দুই জেলায় ভারি বর্ষণ ৫ম দফা বন্যার আশঙ্কা

ছাতকে হাজার হাজার

একর আমন তলিয়ে

প্রতিনিধি, ছাতক (সুনামগঞ্জ)

ছাতকে ফের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই নিয়ে এখানে চারবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এখানের কৃষক। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জমির পর জমি। চতুর্থ বারের মতো অকাল বন্যায় হাজার-হাজার একর রোপা আমন ধান ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এখানের কৃষকরা। তৃতীয় দফা বন্যায় এখানের সকল বীজতলা তলিয়ে যায়। বন্যা শেষে কৃষকরা সরকারি ও বেসরকারিভাবে বীজ সংগ্রহ করে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করেছিলেন। চলতি এ বন্যায় রোপণকৃত সকল রোপা আমন খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। সুরমা, পিয়াইন ও চেলা নদীসহ উপজেলার সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যে কোন সময় ছাতকের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকার অনেক ঘর বাড়ি ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নিম্নœাঞ্চল এলাকার একাধিক মৎস্য খামারও তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ইউনিয়নেরই গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী রোববার সকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৫ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলা সদরের সঙ্গে সকল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ইসলামপুর ইউনিয়নের নিজগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গির আলম রাসেল জানিয়েছেন, ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সারা ইউনিয়নের রোপা আমন ধান ও বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানে নদী ভাঙ্গনও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কালারুকা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সত্তার ও উত্তর খুরমা ইউনিয়নের কৃষক আজাদ মিয়া জানান, তাদের রোপণকৃত সকল ক্ষেত বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খান জানিয়েছেন, উপজেলায় ১৩ হাজার ১শ ১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়েছিল। এ বন্যায় অধিকাংশ জমির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দ্রুত বন্যার পানি কমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রামে ৬০ হাজার

মানুষ পানিবন্দী

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ৫ম দফা বন্যায় আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন করে আরো ২৫টি চর প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ১২০টি চরের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ বছরে সর্বোচ্চ। ধরলা নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নœাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেইসাথে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। জেলার ৯টি উপজেলার ৬৭টি উন্মুক্ত পয়েন্টে ভাঙন তীব্ররুপ ধারণ করেছে। এদিকে বন্যায় ঘরবাড়ি, আবাদিজমি, লেট্রিন, নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও সেনিটেশন সমস্যা। বন্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। লোকজন গবাদিপশু নিয়ে আবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. শামসুজ্জামান মিয়া জানান, পঞ্চম দফা বন্যায় ১৬ হাজার ৭৭৯ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে রোপা আমন ১৫ হাজার ৬৯৭ হেক্টর, মাসকালাই ৬৫৪ হেক্টর, শাকসবজি ৩৫০ হেক্টর এবং চিনা বাদাম ৮০ হেক্টর।

কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চব্বিশ ঘণ্টার রেকর্ডে এ বছরের সর্বোচ্চ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত প্রবাহমান থাকবে বলে তিনি জানান।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

দুই জেলায় ভারি বর্ষণ ৫ম দফা বন্যার আশঙ্কা

image

ছাতকে হাজার হাজার

একর আমন তলিয়ে

প্রতিনিধি, ছাতক (সুনামগঞ্জ)

ছাতকে ফের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই নিয়ে এখানে চারবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এখানের কৃষক। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জমির পর জমি। চতুর্থ বারের মতো অকাল বন্যায় হাজার-হাজার একর রোপা আমন ধান ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এখানের কৃষকরা। তৃতীয় দফা বন্যায় এখানের সকল বীজতলা তলিয়ে যায়। বন্যা শেষে কৃষকরা সরকারি ও বেসরকারিভাবে বীজ সংগ্রহ করে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করেছিলেন। চলতি এ বন্যায় রোপণকৃত সকল রোপা আমন খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। সুরমা, পিয়াইন ও চেলা নদীসহ উপজেলার সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যে কোন সময় ছাতকের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকার অনেক ঘর বাড়ি ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নিম্নœাঞ্চল এলাকার একাধিক মৎস্য খামারও তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ইউনিয়নেরই গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী রোববার সকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৫ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলা সদরের সঙ্গে সকল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ইসলামপুর ইউনিয়নের নিজগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গির আলম রাসেল জানিয়েছেন, ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সারা ইউনিয়নের রোপা আমন ধান ও বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানে নদী ভাঙ্গনও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কালারুকা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সত্তার ও উত্তর খুরমা ইউনিয়নের কৃষক আজাদ মিয়া জানান, তাদের রোপণকৃত সকল ক্ষেত বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খান জানিয়েছেন, উপজেলায় ১৩ হাজার ১শ ১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়েছিল। এ বন্যায় অধিকাংশ জমির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দ্রুত বন্যার পানি কমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রামে ৬০ হাজার

মানুষ পানিবন্দী

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ৫ম দফা বন্যায় আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন করে আরো ২৫টি চর প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ১২০টি চরের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ বছরে সর্বোচ্চ। ধরলা নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নœাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেইসাথে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। জেলার ৯টি উপজেলার ৬৭টি উন্মুক্ত পয়েন্টে ভাঙন তীব্ররুপ ধারণ করেছে। এদিকে বন্যায় ঘরবাড়ি, আবাদিজমি, লেট্রিন, নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও সেনিটেশন সমস্যা। বন্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। লোকজন গবাদিপশু নিয়ে আবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. শামসুজ্জামান মিয়া জানান, পঞ্চম দফা বন্যায় ১৬ হাজার ৭৭৯ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে রোপা আমন ১৫ হাজার ৬৯৭ হেক্টর, মাসকালাই ৬৫৪ হেক্টর, শাকসবজি ৩৫০ হেক্টর এবং চিনা বাদাম ৮০ হেক্টর।

কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চব্বিশ ঘণ্টার রেকর্ডে এ বছরের সর্বোচ্চ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত প্রবাহমান থাকবে বলে তিনি জানান।