মূল : চিনুয়া আচেবে ভাষান্তর : অনন্ত মাহফুজ
উজ্জ্বল সকাল, শান্ত ও নীরব, সারারাতের বৃষ্টি আর বজ্রপাতের পর- সেই রকম এক সকাল যে সকাল চার্চ-বেলকে অসাধারণ আকর্ষণীয় এবং শব্দ তৈরির শক্তি দেয়। চার্চের বেল যখন গভীর ও পবিত্র সুরে আদেশ করেছিল: ‘তোমরা... কাজ... থেকে... বিরত... হও’ তখন গ্রামবাসী- পুরুষ, নারী ও শিশুরা ¯্রােতের মতো চার্চের দিকে প্রবাহিত হলো। এক বৃদ্ধ মহিলা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠায় আমি দরজায় থামলাম ও তার দিকে ঘুরে তাকালাম। ‘আমি জুতো পরতে ভুলে গেছি’, বৃদ্ধা করুণ কণ্ঠে ব্যাখ্যা দিয়েছিল।
চার্চের ভিতরে বসার ব্যবস্থা খুব সাধারণ। পুরুষরা ডান পাশে, নারীরা বামে এবং গায়কদল সামনে। এই বিভাজন বিধিবহির্ভূত নয় বরং তা প্রার্থনার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। উদারহরণ হিসেবে বলা যায়, সংগীত পরিবেশন বসার ব্যবস্থাপনাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে। মনে হয়েছে সবাই এ বিষয়ে একমত যে, ঐ অংশটি গায়কদল এবং অন্যান্য যুবদের জন্য তৈরি করা হয়েছে যারা ঈশ^রের সেবায় অনভিজ্ঞ। অন্যান্য দলের বিষয়ে বলা যায়, প্রত্যেকেই তাদের সাধ্যমতো প্রাণবন্তভাবে গেয়েছে। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, একই গান একই সময়ে শুরু স্বীকৃত ছিল না। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো, যে কোনো প্রদত্ত সময়ে- কোনো একটি স্তবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত- একটি কণ্ঠই সবসময় শোনা যায়। যাই হোক, এই পদ্ধতির সহজাত একটি অসুবিধা বিদ্যমান। সংগীতদল যখন সর্বদা ‘আমেন’-এর কাছাকাছি থাকে তখন নারীরা শেষ স্তবকের শুরুতে থাকে এবং পুরুষরা থাকে এর মাঝামাঝি। তবে এ থেকে কোনো সমস্যা তৈরি হয় না। প্রথা হলো, যে দল অন্যদের আগে শেষ করবে সেই দল সত্যিকার খ্রিস্টীয় রীতিতে অন্যদের সাহায্য করবে।
গির্জার ধর্মীয় বক্তৃতাগুলো কল্পনা উদ্রেকারী ছিল। ‘এখন পর্যন্ত সুখকর ধর্মভক্তি থেকে দূরে সরে আসা’ পুরুষেরা কেন নোয়াহ বা মেলচিসডেকের দীর্ঘায়ুর বিষয়ে অংশগ্রহণ করে না সে বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এতটা প্রাণবন্ত বিতর্ক কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। যাজক দেখিয়ে দিয়েছেন যে ইহুদিরা প্রথম ফলমূল মহাপুরোহিতদের পাঠিয়ে দিয়ে তার আশীর্বাদ নিত। ‘আমরা কি এখন তা করি?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন। ‘তাহলে এটা কি কোনো বিস্ময়কর বিষয় যে আমরা মৃত্যু দ্বারা বেষ্টিত?’
এই ক্ষেত্রে আমার মনোযোগ একজন বৃদ্ধের দিকে আকৃষ্ট হলো যার চশমা প্রকৃত জায়গা থেকে অনেকটা নিচে ঝুলেছিল ত্রুটিযুক্ত কোনো ধারণা সংশোধন করার জন্য। যাই হোক, তারা তার পড়ায় ব্যঘাত ঘটায়নি- যা সে মাথা সামনের দিকে বাঁকিয়ে অভিযুক্ত ভেড়ার মতো এবং চশমার ওপর দিকে উঁকি মেরে এক হাতের মতো দূরত্বে রাখা অতি প্রাচীন বাইবেলের দিকে তাকিয়ে পড়ছিল। এই বাইবেল নিশ্চয়ই এর সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কলেবর বৃদ্ধির অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আয়তনের পঞ্চাশ ভাগ বেড়েছে। আমি এই সংস্করণ দেখার পর মানুষ ও গ্রন্থের প্রতি সময়ের আচরণের পার্থক্যের ওপর অনেকক্ষণ ধরে মনোনিবেশ করলাম। ভাগ্যের কষাঘাত ও কুয়াচ্ছন্ন আবহাওয়া এই বৃদ্ধকে চশমা পরতে বাধ্য করেছে; পাশাপাশি, একই অবস্থা যা বাইবেলটির ওপর কাজ করে বাইবেলটির আকার বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরুষরা যদি পুরনো বইয়ের সাম্য নিয়ে জীবন অতিক্রম করতে শিখত তাহলে পৃথিবী জীর্ণ ও ক্ষুধার্ত অবস্থা থেকে মুক্তি পেত! আমার মনে হলো, এই বৃদ্ধের প্রতি একটি উপযুক্ত ধর্মোপদেশ এই লাইনগুলোর মধ্যে আছে: ‘তোমার বাইবেল কীভাবে বাড়ছে তার ওপর মনোনিবেশ কর...’। আমি যখন এই চিন্তা-রশির শেষ প্রান্তে তখনো বৃদ্ধ লোকটি লেখা খুঁজে যাচ্ছে। আরও কয়েকটি বেপরোয়া প্রচেষ্টার পর এই কাজটিকে খারাপ মনে করে কাজ ত্যাগ করল। এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই কারণ এই বাইবেলটি প্রকাশকের কাছ থেকে আসার পর পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে গেছে। ফলাফল এই যে, কেউ হয়তো দেখছে, অধিকতর অস্বস্তিকরভাবে, সেই অংশ থেকে সেন্ট মেথিউ গসপেল উঁকি মারছে যে অংশ নবিদের জন্য বরাদ্দ।
এই পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হলো যে আমাকে যাজকের কথায় মনোযোগ দিতে হলো। ধর্মবাণী দীর্ঘ সময় ধরে চলল এবং শেষ পর্যায়ে এসে আমি স্তূপাকার রবিবারীয় কাপড়ের শব্দের সাথে নাক ডাকার শব্দ শুনলাম, আমার থেকে খুব বেশি দূর হতে নয়। ঠিক তখনই গির্জার তত্ত্বাবধানকারী একজন কর্মচারী কাপড়ের স্তূপের দিকে গিয়ে কাপড় পরিধানকারীকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। সে বলল, ‘পাঁচ এবং ছয় পেন্স’। এটা সম্ভবত স্বপ্ন জগত থেকে আসা আর্থিক বিবৃতি। এই হস্তান্তরটি এতটাই দ্রুত ঘটল যে তা সম্পূর্ণ হস্তান্তর হলো না।
কাজ শেষে আমি দেখলাম, লোকটি দৃশ্যত প্রার্থনায় যে কাজ করেছে তার জন্য সে সন্তুষ্ট। প্রথমে আমি অনুভব করলাম তার সন্তুষ্ট হবার কোনো অধিকার নেই। কিন্তু অধিকতর চিন্তার পর ভেবে অবাক হলাম যে, তার প্রতি অন্তত সুবিচার করা হয়নি। তাকে সেই সকল অস্নাতকদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে যারা মধ্যাহ্ন আহারের পর লাইব্রেরিতে যায় নিদ্রার জন্য। উভয় কাজের পিছনে দর্শন মূলত একই। চার্চের ধর্মীয় পরিবেশ সকল উপাসনাকারীর ভিতরেই প্রবাহিত হয়, তারা জাগ্রত কিংবা নিদ্রিত থাক না কেন, তারা যাজক কিংবা নার্সের দিকে তাকিয়ে থাকে। একইভাবে, পাঠাগারের একটি বৌদ্ধিক পরিবেশ আছে- যা শেলফের কাছাকাছি থাকা যে কারও ওপরে জ্ঞানের প্রশ্বাস ফেলে। এই দর্শন বহু আগে এক কবি প্রচার করেছিলেন।
‘যতই আমি মনে করি না কেন যে শক্তি আছে, যে শক্তির কোনটিকে আমাদের মন প্রভাবিত করে; আমরা আমাদের মনকে এই বিষয়টি বোঝাতে পারি বিচক্ষণ নির্মোহতায়।’ গ্রামের যে কোনো গির্জা পৃথিবীতে সবসময়ই দর্শন শেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা।
লেখক পরিচিতি : চিনুয়া আচেবের জন্ম : নভেম্বর ১৬, ১৯৩০। মৃত্যু : মার্চ ২১, ২০১৩। নাইজেরিয়ার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও আফ্রিকার আধুনিক সাহিত্যের জনক।
লেখক হিসাবে চিনুয়া আচেবি আফ্রিকা এবং পশ্চিমের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করেছিলেন। তার কাজকে মানদণ্ড ধরেই প্রজন্মান্তরে আফ্রিকান লেখকদের কাজের মূল্যায়ন হয়ে আসছে। চিনুয়া ২০ টিরও বেশি গ্রন্থ লিখেছেন। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’-এর সুবাদে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন তিনি। উপন্যাসটি অনুবাদ হয়েছে ৫০ টিরও বেশি ভাষায়। তাছাড়া, বিশ্বজুড়ে উপন্যাসটি প্রায় ১ কোটি কপি বিক্রি হয়। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘অ্যান্টহিলস অফ দি সাভানা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে।
বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২
মূল : চিনুয়া আচেবে ভাষান্তর : অনন্ত মাহফুজ
উজ্জ্বল সকাল, শান্ত ও নীরব, সারারাতের বৃষ্টি আর বজ্রপাতের পর- সেই রকম এক সকাল যে সকাল চার্চ-বেলকে অসাধারণ আকর্ষণীয় এবং শব্দ তৈরির শক্তি দেয়। চার্চের বেল যখন গভীর ও পবিত্র সুরে আদেশ করেছিল: ‘তোমরা... কাজ... থেকে... বিরত... হও’ তখন গ্রামবাসী- পুরুষ, নারী ও শিশুরা ¯্রােতের মতো চার্চের দিকে প্রবাহিত হলো। এক বৃদ্ধ মহিলা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠায় আমি দরজায় থামলাম ও তার দিকে ঘুরে তাকালাম। ‘আমি জুতো পরতে ভুলে গেছি’, বৃদ্ধা করুণ কণ্ঠে ব্যাখ্যা দিয়েছিল।
চার্চের ভিতরে বসার ব্যবস্থা খুব সাধারণ। পুরুষরা ডান পাশে, নারীরা বামে এবং গায়কদল সামনে। এই বিভাজন বিধিবহির্ভূত নয় বরং তা প্রার্থনার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। উদারহরণ হিসেবে বলা যায়, সংগীত পরিবেশন বসার ব্যবস্থাপনাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে। মনে হয়েছে সবাই এ বিষয়ে একমত যে, ঐ অংশটি গায়কদল এবং অন্যান্য যুবদের জন্য তৈরি করা হয়েছে যারা ঈশ^রের সেবায় অনভিজ্ঞ। অন্যান্য দলের বিষয়ে বলা যায়, প্রত্যেকেই তাদের সাধ্যমতো প্রাণবন্তভাবে গেয়েছে। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, একই গান একই সময়ে শুরু স্বীকৃত ছিল না। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো, যে কোনো প্রদত্ত সময়ে- কোনো একটি স্তবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত- একটি কণ্ঠই সবসময় শোনা যায়। যাই হোক, এই পদ্ধতির সহজাত একটি অসুবিধা বিদ্যমান। সংগীতদল যখন সর্বদা ‘আমেন’-এর কাছাকাছি থাকে তখন নারীরা শেষ স্তবকের শুরুতে থাকে এবং পুরুষরা থাকে এর মাঝামাঝি। তবে এ থেকে কোনো সমস্যা তৈরি হয় না। প্রথা হলো, যে দল অন্যদের আগে শেষ করবে সেই দল সত্যিকার খ্রিস্টীয় রীতিতে অন্যদের সাহায্য করবে।
গির্জার ধর্মীয় বক্তৃতাগুলো কল্পনা উদ্রেকারী ছিল। ‘এখন পর্যন্ত সুখকর ধর্মভক্তি থেকে দূরে সরে আসা’ পুরুষেরা কেন নোয়াহ বা মেলচিসডেকের দীর্ঘায়ুর বিষয়ে অংশগ্রহণ করে না সে বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এতটা প্রাণবন্ত বিতর্ক কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। যাজক দেখিয়ে দিয়েছেন যে ইহুদিরা প্রথম ফলমূল মহাপুরোহিতদের পাঠিয়ে দিয়ে তার আশীর্বাদ নিত। ‘আমরা কি এখন তা করি?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন। ‘তাহলে এটা কি কোনো বিস্ময়কর বিষয় যে আমরা মৃত্যু দ্বারা বেষ্টিত?’
এই ক্ষেত্রে আমার মনোযোগ একজন বৃদ্ধের দিকে আকৃষ্ট হলো যার চশমা প্রকৃত জায়গা থেকে অনেকটা নিচে ঝুলেছিল ত্রুটিযুক্ত কোনো ধারণা সংশোধন করার জন্য। যাই হোক, তারা তার পড়ায় ব্যঘাত ঘটায়নি- যা সে মাথা সামনের দিকে বাঁকিয়ে অভিযুক্ত ভেড়ার মতো এবং চশমার ওপর দিকে উঁকি মেরে এক হাতের মতো দূরত্বে রাখা অতি প্রাচীন বাইবেলের দিকে তাকিয়ে পড়ছিল। এই বাইবেল নিশ্চয়ই এর সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কলেবর বৃদ্ধির অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আয়তনের পঞ্চাশ ভাগ বেড়েছে। আমি এই সংস্করণ দেখার পর মানুষ ও গ্রন্থের প্রতি সময়ের আচরণের পার্থক্যের ওপর অনেকক্ষণ ধরে মনোনিবেশ করলাম। ভাগ্যের কষাঘাত ও কুয়াচ্ছন্ন আবহাওয়া এই বৃদ্ধকে চশমা পরতে বাধ্য করেছে; পাশাপাশি, একই অবস্থা যা বাইবেলটির ওপর কাজ করে বাইবেলটির আকার বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরুষরা যদি পুরনো বইয়ের সাম্য নিয়ে জীবন অতিক্রম করতে শিখত তাহলে পৃথিবী জীর্ণ ও ক্ষুধার্ত অবস্থা থেকে মুক্তি পেত! আমার মনে হলো, এই বৃদ্ধের প্রতি একটি উপযুক্ত ধর্মোপদেশ এই লাইনগুলোর মধ্যে আছে: ‘তোমার বাইবেল কীভাবে বাড়ছে তার ওপর মনোনিবেশ কর...’। আমি যখন এই চিন্তা-রশির শেষ প্রান্তে তখনো বৃদ্ধ লোকটি লেখা খুঁজে যাচ্ছে। আরও কয়েকটি বেপরোয়া প্রচেষ্টার পর এই কাজটিকে খারাপ মনে করে কাজ ত্যাগ করল। এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই কারণ এই বাইবেলটি প্রকাশকের কাছ থেকে আসার পর পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে গেছে। ফলাফল এই যে, কেউ হয়তো দেখছে, অধিকতর অস্বস্তিকরভাবে, সেই অংশ থেকে সেন্ট মেথিউ গসপেল উঁকি মারছে যে অংশ নবিদের জন্য বরাদ্দ।
এই পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হলো যে আমাকে যাজকের কথায় মনোযোগ দিতে হলো। ধর্মবাণী দীর্ঘ সময় ধরে চলল এবং শেষ পর্যায়ে এসে আমি স্তূপাকার রবিবারীয় কাপড়ের শব্দের সাথে নাক ডাকার শব্দ শুনলাম, আমার থেকে খুব বেশি দূর হতে নয়। ঠিক তখনই গির্জার তত্ত্বাবধানকারী একজন কর্মচারী কাপড়ের স্তূপের দিকে গিয়ে কাপড় পরিধানকারীকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। সে বলল, ‘পাঁচ এবং ছয় পেন্স’। এটা সম্ভবত স্বপ্ন জগত থেকে আসা আর্থিক বিবৃতি। এই হস্তান্তরটি এতটাই দ্রুত ঘটল যে তা সম্পূর্ণ হস্তান্তর হলো না।
কাজ শেষে আমি দেখলাম, লোকটি দৃশ্যত প্রার্থনায় যে কাজ করেছে তার জন্য সে সন্তুষ্ট। প্রথমে আমি অনুভব করলাম তার সন্তুষ্ট হবার কোনো অধিকার নেই। কিন্তু অধিকতর চিন্তার পর ভেবে অবাক হলাম যে, তার প্রতি অন্তত সুবিচার করা হয়নি। তাকে সেই সকল অস্নাতকদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে যারা মধ্যাহ্ন আহারের পর লাইব্রেরিতে যায় নিদ্রার জন্য। উভয় কাজের পিছনে দর্শন মূলত একই। চার্চের ধর্মীয় পরিবেশ সকল উপাসনাকারীর ভিতরেই প্রবাহিত হয়, তারা জাগ্রত কিংবা নিদ্রিত থাক না কেন, তারা যাজক কিংবা নার্সের দিকে তাকিয়ে থাকে। একইভাবে, পাঠাগারের একটি বৌদ্ধিক পরিবেশ আছে- যা শেলফের কাছাকাছি থাকা যে কারও ওপরে জ্ঞানের প্রশ্বাস ফেলে। এই দর্শন বহু আগে এক কবি প্রচার করেছিলেন।
‘যতই আমি মনে করি না কেন যে শক্তি আছে, যে শক্তির কোনটিকে আমাদের মন প্রভাবিত করে; আমরা আমাদের মনকে এই বিষয়টি বোঝাতে পারি বিচক্ষণ নির্মোহতায়।’ গ্রামের যে কোনো গির্জা পৃথিবীতে সবসময়ই দর্শন শেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা।
লেখক পরিচিতি : চিনুয়া আচেবের জন্ম : নভেম্বর ১৬, ১৯৩০। মৃত্যু : মার্চ ২১, ২০১৩। নাইজেরিয়ার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও আফ্রিকার আধুনিক সাহিত্যের জনক।
লেখক হিসাবে চিনুয়া আচেবি আফ্রিকা এবং পশ্চিমের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করেছিলেন। তার কাজকে মানদণ্ড ধরেই প্রজন্মান্তরে আফ্রিকান লেখকদের কাজের মূল্যায়ন হয়ে আসছে। চিনুয়া ২০ টিরও বেশি গ্রন্থ লিখেছেন। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’-এর সুবাদে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন তিনি। উপন্যাসটি অনুবাদ হয়েছে ৫০ টিরও বেশি ভাষায়। তাছাড়া, বিশ্বজুড়ে উপন্যাসটি প্রায় ১ কোটি কপি বিক্রি হয়। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘অ্যান্টহিলস অফ দি সাভানা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে।