ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে যুবলীগের : বিতর্কিতদের দায় নেবে না সংগঠন

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু নেতাকর্মীর কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে যুবলীগের। ক্যাসিনোকাণ্ডে সমালোচনায় থাকা যুবলীগকে তার অতীত গৌরব ফিরিয়ে দিতে শীর্ষস্থানীয় পদসহ বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছিল। সামাজিক ও উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে নতুন নেতৃত্ব সংগঠনটিকে বেশ ভালোই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কতিপয় নেতাকর্মীর কারণে আবারও সমালোচনার মুখে সংগঠনটি। অবশ্য শীর্ষস্থানীয়রা বলছেন, দু’এক জন ব্যাক্তির অপকর্মের দায় পুরো সংগঠন নেবে না। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বহিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর গভীর রাতে উপজেলা যুবলীগের দুই নেতা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম (৪২) ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আসাদুল ইসলামকে (৩৫) সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য ঘটনায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরে জাহাঙ্গীর আলমকে পুলিশ ছেড়ে দিয়।

সম্প্রতি মাস্ক পরতে বলায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রাজধানীর পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল রানা। এ ঘটনায় গত ২৭ জুলাই রাতে সরকারি কাজে বাধা ও চুরির অভিযোগ তুলে পল্লবী থানায় একটি মামলাটি করেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আল ফরহাদ মোল্লা। মামলার অভিযোগে বলা হয়, যুবলীগ নেতা জুয়েল রানাকে মাস্ক পরতে বলায় তিনি তার (ট্রাফিক সার্জেন্ট) ওপর হামলা চালান এবং শরীরে সংযুক্ত ক্যামেরা কেড়ে নেন। জুয়েল নিজের পকেট থেকে পিস্তল বের করেও সার্জেন্টের দিকে তেড়ে আসেন। থানায় মামলা হওয়ার পর জুয়েলকে বহিষ্কার করে যুবলীগ।

স্থানীয় বেশ কয়েকটি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের সর্বস্ব দখল করে নেয়ার অভিযোগ চট্টগ্রামের কর্ণফূলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সোলামান তালুকদারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও যুবলীগের সাভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, সোলায়মান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নৈশপ্রহরী ছিলেন। যুবলীগের পরিচয়ে তাদের বসতভিটা দখল করে নিয়েছেন। বসতভিটা ফিরে পেতে গত ৪ বছর ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রতিকার না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। পেয়ার মোহাম্মদের অভিযোগ মতে, ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সোলায়মান তালুকদার তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তাদের বসতবাড়ি ভেঙে ১০ বিঘা সম্পত্তি দখলে নেয়। এরপর বসতভিটা ফিরে পেতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীদের দ্বারস্থ হলেও কোন সাড়া পাননি। এ নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। অবশ্য সোলায়মান তালুকদার বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক ও সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন।

তাছাড়া সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে আলোচিত ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও অনেকেই থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কম্পিউটার চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগ নেতা পলাশ শরীফকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ে ফরিদপুর জেলা আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত যুবলীগ। একই অভিযোগে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সংবাদকে বলেন, দিনাজপুরে পুলিশ প্রথমে জাহাঙ্গীরকে ধরলেও পরে ছেঢ়ে দেয়। কিন্তু আমরা তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করিনি। এর তদন্ত হবে। তারপর ব্যবস্থা নেব। পল্লবীর ঘটনাটি একেক জায়গায় একেকরকমভাবে এসেছে। তবে তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, গুটিকয়েক ব্যাক্তির দায় তো পুরো সংগঠন নেবে না। আমরা যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি ব্যবস্থা নিচ্ছি। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছি।

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে যুবলীগের : বিতর্কিতদের দায় নেবে না সংগঠন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু নেতাকর্মীর কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে যুবলীগের। ক্যাসিনোকাণ্ডে সমালোচনায় থাকা যুবলীগকে তার অতীত গৌরব ফিরিয়ে দিতে শীর্ষস্থানীয় পদসহ বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছিল। সামাজিক ও উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে নতুন নেতৃত্ব সংগঠনটিকে বেশ ভালোই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কতিপয় নেতাকর্মীর কারণে আবারও সমালোচনার মুখে সংগঠনটি। অবশ্য শীর্ষস্থানীয়রা বলছেন, দু’এক জন ব্যাক্তির অপকর্মের দায় পুরো সংগঠন নেবে না। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বহিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর গভীর রাতে উপজেলা যুবলীগের দুই নেতা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম (৪২) ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আসাদুল ইসলামকে (৩৫) সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য ঘটনায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরে জাহাঙ্গীর আলমকে পুলিশ ছেড়ে দিয়।

সম্প্রতি মাস্ক পরতে বলায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রাজধানীর পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল রানা। এ ঘটনায় গত ২৭ জুলাই রাতে সরকারি কাজে বাধা ও চুরির অভিযোগ তুলে পল্লবী থানায় একটি মামলাটি করেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আল ফরহাদ মোল্লা। মামলার অভিযোগে বলা হয়, যুবলীগ নেতা জুয়েল রানাকে মাস্ক পরতে বলায় তিনি তার (ট্রাফিক সার্জেন্ট) ওপর হামলা চালান এবং শরীরে সংযুক্ত ক্যামেরা কেড়ে নেন। জুয়েল নিজের পকেট থেকে পিস্তল বের করেও সার্জেন্টের দিকে তেড়ে আসেন। থানায় মামলা হওয়ার পর জুয়েলকে বহিষ্কার করে যুবলীগ।

স্থানীয় বেশ কয়েকটি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের সর্বস্ব দখল করে নেয়ার অভিযোগ চট্টগ্রামের কর্ণফূলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সোলামান তালুকদারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও যুবলীগের সাভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, সোলায়মান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নৈশপ্রহরী ছিলেন। যুবলীগের পরিচয়ে তাদের বসতভিটা দখল করে নিয়েছেন। বসতভিটা ফিরে পেতে গত ৪ বছর ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রতিকার না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। পেয়ার মোহাম্মদের অভিযোগ মতে, ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সোলায়মান তালুকদার তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তাদের বসতবাড়ি ভেঙে ১০ বিঘা সম্পত্তি দখলে নেয়। এরপর বসতভিটা ফিরে পেতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীদের দ্বারস্থ হলেও কোন সাড়া পাননি। এ নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। অবশ্য সোলায়মান তালুকদার বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক ও সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন।

তাছাড়া সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে আলোচিত ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও অনেকেই থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কম্পিউটার চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগ নেতা পলাশ শরীফকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ে ফরিদপুর জেলা আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত যুবলীগ। একই অভিযোগে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সংবাদকে বলেন, দিনাজপুরে পুলিশ প্রথমে জাহাঙ্গীরকে ধরলেও পরে ছেঢ়ে দেয়। কিন্তু আমরা তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করিনি। এর তদন্ত হবে। তারপর ব্যবস্থা নেব। পল্লবীর ঘটনাটি একেক জায়গায় একেকরকমভাবে এসেছে। তবে তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, গুটিকয়েক ব্যাক্তির দায় তো পুরো সংগঠন নেবে না। আমরা যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি ব্যবস্থা নিচ্ছি। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছি।