নিবন্ধিত ৩৬ দলের প্রার্থী নেই

নৌকা-ধানের শীষ ২৪টিতেই, হাতপাখা ৮, লাঙ্গল ৪, হুক্কা ১

প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩৬টি দলের কোন প্রার্থী নেই। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের হার ১৩ শতাংশের কম। অর্থাৎ ৮৭ শতাংশের বেশি দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করেছিল সরকার। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিক দলগুলো এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধিতা করেছিল বিএনপি ও তাদের জোট ২০ দলের শরিকরা।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ভোট হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (নৌকা) ও বিএনপি (ধানের শীষ) সবগুলো পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছে। ৮টি পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাত পাখা)। জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী (লাঙ্গল) আছে ৪টি পৌরসভায় এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রার্থী রয়েছে ১টি পৌরসভায়।

গণফোরাম, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ, ইনু), বিকল্প ধারা, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি, রব), জাতীয় পার্টি (জেপি, মঞ্জু), সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কোন প্রার্থী নেই প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত জাকের পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মতো ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলোও প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিতে পারেনি। গত তিন দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের সময় ছোট-বড় অধিকাংশ দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে ভিড়লেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে যার মতো দলীয় প্রার্থী দেয়ার জোটগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক সক্ষমতার অভাবে অনেক দলই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিতে পারে না।

নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ধারা বদল করে ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত পাঁচটি আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে দলীয় প্রতীকে ভোট করার ব্যবস্থা নেয় সরকার। এরপর থেকে এসব স্তরে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ গ্রহণের হার খুবই কম।

নির্বাচনী পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তৃণমূলের এসব নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় দলীয় কোন্দল যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মনোনয়ন বাণিজ্য। একই দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার নানা সমস্যার বিষয়ে অনির্ধারিত আলোচনা হয়। তবে আইন সংশোধন করে আবার উন্মুক্ত পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নীতিগত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

নির্বচানী বিশ্লেষক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে সংবাদকে বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। উন্মুক্ত থাকলে অনেক প্রার্থী অংশ নিত। এখন নৌকা বা ধানের শীষ প্রতীকের দাপটে নির্দলীয় তবে যোগ্য অনেক প্রার্থী ভোটে দাঁড়ায় না। একই কারণে ছোট ছোট দলগুলোও প্রার্থী দেয় না। আবার নামসর্বস্ব কিছু দল আছে, যাদের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আইন সংশোধনের আগে সরকার বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়নি বলেই হিতেবিপরীত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা বেড়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্যও বেড়েছে। এর ফলে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি কলুষিত হয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি মনোনীত এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নতুন তারিখ অনুযায়ী শ্রীপুরে ভোট হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি।

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪২

পৌর নির্বাচনের প্রথম ধাপ

নিবন্ধিত ৩৬ দলের প্রার্থী নেই

নৌকা-ধানের শীষ ২৪টিতেই, হাতপাখা ৮, লাঙ্গল ৪, হুক্কা ১

ফয়েজ আহমেদ তুষার

প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩৬টি দলের কোন প্রার্থী নেই। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের হার ১৩ শতাংশের কম। অর্থাৎ ৮৭ শতাংশের বেশি দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করেছিল সরকার। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিক দলগুলো এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধিতা করেছিল বিএনপি ও তাদের জোট ২০ দলের শরিকরা।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ভোট হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (নৌকা) ও বিএনপি (ধানের শীষ) সবগুলো পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছে। ৮টি পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাত পাখা)। জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী (লাঙ্গল) আছে ৪টি পৌরসভায় এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রার্থী রয়েছে ১টি পৌরসভায়।

গণফোরাম, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ, ইনু), বিকল্প ধারা, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি, রব), জাতীয় পার্টি (জেপি, মঞ্জু), সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কোন প্রার্থী নেই প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত জাকের পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মতো ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলোও প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিতে পারেনি। গত তিন দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের সময় ছোট-বড় অধিকাংশ দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে ভিড়লেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে যার মতো দলীয় প্রার্থী দেয়ার জোটগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক সক্ষমতার অভাবে অনেক দলই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিতে পারে না।

নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ধারা বদল করে ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত পাঁচটি আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে দলীয় প্রতীকে ভোট করার ব্যবস্থা নেয় সরকার। এরপর থেকে এসব স্তরে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ গ্রহণের হার খুবই কম।

নির্বাচনী পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তৃণমূলের এসব নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় দলীয় কোন্দল যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মনোনয়ন বাণিজ্য। একই দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার নানা সমস্যার বিষয়ে অনির্ধারিত আলোচনা হয়। তবে আইন সংশোধন করে আবার উন্মুক্ত পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নীতিগত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

নির্বচানী বিশ্লেষক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে সংবাদকে বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। উন্মুক্ত থাকলে অনেক প্রার্থী অংশ নিত। এখন নৌকা বা ধানের শীষ প্রতীকের দাপটে নির্দলীয় তবে যোগ্য অনেক প্রার্থী ভোটে দাঁড়ায় না। একই কারণে ছোট ছোট দলগুলোও প্রার্থী দেয় না। আবার নামসর্বস্ব কিছু দল আছে, যাদের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আইন সংশোধনের আগে সরকার বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়নি বলেই হিতেবিপরীত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা বেড়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্যও বেড়েছে। এর ফলে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি কলুষিত হয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি মনোনীত এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নতুন তারিখ অনুযায়ী শ্রীপুরে ভোট হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি।