্বিক নিরপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হয়। সেনাবাহিনী আজ অবধি অর্পিত কোন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়নি। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে সর্বদাই দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। তবে কেউ যদি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে তাহলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত এবং সক্ষম।
এর আগে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) এর ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স এবং ৫৩তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে স্বল্প পরিসরে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনাড়ম্বরভাবে অনুষ্ঠান চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স এবং ৫৩ বিএমএ স্পেশাল কোর্সের সর্বমোট ২৫৫ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ২৩১ জন পুরুষ ও ২৪ জন মহিলা অফিসার রয়েছেন, যারা সেনাবাহিনীর চলমান ‘অপারেশন কোভিড শিল্ড’-এ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার তামিম আহমেদ ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হন এবং গৌরবমণ্ডিত ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এছাড়া, কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার মাসরুফ হাসান নাঈম সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন। পরে ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন এবং পিতামাতা ও অভিভাবকরা নবীন অফিসারদের র্যাংক-ব্যাজ পরিয়ে দেন। এর আগে প্রধান অতিথি বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), বিএমএ’র কমান্ড্যান্ট এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার তাকে অভ্যর্থনা জানান। উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা এ বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।
শুক্রবার, ১৯ জুন ২০২০ , ৫ আষাঢ় ১৪২৭, ২৬ শাওয়াল ১৪৪১
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার যে দায়িত্ব দেবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পেশাদারিত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করবে। গতকাল চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপ্রতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান একথা বলেন।
সেনাপ্রধান বলেন, সারাবিশ্বে আজ কোভিড- ১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত। মানব সভ্যতা আজ সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমাদের দেশেও এ মহামারী আঘাত হেনেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংকটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করোনা যুদ্ধে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সাহসিকাতর সঙ্গে সারাদেশে বিভিন্ন জনমুখী ও বাস্তবধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অদৃশ্য এ শক্রুকে মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালণকালে আমাদের অনেক সদস্যও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন কঠিন বাস্তবতায় আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্দশা। বরাবরের মতো এবারও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী।
সেনাপ্রধান বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদের দিনেও নিজেদের পরিবারকে ফেলে দেশ মাতৃকার সেবায় সেনাবাহিনী আত্মনিবেদন করেছে। সেনা সদস্যরা তাদের নিজেদের পরিবারে করোনা আক্রান্ত এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আপনজনকে ফেলে সেনাবাহিনীর মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে নিজ শপথ রক্ষার নিমিত্তে আত্মনিবেদন করে চলেছে। আমাদের সর্বাবস্থায় দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে প্রস্তুত থাকতে হবে। জল, স্থল অন্তরীক্ষে যেখানেই যাবার আদেশ করা হবে সেখানেই যাব। সেনাবাহিনীকে যথাযথ কাজের মাধ্যমে সরকার ও দেশের আপামর জনগণের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।
সেনাপ্রধান বলেন, মানুষের সার্বিক নিরপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হয়। সেনাবাহিনী আজ অবধি অর্পিত কোন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়নি। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে সর্বদাই দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। তবে কেউ যদি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে তাহলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত এবং সক্ষম।
এর আগে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) এর ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স এবং ৫৩তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে স্বল্প পরিসরে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনাড়ম্বরভাবে অনুষ্ঠান চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স এবং ৫৩ বিএমএ স্পেশাল কোর্সের সর্বমোট ২৫৫ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ২৩১ জন পুরুষ ও ২৪ জন মহিলা অফিসার রয়েছেন, যারা সেনাবাহিনীর চলমান ‘অপারেশন কোভিড শিল্ড’-এ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার তামিম আহমেদ ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হন এবং গৌরবমণ্ডিত ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এছাড়া, কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার মাসরুফ হাসান নাঈম সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন। পরে ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন এবং পিতামাতা ও অভিভাবকরা নবীন অফিসারদের র্যাংক-ব্যাজ পরিয়ে দেন। এর আগে প্রধান অতিথি বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), বিএমএ’র কমান্ড্যান্ট এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার তাকে অভ্যর্থনা জানান। উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা এ বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।