মাদকের এডিসহ বরখাস্ত ৫

পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানায় স্বর্ণ লুটের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসির) এক কর্মকর্তা ও তার সহযোগীদের বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ আহসানুল জব্বার জানান, স্বর্ণ লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক (এডি) এসএম সাকিব হোসেনকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনকি পুলিশি তদন্তে তার সহযোগী হিসেবে নাম আসা ডিএনসির এক এএসআই, সিপাহী ও ড্রাইভারকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে, পুরান ঢাকার কোতয়ালি থানায় ৯০ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনায় করা একটি মামলার তদন্তে বেড়িয়ে আসে এডি সাকিব হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ লুট চক্রের। পরে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে সাকিব হোসেন ও পৃথক অভিযানে তার চক্রের আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাকিব হোসেনসহ তিনজনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। অন্য দুইজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাকিব হোসেন ও তার দুই সহযোগী সিপাহী আমিনুল ও সোর্স হারুন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর জিন্দাবাহার লেনের একটি স্বর্ণের দোকানের মালিককে তুলে নিয়ে যান। তারা ওই দোকানের ৯০ ভরি স্বর্ণ লুট করেন। এ ঘটনায় ১২ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ প্রথমে দোকানের একজন কর্মচারীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৮ জানুয়ারি ২ কর্মচারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের দেয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে সাকিবসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, অভিযুক্ত এডি সাকিবের গ্রামের বাড়ি যশোর জেলায়। তিনি ৩৪ তম বিসিএস-এর নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাকিব নিজেই এ চক্র গড়ে তোলেন। পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারকেন্দ্রিক স্বর্ণ কারবারিদের টার্গেট করে এ চক্রের মাধ্যমে একের পর এক স্বর্ণের চালান ডাকাতি করে আসছেন তিনি। এই অপকর্মে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ব্যবহার করেন সরকারি ডাবল পিকআপভ্যান। সরকারি ওই গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৬৮৫৯। স্বর্ণ লুটপাটের সময় নিজের সংস্থার পোশাকও পরতেন তিনি। এখন পর্যন্ত সাকিবের এই চক্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৮ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা অন্তত দুই দফায় ৩২০ ভরি স্বর্ণ গায়েব করেছেন। সাকিবের সহযোগী হিসেবে এই চক্রে থাকা ডিএনসির তিন সদস্য সিপাহি আমিনুল, এএসআই এমদাদ ও ড্রাইভার ইব্রাহিমকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

পুলিশ সূত্র আরও জানায়, তাঁতীবাজারের জীবন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার অনেক পুরোনো সম্পর্ক। তাঁতীবাজার থেকে কেউ স্বর্ণ কিনে বড় চালান নিয়ে বের হলেই জীবন ফোন করতেন সাকিবকে। পরে পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ওই ব্যবসায়ীকে গাড়িতে তুলে অস্ত্র দেখিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলা হতো। এরপর ওই স্বর্ণ লুট করা হতো। জীবন ছাড়াও আরও দু’জন সাকিবকে অপকর্মে সহযোগিতা করত। তারা হলেন স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী রতন কুমার সেন ও মো. হারুন। আদালত সূত্র জানায়, স্বর্ণ লুটের এ ঘটনায় জীবন ও রতন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চক্রটি আরেক ব্যবসায়ীর কাছ ২৩০ ভরি স্বর্ণ লুট করেছিল।

তাঁতীবাজার থেকে স্বর্ণ নিয়ে যাওয়ার পথে ওই ব্যবসায়ীর স্বর্ণ লুট করে রাস্তায় ছেড়ে দেয় সাকিব ও তার গ্রুপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি গাড়ি ও পোশাক নিয়ে স্বর্ণ লুটের চক্রে জড়িয়ে পড়ার এমন ঘটনা উদ্বেগজনক। মাদক কারবারিদের মোকাবিলায় অধিদপ্তরের সদস্যদের অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাদের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এ ব্যাপারে পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার মঙ্গলবার রাতে জানান, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। একটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

আরও খবর
সময়োচিত পদক্ষেপে করোনাকালেও বিশ্বমন্দা এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী
ইশরাত নিশাত স্মরণে ‘এক জীবনের থিয়েটার’ অনুষ্ঠান
বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোজ্ঞ প্রকাশনা
কুষ্টিয়ার এসপিকে হাইকোর্টে তলব
প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে করোনা বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ অর্থমন্ত্রী
রাজশাহীতে বিয়ের শর্তে চিকিৎসকের জামিন
ঘাতক চালক রিমান্ডে
২৭টি ফ্ল্যাট কর্মচারীদের অবৈধ দখলে
কারাগারে নয়, বই হাতে সংশোধনে পাঠালেন আদালত
খেলার মাঠ ও বিনোদনকেন্দ্রের উদ্যোগ নেয়া হবে রেজাউল
হতদরিদ্রদের আবাসন সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দেব শাহাদাত
সব ছিনিয়ে নিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিত ওরা
সবুজ শাকের ডগায় বেঁচে থাকার স্বপ্ন

বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১ , ৭ মাঘ ১৪২৭, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

স্বর্ণ লুটের অভিযোগ

মাদকের এডিসহ বরখাস্ত ৫

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানায় স্বর্ণ লুটের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসির) এক কর্মকর্তা ও তার সহযোগীদের বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ আহসানুল জব্বার জানান, স্বর্ণ লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক (এডি) এসএম সাকিব হোসেনকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনকি পুলিশি তদন্তে তার সহযোগী হিসেবে নাম আসা ডিএনসির এক এএসআই, সিপাহী ও ড্রাইভারকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে, পুরান ঢাকার কোতয়ালি থানায় ৯০ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনায় করা একটি মামলার তদন্তে বেড়িয়ে আসে এডি সাকিব হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ লুট চক্রের। পরে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে সাকিব হোসেন ও পৃথক অভিযানে তার চক্রের আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাকিব হোসেনসহ তিনজনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। অন্য দুইজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাকিব হোসেন ও তার দুই সহযোগী সিপাহী আমিনুল ও সোর্স হারুন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর জিন্দাবাহার লেনের একটি স্বর্ণের দোকানের মালিককে তুলে নিয়ে যান। তারা ওই দোকানের ৯০ ভরি স্বর্ণ লুট করেন। এ ঘটনায় ১২ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ প্রথমে দোকানের একজন কর্মচারীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৮ জানুয়ারি ২ কর্মচারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের দেয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে সাকিবসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, অভিযুক্ত এডি সাকিবের গ্রামের বাড়ি যশোর জেলায়। তিনি ৩৪ তম বিসিএস-এর নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাকিব নিজেই এ চক্র গড়ে তোলেন। পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারকেন্দ্রিক স্বর্ণ কারবারিদের টার্গেট করে এ চক্রের মাধ্যমে একের পর এক স্বর্ণের চালান ডাকাতি করে আসছেন তিনি। এই অপকর্মে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ব্যবহার করেন সরকারি ডাবল পিকআপভ্যান। সরকারি ওই গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৬৮৫৯। স্বর্ণ লুটপাটের সময় নিজের সংস্থার পোশাকও পরতেন তিনি। এখন পর্যন্ত সাকিবের এই চক্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৮ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা অন্তত দুই দফায় ৩২০ ভরি স্বর্ণ গায়েব করেছেন। সাকিবের সহযোগী হিসেবে এই চক্রে থাকা ডিএনসির তিন সদস্য সিপাহি আমিনুল, এএসআই এমদাদ ও ড্রাইভার ইব্রাহিমকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

পুলিশ সূত্র আরও জানায়, তাঁতীবাজারের জীবন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার অনেক পুরোনো সম্পর্ক। তাঁতীবাজার থেকে কেউ স্বর্ণ কিনে বড় চালান নিয়ে বের হলেই জীবন ফোন করতেন সাকিবকে। পরে পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ওই ব্যবসায়ীকে গাড়িতে তুলে অস্ত্র দেখিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলা হতো। এরপর ওই স্বর্ণ লুট করা হতো। জীবন ছাড়াও আরও দু’জন সাকিবকে অপকর্মে সহযোগিতা করত। তারা হলেন স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী রতন কুমার সেন ও মো. হারুন। আদালত সূত্র জানায়, স্বর্ণ লুটের এ ঘটনায় জীবন ও রতন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চক্রটি আরেক ব্যবসায়ীর কাছ ২৩০ ভরি স্বর্ণ লুট করেছিল।

তাঁতীবাজার থেকে স্বর্ণ নিয়ে যাওয়ার পথে ওই ব্যবসায়ীর স্বর্ণ লুট করে রাস্তায় ছেড়ে দেয় সাকিব ও তার গ্রুপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি গাড়ি ও পোশাক নিয়ে স্বর্ণ লুটের চক্রে জড়িয়ে পড়ার এমন ঘটনা উদ্বেগজনক। মাদক কারবারিদের মোকাবিলায় অধিদপ্তরের সদস্যদের অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাদের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এ ব্যাপারে পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার মঙ্গলবার রাতে জানান, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। একটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।